খালিস্তানপন্থি নেতা হরদিপ সিং নিজার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে আবারো কূটনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে ভারত ও কানাডার মধ্যে। ওই হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকার সরাসরি জড়িত কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এমন অভিযোগ করার পর দুই দেশের কূটনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। এমনকি কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন পর্যন্ত হয়ে যায়। পরে তা আবার মেরামত হলেও নিজার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত থেমে নেই। কানাডা নতুন করে দাবি করেছে, এই হত্যাকাণ্ডে সেখানে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা হলেন ‘পারসন অব ইন্টারেস্ট’। ফৌজদারি অপরাধ বা নিরাপত্তা বিষয়ক অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে নজরদারিতে থাকা, কাউকে ডেকে নেয়া বা প্রশ্ন করা বুঝাতে পারসন অব ইন্টারেস্ট বুঝানো হয়। সহজ করে বললে, কোনো সন্দেহজনক ব্যক্তিকে বুঝাতে এই টার্ম ব্যবহার করা হয়। এবার শুধু কানাডা ভারতীয় হাইকমিশনারকেই তদন্তের অধীনে রেখেছে এমন নয়। স্পর্শকাতর এই ঘটনায় ভারতীয় আরও কূটনীতিকদেরও এর অধীনে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে ভারত কড়া জবাব দিয়েছে। প্রতিবাদ জানাতে গতকাল কানাডার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টেওয়ার্ট হুইলারকে তলব করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ অবস্থাকে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর আগে নিজার হত্যাকাণ্ডে ভারত বা ভারতের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভারত। অনলাইন এনডিটিভি বলছে, সোমবার কানাডার অভিযোগের কড়া জবাব দিয়েছে ভারত। হাইকমিশনার এই হত্যায় জড়িত নয় বলে জোর দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুনে খালিস্তানপন্থি নেতা কানাডার নাগরিক হরদিপ সিং নিজারকে হত্যা করা হয় কানাডায়। সেই হত্যায় মোটরসাইকেলে করে দুই থেকে তিন ব্যক্তি অংশ নেয়। এর জন্য বার বার কানাডা অভিযোগের আঙ্গুল তোলে ভারতের দিকে। প্রতিবারই এসব অভিযোগকে উদ্ভট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। তারা অভিযোগ করেছে জাস্টিন ট্রুডো কানাডার ভেতরে খালিস্তানপন্থিদের উস্কানি দিয়ে নিজের রাজনৈতিক ভোটব্যাংক প্রস্তুত করছেন। তা সত্ত্বেও ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মাকে নিজার হত্যাকাণ্ডে ‘পারসন অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে নাম প্রকাশ করেছে কানাডা। ভারত সঙ্গে সঙ্গে তা উড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা নিজেদের মাটিতে খালিস্তানপন্থি উগ্রপন্থিদের দমন করতে ব্যর্থ হয়ে অযৌক্তিক অভিযোগ করছে। কানাডা কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছে। তারা বলেছে, এই হত্যাকাণ্ডের স্পর্শকাতর তদন্তে ভারতীয় হাইকমিশনার ও অন্য কূটনীতিকদের জড়িত করা হয়েছে। তার জবাবে নিন্দা জানিয়ে কড়া প্রতিবাদ পাঠিয়েছে নয়াদিল্লি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রতিবাদ ইস্যু করেছে। তাতে বলা হয়েছে, এসব অযৌক্তিক দাবি দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছে ভারত সরকার। এটাকে ট্রুডো সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডা হিসেবে দেখছে ভারত। এর পেছনে রয়েছে তাদের ভোট ব্যাংক রাজনীতি।
এতে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। তারপর থেকে আমাদের পক্ষ থেকে বহুবার অনুরোধ সত্ত্বেও ভারত সরকারের সঙ্গে কোনো তথ্যপ্রমাণ শেয়ার করেনি কানাডা সরকার। সর্বশেষ আবার যে অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে কোনো সত্যতা নেই। এতে সন্দেহ নেই যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ভারতকে হেয় করার বিষয়ে এই তদন্ত করা হচ্ছে। এতে আরও বলা হয়, হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার ভার্মা হলেন ভারতের সবচেয়ে সিনিয়র কূটনীতিক। তার ৩৬ বছরের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার আছে। তিনি জাপান এবং সুদানের রাষ্ট্রদূতও ছিলেন। একই সঙ্গে ইতালি, তুরস্ক, ভিয়েতনাম ও চীনের দায়িত্বও পালন করেছেন। কানাডা সরকার তার সঙ্গে যে আচরণ করছে তা অবজ্ঞা ও হাস্যকর। এর মধ্যদিয়ে তাকে হেয় করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি লাওসে আসিয়ান সামিটের এক ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর মধ্যে সংক্ষিপ্ত কথা হয়। তারপর সর্বশেষ এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে এই দু’টি দেশের মধ্যে। নয়াদিল্লি এই বৈঠককে অপ্রয়োজনীয় বলে বর্ণনা করেছে। কিন্তু ট্রুডো এটাকে দু’জনের মধ্যে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এতে তিনি কানাডার নিরাপত্তা নিয়ে তার উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আইনের শাসন সমুন্নত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ট্রুডো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার (মোদি) সঙ্গে যে, আলোচনা হয়েছে তা নিয়ে বিস্তারিত বলবো না। তবে কানাডার যেকোনো সরকারের মতো মৌলিক অন্যতম দায়িত্ব কানাডিয়ানদের নিরাপত্তা নিয়ে কথা হয়েছে।
No comments