সমর্থকদের অভিযোগ: ইরানে নোবেলজয়ী নার্গেস মোহাম্মদীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে

ইরানের নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ও নারী অধিকারকর্মী নার্গেস মোহাম্মদীকে ‘সহিংসভাবে গ্রেপ্তার’ করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এ অভিযোগ করেছে তার প্রতিষ্ঠিত ‘নার্গেস ফাউন্ডেশন’। তারা জানিয়েছে, ৫৩ বছর বয়সী নার্গেস মোহাম্মদীকে ইরানের পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে অন্যান্য অধিকারকর্মীদের সঙ্গে আটক করা হয়েছে। নোবেল কমিটি এ ঘটনাকে নার্গেস মোহাম্মদীর নির্মম গ্রেপ্তারে গভীর উদ্বেগজনক জানিয়েছে। তারা ইরানি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অবিলম্বে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে, তার নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে এবং শর্তহীনভাবে তাকে মুক্তি দিতে। এ বিষয়ে ইরান কোনো মন্তব্য করেনি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকার জন্য ২০২৩ সালে নার্গেস মোহাম্মদী নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে চিকিৎসাজনিত কারণে তাকে তিন সপ্তাহের জন্য সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়া হয়। তিনি ২০২১ সাল থেকে তেহরানের কুখ্যাত এভিন কারাগারে বন্দি ছিলেন। এরপর আবার কারাগারে ফেরার কথা ছিল, সেখানে তিনি একাধিক সাজা ভোগ করছিলেন। খবর অনুযায়ী, সর্বশেষ গ্রেপ্তারটি ঘটে যখন তিনি আইনজীবী খসরু আলিকর্দির স্মরণসভায় অংশ নিতে যান। আলিকর্দিকে গত সপ্তাহে তার কার্যালয়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। নরওয়েভিত্তিক সংগঠন ‘ইরান হিউম্যান রাইটস’ তার মৃত্যুর পরিস্থিতিকে ‘সন্দেহজনক’ বলে উল্লেখ করে স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছে। স্মরণসভায় আরও কয়েকজন অধিকারকর্মীকেও আটক করা হয়। সেখানে স্বৈরশাসকের মৃত্যু হোক ও ইরান দীর্ঘজীবী হোক- এমন স্লোগান দেয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।

নার্গেস মোহাম্মদীর স্বামী তাগি রহমানি বিবিসি পার্সিয়ানকে বলেন, তারা নার্গেসকে সহিংসভাবে গ্রেপ্তার করেছে। ওই আইনজীবীর ভাই স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি গ্রেপ্তারের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছেন। এই কাজ মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী এবং একধরনের প্রতিশোধমূলক আচরণ। মাশহাদে ঘটনাটি ঘটেছে, যা উদ্বেগজনক। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন আরও তীব্র হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নার্গেস মোহাম্মদী অভিযোগ করেন, জুনে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর ইরানি কর্তৃপক্ষ দমননীতি আরও জোরদার করেছে।

গত সপ্তাহে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ইরানি রাষ্ট্র ব্যক্তিগত ও জনজীবনের সব দিক নিয়ন্ত্রণ করছে। তিনি বলেন, নজরদারি, সেন্সরশিপ, নির্বিচার গ্রেপ্তার, নির্যাতন এবং স্থায়ী সহিংসতার হুমকিতে তাদের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে। তিনি নোবেল কমিটিকেও জানিয়েছিলেন, শাসকগোষ্ঠীর এজেন্টদের কাছ থেকে পরোক্ষ পথে ও তার আইনজীবীদের মাধ্যমে তিনি হুমকি পেয়েছেন।

নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, নার্গেস মোহাম্মদীর প্রতি পাঠানো হুমকিগুলো স্পষ্ট করে যে তার নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে, যদি না তিনি ইরানের ভেতরে সব ধরনের জনসম্পৃক্ততা এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক তৎপরতা বা গণমাধ্যমে উপস্থিতি বন্ধে সম্মত হন। গত এক বছরে তিনি অবিচল থেকেছেন। বাধ্যতামূলক হিজাব পরতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং সারা দেশে সহকর্মী অধিকারকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তার ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, জীবদ্দশায় নার্গেস মোহাম্মদীকে ১৩ বার গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাকে মোট ৩৬ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড ও ১৫৪ বেত্রাঘাতের সাজা দেয়া হয়েছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.