‘আমাদের স্কুলেযেতে দাও’
হঠাত্ বিস্ফোরণ, আগুন, ধোঁয়ার কুণ্ডলী, ধ্বংসস্তূপ। চারদিকে চিত্কার। এখানে-সেখানে রক্তের ছোপ, খণ্ডিত মাংস। বাঁচাও বাঁচাও বলে আকুতি। বীভত্স সব ঘটনা। সেই সঙ্গে দারিদ্র্যের কশাঘাত এসবের মধ্যেই বসবাস গাজা ভূখণ্ডের কোমলমতি শিশুদের। একদিকে ক্ষুধা আর অন্যদিকে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর হাতছানি। এর মধ্যেও শিশুরা শিক্ষা চায়। তারা জানে, শিক্ষা নেওয়ার অধিকার তাদেরও আছে। তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে চায় না।
ইসরায়েল গত জানুয়ারি মাসে গাজা ভূখণ্ডে সেনা অভিযান চালায়। এতে ৪০০ মানুষ নিহত ও এক হাজার ৮০০ আহত হয়। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড শিশুদের কোমল হূদয়ে যুদ্ধের ভীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে। শিশুরা ওই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছে না। যুদ্ধে তাদের কেউ বাবা-মা, কেউ ভাইবোন, বন্ধু, স্বজন হারিয়েছে। গোলার আঘাতে উড়ে গেছে তাদের কারও বসতঘর, প্রিয় স্কুল। তাই কোনোভাবেই তারা স্বাভাবিক হতে পারছে না।
নয় বছরের শিশু হুদা এলিয়েন। জানুয়ারিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের বসতবাড়িটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। হামলায় তার কয়েকজন স্বজন নিহত হয়েছে। হুদার বাবা আমির এখন আতঙ্কিত। কারণ সামনেই শীত। ওই সময় শীতের হাত থেকে বাঁচতে ঘর মেরামতের সামর্থ্যও তাঁর নেই। তিন বছর ধরে তিনি কাজ করতে পারছেন না। গাজা সীমান্তে ইসরায়েল কড়াকড়ি আরোপ করায় তিনি যে অন্যত্র গিয়ে কাজ করবেন, তাও পারছেন না। আমিরের বুকভরা আশা, ছেলে হুদা দারিদ্র্য ও যুদ্ধকে জয় করে স্কুল পাস করবেই। এরপর হয়তো ইচ্ছা থাকলেও তিনি আর ছেলেকে পড়ালেখা করাতে পারবেন না। জানালেন, ‘স্কুল পাসের পরই ভাইবোনের সঙ্গে পরিবারের আয়-উপার্জনে নেমে পড়তে হবে হুদাকে।’
মাহমুদ জাকুত নামে আরেক শিশু জানায়, সে শিক্ষা চায়। কিন্তু ইসরায়েলিরা তা করতে দিচ্ছে না। তারা বোমা মেরে স্কুল উড়িয়ে দিয়েছে। জাকুত বলে, ‘আমরা নিষ্পাপ। ইসরায়েলিরা কেন আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে? ইসরায়েলি শিশুদের মতো আমাদেরও তো স্কুলে যাওয়ার অধিকার আছে।’
গাজার শিশুরা অবশ্য জানে, শিক্ষা নিয়েও খুব বেশি একটা ফায়দা হবে না তাদের। কারণ, গাজায় চাকরির সুযোগ নেই। এখানে প্রায় সবাই বেকার। গাজা থেকে পালিয়ে অন্যত্র গিয়ে চাকরি, তাও সম্ভব নয়। কারণ ইসরায়েল ও মিসরীয় সেনারা গাজা সীমান্ত অতিক্রম করতে দেয় না। তাই অবরুদ্ধ গাজায় দুঃসহ জীবনই তাদের সঙ্গী।
১৭ জানুয়ারি ইসরায়েল ফসফরাস বোমা মেরে গাজার বেইতলাহিয়া এলিমেন্টারি নামের স্কুলটি ধ্বংস করে দেয়। জাতিসংঘ স্কুলটি চালাচ্ছিল। সেখানে যুদ্ধবিধ্বস্ত লোকজন আশ্রয় নিয়েছিল। জাতিসংঘ বারবার বলেছিল, সেখানে জঙ্গি নেই। কিন্তু ইসরায়েল বলেছে, ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের হাত থেকে ইসরায়েলি সেনাদের নিরাপত্তায় তারা সেখানে হামলা চালিয়েছে। জানুয়ারিতে ইসরায়েলি হামলায় কম করে হলেও গাজার ২৮০টি স্কুল ধ্বংস হয়েছে। শুধু ইসরায়েলের হামলায় নয়, গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ সহিংসতারও শিকার এখানকার শিশুরা।
কিছু স্কুল কোনোমতে মেরামত করে রং করেছে গাজার লোকজন। কিন্তু তারা তাদের সন্তানদের মন থেকে যুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি মুছতে পারেনি। হাজার হাজার শিশু মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলের শিক্ষক হাল্লা আবেয়া যেমনটা বলছিলেন, ‘শিশুরা লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না। তারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে এবং সামাজিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।’ শিশু হুদা জানায়, সে স্বপ্নে ফসফরাস বোমা জ্বলতে দেখে। ইসরায়েলিরা আবার ধেয়ে আসছে, তাদের ওপর বোমা ফেলছে। শিশুরা ঠিকই স্কুলে আসে, খেলাধুলাও করে; কিন্তু তারা কিছুতেই যুদ্ধের বীভত্স স্মৃতি ভুলতে পারে না।
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলিদের অনেকেই জানায়, ‘জানুয়ারির যুদ্ধ ঠিকই শেষ হয়েছে, কিন্তু এটাই শেষ নয়। আসলে গাজায় জন্ম নেওয়া মানেই শিশুদের যুদ্ধের সঙ্গে বেড়ে ওঠা।’—বিবিসি অবলম্বনে মনিরুল ইসলাম
ইসরায়েল গত জানুয়ারি মাসে গাজা ভূখণ্ডে সেনা অভিযান চালায়। এতে ৪০০ মানুষ নিহত ও এক হাজার ৮০০ আহত হয়। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এসব হত্যাকাণ্ড শিশুদের কোমল হূদয়ে যুদ্ধের ভীতি ঢুকিয়ে দিয়েছে। শিশুরা ওই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারছে না। যুদ্ধে তাদের কেউ বাবা-মা, কেউ ভাইবোন, বন্ধু, স্বজন হারিয়েছে। গোলার আঘাতে উড়ে গেছে তাদের কারও বসতঘর, প্রিয় স্কুল। তাই কোনোভাবেই তারা স্বাভাবিক হতে পারছে না।
নয় বছরের শিশু হুদা এলিয়েন। জানুয়ারিতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের বসতবাড়িটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। হামলায় তার কয়েকজন স্বজন নিহত হয়েছে। হুদার বাবা আমির এখন আতঙ্কিত। কারণ সামনেই শীত। ওই সময় শীতের হাত থেকে বাঁচতে ঘর মেরামতের সামর্থ্যও তাঁর নেই। তিন বছর ধরে তিনি কাজ করতে পারছেন না। গাজা সীমান্তে ইসরায়েল কড়াকড়ি আরোপ করায় তিনি যে অন্যত্র গিয়ে কাজ করবেন, তাও পারছেন না। আমিরের বুকভরা আশা, ছেলে হুদা দারিদ্র্য ও যুদ্ধকে জয় করে স্কুল পাস করবেই। এরপর হয়তো ইচ্ছা থাকলেও তিনি আর ছেলেকে পড়ালেখা করাতে পারবেন না। জানালেন, ‘স্কুল পাসের পরই ভাইবোনের সঙ্গে পরিবারের আয়-উপার্জনে নেমে পড়তে হবে হুদাকে।’
মাহমুদ জাকুত নামে আরেক শিশু জানায়, সে শিক্ষা চায়। কিন্তু ইসরায়েলিরা তা করতে দিচ্ছে না। তারা বোমা মেরে স্কুল উড়িয়ে দিয়েছে। জাকুত বলে, ‘আমরা নিষ্পাপ। ইসরায়েলিরা কেন আমাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে? ইসরায়েলি শিশুদের মতো আমাদেরও তো স্কুলে যাওয়ার অধিকার আছে।’
গাজার শিশুরা অবশ্য জানে, শিক্ষা নিয়েও খুব বেশি একটা ফায়দা হবে না তাদের। কারণ, গাজায় চাকরির সুযোগ নেই। এখানে প্রায় সবাই বেকার। গাজা থেকে পালিয়ে অন্যত্র গিয়ে চাকরি, তাও সম্ভব নয়। কারণ ইসরায়েল ও মিসরীয় সেনারা গাজা সীমান্ত অতিক্রম করতে দেয় না। তাই অবরুদ্ধ গাজায় দুঃসহ জীবনই তাদের সঙ্গী।
১৭ জানুয়ারি ইসরায়েল ফসফরাস বোমা মেরে গাজার বেইতলাহিয়া এলিমেন্টারি নামের স্কুলটি ধ্বংস করে দেয়। জাতিসংঘ স্কুলটি চালাচ্ছিল। সেখানে যুদ্ধবিধ্বস্ত লোকজন আশ্রয় নিয়েছিল। জাতিসংঘ বারবার বলেছিল, সেখানে জঙ্গি নেই। কিন্তু ইসরায়েল বলেছে, ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের হাত থেকে ইসরায়েলি সেনাদের নিরাপত্তায় তারা সেখানে হামলা চালিয়েছে। জানুয়ারিতে ইসরায়েলি হামলায় কম করে হলেও গাজার ২৮০টি স্কুল ধ্বংস হয়েছে। শুধু ইসরায়েলের হামলায় নয়, গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ সহিংসতারও শিকার এখানকার শিশুরা।
কিছু স্কুল কোনোমতে মেরামত করে রং করেছে গাজার লোকজন। কিন্তু তারা তাদের সন্তানদের মন থেকে যুদ্ধের দুঃসহ স্মৃতি মুছতে পারেনি। হাজার হাজার শিশু মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে। জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলের শিক্ষক হাল্লা আবেয়া যেমনটা বলছিলেন, ‘শিশুরা লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে পারে না। তারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে এবং সামাজিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।’ শিশু হুদা জানায়, সে স্বপ্নে ফসফরাস বোমা জ্বলতে দেখে। ইসরায়েলিরা আবার ধেয়ে আসছে, তাদের ওপর বোমা ফেলছে। শিশুরা ঠিকই স্কুলে আসে, খেলাধুলাও করে; কিন্তু তারা কিছুতেই যুদ্ধের বীভত্স স্মৃতি ভুলতে পারে না।
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলিদের অনেকেই জানায়, ‘জানুয়ারির যুদ্ধ ঠিকই শেষ হয়েছে, কিন্তু এটাই শেষ নয়। আসলে গাজায় জন্ম নেওয়া মানেই শিশুদের যুদ্ধের সঙ্গে বেড়ে ওঠা।’—বিবিসি অবলম্বনে মনিরুল ইসলাম
No comments