রসুনের চিকিৎসা ও গুণ by ডা: এম এ রাজ্জাক
উগ্রশক্তির জীবাণুনাশক হিসেবে আছে- আ্যক্রোলিন, ক্রোটোলিন, ক্রোটোনিক, অ্যালডিহাইড,অ্যালাইল স্যালফাইড ও ভোলাটাইল টারপেনিস প্রভৃতি।
রসুনের সুদূরপ্রসারী ইতিহাস রয়েছে- জানা যায় হজরত ঈশা (আ:)-এর জন্মের ও অনেক আগে ব্যাবলিন বাসিন্দারা রসুনের ব্যবহার জানত। ফেরাউনের রাজপ্রাসাদ নির্মাণকালেও নাকি শ্রমিকদের খাদ্যেও সাথে রসুন খাওয়ানো হতো। আদিকালেই বিশিষ্ট বিজ্ঞানী হিপোক্রেট ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। এ চিকিৎসা বিজ্ঞানী আরো বলেন আমাদের বনৌষধির মধ্যে রোগ প্রতিকারে রসুনের স্থান প্রথম।
কয়েক বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়ায় রসুন প্রেমিকদের নিয়ে হয়ে গেল সিম্পোজিয়াম যা থেকে বেরিয়ে এলো রসুনের অনেক সুনাম। রসুনের মধ্যে এলাইল সালফেড থাকায় সব ধরনের জীবানু নাশ করার শক্তি আছে এতে।
রসুনের ব্যবহার : একটা রসুন থেতো করে ঘরে রাখলে ঘর জীবাণু মুক্ত থাকে। গত মহাযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ চিকিৎসক আহত সৈনিকদের চিকিৎসায় রসুন বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রয়োগ করতেন।
বিভিন্ন ধরনের বদ হজম, পাকস্থলীর বায়ু নিঃসরনে, খাদ্য হজমের ব্যাপারে রসুন সাহায্য করে। মেয়েদের রক্তস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে রসুন তা পুনরায় প্রবাহিত করে। কানের মধ্যে বিভিন্ন রকম আওয়াজ অনুভূতিতে,কম শোনাতে, সমপরিমাণ আদার রস রসুন রসের সাথে মিশিয়ে ব্যবহারে ভালো ফল দেয়। আযুর্বেদের মতে রসুন বল, মেধা, স্মৃতি ও আয়ুর্বধক। পৌরুষ প্রবৃত্তির ধারক ও বাহক, নারীর পক্ষে সন্তানপ্রদ যুবতীর অঙ্গ সৌঠের সমতা রক্ষক। কিশোরের পক্ষে শরীর ও মনের সার্বিক উন্নতিকর। যে শিশুর/ব্যক্তির শরীরে তেমন কোনো রোগের সন্ধান পাওয়া যায় না অথচ শীর্ণকায় তাদের ১ কোয়া রসুন বেটে ২০০ গ্রাম দুধের সাথে জাল করে নিয়মিত সেবনে উন্নতি আসে। রসুন অস্থির ক্ষয় বন্ধ করে, প্রাত্যহিক ক্ষয় রোধ করে, বল বৃদ্ধি করে।
২/৩ কোয়া রসুন রস আমলকীর রসের সাথে মিশিয়ে খেলে যৌবন অটুট থাকে। রসুনের রস নিয়মিত মাথায় দিলে চুল পাকে, প্রলেপ দিলে টাক পড়ে না। যক্ষ্মা প্রতিরোধ করে। ফুসফুসের পচনসহ অন্যান্য গোলযোগ প্রতিহত করে। রসুন ছেচে সরিষার তেলের সাথে গরম করে মালিশ করলে গ্রন্থি ফুলা, সায়েটিকা, স্নায়বিক বেদনা, পক্ষাঘাত,বাত প্রভৃতির ব্যথা সেরে যায় পায়ের তলায় কড়া ও আম বাতের ভালো ওষুধ।
হোমিওপ্যাথিতে ব্যবহার :- হোমিওপ্যাথিতে বিজ্ঞানসম্মতভাবে রসুন থেকে তৈরি হয়েছে মেডিসিন। হোমিওপ্যাথিতে এর নাম এলিয়াম স্যাটাইভা। পরীক্ষায় যেসব লক্ষণ পাওয়া গেছে :- মানসিক উৎকণ্ঠা, জিবে চুল লেগে থাকার অনুভূতি। আবহাওয়ার পরিবর্তনে, খোলা বাতাসে, বিকেলে, রাতে ও সকালে ঘুম ভাঙার পর রোগের বৃদ্ধি ঘটে।
হোমিওপ্যাথি পরীক্ষায় ব্রঙ্কাইটিস : পুরনো কাশি, ঠাণ্ডায়, আবহাওয়া পরিবর্তনে বেড়ে যায়। বুকে ব্যথা হয়, প্রচুর শ্লেমা উঠে।
হাঁপানি : শ্বাস টানতে কষ্ট হয়। এলিয়াম সেটাইভা সেবনে ফুসফুসের কোষের মধ্যস্থিত জমাট কফকে তরল করে বাইরে বের করে দেয় এবং প্রচুর অক্সিজেন সরবরাহ করে।
যক্ষ্মা : ঘুষঘুষে জ্বর, কাশি,বুকে ব্যথা, ঠাণ্ডায় বৃদ্ধি, রক্ত কাশি, শরীর ক্ষয়, তাপমাত্রা হ্রাস, আবহাওয়ার পরিবর্তনে, খোলা বাতাসে, বিকেলে, রাতে, সকালে,অনিন্দ্রায় বৃদ্ধি পেলে ৩ শক্তি ৩ ঘণ্টা পরপর সেবনে রোগী স্বাভাবিক হয়।
শরীর ক্ষয় :- যাদের খাওয়ার কমতি নেই অথচ শরীর শীর্ণকায় তাদের নিয়মাফিক সেবনে স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
যৌবন রক্ষায় : নিয়মিত এলিয়াম স্যাটাইভা প্রয়োগে নারী, পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায় ও ধরে রাখা সম্ভব হয়।
উচ্চ রক্তচাপ : উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে ক্রিয়া করে।
মেধা হ্রাস : যেসব ছাত্রছাত্রীর স্মৃতিশক্তির হ্রাস আছে তাদের বৃদ্ধিকারক। শুধু স্মৃতিশক্তির বর্ধকই নয়, শরীর ও মনের সার্বিক উন্নতি করে।
কৃমি : ১ ফোঁটা এলিয়াম স্যাট শোয়ার সময় সেবন করে শোলে এতে গোলও গুড়া কৃমি বের হয়ে যায়।
পেট ফাঁপা : যাদের সামান্যতেই পেটের গোলযোগ, ফাঁপা, অজীর্ণ, জ্বালাযুক্ত উদগার হয়।
বাত- বেদনাদি : বাতের ব্যথা, সায়েটিকা স্নায়ুবিক বেদনা গ্রন্থিস্ফীতি, স্তনগ্রন্থির স্ফীতি, পক্ষাঘাত ব্যথা আছে, ৬ শক্তি প্রয়োগে সেরে যায়।
মেদ বৃদ্ধিতে : মেদ বৃদ্ধিতে অনেকে রসুন খান হোমিওপ্যাথি পরীক্ষায় এর রেজাল্ট আসেনি, আরো পরীক্ষা দরকার (এতে মাশরুম ও সয়াপুটিন নিতে পারেন)।
স্ত্রীরোগ : রসুন নারীর পক্ষে সন্তানপ্রদ। আয়ুবর্ধক, যুবতির জীবনের অঙ্গসৌঠের সমতা রক্ষা করে। মাসিকস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে এটি ব্যবহারে তা পুনরায় প্রবাহিত হয়। স্তনস্ফীতিতে এর ভালো ফল হয়।
মূত্র রোধ : কোনো কারণে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে এলিয়াম স্যাট ভালো করে।
ক্ষতাদি : সর্বপ্রকার ফোঁড়া, বিষফোঁড়া, গলক্ষত, ডিপথেরিয়া, আঘাতজনিত ক্ষত, কাটাক্ষত, ফুসফুসের ক্ষত, আন্ত্রিক ক্ষতে এলিয়াম স্যাট।
এ ছাড়া ও স্বরযন্ত্রের জড়তা, কানে কটমট করা, দৃষ্টিহীনতা, রাতকানা, হিষ্টিরিয়া, ভ্রমরোগ, অস্থিভঙ্গে, পুরনো জ্বর, জীর্ণজ্বর, শরীরের জড়তা, চর্মরোগ, দুর্বলতা ও কাঁপুনি, শরীর কাঁপুনিতে ব্যবহার হয়। এলিয়াম স্যাটিভার ব্যবহারে শীতকালে শরীর গরম থাকে। শরীরের ক্লান্তি দূর করে। এর সঠিক ব্যবহার ডায়াগনোসিস, মাত্রা, শক্তি একজন ভালো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকই নির্ধারণ করতে পারেন।
লেখক : অ্যাসো: প্রফেসার, তানজিম হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জ। চেম্বার : সিটি হোমিও ইন্টারন্যাশনাল ২৩, জয়কালি মন্দির, ঢাকা। ফোন : ০১৯১২৮৪২৫৮৮
No comments