ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার প্রয়োজন -আলোচনা সভায় বক্তারা
তিনি বলেন, মূলত দলীয় সরকারের অধীনে সরকার এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাইলেও এবং নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার পরও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। কারণ, পুরো নির্বাচনটি পরিচালনা করে সরকারের নির্বাহী বিভাগের লোকেরা-আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ ও সরকারি/বেসরকারি কর্মচারীবৃন্দ। নির্বাচন কমিশন সেখানে কেবল লজিস্টিক সাপোর্টস এবং গাইডিং প্রিন্সিপালস সরবরাহ করে মাত্র। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি প্রশাসনের সদস্যবৃন্দই এ সংক্রান্ত নির্বাহী কার্যক্রম সম্পন্ন করে।
অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আরও বলে যে, ক্ষমতাসীন সরকার ও দল ক্ষমতায় থেকে নির্বাচনে পরাজয়বরণ করতে একদম নারাজ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তারা পরাজয় মেনে নিতে অনিচ্ছুক। নিকট ভবিষ্যতেও এর কোনো ব্যত্যয় হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। কাজেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দলীয় সরকার নয়, বরং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, এর বিকল্প নেই। অতএব, নির্বাচনী সংস্কারের প্রধান ক্ষেত্র নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ত্রুটিগুলো দূর করতে এবং বাংলাদেশে নির্বাচনকে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু করতে হলে সংস্কারে বেশকিছু ক্ষেত্র বিবেচনা করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, আইনি সংস্কার এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য পদ্ধতিগত পরিবর্তন।
জাতীয় রাষ্ট্রচিন্তা পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের মতো পাতানো নির্বাচনে মানুষ ভোটাধিকার হারিয়েছে, নির্বাচন কমিশনকে সেই অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্যই ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবে রক্তের নদী বইয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর ফ্যাসিস্ট নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করার জন্য তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনকে এ পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি বলেন, ভোটের অধিকারের জন্য এত লোকের আত্মত্যাগ-প্রাণ দিলো, আহত হলো, নিহত হলো, রক্ত দিলো, শহীদ হলো। জুলাই-আগস্টে কতো লোক প্রাণ দিলো। অনেক দাবির মধ্যে একটি দাবি ছিল ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা। সেই দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশনকে আগাতে হবে। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে যে পরিবেশে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট যাকে ইচ্ছে দিতে চান, তাকে যেন দিতে পারেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন কমিটমেন্ট দিয়েছেন, আমরা তার ওপর বিশ্বাস রাখতে চাই। অতীতের নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়েই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এগুতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চেয়ারম্যান মেজবাহ উল-আজম সওদাগর বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মিশে গেছে। জনগণের মধ্যে এ ধারণা শক্তিশালী যে কখনোই দলীয় সরকারের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্দলীয় সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের সমাধান। গণঅভ্যুত্থানের চেতনাও সেটা। সে কারণে এমন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে কোনোদিন কোনো দল ক্ষমতায় থেকে আর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে না পারে। এটি এজন্যই নিশ্চিত করতে হবে কারণ একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন হচ্ছে অন্যতম প্রধান জবাবদিহিতার মেকানিজম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কাজী মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, সাবেক সচিব শেখ মোতাহার হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক ফজল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, অধ্যাপক স ম আলী রেজা, শাহ আবদুল হালিম প্রমুখ।
No comments