গল্প- 'টবের গোলাপ' by দিলারা মেসবাহ
ফয়সলের মনের আকাশে থোপা থোপা কালো মেঘ। রোজার আজ সাতাশ তারিখ- পবিত্র শবে কদর। সবাই রাত জেগে নামাজ পড়বে, ইবাদতে মশগুল হবে। দেখতে দেখতে ঈদের সেই চিকন একফালি সোনার বরণ চাঁদ উঠবে। অন্যবার এই সময় ফয়সলের মনে আনন্দ ধরে না। এবার কেন যে মন কেমনের ভূতটা মাথায় চেপে বসে আছে। সওয়ার হয়েছে ঘাড়জুড়ে। নামছেও না, নড়ছেও না। কী দশা? মা আরিফা খানম ফয়সলের দিকে আজ খুব খেয়াল করছেন, জহুরি চোখ মেলে নিরিখ করছেন। দুপুরে ছেলের গোমড়া মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘কিরে বাবা তোর শরীর খারাপ নাকি? ক’দিন থেকে দেখছি মুখে হাসি নেই। কেমন যেন হয়ে গেছিস, ব্যাপার কী বাপধন?’
কথাগুলো হালকা চালে বললেন বটে তবে মায়ের বুকের ভেতর মহলে একটু যেন কেঁপে উঠল। সংসারে এই একটি মাত্র পুত্রধন!
মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে গত বছর। ঘরবাড়ি শূন্য করে দিয়ে চলে গেছে সুদূর কানাডা। প্রচণ্ড কনকনে শীতে মেহবুবা শীতকাতুরে মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে খুব হয়তো। কিছুকাল গেলে সব সয়ে যাবে। এই বয়সটাই কষ্ট করার, যুদ্ধ করার, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। জামাই সাব্বিরও খুব কাজের ছেলে, উদ্যমী ও সহিষ্ণু ছেলে। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বিদেশ মানেই সুখ নয় লাগাতার ঘড়ির কাঁটা ধরে চলা সংগ্রাম জীবনযুদ্ধ। ওরই মধ্যে খুঁজে পেতে হয় আনন্দ-আয়েশ। ফয়সলও বড় বোনকে খুব মনে করে। একরকম হু হু বিষণ্ণতায় ভরে ওঠে কচি মন।
মেহবুবা প্রথম প্রথম মাকে ফোনে প্রায়ই বলত,
‘মা আমার এখানে এত কাজ যে তোমাকে ফোন করতেও সময় পাই না। আমার হিংসে হয় মা, তোমরা কত মজা করে একসাথে ভাত খাও। কত রকমের ভাজি ভর্তা ভুনা কর তুমি আর আলতার মা বুয়া মিলে। আমাকে এখানে চটজলদি এক পদ বড়জোর দুই পদ রাঁধতে হয়। কোন হেল্পার নেই। সব কিছু এ টু জেড নিজের হাতে। এককাপ চা বানিয়ে দেবার কেউ নেই মা। আগে নসিরন বুয়া মুখের কাছে চায়ের কাপ এনে ধরতো। দেশে থাকতে কত আড্ডা দিয়েছি বন্ধুদের সঙ্গে- এখানে আড্ডা দেয়ার কথা ভাবাই যায় না। কতদিন বেড়াতে গেছি চাচার বাড়ি, মামার বাড়ি, খালার বাড়ি। এখানে এখন এসবই স্বপ্ন! মাঝে মধ্যে অবশ্য গেট টুগেদার হয়- বাঙালিরা করেন কিন্তু তাতে মন ভরে না মা!’
মা আরিফার বুকের ভেতর নদীর পাড় ভাঙার শব্দ হয়। একটা মন খারাপের হাওয়া হু হু করে বইতে থাকে। হালকা হাতে চোখ মুছে বলেন,
‘মা সইয়ে নিতে হয়। দেশের জন্য, আত্মীয়স্বজনদের জন্য মানত’ কেমন করবেই। কিন্তু ওটা যে তোমার নিজের সংসার। ওটাও তোমাকেই গুছিয়ে নিতে হবে। এক সময় সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবে। মানুষ অভ্যাসের দাস। মাগো প্রতিবছর একবার করে দেশে আসবি, কেমন? হইহল্লা করে সব কষ্ট পুষিয়ে নিবি মা আমার।
গতকালই মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আজ আবার আঁধার ঘরের মানিক একমাত্র পুত্রধনের মন খারাপ। বুকের মধ্যে পাখির ছানার মতো আগলে আছে, তারপরও কী হলো বাপজানের!
আরিফা খানমের নরম মনটা ব্যথায় নীলচে হয়ে যায় যেন।
রোজা শেষ হয়ে গেল। আগামীকাল ঈদ-পবিত্র ঈদুল ফিতর। পুত্রধনের জন্য তিনপ্রস্থ কাপড় কেনা হয়েছে। প্যান্ট, শার্ট, পাজামা পাঞ্জাবি, ফতুয়া, স্যান্ডেল সুও কেনা হয়েছে একজোড়া খুব সুন্দর দেখে। কিন্তু কী হলো ছেলের! কিছুতেই মন উঠছে না। একবার নেড়ে চেড়েও দেখছে না। সারাদিন মাথা গুঁজে কী যেন সব লিখছে। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ফয়সল ছড়া লেখে, ছোটগল্প লেখার চেষ্টা করে। কিন্তু কতবার পত্রিকা অফিসে পাঠিয়েছে ‘ভোরের পাখি’, ‘রঙধনু’, ‘কিশলয়’ প্রভৃতি পত্রিকায়। ছাপার অক্ষরে আর সেগুলো দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
আজ ঈদের দিন। ফয়সল একটা নিরানন্দ ঈদ কাটাল। ছেলে হাসে না। বেশি কথা বলে না, হইচই করে মজার মজার খাবার খায় না। প্রিয় মায়ের হাতের দুধ সেমাই স্বাদ লাগে না। পোলাও কোরমা বিস্বাদ লাগে। কিচেন থেকে সুবাস বের হচ্ছে বুটের ডাল গরম মসলা আর টুকরো গরুর গোশত সিদ্ধের। শামি কাবাব হবে। আলতার মা এক্ষুনি এগুলো ব্লেন্ডারে পিষে নেবে। মা সবকিছু তদারকি করছেন। অন্যবার এর মধ্যে ফয়সল কতবার কিচেনে আসত- তাগাদা দিত। কখন ভাজবে শামি কাবাব! এবার কোন সাড়া শব্দই নেই। মায়ের মনটাও দমে যায়। কার জন্য এত আয়োজন
ফয়সলের মন উদাস। উড়– উড়–। কোন সুদূরে উড়ে বেড়াচ্ছে। কিছু ভাল লাগছে না তার। গোপন একটা হাহাকার বয়ে বেড়–াচ্ছে বুকের গহনে।
আরিফা দরজার ফাঁক দিয়ে দেখছেন কিশোর পত্রিকা। ঈদসংখ্যা ‘কিশলয়’, ‘রঙধনু’ উল্টে পাল্টে পড়ছে ফয়সল। মুখটা মলিন। এবার আরিফা সারাদিনের ক্লান্তি চেপে ছেলের ঘরে ঢোকে। নীল ছোট ছোট ফুলের গুচ্ছ ছোপানো পর্দা উড়ছে দরজাজুুড়ে। ফুল স্পিডে ফ্যান ঘুরছে। মাথা নিচু করে ফয়সল পত্রিকা দেখছে। ওর চোখ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝরছে। আরিফার মনটা আবার নতুন করে বেদনার্ত হয়ে ওঠে। এতটুকু ছেলে এই খুশির ঈদের রাতে কী জন্য কাঁদছে। ছেলেটার হলো কী! মোমের মতো মাতৃস্নেহ গলে গলে পড়ে আরিফা খানমের। আর তিনি নিজেকে শাসন করতে পারলেন না। ওর ঘরে পৌঁছে যান ধীর পায়ে।
‘বাবুসোনা কী হয়েছে তোর! আমাকে খুলে বল বাবা। মানিক আমার, জাদু আমার! বল মাকে সব খুলে বল।’
ফয়সল চোখ মোছে। কী বলবে ভেবে পায় না। মনে হয় তার নিজস্ব গোপন দুঃখের কথা তার মনের কুঠুরির ঘরেই আবদ্ধ থাক। এটাই ছিল তার একান্ত ইচ্ছা। কিন্তু মায়ের কাছে হাতে নাতে ধরা পড়ে গেছে সে। মায়ের চোখ ফাঁকি দেয়া কি সহজ! আসল ঘটনা হলো গত দুই বছর হলো ফয়সল ঈদসংখ্যা কিশোর পত্রিকা তিনটিতে লেখা পাঠাচ্ছে। কিন্তু সম্পাদকের মন খুশি করাতে পারছে না। ছড়া ছাপা হচ্ছে না। এতে করে ক্লাস এইটে পড়–য়া ফয়সলের কচি বুকের ভেতরটা কালো কয়লা হয়ে যাচ্ছে। ওর বন্ধু ইকবালের দুটো ছড়া ছেপেছে ঈদসংখ্যা ‘কিশলয়’। বারবার ছড়া দুটো পড়ছিল ফয়সল। ঈদের আনন্দ-১, ঈদের আনন্দ-২। ভালই হয়েছে। কিন্তু তার কবিতাটিও তো মন্দ হয়নি। ‘মন উড়ে যায়’। কত খাটাখাটনি করে ঘষামাজা করে লেখা। আর রঙধুনুতে দিয়েছিল ছড়া ‘কুসুম ফোটা ভোর’।
মাকে শেষ পর্যন্ত ফয়সল আস্তে আস্তে বলে,
‘মা আমার কিছু হয়নি। আমার ছড়া কবিতা ছাপা হয়নি ঈদসংখ্যায়। তাই কিছুই ভালো লাগছে না। এত কষ্ট করলাম। সব বৃথা মা। ছড়া ছাপা হলে আমার ঈদটা আনন্দে টইটম্বুর হয়ে উঠতো। কিন্তু সে গুড়েবালি। মন আনন্দে ভাসলো না। ভরলো শুধু অন্ধকারে, হতাশায় ও দুঃখে।’
মা অবুঝ ছেলের মাথায় সস্নেহে হাত বুলান। মায়ের সস্নেহ সান্ত¡না পেয়ে ফল্গুধারার মতো বেরিয়ে পড়ে ফয়সলের দুঃখের বুদবুদগুলো। ও বলে,
‘দেখ মা ইকবালের ছড়া ছাপা হয়েছে। আমি ক্লাসের সেকেন্ড বয়। আর ইকবালের পজিশন অষ্টম। ও আমাকে ছড়া লিখে হারিয়ে দিল! স্কুল খুললে স্যারেরা, বন্ধু-বান্ধবেরা ওকেই বাহবা দেবে। বলবে আমাদের ছড়াকার ইকবাল আহমদ। আমাকে কেউ পাত্তাই দেবে না। আর একবার ভেবে দেখ ওর ঈদটা কত খুশিতে কেটেছে। ও আমাকে ফোন দিয়েছিল। ওকে নাকি অনেকেই প্রশংসা করছে। তুমিই বল মা, আমার মনটা কেমন করে।
মা ফয়সলের কান্নাভেজা মুখটা বুকে চেপে ধরেন। মিহি আদরে সান্ত¡নার সুরে বলেন,
‘শোন রে বাবা শোন! এত অল্পতেই পিছপা হলে চলে? বড় বড় কবিরা এমনকি রবি ঠাকুর, নজরুলও প্রথম প্রথম কত নাজেহাল হয়েছেন। এমন অনেক বড় বড় কবি সাহিত্যিক লেখা নিয়ে কত দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিয়েছেন। আস্তে আস্তে তাদের প্রতিভা বিকশিত হয়েছে- একদিনে নয় কিন্তু। সফলকাম হতে অনেক সময় শ্রম মেধা খরচ করতে হয় বাবা। বড় হলে এরকম অনেক উদাহরণ পাবে। সাফল্য হঠাৎ করে আসে নারে বাপজান। ধৈর্য ধর। তোর সাফল্য আসবেই। আমি তোকে বলছি। তোর এত নিষ্ঠা, এত মন খারাপ দেখেই আমি বুঝতে পারছি তুই নিবেদিত। কিন্তু সাহিত্যজগতে এত অল্পতে নিরাশ হলে চলবে না বাবা! এবার ঈদসংখ্যায় ছাপা হয়নি। হয়তো আগামী বছর উঠবে। এর জন্য মন খারাপ করে করে ঈদটা মাটি করলি ফয়সল। বোকা ছেলে, এরকম করতে নেই সোনামণি। সফলকাম তোমাকে হতেই হবে। দৃঢ় আশা রাখ মনে, চেষ্টা চালিয়ে যাও। এখন হাত-মুখ ধুয়ে আস আর এক কাপ দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
পাখি ডাকছে। বোধ হয় টুনটুনি। ফয়সলের ঘরের জানালা বরাবর একটা ঝুপসি আমগাছ। ওরা সবাই জেগে গেছেন। আর একটু বেলা উঠলেই নাস্তার টেবিল সরগরম হয়ে উঠবে। নাস্তা রেডি। মা ডাকছেন, ‘ফয়সল বাবা আয়। পরোটা গোশত ভুনা। আমি ডিমের মামলেটটা করে আনছি।’
ফয়সল শান্ত পায়ে টেবিলের দিকে এগোয়। ডোরবেল্টা বেজে উঠলো। আরিফা খানম দরজা খুলে দিলেন। বাবা মাজেদুল খান উৎসুক চোখ মেলে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে।
একরাশ জুঁইফুলের হাসি নিয়ে দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে ইকবাল। ফয়সলের সাহিত্যিক বন্ধু।
ফয়সল ম্লান মুখে তাকায় বন্ধুর দিকে। তার অন্তরে সুখ নেই। পরাজিত কালো মেঘে ছেয়ে আছে ফয়সলের ফর্সা মুখ।
তবু গলায় খানিকটা আনন্দ মিশিয়ে বলে,
‘কিরে ইকবাল কী খবর? ভেতরে আয়।’
ইকবাল এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
‘কেমন ঈদ করলি দোস্ত? ঈদ মোবারক। আন্টি-আঙ্কেল আসসালামু আলাইকুম। ঈদ মোবারক।’
ফয়সলের কাছে এসে ইকবাল বলে,
‘আমার হিরণ মামা গত পরশু নিউমার্কেট থেকে এককপি ‘ভোরের পাখি’
ঈদসংখ্যা কিনে এনেছেন। এবারের ভোরের পাখি নাকি হটকেকের মতো বিক্রি হয়ে গেছে। এতো সুন্দর অলঙ্করণ আর খাসা খাসা লেখা। সব বয়স্ক আর কিশোর কাড়াকাড়ি করে কিনে নিচ্ছে। এই দ্যাখ ‘ভোরের পাখি’ মামা আজই আমাকে দিলেন।
ফয়সল হাত বাড়িয়ে ‘ভোরের পাখি’ নিতে নিতে বলে, ‘আমাদের হকারকে কতবার বলেছি। দেয়নি। ‘রঙধুনু’ আর ‘কিশলয়’ দিয়ে গেছে। তোর লেখা আছে, ‘রঙধনুতে’।
ইকবালের যেন আর তর সয় না। ফয়সলের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘দোস্ত এত কথা না কয়ে পত্রিকাটা দেখ। এক্কেবারে ফার্স্ট ক্লাস সুন্দর ঈদসংখ্যা। যেমন বাঁধাই, তেমন প্রচ্ছদ রঙিন ঝলমলে। প্রচ্ছদশিল্পী হামিদুর রহমান। আর সব খাসা খাসা লেখা দুর্দান্ত উপন্যাস, ছড়া মজার মজার। ছোটগল্প গোগ্রাসে গেলার মতো একে কী বলবো মজার রসগোল্লা!’
ফয়সল এবার একটু দ্রুত পত্রিকাটি হাতে নেয়। সত্যি সুন্দর বর্ণিল প্রচ্ছদ। কী মজবুত বাঁধাই! কয়েক পাতা উল্টাতেই ফয়সলের ডাগর ডাগর চোখ আরো ডাগর হয়ে যায়। এ যে তার লেখা ছড়া ‘টবের গোলাপ’। এতো সুন্দর অলঙ্করণ একবারে জ্বলজ্বল করছে। ফয়সলের গলা বুজে আসে খুশির কান্নায়। আনন্দে চিৎকার করে উড়তে চায় ও।
মা এগিয়ে আসেন। বাবাও উৎসুক চোখে চেয়ে আছেন। ইকবাল হাসিমুখে ওদের জানায়।
‘চাচা ফয়সলের ছড়া উঠেছে ঈদসংখ্যা ‘ভোরের পাখিতে’।
ফয়সল আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। একটা লাফ দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘মা আমার ছড়া ছাপা হয়েছে। দেখ কী সুন্দর নকশা করে ছেপেছে!
মা একনজর দেখেন। আনন্দে তাঁরও চোখে পানি এসে যায়। তাঁর ছেলের মলিন মুখে হাসি ফুটেছে দেখে। বাবাও খুশি হন।
ফয়সল ইকবালের দু’হাত জড়িয়ে ধরে টেনে নিয়ে যায় তার ঘরে। দুই বন্ধুতে আনন্দে হেসে ওঠে কুলুকুলু ঝরনার মতো। যেন এ জগতে- এ শহরে সবচেয়ে সুখী মানুষটি হলো ফয়সল। তার কোনো দুঃখ নেই, হতাশা নেই, আছে শুধু রাশি রাশি আনন্দ। ছয়তলার জানালার ফাঁক দিয়ে ঈদের দ্বিতীয় দিনের চাঁদ দেখা যায় পরিষ্কার।
ফয়সল গাঢ় আনন্দে বলে ওঠে,
‘আজকে আমার ঈদরে ইকবাল। আজ আমার ঈদ। তুই আমার খাঁটি বন্ধু।’
ততক্ষণে মা-বাবা ছুটে এসেছেন।
‘এই যে বালকেরা পত্রিকাটা আমাদের দেখাবে না। শুধু নিজেরাই দেখবে?’
ফয়সল হাসিমুখে মায়ের হাতে ‘ভোরের পাখি’ তুলে দেয়। মা আনন্দভাসা ঝরঝরে কণ্ঠে বলেন, ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ। আজকের দিনটি কী চমৎকার? এই যে আমার ছড়াকার ছেলের ছড়া ‘টবের গোলাপ’।
বাহ্ কী সুন্দর ছন্দ!’
‘প্রাঙ্গণ’ ফ্ল্যাট বাড়িটার ছয়তলায় তখন এক আশ্চর্য আনন্দমেলা বসেছে। যার মূল্য অজুত নিযুত কোটি কোটি টাকা। নাকি তার চেয়েও অমূল্য!
‘কিরে বাবা তোর শরীর খারাপ নাকি? ক’দিন থেকে দেখছি মুখে হাসি নেই। কেমন যেন হয়ে গেছিস, ব্যাপার কী বাপধন?’
কথাগুলো হালকা চালে বললেন বটে তবে মায়ের বুকের ভেতর মহলে একটু যেন কেঁপে উঠল। সংসারে এই একটি মাত্র পুত্রধন!
মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে গত বছর। ঘরবাড়ি শূন্য করে দিয়ে চলে গেছে সুদূর কানাডা। প্রচণ্ড কনকনে শীতে মেহবুবা শীতকাতুরে মেয়েটা কষ্ট পাচ্ছে খুব হয়তো। কিছুকাল গেলে সব সয়ে যাবে। এই বয়সটাই কষ্ট করার, যুদ্ধ করার, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। জামাই সাব্বিরও খুব কাজের ছেলে, উদ্যমী ও সহিষ্ণু ছেলে। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বিদেশ মানেই সুখ নয় লাগাতার ঘড়ির কাঁটা ধরে চলা সংগ্রাম জীবনযুদ্ধ। ওরই মধ্যে খুঁজে পেতে হয় আনন্দ-আয়েশ। ফয়সলও বড় বোনকে খুব মনে করে। একরকম হু হু বিষণ্ণতায় ভরে ওঠে কচি মন।
মেহবুবা প্রথম প্রথম মাকে ফোনে প্রায়ই বলত,
‘মা আমার এখানে এত কাজ যে তোমাকে ফোন করতেও সময় পাই না। আমার হিংসে হয় মা, তোমরা কত মজা করে একসাথে ভাত খাও। কত রকমের ভাজি ভর্তা ভুনা কর তুমি আর আলতার মা বুয়া মিলে। আমাকে এখানে চটজলদি এক পদ বড়জোর দুই পদ রাঁধতে হয়। কোন হেল্পার নেই। সব কিছু এ টু জেড নিজের হাতে। এককাপ চা বানিয়ে দেবার কেউ নেই মা। আগে নসিরন বুয়া মুখের কাছে চায়ের কাপ এনে ধরতো। দেশে থাকতে কত আড্ডা দিয়েছি বন্ধুদের সঙ্গে- এখানে আড্ডা দেয়ার কথা ভাবাই যায় না। কতদিন বেড়াতে গেছি চাচার বাড়ি, মামার বাড়ি, খালার বাড়ি। এখানে এখন এসবই স্বপ্ন! মাঝে মধ্যে অবশ্য গেট টুগেদার হয়- বাঙালিরা করেন কিন্তু তাতে মন ভরে না মা!’
মা আরিফার বুকের ভেতর নদীর পাড় ভাঙার শব্দ হয়। একটা মন খারাপের হাওয়া হু হু করে বইতে থাকে। হালকা হাতে চোখ মুছে বলেন,
‘মা সইয়ে নিতে হয়। দেশের জন্য, আত্মীয়স্বজনদের জন্য মানত’ কেমন করবেই। কিন্তু ওটা যে তোমার নিজের সংসার। ওটাও তোমাকেই গুছিয়ে নিতে হবে। এক সময় সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবে। মানুষ অভ্যাসের দাস। মাগো প্রতিবছর একবার করে দেশে আসবি, কেমন? হইহল্লা করে সব কষ্ট পুষিয়ে নিবি মা আমার।
গতকালই মেয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। আজ আবার আঁধার ঘরের মানিক একমাত্র পুত্রধনের মন খারাপ। বুকের মধ্যে পাখির ছানার মতো আগলে আছে, তারপরও কী হলো বাপজানের!
আরিফা খানমের নরম মনটা ব্যথায় নীলচে হয়ে যায় যেন।
রোজা শেষ হয়ে গেল। আগামীকাল ঈদ-পবিত্র ঈদুল ফিতর। পুত্রধনের জন্য তিনপ্রস্থ কাপড় কেনা হয়েছে। প্যান্ট, শার্ট, পাজামা পাঞ্জাবি, ফতুয়া, স্যান্ডেল সুও কেনা হয়েছে একজোড়া খুব সুন্দর দেখে। কিন্তু কী হলো ছেলের! কিছুতেই মন উঠছে না। একবার নেড়ে চেড়েও দেখছে না। সারাদিন মাথা গুঁজে কী যেন সব লিখছে। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ফয়সল ছড়া লেখে, ছোটগল্প লেখার চেষ্টা করে। কিন্তু কতবার পত্রিকা অফিসে পাঠিয়েছে ‘ভোরের পাখি’, ‘রঙধনু’, ‘কিশলয়’ প্রভৃতি পত্রিকায়। ছাপার অক্ষরে আর সেগুলো দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
আজ ঈদের দিন। ফয়সল একটা নিরানন্দ ঈদ কাটাল। ছেলে হাসে না। বেশি কথা বলে না, হইচই করে মজার মজার খাবার খায় না। প্রিয় মায়ের হাতের দুধ সেমাই স্বাদ লাগে না। পোলাও কোরমা বিস্বাদ লাগে। কিচেন থেকে সুবাস বের হচ্ছে বুটের ডাল গরম মসলা আর টুকরো গরুর গোশত সিদ্ধের। শামি কাবাব হবে। আলতার মা এক্ষুনি এগুলো ব্লেন্ডারে পিষে নেবে। মা সবকিছু তদারকি করছেন। অন্যবার এর মধ্যে ফয়সল কতবার কিচেনে আসত- তাগাদা দিত। কখন ভাজবে শামি কাবাব! এবার কোন সাড়া শব্দই নেই। মায়ের মনটাও দমে যায়। কার জন্য এত আয়োজন
ফয়সলের মন উদাস। উড়– উড়–। কোন সুদূরে উড়ে বেড়াচ্ছে। কিছু ভাল লাগছে না তার। গোপন একটা হাহাকার বয়ে বেড়–াচ্ছে বুকের গহনে।
আরিফা দরজার ফাঁক দিয়ে দেখছেন কিশোর পত্রিকা। ঈদসংখ্যা ‘কিশলয়’, ‘রঙধনু’ উল্টে পাল্টে পড়ছে ফয়সল। মুখটা মলিন। এবার আরিফা সারাদিনের ক্লান্তি চেপে ছেলের ঘরে ঢোকে। নীল ছোট ছোট ফুলের গুচ্ছ ছোপানো পর্দা উড়ছে দরজাজুুড়ে। ফুল স্পিডে ফ্যান ঘুরছে। মাথা নিচু করে ফয়সল পত্রিকা দেখছে। ওর চোখ দিয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি ঝরছে। আরিফার মনটা আবার নতুন করে বেদনার্ত হয়ে ওঠে। এতটুকু ছেলে এই খুশির ঈদের রাতে কী জন্য কাঁদছে। ছেলেটার হলো কী! মোমের মতো মাতৃস্নেহ গলে গলে পড়ে আরিফা খানমের। আর তিনি নিজেকে শাসন করতে পারলেন না। ওর ঘরে পৌঁছে যান ধীর পায়ে।
‘বাবুসোনা কী হয়েছে তোর! আমাকে খুলে বল বাবা। মানিক আমার, জাদু আমার! বল মাকে সব খুলে বল।’
ফয়সল চোখ মোছে। কী বলবে ভেবে পায় না। মনে হয় তার নিজস্ব গোপন দুঃখের কথা তার মনের কুঠুরির ঘরেই আবদ্ধ থাক। এটাই ছিল তার একান্ত ইচ্ছা। কিন্তু মায়ের কাছে হাতে নাতে ধরা পড়ে গেছে সে। মায়ের চোখ ফাঁকি দেয়া কি সহজ! আসল ঘটনা হলো গত দুই বছর হলো ফয়সল ঈদসংখ্যা কিশোর পত্রিকা তিনটিতে লেখা পাঠাচ্ছে। কিন্তু সম্পাদকের মন খুশি করাতে পারছে না। ছড়া ছাপা হচ্ছে না। এতে করে ক্লাস এইটে পড়–য়া ফয়সলের কচি বুকের ভেতরটা কালো কয়লা হয়ে যাচ্ছে। ওর বন্ধু ইকবালের দুটো ছড়া ছেপেছে ঈদসংখ্যা ‘কিশলয়’। বারবার ছড়া দুটো পড়ছিল ফয়সল। ঈদের আনন্দ-১, ঈদের আনন্দ-২। ভালই হয়েছে। কিন্তু তার কবিতাটিও তো মন্দ হয়নি। ‘মন উড়ে যায়’। কত খাটাখাটনি করে ঘষামাজা করে লেখা। আর রঙধুনুতে দিয়েছিল ছড়া ‘কুসুম ফোটা ভোর’।
মাকে শেষ পর্যন্ত ফয়সল আস্তে আস্তে বলে,
‘মা আমার কিছু হয়নি। আমার ছড়া কবিতা ছাপা হয়নি ঈদসংখ্যায়। তাই কিছুই ভালো লাগছে না। এত কষ্ট করলাম। সব বৃথা মা। ছড়া ছাপা হলে আমার ঈদটা আনন্দে টইটম্বুর হয়ে উঠতো। কিন্তু সে গুড়েবালি। মন আনন্দে ভাসলো না। ভরলো শুধু অন্ধকারে, হতাশায় ও দুঃখে।’
মা অবুঝ ছেলের মাথায় সস্নেহে হাত বুলান। মায়ের সস্নেহ সান্ত¡না পেয়ে ফল্গুধারার মতো বেরিয়ে পড়ে ফয়সলের দুঃখের বুদবুদগুলো। ও বলে,
‘দেখ মা ইকবালের ছড়া ছাপা হয়েছে। আমি ক্লাসের সেকেন্ড বয়। আর ইকবালের পজিশন অষ্টম। ও আমাকে ছড়া লিখে হারিয়ে দিল! স্কুল খুললে স্যারেরা, বন্ধু-বান্ধবেরা ওকেই বাহবা দেবে। বলবে আমাদের ছড়াকার ইকবাল আহমদ। আমাকে কেউ পাত্তাই দেবে না। আর একবার ভেবে দেখ ওর ঈদটা কত খুশিতে কেটেছে। ও আমাকে ফোন দিয়েছিল। ওকে নাকি অনেকেই প্রশংসা করছে। তুমিই বল মা, আমার মনটা কেমন করে।
মা ফয়সলের কান্নাভেজা মুখটা বুকে চেপে ধরেন। মিহি আদরে সান্ত¡নার সুরে বলেন,
‘শোন রে বাবা শোন! এত অল্পতেই পিছপা হলে চলে? বড় বড় কবিরা এমনকি রবি ঠাকুর, নজরুলও প্রথম প্রথম কত নাজেহাল হয়েছেন। এমন অনেক বড় বড় কবি সাহিত্যিক লেখা নিয়ে কত দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিয়েছেন। আস্তে আস্তে তাদের প্রতিভা বিকশিত হয়েছে- একদিনে নয় কিন্তু। সফলকাম হতে অনেক সময় শ্রম মেধা খরচ করতে হয় বাবা। বড় হলে এরকম অনেক উদাহরণ পাবে। সাফল্য হঠাৎ করে আসে নারে বাপজান। ধৈর্য ধর। তোর সাফল্য আসবেই। আমি তোকে বলছি। তোর এত নিষ্ঠা, এত মন খারাপ দেখেই আমি বুঝতে পারছি তুই নিবেদিত। কিন্তু সাহিত্যজগতে এত অল্পতে নিরাশ হলে চলবে না বাবা! এবার ঈদসংখ্যায় ছাপা হয়নি। হয়তো আগামী বছর উঠবে। এর জন্য মন খারাপ করে করে ঈদটা মাটি করলি ফয়সল। বোকা ছেলে, এরকম করতে নেই সোনামণি। সফলকাম তোমাকে হতেই হবে। দৃঢ় আশা রাখ মনে, চেষ্টা চালিয়ে যাও। এখন হাত-মুখ ধুয়ে আস আর এক কাপ দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
পাখি ডাকছে। বোধ হয় টুনটুনি। ফয়সলের ঘরের জানালা বরাবর একটা ঝুপসি আমগাছ। ওরা সবাই জেগে গেছেন। আর একটু বেলা উঠলেই নাস্তার টেবিল সরগরম হয়ে উঠবে। নাস্তা রেডি। মা ডাকছেন, ‘ফয়সল বাবা আয়। পরোটা গোশত ভুনা। আমি ডিমের মামলেটটা করে আনছি।’
ফয়সল শান্ত পায়ে টেবিলের দিকে এগোয়। ডোরবেল্টা বেজে উঠলো। আরিফা খানম দরজা খুলে দিলেন। বাবা মাজেদুল খান উৎসুক চোখ মেলে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে।
একরাশ জুঁইফুলের হাসি নিয়ে দরজা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে ইকবাল। ফয়সলের সাহিত্যিক বন্ধু।
ফয়সল ম্লান মুখে তাকায় বন্ধুর দিকে। তার অন্তরে সুখ নেই। পরাজিত কালো মেঘে ছেয়ে আছে ফয়সলের ফর্সা মুখ।
তবু গলায় খানিকটা আনন্দ মিশিয়ে বলে,
‘কিরে ইকবাল কী খবর? ভেতরে আয়।’
ইকবাল এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
‘কেমন ঈদ করলি দোস্ত? ঈদ মোবারক। আন্টি-আঙ্কেল আসসালামু আলাইকুম। ঈদ মোবারক।’
ফয়সলের কাছে এসে ইকবাল বলে,
‘আমার হিরণ মামা গত পরশু নিউমার্কেট থেকে এককপি ‘ভোরের পাখি’
ঈদসংখ্যা কিনে এনেছেন। এবারের ভোরের পাখি নাকি হটকেকের মতো বিক্রি হয়ে গেছে। এতো সুন্দর অলঙ্করণ আর খাসা খাসা লেখা। সব বয়স্ক আর কিশোর কাড়াকাড়ি করে কিনে নিচ্ছে। এই দ্যাখ ‘ভোরের পাখি’ মামা আজই আমাকে দিলেন।
ফয়সল হাত বাড়িয়ে ‘ভোরের পাখি’ নিতে নিতে বলে, ‘আমাদের হকারকে কতবার বলেছি। দেয়নি। ‘রঙধুনু’ আর ‘কিশলয়’ দিয়ে গেছে। তোর লেখা আছে, ‘রঙধনুতে’।
ইকবালের যেন আর তর সয় না। ফয়সলের মলিন মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘দোস্ত এত কথা না কয়ে পত্রিকাটা দেখ। এক্কেবারে ফার্স্ট ক্লাস সুন্দর ঈদসংখ্যা। যেমন বাঁধাই, তেমন প্রচ্ছদ রঙিন ঝলমলে। প্রচ্ছদশিল্পী হামিদুর রহমান। আর সব খাসা খাসা লেখা দুর্দান্ত উপন্যাস, ছড়া মজার মজার। ছোটগল্প গোগ্রাসে গেলার মতো একে কী বলবো মজার রসগোল্লা!’
ফয়সল এবার একটু দ্রুত পত্রিকাটি হাতে নেয়। সত্যি সুন্দর বর্ণিল প্রচ্ছদ। কী মজবুত বাঁধাই! কয়েক পাতা উল্টাতেই ফয়সলের ডাগর ডাগর চোখ আরো ডাগর হয়ে যায়। এ যে তার লেখা ছড়া ‘টবের গোলাপ’। এতো সুন্দর অলঙ্করণ একবারে জ্বলজ্বল করছে। ফয়সলের গলা বুজে আসে খুশির কান্নায়। আনন্দে চিৎকার করে উড়তে চায় ও।
মা এগিয়ে আসেন। বাবাও উৎসুক চোখে চেয়ে আছেন। ইকবাল হাসিমুখে ওদের জানায়।
‘চাচা ফয়সলের ছড়া উঠেছে ঈদসংখ্যা ‘ভোরের পাখিতে’।
ফয়সল আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। একটা লাফ দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
‘মা আমার ছড়া ছাপা হয়েছে। দেখ কী সুন্দর নকশা করে ছেপেছে!
মা একনজর দেখেন। আনন্দে তাঁরও চোখে পানি এসে যায়। তাঁর ছেলের মলিন মুখে হাসি ফুটেছে দেখে। বাবাও খুশি হন।
ফয়সল ইকবালের দু’হাত জড়িয়ে ধরে টেনে নিয়ে যায় তার ঘরে। দুই বন্ধুতে আনন্দে হেসে ওঠে কুলুকুলু ঝরনার মতো। যেন এ জগতে- এ শহরে সবচেয়ে সুখী মানুষটি হলো ফয়সল। তার কোনো দুঃখ নেই, হতাশা নেই, আছে শুধু রাশি রাশি আনন্দ। ছয়তলার জানালার ফাঁক দিয়ে ঈদের দ্বিতীয় দিনের চাঁদ দেখা যায় পরিষ্কার।
ফয়সল গাঢ় আনন্দে বলে ওঠে,
‘আজকে আমার ঈদরে ইকবাল। আজ আমার ঈদ। তুই আমার খাঁটি বন্ধু।’
ততক্ষণে মা-বাবা ছুটে এসেছেন।
‘এই যে বালকেরা পত্রিকাটা আমাদের দেখাবে না। শুধু নিজেরাই দেখবে?’
ফয়সল হাসিমুখে মায়ের হাতে ‘ভোরের পাখি’ তুলে দেয়। মা আনন্দভাসা ঝরঝরে কণ্ঠে বলেন, ‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ। আজকের দিনটি কী চমৎকার? এই যে আমার ছড়াকার ছেলের ছড়া ‘টবের গোলাপ’।
বাহ্ কী সুন্দর ছন্দ!’
‘প্রাঙ্গণ’ ফ্ল্যাট বাড়িটার ছয়তলায় তখন এক আশ্চর্য আনন্দমেলা বসেছে। যার মূল্য অজুত নিযুত কোটি কোটি টাকা। নাকি তার চেয়েও অমূল্য!
========================
রম্য গল্প- 'তুচ্ছ ঘটনা' by মোহাম্মদ লিয়াকত আলী গল্প- 'নদী কত দূর' by অজিত হরি সাহু, অনুবাদ- হোসেন মাহমুদ গল্প- 'নতুন জীবনের গল্প' by মুহিব্বুর রহমান রাফে গল্প- 'বুবুর জন্য' by জুবায়ের হুসাইন গল্প- 'দ্বীপ রহস্য-০০১' by হারুন ইবনে শাহাদাত গল্প- 'নীয়নের মোবাইল পকেট' by ঝর্ণা দাশ পুরকায়স্থ গল্প- 'শুভরা জানতে চায়' by জুবাইদা গুলশান আরা গল্প- 'জোড়া ঘোড়া' by মাখরাজ খান গল্প- 'গর্ব' by আবদুল ওহাব আজাদ গল্প- 'তিতিরের ঘুড়ি' by ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থ গল্প- 'একটি বাঘের কথা' by মুহম্মদ জাফর ইকবাল ছেলেবেলার গল্প' by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম একটি ভাদ্র মাসের গল্প' by আতাউর রহমান আলোচনা- 'কবিতার জন্মকথা' by আবদুল মান্নান সৈয়দ কিশোর উপন্যাস- 'জাদুর পাখি' by সোলায়মান আহসান সম্পূর্ণ কিশোর উপন্যাস- 'হলুদ পিশাচ' by রকিব হাসান কিশোর উপন্যাস- 'সূর্যোদয়ের দিনে' by জুবাইদা গুলশান আরা কিশোর উপন্যাস- 'জোলা পালোয়ান' by আতা সরকার কিশোর উপন্যাস- 'আমাদের টম কে জানো' by আবদুল হাই শিকদার
কিশোরকন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ দিলারা মেসবাহ
এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
লেখকঃ দিলারা মেসবাহ
এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
No comments