গল্প- 'উসামার বায়না ও আইলার জন্য ভালোবাসা' by চেমন আরা
কয়েকদিন ধরে বড় ছেলে উসামা বায়না ধরেছে এক জোড়া জুতার। বাবা উদাসীন স্বভাবের মানুষ। ঘরে থাকলে লেখাপড়া আর অফিসের সময় অফিসে যাওয়া এ নিয়েই তার বেশির ভাগ সময় কাটে। বাবার গুরুগম্ভীর এই স্বভাবের সঙ্গে ছেলে-মেয়েরা পরিচিত। তাই তাদের আবদার, দাবি, কথাবার্তা সব তাদের মায়ের সঙ্গে।
মা-ও চাকরি করেন। মাকে সব কথা বলা যায়। তার জুতার ব্যাপারে মা সচেতন উসামার। স্কুলের জুতা ছাড়া ভাল কোন জুতা নেই। কোথাও বের হতে গেলে ওর জুতার করুণদশা দেখে মা-ও মনে মনে কষ্ট পান। কিন্তু সংসারের প্রয়োজনীয় হিসাব মিলিয়ে ছেলের জুতা কেনা আর হয় না। মা কথা দিয়েছিলেন মাসপয়লা বেতন পেলেই প্রথমে তাকে জুতা কিনে দেবেন। কথা পাওয়ার পর উসামা মনে মনে আশ্বস্ত হলো। এখন সামনের মাস কখন আসবে, সেই দিনের অপেক্ষায় থাকে সে।
নতুন মাসের প্রথম দিনের সকাল বেলা সে ঘুম থেকে উঠে বসলো চোখ কচলাতে কচলাতে। সে জানে মা এখন কোথায়! রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছেন সবার জন্য। ভাজি বা হালুয়া তৈরি করছেন রুটির সঙ্গে খাবার জন্য তারা সবাই নাশতা করবে তারপর স্কুলে যাবে। উসামা রান্না ঘরে হাজির হয়। তাকে দেখে মার মনে পড়ে যায় তার প্রতিশ্র“তির কথা। তবুও কেন যেন ছেলের ওপর রেগে যান। অযথা ছেলেকে কতক্ষণ বকাঝকা করে হাত ধরে টেনে তার বাবার কাছে নিয়ে যান। বাবা ঘুম থেকে উঠে নামাজ, ওজিফা সেরে তার নৈমিত্তিক বই পত্তর পড়াশোনার জন্য ঘাঁটাঘাঁটি করছেন।
দেখ! তোমার ছেলের কাণ্ড। সকাল হতেই জুতার জন্য বায়না ধরেছে। মনে হয় সে রাতে জুতার কথা ভেবে ঘুমাতেও পারেনি। কারণ তাকে আমি এই মাসে জুতা কিনে দেবো বলেছিলাম। মার রাগ মেশানো উচ্চকণ্ঠের আওয়াজে বাবাও সচকিত হয়ে ওঠেন। উসামা বেচারা মলিন মুখে মার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
কোন জিনিস পাওয়ার জন্য এমন জেদ ধরে থাকা ঠিক নয়। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার জন্য ওর ভালো জুতা নেই। এটি ভাবতে আমার কষ্ট হয় না বুঝি। কিন্তু আমি তো নিরুপায়। তুমি শুনেও না শুনার ভান কর? ছেলেদের দাবি, আবদার সুখ-দুঃখ, অসুখ বিসুখ কিছু দেখবে না? বল? আমি কী করব? ওকে তালিম দাও, অভ্যাস বদলাক। আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। অভ্যাস ভালো না হলে একটু বড় হলে আরও নানা ধরনের কাজে আবদারের বায়না ধরবে, না পেলে রাগারাগি করে ঘরে অঘটন ঘটাবে।
উসামার মায়ের হঠাৎ এমন উত্তেজিত কণ্ঠস্বরের হেতু বাবা বুঝতে না পেরে পয়লা বিস্মিত হলেন। শেষে ছেলেকে বললেন, ছি উসামা মার সঙ্গে ও রকম করতে নেই, আমাদের ধর্মে বলে, যারা সবুর করে আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন। জুতা যখন কিনে দেবে বলেছেন, মা নিশ্চয়ই দেবেন। সময় হলে আমরা নিজেরাই তো দেবো, তোমাকে চাইতে হবে কেন?
উসামা এতক্ষণ একেবারেই চুপ ছিলো। আব্বার কথা শুনে সে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো- আব্বা! আমি তো আম্মাকে কিছুই বলিনি, শুধু আজ মাসের পয়লা তারিখ কি না জিজ্ঞেস করছি।
শুধু শুধু আম্মা আমাকে হাত ধরে টেনে আপনার কাছে নিয়ে এসেছেন। আমার হাতটা ব্যথা করছে আব্বা! দেখেন না হাতটা কেমন লাল হয়ে গেছে। এই বলে সে বাম হাতটা ওর আব্বার দিকে বাড়িয়ে দিল। সত্যি হাতটা একটু লাল হয়ে আছে। উসামার আব্বাব আলতোভাবে আদর করে হাতটায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তখনকার মতো উসামাকে শান্ত করলেন। মনে মনে উসামার মার ওপর বিরক্তও হলেন। ১০-১১ বছরের একটা ছেলেকে সামান্য কারণে বকাঝকা করা মোটেও উচিত নয়। তাছাড়া জুতা চাওয়াটা ওর ন্যায্য দাবি।
আম্মার স্বভাব উসামা ভালো করে জানে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে রাগ কমে যাবে। তখন মার কাছে আবার আবদার করা যাবে। এই ভেবে তার দুঃখবোধ একটু প্রশমিত হয়। সন্ধ্যার পর মা স্কুল থেকে ফিরলে মার চেহারার দিকে একবার তাকালো। চেহারার মধ্যে কেমন যেন খুশি খুশি ভাব। সে বুঝতে পাড়লো মা নিশ্চয়ই বেতন পেয়েছে। কিন্তু মাকে কিছু বলতে সাহস পেল না। উসামা যখন মার কাছাকাছি আসতে চাইলো। মা ছেলেকে আস্তে করে সরিয়ে দিয়ে নিজের বিছানার কাছে গিয়ে ক্লান্তিতে, অবসাদে শুয়ে পড়লেন। একটুও কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কোন রকমে শাড়িটা পাল্টিয়ে শুয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। ছেলেরা বা বাড়ির অন্যারা কে কোথায় এ খবর নিতেও ইচ্ছে হচ্ছে না তার। উসামার ছোট বোন উপমা দূর থেকে লক্ষ্য করছিল এসব। মা কেমন করে উসামার হাত সরিয়ে দিলেন? সে উসামাকে বলে, ভাই তুমি কিচ্ছু বোঝ না। মা এইমাত্র এসেছেন। একটু বিশ্রাম করতে দাও। তারপর তোমার কথা বলো। উসামা দিল তাকে একটা ধমক!
মার আদুরের মেয়ে হয়েছিস তাই না? মাতব্বরি করার আর জায়গা পাস না। আবার মাতব্বরি করে দেখ, এমন মার দিবো মুরুব্বিয়ানা বন্ধ হয়ে যাবে। উপমাও কম যায় না। সেও পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে। শেষে ঝগড়া মারামারিতে পরিণত হয়। ওদিকে মা বিছানায় শুয়েও শান্তি পেলেন না। মেয়েকে ডাকলেন, উপমা! এদিকে আয়তো। তুই ওর সঙ্গে ঝগড়া করতে গেলি কেন? তোর বড় ভাই না ও? ছোটরা কোন দিন বড়দের সঙ্গে ঝগড়া করতে হয় না। যদিও উসামা একটু দুষ্টু হয়ে গেছে। উসামাকে দুষ্টু বলেছে এই খুশিতে উপমা মার ওপর খুশি হয়ে যায়।
পাশের বাড়িতে খেলছিল সবার ছোট ছেলে রাফী। মার গলার আওয়াজ পেয়ে সে ছুটে আসে বাড়িতে। মার গলা জড়িয়ে ধরে বলে মা তুমি কখন এসেছো আমাকে ডাকনি কেন? ঘরে নাই দেখে আমি শেলী আপুদের বাসায় খেলতে গিয়েছিলাম। জান মা, শেলী আপুরা একটি বিড়াল এনেছে পুষতে। আমিও একটি বিড়াল আনবো পুষতে। বলতে বলতে সে আরো মাকে জড়িয়ে ধরে। বিড়ালটি আমি আর ভাই পালবো। উপমাকে ধরতেও দেবো না।
কেন দেবে না? সে তোমার আপা না? বড় হলে সেই তো তোমার দেখাশুনা করবে, ভাই করবে না, মা বললেন ছাই করবে ও শুধু আমাকে মারে বকে। সে মেয়েতো! তুমিও মেয়ে। তাই তুমি আপুকে আদর কর বেশি, আমাদের করো না। চোখ বড় বড় করে গাল ফুলিয়ে সে অভিমানের ভঙ্গিতে মার গাল ছেড়ে দিয়ে বলল। তার কথা বলার ভঙ্গিতে মা না হেসে পারলেন না।
দুর পাগলা কেন বলছে আমি তোমাদের আদর করি না। আমার কাছে তোরা সবাই সমান। বুড়ো বয়সে তো তোমাদের কাছেই থাকবো। মার কথাতেও রাফী খুশি নয়। সে আবার জিজ্ঞেস করে, বলতো মা কে বেশি ভাল? আমি না? মা বললেন হ্যাঁ তুমিই তো আমার সবচেয়ে ভাল ছেলে। খুব খুশিতে ঝিলমিলিয়ে উঠলো রাফী।
সত্যি আমি ভালো ছেলে, ভাইয়ের থেকেও? মা বললেন না, তোমার ভাই ভালো ছেলে না, ভীষণ পাজি। লেখা পড়া কিছু করে না, সারাদিন হইচই দুষ্টুমি মা বাবার কথা শুনে না, কোন কিছুতে সবুর নেই। জানো যে ছেলে মা বাবার কথা শুনে না, ভাই বোনদের আদর করে না, সবুর করে না আল্লাহ তার ওপর বেজার হন।
উসামা দেয়ালে হেলান দিয়ে চুপ-চাপ উপমা, রাফী এদের ঝগড়া দেখছিল। যার কথা শুনে তার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। ছোট কাল থেকে বাবার কাছে ইসলাম ধর্মের অনেক নীতি কথা সে শুনেছে। মনটিও খুব নরম। আল্লাহ, ফেরেশতা, বেহেশত, দোজখের কোন কথা শুনলে সে কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়। কাঁদো কাঁদো গলায় সে বললÑ আমি বুঝি আব্বা আম্মার কথা শুনি না, কেন আল্লাহ আমার ওপর রাগ করবেন! আব্বা বলেন, আল্লাহ আমাদের মনের খবর রাখেন, তাহলে তো আল্লাহ জানেন। আমি কোন অন্যায় করিনি। আমি শুধু আম্মাকে মনে করিয়ে দিয়েছি কারণ আমার এক জোড়া জুতার খুব দরকার। এমন সময় উপমা বাইরের বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে বলে ওঠে, ভাই দেখ দেখ, ছোট ছোট ছেলেদের একটা মিছিল যাচ্ছে।
উসামা, রাফী ছুটে যায় বারান্দায়। রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট ছেলেদের মিছিল যাচ্ছে। এবার হাতে প্ল্যাকার্ড কারো কারো হাতে তালাবদ্ধ ছোট্ট টিনের বাক্স। প্ল্যাকার্ডে বড় বড় হরফে লেখা ‘আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করুন। শিশু বৃদ্ধা অসহায়দের বন্যার হাত থেকে বাঁচান। বারান্দায় দাঁড়িয়ে উসামা অনেকক্ষণ ধাবমান মিছিলের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর হঠাৎ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তার চোখ মুখ। দৌড়ে এসে মার কাছে বলল, মা আমার জুতার দরকার নেই। পরে যখন পারবেন তখন দেবেন। এখন জুতার টাকাটা আমি মিছিলের লোকদেরকে দিয়ে দেবো। মা কোন জবাব দিলেন না। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে আবার বলে, তুমি তো বলেছিলে গরিবকে, অসহায়কে সাহায্য করলে আল্লাহ খুশি হয়। শিগগির দিন মা। ঐ যে ওরা চলে যাচ্ছে। মা কিছু ভাবার অবসর পেলেন না। তার জন্য রাখা জুতা কেনার টাকার সবটা তার হাতে তুলে দিলেন।
ছেলে লাফাতে লাফাতে মিশে গেল মিছিলের মধ্যে। মিছিলের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে মায়ের চোখের পাতা ভিজে এলো। ছেলের মধ্যে মনুষ্যত্ব জেগেছে এই খুশিতে তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালেন এবং মনে মনে ঠিক করলেন আজকেই তিনি যেমন করে হোক উসামাকে জুতা কিনে দেবেন।
মা-ও চাকরি করেন। মাকে সব কথা বলা যায়। তার জুতার ব্যাপারে মা সচেতন উসামার। স্কুলের জুতা ছাড়া ভাল কোন জুতা নেই। কোথাও বের হতে গেলে ওর জুতার করুণদশা দেখে মা-ও মনে মনে কষ্ট পান। কিন্তু সংসারের প্রয়োজনীয় হিসাব মিলিয়ে ছেলের জুতা কেনা আর হয় না। মা কথা দিয়েছিলেন মাসপয়লা বেতন পেলেই প্রথমে তাকে জুতা কিনে দেবেন। কথা পাওয়ার পর উসামা মনে মনে আশ্বস্ত হলো। এখন সামনের মাস কখন আসবে, সেই দিনের অপেক্ষায় থাকে সে।
নতুন মাসের প্রথম দিনের সকাল বেলা সে ঘুম থেকে উঠে বসলো চোখ কচলাতে কচলাতে। সে জানে মা এখন কোথায়! রান্না ঘরে রুটি বানাচ্ছেন সবার জন্য। ভাজি বা হালুয়া তৈরি করছেন রুটির সঙ্গে খাবার জন্য তারা সবাই নাশতা করবে তারপর স্কুলে যাবে। উসামা রান্না ঘরে হাজির হয়। তাকে দেখে মার মনে পড়ে যায় তার প্রতিশ্র“তির কথা। তবুও কেন যেন ছেলের ওপর রেগে যান। অযথা ছেলেকে কতক্ষণ বকাঝকা করে হাত ধরে টেনে তার বাবার কাছে নিয়ে যান। বাবা ঘুম থেকে উঠে নামাজ, ওজিফা সেরে তার নৈমিত্তিক বই পত্তর পড়াশোনার জন্য ঘাঁটাঘাঁটি করছেন।
দেখ! তোমার ছেলের কাণ্ড। সকাল হতেই জুতার জন্য বায়না ধরেছে। মনে হয় সে রাতে জুতার কথা ভেবে ঘুমাতেও পারেনি। কারণ তাকে আমি এই মাসে জুতা কিনে দেবো বলেছিলাম। মার রাগ মেশানো উচ্চকণ্ঠের আওয়াজে বাবাও সচকিত হয়ে ওঠেন। উসামা বেচারা মলিন মুখে মার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।
কোন জিনিস পাওয়ার জন্য এমন জেদ ধরে থাকা ঠিক নয়। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার জন্য ওর ভালো জুতা নেই। এটি ভাবতে আমার কষ্ট হয় না বুঝি। কিন্তু আমি তো নিরুপায়। তুমি শুনেও না শুনার ভান কর? ছেলেদের দাবি, আবদার সুখ-দুঃখ, অসুখ বিসুখ কিছু দেখবে না? বল? আমি কী করব? ওকে তালিম দাও, অভ্যাস বদলাক। আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। অভ্যাস ভালো না হলে একটু বড় হলে আরও নানা ধরনের কাজে আবদারের বায়না ধরবে, না পেলে রাগারাগি করে ঘরে অঘটন ঘটাবে।
উসামার মায়ের হঠাৎ এমন উত্তেজিত কণ্ঠস্বরের হেতু বাবা বুঝতে না পেরে পয়লা বিস্মিত হলেন। শেষে ছেলেকে বললেন, ছি উসামা মার সঙ্গে ও রকম করতে নেই, আমাদের ধর্মে বলে, যারা সবুর করে আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন। জুতা যখন কিনে দেবে বলেছেন, মা নিশ্চয়ই দেবেন। সময় হলে আমরা নিজেরাই তো দেবো, তোমাকে চাইতে হবে কেন?
উসামা এতক্ষণ একেবারেই চুপ ছিলো। আব্বার কথা শুনে সে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো- আব্বা! আমি তো আম্মাকে কিছুই বলিনি, শুধু আজ মাসের পয়লা তারিখ কি না জিজ্ঞেস করছি।
শুধু শুধু আম্মা আমাকে হাত ধরে টেনে আপনার কাছে নিয়ে এসেছেন। আমার হাতটা ব্যথা করছে আব্বা! দেখেন না হাতটা কেমন লাল হয়ে গেছে। এই বলে সে বাম হাতটা ওর আব্বার দিকে বাড়িয়ে দিল। সত্যি হাতটা একটু লাল হয়ে আছে। উসামার আব্বাব আলতোভাবে আদর করে হাতটায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তখনকার মতো উসামাকে শান্ত করলেন। মনে মনে উসামার মার ওপর বিরক্তও হলেন। ১০-১১ বছরের একটা ছেলেকে সামান্য কারণে বকাঝকা করা মোটেও উচিত নয়। তাছাড়া জুতা চাওয়াটা ওর ন্যায্য দাবি।
আম্মার স্বভাব উসামা ভালো করে জানে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে রাগ কমে যাবে। তখন মার কাছে আবার আবদার করা যাবে। এই ভেবে তার দুঃখবোধ একটু প্রশমিত হয়। সন্ধ্যার পর মা স্কুল থেকে ফিরলে মার চেহারার দিকে একবার তাকালো। চেহারার মধ্যে কেমন যেন খুশি খুশি ভাব। সে বুঝতে পাড়লো মা নিশ্চয়ই বেতন পেয়েছে। কিন্তু মাকে কিছু বলতে সাহস পেল না। উসামা যখন মার কাছাকাছি আসতে চাইলো। মা ছেলেকে আস্তে করে সরিয়ে দিয়ে নিজের বিছানার কাছে গিয়ে ক্লান্তিতে, অবসাদে শুয়ে পড়লেন। একটুও কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কোন রকমে শাড়িটা পাল্টিয়ে শুয়ে রইলেন অনেকক্ষণ। ছেলেরা বা বাড়ির অন্যারা কে কোথায় এ খবর নিতেও ইচ্ছে হচ্ছে না তার। উসামার ছোট বোন উপমা দূর থেকে লক্ষ্য করছিল এসব। মা কেমন করে উসামার হাত সরিয়ে দিলেন? সে উসামাকে বলে, ভাই তুমি কিচ্ছু বোঝ না। মা এইমাত্র এসেছেন। একটু বিশ্রাম করতে দাও। তারপর তোমার কথা বলো। উসামা দিল তাকে একটা ধমক!
মার আদুরের মেয়ে হয়েছিস তাই না? মাতব্বরি করার আর জায়গা পাস না। আবার মাতব্বরি করে দেখ, এমন মার দিবো মুরুব্বিয়ানা বন্ধ হয়ে যাবে। উপমাও কম যায় না। সেও পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে। শেষে ঝগড়া মারামারিতে পরিণত হয়। ওদিকে মা বিছানায় শুয়েও শান্তি পেলেন না। মেয়েকে ডাকলেন, উপমা! এদিকে আয়তো। তুই ওর সঙ্গে ঝগড়া করতে গেলি কেন? তোর বড় ভাই না ও? ছোটরা কোন দিন বড়দের সঙ্গে ঝগড়া করতে হয় না। যদিও উসামা একটু দুষ্টু হয়ে গেছে। উসামাকে দুষ্টু বলেছে এই খুশিতে উপমা মার ওপর খুশি হয়ে যায়।
পাশের বাড়িতে খেলছিল সবার ছোট ছেলে রাফী। মার গলার আওয়াজ পেয়ে সে ছুটে আসে বাড়িতে। মার গলা জড়িয়ে ধরে বলে মা তুমি কখন এসেছো আমাকে ডাকনি কেন? ঘরে নাই দেখে আমি শেলী আপুদের বাসায় খেলতে গিয়েছিলাম। জান মা, শেলী আপুরা একটি বিড়াল এনেছে পুষতে। আমিও একটি বিড়াল আনবো পুষতে। বলতে বলতে সে আরো মাকে জড়িয়ে ধরে। বিড়ালটি আমি আর ভাই পালবো। উপমাকে ধরতেও দেবো না।
কেন দেবে না? সে তোমার আপা না? বড় হলে সেই তো তোমার দেখাশুনা করবে, ভাই করবে না, মা বললেন ছাই করবে ও শুধু আমাকে মারে বকে। সে মেয়েতো! তুমিও মেয়ে। তাই তুমি আপুকে আদর কর বেশি, আমাদের করো না। চোখ বড় বড় করে গাল ফুলিয়ে সে অভিমানের ভঙ্গিতে মার গাল ছেড়ে দিয়ে বলল। তার কথা বলার ভঙ্গিতে মা না হেসে পারলেন না।
দুর পাগলা কেন বলছে আমি তোমাদের আদর করি না। আমার কাছে তোরা সবাই সমান। বুড়ো বয়সে তো তোমাদের কাছেই থাকবো। মার কথাতেও রাফী খুশি নয়। সে আবার জিজ্ঞেস করে, বলতো মা কে বেশি ভাল? আমি না? মা বললেন হ্যাঁ তুমিই তো আমার সবচেয়ে ভাল ছেলে। খুব খুশিতে ঝিলমিলিয়ে উঠলো রাফী।
সত্যি আমি ভালো ছেলে, ভাইয়ের থেকেও? মা বললেন না, তোমার ভাই ভালো ছেলে না, ভীষণ পাজি। লেখা পড়া কিছু করে না, সারাদিন হইচই দুষ্টুমি মা বাবার কথা শুনে না, কোন কিছুতে সবুর নেই। জানো যে ছেলে মা বাবার কথা শুনে না, ভাই বোনদের আদর করে না, সবুর করে না আল্লাহ তার ওপর বেজার হন।
উসামা দেয়ালে হেলান দিয়ে চুপ-চাপ উপমা, রাফী এদের ঝগড়া দেখছিল। যার কথা শুনে তার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো। ছোট কাল থেকে বাবার কাছে ইসলাম ধর্মের অনেক নীতি কথা সে শুনেছে। মনটিও খুব নরম। আল্লাহ, ফেরেশতা, বেহেশত, দোজখের কোন কথা শুনলে সে কেমন যেন আনমনা হয়ে যায়। কাঁদো কাঁদো গলায় সে বললÑ আমি বুঝি আব্বা আম্মার কথা শুনি না, কেন আল্লাহ আমার ওপর রাগ করবেন! আব্বা বলেন, আল্লাহ আমাদের মনের খবর রাখেন, তাহলে তো আল্লাহ জানেন। আমি কোন অন্যায় করিনি। আমি শুধু আম্মাকে মনে করিয়ে দিয়েছি কারণ আমার এক জোড়া জুতার খুব দরকার। এমন সময় উপমা বাইরের বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে বলে ওঠে, ভাই দেখ দেখ, ছোট ছোট ছেলেদের একটা মিছিল যাচ্ছে।
উসামা, রাফী ছুটে যায় বারান্দায়। রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট ছেলেদের মিছিল যাচ্ছে। এবার হাতে প্ল্যাকার্ড কারো কারো হাতে তালাবদ্ধ ছোট্ট টিনের বাক্স। প্ল্যাকার্ডে বড় বড় হরফে লেখা ‘আইলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করুন। শিশু বৃদ্ধা অসহায়দের বন্যার হাত থেকে বাঁচান। বারান্দায় দাঁড়িয়ে উসামা অনেকক্ষণ ধাবমান মিছিলের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর হঠাৎ খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তার চোখ মুখ। দৌড়ে এসে মার কাছে বলল, মা আমার জুতার দরকার নেই। পরে যখন পারবেন তখন দেবেন। এখন জুতার টাকাটা আমি মিছিলের লোকদেরকে দিয়ে দেবো। মা কোন জবাব দিলেন না। খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে আবার বলে, তুমি তো বলেছিলে গরিবকে, অসহায়কে সাহায্য করলে আল্লাহ খুশি হয়। শিগগির দিন মা। ঐ যে ওরা চলে যাচ্ছে। মা কিছু ভাবার অবসর পেলেন না। তার জন্য রাখা জুতা কেনার টাকার সবটা তার হাতে তুলে দিলেন।
ছেলে লাফাতে লাফাতে মিশে গেল মিছিলের মধ্যে। মিছিলের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে মায়ের চোখের পাতা ভিজে এলো। ছেলের মধ্যে মনুষ্যত্ব জেগেছে এই খুশিতে তিনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালেন এবং মনে মনে ঠিক করলেন আজকেই তিনি যেমন করে হোক উসামাকে জুতা কিনে দেবেন।
=========================
গল্প- 'উরুমকিতে আর্তনাদ' by আহমদ মতিউর রহমান গল্প- 'টবের গোলাপ' by দিলারা মেসবাহ রম্য গল্প- 'তুচ্ছ ঘটনা' by মোহাম্মদ লিয়াকত আলী গল্প- 'নদী কত দূর' by অজিত হরি সাহু, অনুবাদ- হোসেন মাহমুদ গল্প- 'নতুন জীবনের গল্প' by মুহিব্বুর রহমান রাফে গল্প- 'বুবুর জন্য' by জুবায়ের হুসাইন গল্প- 'দ্বীপ রহস্য-০০১' by হারুন ইবনে শাহাদাত গল্প- 'নীয়নের মোবাইল পকেট' by ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ গল্প- 'শুভরা জানতে চায়' by জুবাইদা গুলশান আরা গল্প- 'জোড়া ঘোড়া' by মাখরাজ খান গল্প- 'গর্ব' by আবদুল ওহাব আজাদ গল্প- 'তিতিরের ঘুড়ি' by ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থ গল্প- 'একটি বাঘের কথা' by মুহম্মদ জাফর ইকবাল ছেলেবেলার গল্প' by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম একটি ভাদ্র মাসের গল্প' by আতাউর রহমান
কিশোরকন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ চেমন আরা
এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
লেখকঃ চেমন আরা
এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
No comments