‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে!’
ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি হুমকি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতার শেষের দিকে এসে তা জটিল থেকে আরও জটিল হয়েছে। অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে ইউক্রেন এবং রাশিয়া। তার চেয়েও ভয়ের বিষয় পুতিন হুঙ্কার দিয়েছেন। যদি পরিস্থিতি বাধ্য করে তাহলে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেন। এমনটা হলেই শুরু হয়ে যাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ইউরোপ। সম্প্রতি রাশিয়ার ভিতরে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। এই হামলায় প্রথমবার ইউক্রেন ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের দেয়া ক্ষেপণাস্ত্র। এতে উত্তেজিত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনিও পাল্টা হামলা করেছেন। এখানেই সব থেমে থাকবে বলে মনে হয় না। পরিস্থিতির যেমন অবনতি ঘটছে তাতে বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিশেষ করে গত সপ্তাহে রাশিয়ার হামলা চালানোর আশঙ্কায় কিয়েভে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাস বন্ধ করা হয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভয়ে কাঁপছে ইউরোপ। কারণ যদি পুতিন তার পারমাণবিক অস্ত্রের রেড বাটন চাপেন তাহলে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে চারপাশ। তবে ইউক্রেনের সাবেক কমান্ডার ইন চিফ ভ্যালেরি জালুঝনি তো বলেই দিয়েছেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে গেছে। এই যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষ নিয়েছে উত্তর কোরিয়া, ইরান, চীনসহ আরও কিছু দেশ। সেখানে বিদেশি সেনা ও অস্ত্রের উপস্থিতির জোরালো এক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র এই দুই সুপারপাওয়ার ইউক্রেন যুদ্ধে সরাসরি যুক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বর্তমানে যে উত্তেজনা তা সীমান্ত অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে যুক্ত হয়েছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মহল। এরমধ্যে আছে উত্তর কোরিয়া, ইরান ও চীন। পলিটিকোর মতো, জালুঝনি বলেন, ২০২৪ সালে আমি বিশ্বাস করি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এই যুদ্ধ যে আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে পড়েছে তার পরিষ্কার ইঙ্গিত হিসেবে তিনি বলেন- এতে যুক্ত হয়েছে উত্তর কোরিয়ার সেনা। বেসামরিক ব্যক্তিদের টার্গেট করতে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে ইরানের ড্রোন। উত্তর কোরিয়া এবং চীন থেকে যাচ্ছে অস্ত্র। ওদিকে ইউক্রেনের দনিপ্রো শহরে নতুন একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরদিনই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত এমন শক্তিশালী নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত আছে রাশিয়ার কাছে। অনির্ধারিত এক টিভি ভাষণে তিনি বলেন, ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রকে আকাশে ভূপাতিত করা যাবে না। তা আরও সফল টেস্ট চালাতে পারবে। বিশেষ করে যুদ্ধাবস্থায় তা ব্যবহার করা যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও বৃটেনের সরবরাহ দেয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমবার রাশিয়ার ভিতরে হামলায় ব্যবহারের পরে রাশিয়া এই ধরনের নতুন অস্ত্র ব্যবহার করেছে এবং তাদের কাছে এর যথেষ্ট মজুত আছে বলে জানিয়ে দিলো। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এমন অবস্থায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গুরুতর প্রতিক্রিয়া দাবি করেছেন বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে, যাতে পুতিন মনে করেন তার কর্মকাণ্ডের জন্য বাস্তব পরিণতি অপেক্ষা করছে। তিনি আরও বলেন, তার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে পশ্চিমা মিত্রদের কাছে সহায়তা দাবি করছে তার দেশ। ইন্টারফ্যাক্সের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের টার্মিনাল হাই অলটিটিউড এরিয়া ডিফেন্স পাওয়ার দাবি করছে কিয়েভ অথবা তারা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্যাট্রিয়ট আধুনিকায়নের দাবি করছে। শুক্রবার টিভিতে দেয়া ভাষণে পুতিন বলেন, ওরেশনিক হলো হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। শব্দের গতির চেয়ে ১০ গুণ বেশি গতিতে ছুটতে পারে এটি। এর আগে স্টর্ম শ্যাডো এবং অ্যাটাকমস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের জবাবে তিনি এই অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন। এমন অবস্থায় ভ্যালেরি জালুঝনি বলেন, ২০২৪ সালে এসে ইউক্রেন এখন আর রাশিয়াকে মোকাবিলা করছে না। তাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে উত্তর কোরিয়ার সেনারা। কোনো রকম হীনমন্যতা ছাড়াই প্রকাশ্যে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করছে ইরানিরা। উল্লেখ্য, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মতবিরোধের জেরে এ বছর ফেব্রুয়ারিতে সামরিক পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় ভ্যালেরি জালুঝনিকে। যুদ্ধকৌশল নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল। জালুঝনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। জালুঝনি বলেন, কোনো কোনো কারণে এ বিষয়টি বুঝতে পারেনি আমাদের অংশীদাররা। তিনি আরও বলেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই যুদ্ধে ইউক্রেন হয়তো টিকে থাকবে। কিন্তু বৃহত্তর সমর্থন ছাড়া যুদ্ধে জয় অনিশ্চিত।
No comments