বিজ্ঞান আলোচনা- 'হারিয়ে যাবে দানব গ্রহ!' by সাকিব রায়হান

ডব্লিউএএসপি-১২ বি আবিষ্কার হয় ২০০৮ সালে।
গত ১৫ বছরে আমাদের সৌরজগতের বাইরে যে চার শতাধিক গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে তার মধ্যে একটি অন্যতম ব্যতিক্রমধর্মী গ্রহ হচ্ছে এটি।
যাকে কেন্দ্র করে গ্রহটি ঘুরছে সেটির অবস্থান অরিগা নক্ষত্রপুঞ্জে। তারাটির ভর আনুমানিক আমাদের সূর্র্যের মতোই। অন্যান্য মহাজাগতিক গ্রহের মতোই এটির আকার বৃহৎ এবং গ্যাসীয়। আমাদের বৃহস্পতি এবং শনি গ্রহের সঙ্গে তুলনা করা যায়। তবে কিছুতেই বৃহস্পতি, শনি বা অন্য মহাজাগতিক গ্রহের মতো নয় এটি। এ গ্রহটি তার মূল তারার খুব কাছ দিয়ে কক্ষপথ অতিক্রম করছে। সূর্র্য আর পৃথিবী যে দূরত্বে রয়েছে, ওই গ্রহটি তারার চেয়েও ৭৫ গুণ বেশি কাছাকাছি রয়েছে। অর্র্থাৎ তারাটি থেকে গ্রহের দূরত্ব ১০ লাখ মাইলের সামান্য ওপরে। এর ভর বৃহস্পতি গ্রহের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি এবং আকার বৃহস্পতির চেয়ে ৬ গুণ বেশি। সঙ্গত কারণেই গ্রহটি অতি উত্তপ্ত। সেখানে দিনের তাপমাত্রা হতে পারে আড়াইহাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গবেষকরা বলছেন, গ্রহটির আকার মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার পেছনে অবশ্যই কিছু  মেকানিজম কাজ করেছে। তারাটি তার মাধ্যাকর্র্ষণ বল দিয়ে গ্রহটিকে নিজের ভেতরে নিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা করছে সে বিষয়টি গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে। সেখানে ক্রিয়া করছে টাইভাল ফোর্র্স। যেমনটি হচ্ছে পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে। ওই টাইভাল ফোর্র্সের কারণেই দিনে দু’বার নদী ও সমুদ্রে জোয়ারভাটা হচ্ছে। যেহেতু ডব্লিউএএসপি-১২ বি তার তারার খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে, তাই সেখানে মাধ্যাকর্র্ষণ বল অত্যন্ত প্রবল। আর এ কারণেই গ্রহটির আকার পাল্টে অনেকটা রাগবির (আমেরিকান ফুটবল) মতো হয়ে যাচ্ছে।
ওই মাধ্যাকর্র্ষণ বলের প্রভাবে যে গ্রহটির কেবল আকার পাল্টে যাচ্ছে তা নয়। এর গঠনশৈলীও ক্রমাগত পরিবর্র্তিত হচ্ছে। গ্রহের ভেতরে ঘটে চলেছে প্রলয়। সৃষ্টি হচ্ছে প্রচণ্ড উত্তাপের। আর এ কারণেই ফুলে-ফেঁপে দানব থেকে দানবতর হয়ে উঠছে গ্রহটি। গ্রহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা যে গ্রহের আকৃতি বাড়িয়ে দেয় এই প্রথম তার সরাসরি প্রমাণ পাওয়া গেল। উত্তপ্ত তারার কারণে গ্রহটি প্রতি সেকেন্ডে ৬০০ কোটি মেট্রিকটন ভর হারাচ্ছে। এই হার অব্যাহত থাকলে আগামী ১ কোটি বছরের মধ্যে গ্রহটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
আমাদের সৌরজগতের বাইরে একটি দানব গ্রহ কিভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা এই প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ করেছেন জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানীরা। ডব্লিউএএসপি-১২ বি নামের ওই গ্রহটি তার মূল তারার মাধ্যাকর্র্ষণ বলের কারণে আকারে বড় হয়ে যাচ্ছে এবং তারার ভেতরে নিজেকে সমর্র্পণ করতে শুরু করেছে। জ্যোতিপদার্র্থবিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক একটি দল বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং তারা বলছে, তাদের এ আবিষ্কার মহাজাগতিক গ্রহের দানব আকারের কারণ বের করাসহ অনেক না জানা রহস্যের উন্মোচন করবে। ডব্লিউএএসপি-১২ বি-তে ঠিক কী ঘটছে তা যেমন জানা যাবে, পাশাপাশি এ ব্যাপারেও পর্র্যবেক্ষণ করা যাবে যে একটি গ্রহ মৃত্যুর চূড়ান্ত স্তরে কী ধরনের আচরণ করে এবং কিভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।
ইউসি সান্তা ক্রুজে জ্যোতির্র্বিজ্ঞান এবং জ্যোতিপদার্র্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডগলাস এনসি লিন বলেছেন, এই প্রথমবারের মতো জ্যোতির্র্বিজ্ঞানীরা কোনো গ্রহকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে দেখতে পাচ্ছেন। লিন পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে কেভলি ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং চলতি গবেষণাপত্রের যুগ রচয়িতা। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচারে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ে গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চীনের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরির শু-লিন লি। তিনি কেভলি ইনস্টিটিউটের একজন স্নাতক। তারার মাধ্যাকর্র্ষণ বল কিভাবে গ্রহটিকে ঘায়েল করে ফেলছে সে বিষয়টিসহ গ্রহের পুরো মৃত্যুযাত্রা প্রত্যক্ষ ও পর্র্যবেক্ষণ করে দেখছে দল।
=======================
গল্প- 'ট্রেনের হুইসেল' by হামিদুল ইসলাম  আলোচনা- 'জীবজগতে বেঁচে থাকার কৌশল' by আরিফ হাসান  আলোচনা- 'মিনার : মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন' by শেখ মারুফ সৈকত  আলোচনা- 'ভাষা নিয়ে যত কথা' by আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়েদুল্লাহ  গল্প- 'বোকা জ্যাকের কাণ্ড' অনুবাদঃ জাফর তালুকদার  স্মৃতি ও গল্প- 'চানমিয়ার হাতি দেখা' by ড. কাজী দীন মুহম্মদ  ভ্রমণ- 'সাগরকন্যার তীরে' by এস এম ওমর ফারুক   ইতিহাস- সংবাদপত্রে যেভাবে সংবাদ এলো by জে হুসাইন  ভ্রমণ- 'আমার দেখা নরওয়ে' by অধ্যাপিকা চেমন আরা  রহস্য গল্প- 'আসল খুনি' সৌজন্যে কিশোরকন্ঠ  আলোচনা- 'নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদ' by শরীফ আবদুল গোফরান  ফিচার- 'মোরা বড় হতে চাই' by আহসান হাবীব ইমরোজ  ইসলামী গল্প- 'সেনাপতির নির্দেশ' by কায়েস মাহমুদ  ইসলামী গল্প- 'বয়ে যায় নিরন্তর' by কায়েস মাহমুদ


কিশোরকন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ সাকিব রায়হান


এই বিজ্ঞান আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.