‘আমরা কি মানুষ না’—ইসরায়েলের তাণ্ডবে বৈরুতবাসীর ক্ষোভ
কোনো রকমের পূর্বসতর্কতা দেওয়া ছাড়াই গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় ভোররাত চারটার দিকে বৈরুতে এ হামলা চালায় ইসরায়েল। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, এটি ছিল লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে হত্যার চেষ্টা।
বিস্ফোরণ এত শক্তিশালী ছিল যে এর প্রভাব বৈরুত শহরজুড়ে অনুভূত হয়। বৈরুতের ঘনবসতিপূর্ণ বাসতা এলাকায় এ হামলায় অন্তত আটতলা একটি আবাসিক ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে।
লেবাননের জাতীয় বার্তা সংস্থা বলেছে, হামলায় বাংকার বাস্টার বোমা ব্যবহার করা হয়েছে। হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যায় এর আগে ইসরায়েল যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছিল, এটি তার অনুরূপ।
গতকালের হামলায় নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ১৫ থেকে বেড়ে ২০–এ দাঁড়িয়েছে। ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে জোর চেষ্টা চালাচ্ছিলেন জরুরি বিভাগের কর্মীরা।
লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ওই ঘটনায় ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। হতাহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে পারে।
বিধ্বস্ত ভবনের কাছের একটি ভবনের বাসিন্দা ৫৫ বছর বয়সী আলী নাসের। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল এক ভয়ানক বিস্ফোরণ। এর প্রচণ্ডতায় আমার স্ত্রী ও সন্তানদের ওপর জানালাগুলো ও সব কাচ ভেঙে এসে পড়ে। আমার বাসা এখন যুদ্ধক্ষেত্রের মতো।’
ইসরায়েলের হামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আলী নাসের বলেন, ‘যদি একজনও এখানে লুকিয়ে থাকেন, তবে আপনার কি উচিত লোকজন যেখানে ঘুমিয়ে আছেন, সেখানে এভাবে বোমা হামলা চালানো? এক ব্যক্তির জন্য সবাইকে মেরে ফেলা কি জরুরি? নাকি আমরা মানুষ না। আমি এটা জানতে চাই।’
ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের দাবি, হিজবুল্লাহর অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা মোহাম্মদ হায়দারকে হত্যার চেষ্টায় এ হামলা চালানো হয়েছে।
হিজবুল্লাহর আইনপ্রণেতা আমিন শেরি বলেছেন, তাঁদের সংগঠনের নেতারা ওই ভবনে ছিলেন না। অবশ্য মোহাম্মদ হায়দারের বিষয়টি এখনো অস্পষ্ট।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) কোনো মন্তব্য করেনি।
আইডিএফ গতকাল দক্ষিণ বৈরুতের দাহিয়াহ এলাকায়ও বিমান হামলা চালিয়েছে। বাহিনী বলেছে, যেসব ভবনে হামলা চালানো হয়েছে, সেসব হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
লেবাননের দক্ষিণেও এদিন বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এ অঞ্চলে ইসরায়েলির স্থলবাহিনীও অভিযান চালাচ্ছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, পূর্বাঞ্চলীয় শহর বালবেকে ইসরায়েলি বাহিনীর আরেকটি বিমান হামলায় চার শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
লেবাননে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দুই সপ্তাহ ধরে অভিযান জোরদার করেছে ইসরায়েল। ইতিমধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় চলছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রচেষ্টা।
এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েল-হিজবুল্লাহর লড়াই অবসানের প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে। তবে এর মধ্যেই গতকাল এসব চালাল ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেওয়া অ্যামোস হসটেইন শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন খসড়া চুক্তিকে এগিয়ে নিতে চলতি সপ্তাহে লেবানন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত অবসানে হিজবুল্লাহ ও ইরান উভয়েই একটি চুক্তি সইয়ে আগ্রহের ইঙ্গিত দিয়েছে বলে জানিয়েছেন লেবাননের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
গত বুধবার হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল নাঈম কাসেম বলেছেন, শান্তিচুক্তি সইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রস্তাব পেয়েছেন তাঁরা। তবে চুক্তির সইয়ের শর্ত হিসেবে তিনি বলেন, ইসরায়েলের তরফে পুরোপুরি বৈরিতার অবসান ঘটাতে ও লেবাননের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। অন্যথায় দীর্ঘ মেয়াদে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা।
গত বছরের অক্টোবর থেকে লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় ৩ হাজার ৬৭০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ হাজার ৪০০ জন। এ তথ্য জানিয়ে লেবাননের কর্তৃপক্ষ বলছে, ইসরায়েলি হামলার কারণে এ সময়ে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ।
বৈরুতে আবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। রয়টার্স |
No comments