যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন চীনাদের ভাবনা কী

কমালা হ্যারিস! নাকি ডনাল্ড ট্রাম্প! কাকে বেছে নেবেন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ! ৫ই নভেম্বর যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তীব্র হচ্ছে এই প্রশ্ন। একই সঙ্গে চলছে বিশ্লেষণ। নানা রকম সমীকরণ এ নির্বাচনে। অভিবাসন ইস্যু, গর্ভপাত ইস্যু, আগ্নেয়াস্ত্র ইস্যু, রাশিয়া ইস্যু, গাজা ইস্যু, লেবানন বা ইরান ইস্যু। আরও কতো শত ইস্যুতে এই সমীকরণ নির্ধারিত হচ্ছে। এশিয়ানরা কি ভূমিকা নেবেন, হিস্প্যানিক জনগণ কাকে বেছে নেবেন তাও এ নির্বাচনে প্রশ্ন। তবে সবচেয়ে বড় ইস্যু মুসলিমরা কোনদিকে মোড় নেবেন, সেটা। নানা রকম জরিপ এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। তাতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের কোনো জরিপ এখনো প্রকাশ পায়নি। গাজা, লেবানন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে তাদের অবস্থান পরিষ্কার নয়। ওদিকে চীনের জনগণ গভীর আগ্রহ ও উদ্বেগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে কমালা হ্যারিস বা ডনাল্ড ট্রাম্প যে-ই নির্বাচিত হোন না কেন, তাতে চীনের  ভেতরে এবং বিদেশে কি প্রভাব পড়বে, বিশ্বে পরবর্তীতে কি ঘটতে পারে তা নিয়ে তাদের আতঙ্ক। অনলাইন বিবিসি চীনাদের মনোভাব নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রিতান পার্কে অন্য সিনিয়রদের সঙ্গে নাচ শিখতে গিয়েছিলেন সিয়াং। তিনি বলেন, আমরা কেউই যুদ্ধ চাই না। ওই পার্কে তারা নিয়মিত জমায়েত হন। এ স্থানটি চীনে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসা থেকে দু’একশ’ মিটার দূরে। তারা সেখানে নাচ শিখলেও তাদের মনে স্থান পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। এই নির্বাচন এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন বিশ্বের দুই সুপার পাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একরকম শীতল যুদ্ধ করছে তাইওয়ান, বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী নিয়ে। মিস্টার সিয়াং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যে উত্তেজনাকর অবস্থা তাতে আমি উদ্বিগ্ন। আমরা শান্তি চাই। এই কথোপকথন শুনতে সেখানে সমবেত হন কয়েকজন। তারা নিজেদের পুরো নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। কারণ, বেইজিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে নিয়ে কথা বলার অনুমতি আছে। কিন্তু যদি তারা তাদের নিজেদের নেতাকে নিয়ে সমালোচনা করেন, তাহলে বিপদে পড়তে পারেন। সমবেতরা বলেন, তারা যুদ্ধ নিয়ে উদ্বিগ্ন। সেটা শুধু ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে নয়। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে যে চলমান যুদ্ধ তা নিয়েও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ জন্যই ৭০-এর কোঠায় বয়সী মিস্টার মেং বলেন, তিনি চান ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে বিজয়ী হোন। তিনি বলেন, ডনাল্ড ট্রাম্প যদিও চীনের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, কিন্তু তিনি একটি যুদ্ধ শুরু করতে চাননি। এক্ষেত্রে বাইডেন বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছেন। এ জন্য তাকে অনেক সাধারণ মানুষ পছন্দ করে না। ইউক্রেন যুদ্ধ সমর্থন করেন বাইডেন। এই যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেন বড় মাপের ক্ষতির মুখে। একজন নারী বললেন, বিতর্কের সময় ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন তিনি নির্বাচিত হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। আর কমালা হ্যারিস তো প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পথ অনুসরণ করে যুদ্ধই সমর্থন করবেন। চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায়ও একই রকম প্রচারণা চলছে।

এখানে উল্লেখ্য, গাজায় যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন। তারা নিজেদেরকে মধ্যপ্রাচ্যকে তাদের আরব ভাই বলে বর্ণনা করেছে। ইসরাইলকে দ্ব্যর্থহীন সমর্থন দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে চীন। ইউক্রেন ইস্যুতে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জাতিসংঘে বলেছেন, চীন এক্ষেত্রে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে তিনি অভিযোগ করেন নিজেদের স্বার্থ অর্জনের জন্য পরিস্থিতিকে ব্যবহার করছে ওয়াশিংটন। বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন এবারের নির্বাচনে হোয়াইট হাউসে কে যাবেন তাতে বেইজিংয়ের কোনো পছন্দের কেউ নেই। তবে অনেকে মনে করেন, চীনা জনগণ এবং দেশটির নেতাদের কাছে কমালা হ্যারিস অনেকটা অস্পষ্ট। আবার অনেকে বিশ্বাস করেন ট্রাম্পের চেয়ে কমালা হ্যারিস বেশি স্থিতিশীলতা আনবেন। বিশেষ করে যখন বিষয়টি আসবে যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন-তাওয়ান ইস্যুতে। চার বছর বয়সী এক সন্তানের পিতা বলেন, আমি ট্রাম্পকে পছন্দ করি না। যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে বলে মনে করি না। অনেক সমস্যা আছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং তাইওয়ান সমস্যা আছে। তিনি মনে করেন তাইওয়ান নিয়ে বিরোধে তাদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। এটা আমি চাই না। তিনি বলেন, এ জন্য আমার ছেলেকে সেনাবাহিনীতে দিতে চাই না।

অন্যদের মতো ১৭ বছর বয়সী লুসি একদিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ার আশা করে। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর তিনি বিখ্যাত ইউনিভার্সাল স্টুডিও দেখতে যেতে চান। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী দেখে তিনি উদ্বেলিত। বলেন, লিঙ্গ সমতার দিক দিয়ে হ্যারিসের প্রার্থিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তাকে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দেখে আমি উদ্বুদ্ধ। অন্যদিকে চীনে কোনোদিন নারী নেতৃত্ব দেখা যায়নি। এমনকি পলিটব্যুরো হিসেবে ২৪ সদস্যের যে টিম আছে তাতেও বর্তমানে নেই একজন নারী। চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে সিনিয়র সদস্যদের নিয়ে এই পলিটব্যুরো। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনাকর প্রতিযোগিতা দেখে উদ্বিগ্ন লুসি। তিনি মনে করেন, জনগণের সঙ্গে অধিক পরিমাণের জনগণের সম্পর্ক বিনিময়ের মাধ্যমে দুই দেশই তাদের সম্পর্ক উন্নত করতে পারে। দুই দেশই এ লক্ষ্যে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এখন পর্যন্ত চীনে পড়াশোনা করা মার্কিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০১১ সালের ১৫ হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮০০তে। তবে আগামী ৫ বছর চীনে যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য দরজা খুলে দেয়ার আশা প্রকাশ করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কিন্তু সম্প্রতি বিবিসিতে এক সাক্ষাৎকারে চীনে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস বার্নস অভিযোগ করেছেন যে, শি জিনপিংয়ের এই প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব দিয়ে নেয়নি চীন সরকারের কোনো কোনো অংশ। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত গণ কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়া থেকে চীনা নাগরিকদের বাধা দেয় সরকারের একটি মন্ত্রণালয়।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.