প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে ওরিয়নের ব্যাখ্যা

গত রোববার মানবজমিনের প্রথম পাতায় প্রকাশিত ‘একটি ফ্লাইওভারের গল্প’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে প্রতিবাদ ও ব্যাখ্যা পাঠিয়েছে ওরিয়ন গ্রুপ। প্রকল্পের আর্থিক ব্যয় ও পরিবর্তন নিয়ে গ্রুপটি বলছে, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার প্রকল্পটি সম্পূর্ণ বেসরকারি বিনিয়োগে ও দায়িত্বে তৈরি করা হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকা সিটি করপোরেশন বা সরকারের কোনো ব্যয় হয়নি। ফ্লাইওভারের ডিজাইন বারবার পরিবর্তনের ফলে দৈর্ঘ্যসহ কাজের পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়, বিদ্যমান ইউটিলিটি লাইনসমূহ না সরানোর কারণে পরিধি ও ব্যয় উভয়ই বৃদ্ধি পায়, দরপত্র ২০০৩ এ দাখিল করার ৮ বছর পর নির্মাণসামগ্রীর মূল্য, মার্কিন ডলার বিনিময় মূল্য, শ্রমিক দর, জ্বালানি তেলের দরসহ প্রকৃত দরের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়।

কোম্পানির মালিকানা ও পরিচালনা ব্যয় নিয়ে ব্যাখ্যায় বলা হয়, চুক্তির অধীনে ‘ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’ নামে একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে কোম্পানি গঠন করা হয়। আজ অবধি বেলহাসা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কন্ট্রাকটিং কোং, এলএলসি শেয়ারহোল্ডার হিসেবে রয়েছে। বেলহাসার শেয়ার জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কোম্পানিটি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইন, কোম্পানি আইন এবং অন্যান্য প্রযোজ্য নীতিমালা মেনে যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান উড়ালসড়কে বেলহাসার জমাকৃত পেইড-আপ ক্যাপিটাল অনুযায়ী আনুপাতিক হারে তাদের মালিকানা রয়েছে।

টোল আদায় ও এর স্বচ্ছতার বিষয়ে উঠা অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়, টোল আদায়ের পুরো প্রক্রিয়া সরকারি নির্দেশনা এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। ওরিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা সর্বদা স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু, এবং এই প্রকল্পের টোল আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অব্যবস্থাপনার সুযোগ নেই। নিয়মিতভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে ইক্যুইটি শেয়ার সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।

ঋণ উত্তোলন এবং ঋণ খেলাপির অভিযোগ নিয়ে ওরিয়ন গ্রুপ জানায়, প্রকল্পের জন্য বেলহাসাকে না জানিয়ে ঋণ গ্রহণের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিদেশি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ঋণ উত্তোলন করা হয়নি। তাই ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। কোনো ঋণের অনুমতিপত্রে তাদের কোনো স্বাক্ষর নেই বা তাদের নাম উল্লেখ নাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী এবং সকল আইনানুগ প্রক্রিয়া মেনে দেশীয় ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকগুলো সকল প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই এবং টেকনিক্যাল এপ্রাইজাল সম্পন্ন করেছে এবং পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধ করা হচ্ছে। ফ্লাইওভার নকশা এবং যানজটের বিষয়ে বলা হয়, ফ্লাইওভারটির নকশা আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও দেশীয় বিশেষজ্ঞদের যৌথ উদ্যোগে সম্পন্ন হয়েছে। ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার মূল কারণ অবৈধ জুতার মার্কেট এবং রাস্তায় হকারদের উপস্থিতি, যা গাড়ি চলাচলে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে। অবৈধ পার্কিং, বিশেষ করে মোটরসাইকেল, সিএনজি ও রিকশায় অনিয়ন্ত্রিত অবস্থান- এ ছাড়া ট্রাফিক পুলিশের স্বল্পতা ও বেপরোয়া বাস চলাচল।

সিটি সেন্টার নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে বলা হয়, শেয়ার অপসারণ, বিদেশি কোম্পানির নামে ঋণ উত্তোলন এবং ঋণখেলাপি, অর্থ আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগগুলো বানোয়াট। প্রকল্পের অর্থনৈতিক লেনদেন যথাযথ নথিপত্রসহ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ওরিয়ন গ্রুপের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই সঠিক তথ্য জনগণের কাছে উপস্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি।

সিটি সেন্টারের মালিকানা বিষয়ে প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, শেয়ারহোল্ডিং কাঠামোর বেআইনি পরিবর্তনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। প্রকল্পের কোম্পানি, বেলহাসা আকস জেভি লিমিটেড, ২০০৪ সালের ১১ই এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে বেলহাসা গ্রুপের ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে শেয়ার মূলধনে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি, ফলে বেলহাসা গ্রুপের শেয়ারহোল্ডিং আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। মি. মাজেদ বেলহাসা ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে নিয়মিত আসতেন এবং বিগত ২০ বছরে বেলহাসা গ্রুপ থেকে কোনো দাবি উত্থাপন করা হয়নি। দেশের প্রচলিত আইন ও কোম্পানি আইন অনুযায়ী প্রত্যেক শেয়ার হস্তান্তর তাদের জমাকৃত পেইড আপ ক্যাপিটাল অনুসারে আনুপাতিক মালিকানা ধরে রেখেছে।

বিক্রয় থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে ওরিয়ন বলে, বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত অর্থ কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে এবং সেই অর্থ দিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধসহ নির্মাণকাজের খরচ মেটানো হয়েছে। শেয়ারহোল্ডাররা কোনো অর্থ গ্রহণ করতে পারেন না যতক্ষণ না লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। প্রকল্প কোম্পানি এখনো কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি, ফলে বিক্রয় থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।

প্রতিবাদলিপিতে ওরিয়ন আরও জানায়, যদি বেলহাসা গ্রুপের প্রকল্প নিয়ে কোনো দাবি থাকে, তাহলে প্রথমে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত বেলহাসা গ্রুপ থেকে আমরা কোনো যোগাযোগ পাইনি। তথাকথিত আইনজীবী যদি বেলহাসা গ্রুপের নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো বৈধ কাগজপত্রসহ যোগাযোগ করেননি।

No comments

Powered by Blogger.