কার্যালয় না থাকলেও কম্পিউটারসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী দেওয়ার উদ্যোগ



দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) তার অধিভুক্ত সব ব্যবসায়ী সমিতির দক্ষতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে সমিতিগুলোর কার্যালয়ে কম্পিউটার, প্রিন্টার, ইউপিএস, ফটোকপিয়ার, ফ্যাক্স মেশিন ও আইপিএস দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
এ কাজে অর্থায়নের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে অর্থের পরিমাণ এখনো নির্ধারিত হয়নি। এতে অধিভুক্ত সমিতিগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশের নিজস্ব কার্যালয় না থাকায় অর্থ অপচয় হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এফবিসিসিআইয়ের অধিভুক্ত ২৬৩টি ব্যবসায়ী সমিতি রয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ সমিতির নিজস্ব কার্যালয় নেই। এগুলো পরিচালিত হয় সংশ্লিষ্ট সমিতির সভাপতির নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থেকে। আবার অনেক সমিতির ঠিকানায় গিয়ে তাদের পাওয়া যায় না। অর্থাত্ ভুয়া ঠিকানা ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে অনেকে এফবিসিসিআইয়ের ভোটার হয়েছে।
ফলে এ ধরনের সমিতিকে এসব সামগ্রী দিলে সমিতির দক্ষতা কীভাবে বাড়বে, তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এসব সামগ্রী সভাপতি নিজের কার্যালয়ের কাজে লাগাবেন, যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সমিতির সদস্যদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে গত ২৫ আগস্ট এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি আবু আলম চৌধুরী ফেডারেশনের প্যাড ব্যবহার করে বিভিন্ন সমিতিকে কম্পিউটার, প্রিন্টার, ইউপিএস, ফটোকপিয়ার, ফ্যাক্স মেশিন ও আইপিএস দেওয়ার ব্যাপারে চিঠি লিখেছেন। এ ক্ষেত্রে ‘কম্পিউটার, প্রিন্টার ও ইউপিএস’ অথবা ‘ফটোকপিয়ার’ অথবা ‘ফ্যাক্স মেশিন ও আইপিএস’—যেকোনো একটি প্যাকেজ বাছাই করে এফবিসিসিআইকে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।
তবে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের চিঠি দেওয়ায় পরিচালনা পর্ষদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্য বলেছেন, পর্ষদের সিদ্ধান্ত ছাড়া এ ধরনের চিঠি দেওয়া ঠিক হয়নি।
তবে সংগঠনের সভাপতি বলেছেন অন্য কথা। তাঁর মতে, পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন না নিয়েও সভাপতি যে কাউকে যেকোনো দায়িত্ব দিতে পারেন।
যোগাযোগ করা হলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমিতির কার্যালয় আছে কি না, এটা দেখার দায়িত্ব এফবিসিসিআইয়ের নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সমিতিগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃত সংগঠনের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এফবিসিসিআই উদ্যোগ নিয়েছে।’
আনিসুল হক আরও বলেন, সভাপতি হিসেবে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াও কিছু দায়িত্ব যে কাউকে দেওয়া যায়। কাজ শেষে পরিচালনা পর্ষদের চূড়ান্ত অনুমোদন নিলেই চলে।
অন্যদিকে এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি আবু আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সভাপতি দায়িত্ব দিয়েছেন বলেই তিনি সমিতিগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘অনেক সমিতি পকেট সমিতি বা প্যাডসর্বস্ব হলেও তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃত ও এফবিসিসিআইয়ের সদস্য। ফলে কার্যালয় রয়েছে এমন সমিতিগুলোকে কোনো সামগ্রী দেওয়া হলে সংগঠনের সদস্য হিসেবে অন্য সমিতিগুলোকেও তা দিতে হবে। তারাও বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ করে এফবিসিসিআইয়ের সদস্য হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, দেশের বিভিন্ন জেলা চেম্বারগুলোর নিজস্ব ভবন তৈরি করার জন্য ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এফবিসিসিআইকে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ অর্থ দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা চেম্বারের উন্নয়নে ব্যয় করা হলেও গত রমজানে দ্রব্যমূল্য কমানোর ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ওপর এফবিসিসিআইয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।

No comments

Powered by Blogger.