চীনের সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ বাড়াবে সরকার
সেমিনারে জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান এবং নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাণিজ্য শুধু বাজার সুবিধার ওপর নির্ভর করে না। প্রক্রিয়ার ওপরও নির্ভর করে বাণিজ্য সমপ্রসারণের বিষয়টি। তাই চীনের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শতভাগ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে সম্পর্কের ভবিষ্যতের স্বার্থে আমাদের অশুল্ক বাধার বিষয়টিকেও বিবেচনায় নিতে হবে। আপস নিষ্পত্তির জন্য প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতার বিষয়টি জড়িত। তিনি বাংলাদেশে চীনা ঋণের প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনার ওপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন প্রায় ছয়শ’ কোটি ডলার চীনের কাছে যাবে প্রায় ৫৬০ কোটি ডলার। এটা বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের প্রায় ১০ শতাংশ। কাজেই ঋণ পরিশোধ বাংলাদেশের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। চীনা ঋণের মধ্যে সরবরাহ ঋণ রয়েছে। যা পরিশোধের সময়সীমা কম। গ্রেস পিরিয়ডও কম। শর্ত কড়াকড়ি থাকে, কমিটমেন্ট চার্জের হারও বেশি। ভবিষ্যতে এগুলোতে পরিবর্তন আনার সুযোগ আছে কি না বিবেচনায় নেয়া উচিত। তার মতে, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনের জন্য নির্ধারিত বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চলে যথাযথভাবে চীনা বিনিয়োগ না হলে কর্ণফূলী টানেল আর্থিকভাবে টেকসই হবে না। দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যতের স্বার্থে আরও স্বচ্ছতা আনা উচিত।
অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশ সমপ্রতি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে রয়েছে। বাংলাদেশের সমন্বিত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদার হিসাবে, চীন দৃঢ়ভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্রীয় সংস্কার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিকাশ এবং জনগণের জীবনযাত্রার উন্নতির প্রচেষ্টায় সমর্থন করে।
উদ্বোধনীতে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক এবং ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এফএম গওসুল আজম সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন- সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক ইয়াং জেইমিয়ান এবং বিস’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস প্রমুখ।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, গ্রিন এনার্জি, আইসিটি প্রভৃতি খাত নিয়ে সেমিনারে আলোচনা হয়েছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব খাতে চীনের সহযোগিতা কামনা করেন। বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতামূলক সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত বছরগুলোতে চীন এবং বাংলাদেশ নিরলসভাবে একে-অপরকে সমান মর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে মূল্যায়ন করেছে এবং পারস্পরিক সুবিধা অনুসরণ করেছে। উভয় দেশ প্রথম থেকেই অভিন্ন মৌলিক স্বার্থের বিষয়ে একে-অপরকে সমর্থন করেছে এবং নিজ নিজ উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান ও সহযোগিতামূলক সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
No comments