খাদ্যচক্রে আর্সেনিক by মুশফিকুর রহমান
সুপেয় পানির জন্য হাহাকারের মধ্যেই বিশ্ব পানি দিবস উদ্যাপিত হলো। খাওয়ার পানিতে ব্যাকটেরিয়া-দূষণের তীব্রতা বুঝতে ঢাকার মহাখালী কলেরা হাসপাতালে প্রতিদিন বেড়ে চলা রোগীর ভিড় লক্ষণীয়। খোদ রাজধানীতেই পরিষ্কার পানির জন্য হাহাকার। এবারের বিশ্ব পানি দিবসের আলোচনায় অনেকের নজর কেড়েছে খাওয়ার পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি-সম্পর্কিত তথ্য। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বেশ কিছুদিন ধরেই কৃষি ফসল বিশেষত ধান ও বিভিন্ন সবজিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি নিয়ে কাজ করছে। এ নিয়ে তাদের প্রকাশনাও রয়েছে। খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানুষের শরীরে আর্সেনিকের অনুপ্রবেশ তাই নতুন তথ্য নয়।
খাওয়ার পানির জন্য রাজধানী ঢাকাতেই ভুগর্ভের পানির ওপর আমাদের নির্ভরতা প্রায় ৮৩ শতাংশ। সারা দেশেই এখন খাওয়ার ও চাষাবাদের জন্য উত্তোলিত পানির সিংহভাগ আসে ভূগর্ভের পানির উৎস থেকে। যতই দিন যাচ্ছে, দুর্লভ হয়ে উঠছে পানি। বিশেষত ভূপৃষ্ঠের পানি এত বেশি অনিরাপদ ও দূষিত হয়ে পড়েছে যে মানুষকে ভূগর্ভের পানির জন্য অস্থির হতেই হচ্ছে।
পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের জীবাণুদূষণ থেকে নিষ্কৃতি পেতে আমরা যত বেশি ভূগর্ভের পানির সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, তত বেশি সংকট স্পষ্ট হচ্ছে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে নতুন বিপদ ভূগর্ভের পানিতে আর্সেনিক বিষের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি স্পষ্ট হয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার অব্যাহত চেষ্টায় দেশের প্রায় ৫০ লাখ নলকূপের পানি পরীক্ষা করে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে যে কোন নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক-দূষণ বিদ্যমান। ‘লাল রং’ দিয়ে অতিরিক্ত দূষণের নলকূপ চিহ্নিত করা হয়েছে, যাতে মানুষ সেখান থেকে পানি পান বা রান্নার কাজে ব্যবহার না করে। তবু দেশে এখন প্রায় দুই কোটি মানুষ নলকূপের পানি থেকে আর্সেনিক-দূষণের ঝুঁকির মধ্যে। এর ফলে শুরুতে চামড়ায় কালো দাগ, হাত-পা ও শরীরের চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া, পায়ের চামড়া ফেটে যাওয়া, ঘা হওয়া, পা ফুলে যাওয়া ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, খাবারে অরুচি, শরীরে ঘা হওয়াসহ পচন রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্রমাগত আর্সেনিক গ্রহণীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করায় ফুসফুস, লিভার, কিডনি ও হার্টের বিভিন্ন রোগ বাড়ছে। মারাত্মক দূষণের ফলে ক্যানসার সৃষ্টি হচ্ছে চামড়া ও অন্যান্য অঙ্গে। শরীরে পুষ্টিমান ও ভিটামিনের অভাব হলে আর্সেনিক-দূষণে শরীরের ক্ষতি দ্রুত ও তীব্রতর হয়।
কেবল খাওয়ার পানির মাধ্যমে নয়, যেসব এলাকার মাটি ও পানিতে প্রচুর আর্সেনিকের উপস্থিত, সেখানে চাষ করা ধান, শাক-সবজিতেও আর্সেনিক সঞ্চিত হচ্ছে, যা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানুষ ও গবাদিপশুর শরীরে গিয়ে জমা হচ্ছে। গবেষণায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আর্সেনিক-দূষণে আক্রান্ত এলাকায় মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ আর্সেনিক বিষ শরীরে প্রবিষ্ট হচ্ছে, তার প্রায় ৪৬ শতাংশ খাওয়ার পানি, ৩৭ শতাংশ ভাত এবং ১৭ শতাংশ শাক-সবজি, ফলমূল ও মাছ-মাংসের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করছে। আর্সেনিক বিষ রান্না করলেও নষ্ট হয় না। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের জন্য দিনে প্রায় ২০০ মাইক্রোগ্রাম মাত্রায় আর্সেনিক দূষণ গ্রহণীয়। অনেকেই পানীয় জল ও খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এর চেয়ে বেশি মাত্রায় আর্সেনিক দৈনিক গ্রহণ করছে।
সৌভাগ্যের বিষয়, খাবার ও পানির সঙ্গে আমাদের শরীরে যে আর্সেনিক অনুপ্রবেশ করে, তার সিংহভাগ (৮০ শতাংশ) আর্সেনিকের জৈব যৌগ। শারীরিক বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় জৈব আর্সেনিক যৌগ অনেকটুকুই নিষ্কাশিত হয়। গবেষকেরা জৈব আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রমাণ এখনো পাননি। তবে অজৈব যৌগ হিসেবে শরীরে অনুপ্রবেশ করা আর্সেনিক নিষ্ক্রিয় হয় না এবং এর বিষক্রিয়া শরীরে স্পষ্ট হয়। পানীয় জলের মাধ্যমেই প্রধানত অজৈব আর্সেনিক যৌগ শরীরে অনুপ্রবেশ করে।
ভূগর্ভের পানির অতি উত্তোলনে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আর্সেনিক দ্রুত ও বর্ধিত হারে পানিতে মেশে বলে ব্যাপক ধারণা প্রচলিত হলেও ভূ-বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, পানিতে আর্সেনিক-দূষণের উৎস আমাদের দেশে এমন প্রক্রিয়ায় ঘটছে না। বরং এখন তাঁরা বিশ্বাস করেন যে প্রধানত ভূগর্ভস্থ পানির সন্নিহিত মাটিতে বিদ্যমান আর্সেনিক আয়রন হাইড্রো-অক্সাইড জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আর্সেনিক বিমুক্ত করে এবং তা ভূগর্ভের পানিতে এসে মেশে।
সেচ ও পানীয় জলের জন্য আমাদের নির্ভরতা এখনো প্রধানত গভীর, স্বল্প গভীর ও অগভীর নলকূপনির্ভর। শিগগিরই এই নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা সহজ নয়। তা ছাড়া ভূমি গঠন ও আর্সেনিকের উৎসসমৃদ্ধ এলাকায় জৈব রসায়নিক বিক্রিয়ায় যেহেতু ভূগর্ভের পানিতে আর্সেনিকদূষণ ঘটে; সে কারণে অল্প বা বেশি পানিদূষণ সম্ভাবনার ভূগর্ভের উৎস থেকে পানি তুললে তেমন হেরফের হবে না। বরং জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পানিতে আর্সেনিক মেশার সুযোগ থাকলে এবং সেই স্থান থেকে পানি উত্তোলন করলে তা আর্সেনিক-দূষণে আক্রান্ত হবে।
সে ক্ষেত্রে আর্সেনিক-দূষণমুক্ত পানির জন্য দূষণমুক্ত ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে পানি তুলতে হবে। এ ছাড়া ভূপৃষ্ঠের পানি, বৃষ্টির পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ জন্য একক কোনো ব্যবস্থা কেউই সুপারিশ করছে না। বরং যেখানে যেমন বাস্তবানুগ ও টেকসই, তেমন প্রযুক্তি বেছে নেওয়া দরকার। কোথাও গভীর নলকূপ, কোথাও পাতকুয়া, কোথাও বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার; আবার সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবস্থানির্ভর ফিল্টার দিয়ে দূষণাক্রান্ত পানি শোধন করে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই একাধিক সমাধান যৌথভাবে ব্যবহূত হতে পারে।
বিভিন্ন দাতা সংস্থা, সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল সংস্থাসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলো কাজ করছে মানুষের অংশগ্রহণমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহব্যবস্থা গড়তে।
তা ছাড়া দেশে সেচের জন্যই ভূগর্ভের পানির অধিকাংশ ব্যবহূত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি পরিমিত মাত্রায় সেচ দেওয়ার জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এখন যেভাবে ধান, সবজি বা অন্যান্য কৃষি ফসলে সেচ দেওয়া হয়, তার চেয়ে অনেক কম পানি ব্যবহার করেও এর চেয়ে বেশি ফসল পাওয়ার প্রযুক্তি ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে।
আর্সেনিক বিষে আক্রান্ত হলে তা নিরাময়ের কোনো ওষুধ এখনো নেই। তবে দূষণের কারণ যে পানি ও খাবার, তা থেকে রোগীকে সরিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন। প্রতিদিন প্রত্যেকের জন্য তিন লিটার খাওয়ার পানি ছাড়াও অন্তত ২০ লিটার বিশুদ্ধ পানি ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চত করাই আমাদের এখন বিশাল চ্যালেঞ্জ।
ড. মুশফিকুর রহমান: পরিবেশ বিষয়ক লেখক।
খাওয়ার পানির জন্য রাজধানী ঢাকাতেই ভুগর্ভের পানির ওপর আমাদের নির্ভরতা প্রায় ৮৩ শতাংশ। সারা দেশেই এখন খাওয়ার ও চাষাবাদের জন্য উত্তোলিত পানির সিংহভাগ আসে ভূগর্ভের পানির উৎস থেকে। যতই দিন যাচ্ছে, দুর্লভ হয়ে উঠছে পানি। বিশেষত ভূপৃষ্ঠের পানি এত বেশি অনিরাপদ ও দূষিত হয়ে পড়েছে যে মানুষকে ভূগর্ভের পানির জন্য অস্থির হতেই হচ্ছে।
পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের জীবাণুদূষণ থেকে নিষ্কৃতি পেতে আমরা যত বেশি ভূগর্ভের পানির সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, তত বেশি সংকট স্পষ্ট হচ্ছে। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে নতুন বিপদ ভূগর্ভের পানিতে আর্সেনিক বিষের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি স্পষ্ট হয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার অব্যাহত চেষ্টায় দেশের প্রায় ৫০ লাখ নলকূপের পানি পরীক্ষা করে নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে যে কোন নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক-দূষণ বিদ্যমান। ‘লাল রং’ দিয়ে অতিরিক্ত দূষণের নলকূপ চিহ্নিত করা হয়েছে, যাতে মানুষ সেখান থেকে পানি পান বা রান্নার কাজে ব্যবহার না করে। তবু দেশে এখন প্রায় দুই কোটি মানুষ নলকূপের পানি থেকে আর্সেনিক-দূষণের ঝুঁকির মধ্যে। এর ফলে শুরুতে চামড়ায় কালো দাগ, হাত-পা ও শরীরের চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া, পায়ের চামড়া ফেটে যাওয়া, ঘা হওয়া, পা ফুলে যাওয়া ও কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, খাবারে অরুচি, শরীরে ঘা হওয়াসহ পচন রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্রমাগত আর্সেনিক গ্রহণীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় শরীরে প্রবেশ করায় ফুসফুস, লিভার, কিডনি ও হার্টের বিভিন্ন রোগ বাড়ছে। মারাত্মক দূষণের ফলে ক্যানসার সৃষ্টি হচ্ছে চামড়া ও অন্যান্য অঙ্গে। শরীরে পুষ্টিমান ও ভিটামিনের অভাব হলে আর্সেনিক-দূষণে শরীরের ক্ষতি দ্রুত ও তীব্রতর হয়।
কেবল খাওয়ার পানির মাধ্যমে নয়, যেসব এলাকার মাটি ও পানিতে প্রচুর আর্সেনিকের উপস্থিত, সেখানে চাষ করা ধান, শাক-সবজিতেও আর্সেনিক সঞ্চিত হচ্ছে, যা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানুষ ও গবাদিপশুর শরীরে গিয়ে জমা হচ্ছে। গবেষণায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আর্সেনিক-দূষণে আক্রান্ত এলাকায় মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ আর্সেনিক বিষ শরীরে প্রবিষ্ট হচ্ছে, তার প্রায় ৪৬ শতাংশ খাওয়ার পানি, ৩৭ শতাংশ ভাত এবং ১৭ শতাংশ শাক-সবজি, ফলমূল ও মাছ-মাংসের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করছে। আর্সেনিক বিষ রান্না করলেও নষ্ট হয় না। পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষের জন্য দিনে প্রায় ২০০ মাইক্রোগ্রাম মাত্রায় আর্সেনিক দূষণ গ্রহণীয়। অনেকেই পানীয় জল ও খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে এর চেয়ে বেশি মাত্রায় আর্সেনিক দৈনিক গ্রহণ করছে।
সৌভাগ্যের বিষয়, খাবার ও পানির সঙ্গে আমাদের শরীরে যে আর্সেনিক অনুপ্রবেশ করে, তার সিংহভাগ (৮০ শতাংশ) আর্সেনিকের জৈব যৌগ। শারীরিক বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় জৈব আর্সেনিক যৌগ অনেকটুকুই নিষ্কাশিত হয়। গবেষকেরা জৈব আর্সেনিকের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রমাণ এখনো পাননি। তবে অজৈব যৌগ হিসেবে শরীরে অনুপ্রবেশ করা আর্সেনিক নিষ্ক্রিয় হয় না এবং এর বিষক্রিয়া শরীরে স্পষ্ট হয়। পানীয় জলের মাধ্যমেই প্রধানত অজৈব আর্সেনিক যৌগ শরীরে অনুপ্রবেশ করে।
ভূগর্ভের পানির অতি উত্তোলনে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় আর্সেনিক দ্রুত ও বর্ধিত হারে পানিতে মেশে বলে ব্যাপক ধারণা প্রচলিত হলেও ভূ-বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, পানিতে আর্সেনিক-দূষণের উৎস আমাদের দেশে এমন প্রক্রিয়ায় ঘটছে না। বরং এখন তাঁরা বিশ্বাস করেন যে প্রধানত ভূগর্ভস্থ পানির সন্নিহিত মাটিতে বিদ্যমান আর্সেনিক আয়রন হাইড্রো-অক্সাইড জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে আর্সেনিক বিমুক্ত করে এবং তা ভূগর্ভের পানিতে এসে মেশে।
সেচ ও পানীয় জলের জন্য আমাদের নির্ভরতা এখনো প্রধানত গভীর, স্বল্প গভীর ও অগভীর নলকূপনির্ভর। শিগগিরই এই নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসা সহজ নয়। তা ছাড়া ভূমি গঠন ও আর্সেনিকের উৎসসমৃদ্ধ এলাকায় জৈব রসায়নিক বিক্রিয়ায় যেহেতু ভূগর্ভের পানিতে আর্সেনিকদূষণ ঘটে; সে কারণে অল্প বা বেশি পানিদূষণ সম্ভাবনার ভূগর্ভের উৎস থেকে পানি তুললে তেমন হেরফের হবে না। বরং জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পানিতে আর্সেনিক মেশার সুযোগ থাকলে এবং সেই স্থান থেকে পানি উত্তোলন করলে তা আর্সেনিক-দূষণে আক্রান্ত হবে।
সে ক্ষেত্রে আর্সেনিক-দূষণমুক্ত পানির জন্য দূষণমুক্ত ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে পানি তুলতে হবে। এ ছাড়া ভূপৃষ্ঠের পানি, বৃষ্টির পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ জন্য একক কোনো ব্যবস্থা কেউই সুপারিশ করছে না। বরং যেখানে যেমন বাস্তবানুগ ও টেকসই, তেমন প্রযুক্তি বেছে নেওয়া দরকার। কোথাও গভীর নলকূপ, কোথাও পাতকুয়া, কোথাও বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার; আবার সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবস্থানির্ভর ফিল্টার দিয়ে দূষণাক্রান্ত পানি শোধন করে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই একাধিক সমাধান যৌথভাবে ব্যবহূত হতে পারে।
বিভিন্ন দাতা সংস্থা, সরকারের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল সংস্থাসহ অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলো কাজ করছে মানুষের অংশগ্রহণমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহব্যবস্থা গড়তে।
তা ছাড়া দেশে সেচের জন্যই ভূগর্ভের পানির অধিকাংশ ব্যবহূত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠের পানির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগের পাশাপাশি পরিমিত মাত্রায় সেচ দেওয়ার জন্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এখন যেভাবে ধান, সবজি বা অন্যান্য কৃষি ফসলে সেচ দেওয়া হয়, তার চেয়ে অনেক কম পানি ব্যবহার করেও এর চেয়ে বেশি ফসল পাওয়ার প্রযুক্তি ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে।
আর্সেনিক বিষে আক্রান্ত হলে তা নিরাময়ের কোনো ওষুধ এখনো নেই। তবে দূষণের কারণ যে পানি ও খাবার, তা থেকে রোগীকে সরিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন। প্রতিদিন প্রত্যেকের জন্য তিন লিটার খাওয়ার পানি ছাড়াও অন্তত ২০ লিটার বিশুদ্ধ পানি ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চত করাই আমাদের এখন বিশাল চ্যালেঞ্জ।
ড. মুশফিকুর রহমান: পরিবেশ বিষয়ক লেখক।
No comments