সরকারের তিন মাসে জ্বালানি খাতে সাশ্রয় হয়েছে ৩৭০ কোটি টাকা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ৩ মাসে জ্বালানি খাতে ৩৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। গতকাল ‘দেশের শিল্প খাতে জ্বালানি সংকট সমাধানের পথ’- শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। সেমিনারটি আয়োজন করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। এতে বিভিন্ন শিল্প খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা ও প্রতিষ্ঠানের মালিকরা উপস্থিত ছিলেন। ফাওজুল কবির খান বলেন, জ্বালানি তেলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের স্পেসিফিকেশন ছিল, যিনি জ্বালানি তেল সরবরাহ করবেন তাকে রিফাইনারির মালিক হতে হবে। আমি এটাকে ক্ষাণিকটা পরিবর্তন করে দিলাম যে, রিফাইনারির মালিক হলে ভালো, যদি আপনি বড় সরবরাহকারী হন তাহলেও হবে। এর ফলে ৩ মাসে যে জ্বালানি আমদানি করেছি, তাতে ৩৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। যেটার বার্ষিক ভ্যালু প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকা। এজন্য আমাদের সরকারি জ্বালানি ক্রয় প্রতিযোগিতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে এবং এটাই সবথেকে বড় সুযোগ। আমরা ব্যবসায়ীদের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির দুইটা সমস্যা হলো- একটা প্রতিযোগিতার অভাব, আরেকটি অপচয়। এখানে ব্যবসা করতে হলে মন্ত্রী, সচিবকে চিনতে হয়। আমাদের ভোলাতে যে গ্যাস আছে, সেটা আমরা পাইপলাইনের কারণে আনতে পারছি না। ওখান থেকে আপনারা গ্যাস এলএনজি অথবা সিএনজি ফর্মে আনেন এবং ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের সহজ সমাধানের কথা না ভেবে প্রকৃত সমাধানের কথা ভাবতে হবে। প্রকৃত সমাধান হলো- আমাদের রিনিউয়েবল এনার্জিতে যেতে হবে। অনেকে বলে জায়গার অভাব, এটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। অপ্রয়োজনীয় জায়গায় বিনিয়োগ করা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি বিদ্যুৎ ছাড়াও সেতু ও রেলওয়ে দেখি- যেখানে বিনিয়োগ দরকার ছিল সেখানে হয়নি, আর যেখানে বিনিয়োগ অপ্রয়োজনীয় ছিল সেখানে করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সবার পার ক্যাপিটা জিডিপি বাড়ছে। যখন এগুলো বন্ধ করে দিচ্ছি, এখন গ্রোথ রেট কমে যাচ্ছে। অনেকে বলছে, এই উপদেষ্টারা তো কিছুই পারে না। এ সময় তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা কি অপচয়ের গ্রোথ রেট চান নাকি প্রকৃত গ্রোথ রেট চান? আমরা উন্নয়নটা মানুষের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে চাচ্ছি।

দেশের অর্থনীতিকে ‘ক্রনি ক্যাপিটালিজম’ মুক্ত করার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আপনারা এটাতে অংশ নেবেন। আরেকটা জিনিস, ‘ক্রনি ক্যাপিটালিজম’ বা অন্যের পরিচয়ে ব্যবসা খুব দীর্ঘস্থায়ী হয় না। আমাদের দেশে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ের কোনো ভিত্তি হতে পারে না।

ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা সরকারের সখ্যতার ভিত্তিতে না ব্যবসা করে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা করেন। আমাদের অর্থনীতি উন্মুক্ত করার যে প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছি, সেটার সঙ্গে আপনারা যুক্ত হবেন। আমাদের ভালো ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসবেন। এতে অর্থনৈতিক সংকট থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতে দেশ নৈরাজ্যের চরম সীমায় পৌঁছেছিল। সে সময় ব্যবসায়ীদেরও কোনো মর্যাদা ছিল না। তবে এখন সে পরিস্থিতি বদলেছে। বিগত সরকারের সময়ে গ্যাস সংযোগ পাওয়া নিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সাবেক জ্বালানি মন্ত্রীর কাছে আমি গিয়েছিলাম। ওই সময় ওনার বাসার সামনে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়েছিলাম, যেন আমি কোনো চাকরি চাইতে গিয়েছি। এর কারণ, এত টাকা বিনিয়োগ করেছি, কিন্তু গ্যাস সংযোগ পাচ্ছিলাম না। তখন গ্যাস সংযোগ পাওয়া আমার কাছে মনে হতো ব্যাংকের নিবন্ধন পাওয়ার মতো।

জ্বালানি খাত দুর্নীতির অন্যতম জায়গা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পরে কিছু আর্থিক অপরাধী সম্পর্কে জানতে পারছি। এসব জেনে আমার কিছু কিছু মানুষের ব্রেন স্ক্যান করে দেখতে ইচ্ছা করে, যে এরা এতটা ক্রিমিনাল কী করে হতে পারে! শেখ বশিরউদ্দিন আরও বলেন, জ্বালানি খাতের বর্তমানে যে দুর্বলতা রয়েছে তা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে বাস্তবতাকে অস্বীকার করার প্রবণতা নেই। আমরা বিদ্যমান সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের দিকেও যেতে পারবো বলে আশা করছি।
সেমিনারে বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ইজাজ হোসেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার প্রমুখ।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.