জুন থেকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ও পরীক্ষামূলক ঋণ তথ্য -কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবি আধুনিকায়ন হচ্ছে
আগামী বছরের জুন মাস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার আওতায় আসবে। এ সময় থেকে অনলাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ঋণ তথ্য পাওয়ার কার্যক্রম চালু করা হবে।
আর অক্টোবর মাস নাগাদ পুরোমাত্রায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের তথ্য অনলাইনে দেওয়ার পদক্ষেপ ও প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
স্বয়ংক্রিয় ঋণ তথ্য ব্যুরো প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গতকাল রোববার এসব বিষয় জানানো হয়। রাজধানীর ঢাকা শেরাটন হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান প্রধান অতিথি ছিলেন।
প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিএফআইডি। আর কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)।
জুন মাসে সিআইবির অনলাইন কার্যক্রম শুরু হলেও একই সঙ্গে প্রচলিত ম্যানুয়াল কার্যক্রম চলবে। এ সময় ব্যাংকগুলোকে পৃথক পৃথক পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআইবির উপাত্ত ভাণ্ডারে প্রবেশ করতে পারবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ব্যাংকের কোনো শাখায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণের আবেদন করলে ওই শাখা প্রধান কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিস্তারিত তথ্য পাঠিয়ে ঋণের তথ্য জানতে চায়। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় শাখার আবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গ্রাহকের ঋণ তথ্য সংগ্রহ করে শাখায় পাঠায়।
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে বেশ কয়েক দিন এমনকি মাসাধিকাল সময় লাগে। পুরোপুরি অনলাইন ব্যবস্থা চালু হলে তাত্ক্ষণিকভাবে এসব তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে।
গতকালের অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইএফসির আর্থিক বাজার বিশেষজ্ঞ এম রেহান রেশাদ ও ডিএফআইডি কর্মকর্তা ক্যাথরিন মার্টিন। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আতিউর রহমান বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে সময়মতো সেবা দেওয়ার জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা খুবই জরুরি। এর ফলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।
গভর্নর বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দ্রুত ঋণের তথ্য দেওয়া, তথ্য-উপাত্ত প্রক্রিয়া করা ও সংরক্ষণের জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা জরুরি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনতে বেশ আগ থেকে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এই কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজস্ব কম্পিউটারে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব অনলাইন ব্যবস্থায় ঢুকে নিমিষেই গ্রাহকের ঋণ তথ্য পেয়ে যাবে।
গভর্নর জানান, ঋণের জন্য সিআইবিতে যে পরিমাণ আবেদন আসে, সে তুলনায় এর সক্ষমতা অপ্রতুল। এ ছাড়া কৃষি ও এসএমই খাতে ঋণ প্রসারের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে ঋণ তথ্য ব্যবস্থাপনা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। সে কারণেও সিআইবির সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।
এম রেহান রেশাদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোর বিকাশে অর্থায়নের সুযোগ প্রাপ্তি একটা বড় বাধা। এ অবস্থা পরিবর্তনে আইএফসি বিভিন্ন পদ্ধতিও অবকাঠামো বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়ে আসছে।
সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ চৌধুরী বলেন, স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় অনলাইনে ঋণ তথ্য পেলে ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়েই উপকৃত হবেন। তিনি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বড় শাখাগুলো সরাসরি এ তথ্য অনলাইন থেকে পাবে কি না তা জানতে চান। জবাবে গভর্নর বলেন, কোনো শাখায় যদি সে ধরনের ব্যবস্থা ও উপযুক্ততা থাকে তবে অবশ্যই এ সুযোগ দেওয়া হবে।
No comments