সিঙ্গাপুরে রাজার হালে ক্যাসিনো ডন সাঈদ by মিজানুর রহমান
‘ক্যাসিনো
সাঈদ’ নামে পরিচিত যুবলীগের বিতর্কিত নেতা একেএম মমিনুল হক সাঈদ রাজার
হালে আছেন সিঙ্গাপুরে। ফেরার পার্ক এলাকার অভিজাত ‘সিটি স্কয়ার
রেসিডেন্স’-এ বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকছেন তিনি। অনেকদিন ধরেই এখানে আছেন।
সিঙ্গাপুরে বসেই ঢাকার নেটওয়ার্ক আর আয় ইনকাম ঠিক রাখছেন। এলাকায় যাকে যে
দায়িত্ব দেয়া আছে সেটি পালন হয় কিনা? কোথাও কোনো ঘাটতি আছে কিনা? সেটি
মনিটর করেন হোয়াটস অ্যাপ-ইমুতে। কখনও বাসায় বসে, কখনও রেস্টুরেন্টে- এমনটাই
বলছেন তার ঘনিষ্ঠজনরা। তাদের দাবি- সবকিছুই ঠিক ছিল, কিন্তু সামপ্রতিক
সময়ে খানিকটা মনোবেদনা, দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তাকে।
ক্যাসিনো সম্রাট ইসমাইল হোসেন সম্রাটের আলোচিত ওই ভাবশিষ্য বিচলিত নানা কারণে। এক সময় যেসব জুনিয়র এবং সহযোগী বেনিফিশিয়ারি তাদের ঘিরে থাকতেন দিনের পর দিন, যে সব নেতাদের তুষ্ট করতেন দেশ-বিদেশে, আজ তাদের দুর্দিনে ওই সব ব্যক্তিরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
বিশেষ করে কমিশনার পদ ঠেকাতে ব্যর্থতা সাঈদকে মানসিকভাবে কাবু করে ফেলেছে- ঘনিষ্ঠজনদের তা-ই বলেছেন তিনি। সাঈদ এক সময় নিয়মিত আড্ডা দিতেন মোস্তাফা সেন্টার এলাকায়। সিটি স্কয়ার আবাসিক কন্ডো আর মোস্তাফা সেন্টারের মাঝামাঝিতে হান্ডি নামে একটি ইন্ডিয়ান (ফুড) রেস্টুরেন্টে বসতেন। যার একক আশীর্বাদে সাঈদের এত দূর আসা সেই গুরু ক্যাসিনো সম্রাট ইসমাইল হোসেন সম্রাটের গ্রেপ্তারের দিনেও হান্ডিতে ছিলেন তিনি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডারত অবস্থায়ই সাঈদের কাছে তার ‘গুরু’র গ্রেপ্তারের খবর আসে। ঘনিষ্ঠরা জানান, সেদিন থেকে সাঈদ কিছুটা চিন্তিত-বিচলিত! তবে সম্রাটের সহযোগী-সাপ্লাইয়ারসহ তার সুদিনের বন্ধুরা গাঢাকা বা স্থান বদল করে অনেকটা আত্মগোপনে থাকলেও বিশ্বস্ত অনুচর সাঈদ সে পথে যাননি। যদিও সাঈদ এখন অনেকটাই নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন। কমিশনার পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর তার বন্ধু সার্কেল আরো ছোট হয়ে এসেছে।
একটি সূত্রের দাবি, সাঈদ সিঙ্গাপুরে এলে বরাবরই থাকতেন অরচার্ডে। সম্রাটের সিঙ্গাপুরে থাকা স্ত্রী এক সময় ওই এলাকায় থাকতেন, সম্রাট সেখানে সময় কাটাতেন। পরবর্তীতে সম্রাট-সাঈদরা নিজেদের মতো ক্যাসিনোতে যেতেন। কিন্তু এই কিছুদিন ধরে ফেরার পার্ক এলাকায় আছেন তার ছেলের চিকিৎসার জন্য।
ফেরার পার্কের ২২০ বেডের নবপ্রতিষ্ঠিত অত্যাধুনিক হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসার ফলোআপের জন্য তিনি হাসপাতালের কাছাকাছি ওই অ্যাপার্টমেন্টটা নিয়েছেন। তবে এটা কেনা না ভাড়া তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সিটি স্কয়ার কন্ডোতে হাজারের উপরে ফ্ল্যাট। ওই এলাকায় ৬-৭ জন বাংলাদেশি থাকেন জানিয়ে এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসা করে কোনোভাবে চলা যায়। কারণ দেশেও পয়সা পাঠাতে হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো এখান থেকে শ্রম দিয়ে আমরা কষ্ট করে অর্থ দেশে পাঠাই, আর সম্রাট-সাঈদদের মতো প্রভাবশালীরা বিদেশে নিয়ে এসে সেটি উড়ায় ক্যাসিনোতে, লটারিতে। দেশের টাকা বিদেশে পাচারের পথ রুদ্ধ হলে একজন লোকেরও সিঙ্গাপুর তথা বিদেশে কাজ করতে হবে না বলে মনে করেন সাঈদের পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই ব্যবসায়ী।
সিটি স্কয়ারের পাশেই একটি রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। ক’দিন আগ পর্যন্ত তাদের ৩টি টেবিল রিজার্ভ থাকতো। সাঈদও ঘরের কাছের ওই রেস্টুরেন্টে যেতেন। সেখানে ঢাকা থেকে বিশেষ কেউ এলে তার পদধূলি দেয়ার আয়োজন হতো। কিন্তু এই ক’দিনে রহস্যজনক কারণে পুরনো সেই চিত্র বদলে গেছে। বাঙালিদের বদলে এখন ইন্ডিয়ানসহ অন্যরা সেখানে আড্ডা দিচ্ছেন- এমনটা দেখা যায় গত শনিবার রাতে। ম্যানেজার অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তার মতে কাস্টমারই লক্ষ্মী, সে যেই হোক। পাশেই ইন্ডিয়ান অন্য এক রেস্টুরেন্টে কাজ করেন ঢাকায় এক সময় রাজনীতি করা পলাশ। বিরোধী মতের তিনি। তার ভাষ্য এমন- রাতে মাঝে মধ্যে সাঈদ মোস্তাফা সেন্টারের ৪ নম্বর গেটের কাছে দাঁড়ান। চুপচাপই থাকেন। নিজের মতো সময় কাটান তিনি।
সিঙ্গাপুরে পলাতক যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কমিশনার মুমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হলেও তিনি বোর্ড সভায় নিয়মিত যেতেন না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া জুয়া-ক্যাসিনোর নেশায় সিঙ্গাপুরে পড়ে থাকতেন মাসের পর মাস। অবশ্য এ জন্য তাকে ওই পদ থেকে সদ্য অপসারণ করা হয়েছে। সাঈদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ পুরনো। ঢাকার ক্যাসিনো বাণিজ্যের হোতাদের অন্যতম তিনি। ফকিরাপুলে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবটি চালাতেন তিনি। সাঈদের ক্লাবে নিয়মিত ক্যাসিনো, জুয়া, মাদকের আসর বসতো।
সেপ্টেম্বরে র্যাবের অভিযান আঁচ করতে পেরে পালিয়ে সিঙ্গাপুরে চলে আসেন তিনি। সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে নানা কারবারের সঙ্গে যুক্ত তিনি। এটা তার পুরনো কানেকশন। ক্যাসিনো তো আছেই। আগে মাসে দু’তিনবারও তিনি সিঙ্গাপুরে আসতেন। এখন টানা সময় ধরে থাকছেন। ব্যতিক্রম খুব একটা নয়। ফকিরাপুল ও আরামবাগের মতো এখানেও তাকে বাংলাদেশিরা ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ নামেই চেনেন।
সাঈদের উত্থান মূলত মতিঝিলে। বঙ্গভবন কলোনিতে বেড়ে ওঠা সাঈদ ২০১৫ সালে ওই এলাকার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ওই সময়েই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালু করেন। কাঁচা টাকা। এই ক্লাব পরিচালনায় তার পার্টনার ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্য নেতারাও ভাগ পেতেন। এ ছাড়া আরো চারটি ক্লাবের ক্যাসিনোর ব্যবসা ছিল সাঈদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সাঈদ তার ঘনিষ্ঠ মহলে যেটা বলার চেষ্টা করেন তা হলো- ফকিরাপুল ও আরামবাগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনো ব্যবসার যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ওঠেছে তার সবটুকু তার বেলায় প্রযোজ্য নয়। সাঈদ এ-ও বলেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব নাকি এককভাবে পরিচালনা করতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার এবং তার সহযোগী স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক নেতারা। তিনি কিছু টাকা পেতেন মাত্র!
সাঈদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: ফকিরাপুল, আরামবাগ এলাকা নিয়ে ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের প্রতিটি গলির মাথায় লোহার গেট লাগিয়েছেন কাউন্সিলর সাঈদ। শান্তিনগরসহ পাশের ওয়ার্ডগুলোতেও এমনটা করা হয়েছে। পাহারা দেয়ার জন্য নিরাপত্তাকর্মীও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সাঈদ বাড়তি যেটা করেছেন তা হলো পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। বিনিময়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে এলাকার বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসওয়ারি চাঁদা তুলছেন। তার এলাকায় দোকান বা প্রতিষ্ঠানের আয়তন অনুযায়ী চাঁদা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। চাঁদা না দিলে হুমকি-ধমকি ও ব্যবসা পরিচালনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতেন লোক দিয়ে।
প্রভাব খাটিয়ে কমলাপুর স্টেডিয়াম ও গোপীবাগ বালুর মাঠে দুটি কোরবানির পশুর হাট বসাতেন। মতিঝিল ও আশেপাশের এলাকার ফুটপাথে চাঁদাবাজি করাতেন। এলাকার উন্নয়নকাজ তদারকির নামে চাঁদার জন্য ঠিকাদারকে জিম্মি করে ফেলতেন। এ নিয়ে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায়ও পিছপা হতেন না তিনি। বোর্ড সভায় উত্তেজনা ছড়ানোর দায়েও অভিযুক্ত সাঈদ। উল্লেখ্য, অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ক্যাসিনো সম্রাট ইসমাইল হোসেন সম্রাটের আলোচিত ওই ভাবশিষ্য বিচলিত নানা কারণে। এক সময় যেসব জুনিয়র এবং সহযোগী বেনিফিশিয়ারি তাদের ঘিরে থাকতেন দিনের পর দিন, যে সব নেতাদের তুষ্ট করতেন দেশ-বিদেশে, আজ তাদের দুর্দিনে ওই সব ব্যক্তিরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
বিশেষ করে কমিশনার পদ ঠেকাতে ব্যর্থতা সাঈদকে মানসিকভাবে কাবু করে ফেলেছে- ঘনিষ্ঠজনদের তা-ই বলেছেন তিনি। সাঈদ এক সময় নিয়মিত আড্ডা দিতেন মোস্তাফা সেন্টার এলাকায়। সিটি স্কয়ার আবাসিক কন্ডো আর মোস্তাফা সেন্টারের মাঝামাঝিতে হান্ডি নামে একটি ইন্ডিয়ান (ফুড) রেস্টুরেন্টে বসতেন। যার একক আশীর্বাদে সাঈদের এত দূর আসা সেই গুরু ক্যাসিনো সম্রাট ইসমাইল হোসেন সম্রাটের গ্রেপ্তারের দিনেও হান্ডিতে ছিলেন তিনি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডারত অবস্থায়ই সাঈদের কাছে তার ‘গুরু’র গ্রেপ্তারের খবর আসে। ঘনিষ্ঠরা জানান, সেদিন থেকে সাঈদ কিছুটা চিন্তিত-বিচলিত! তবে সম্রাটের সহযোগী-সাপ্লাইয়ারসহ তার সুদিনের বন্ধুরা গাঢাকা বা স্থান বদল করে অনেকটা আত্মগোপনে থাকলেও বিশ্বস্ত অনুচর সাঈদ সে পথে যাননি। যদিও সাঈদ এখন অনেকটাই নিঃসঙ্গ, বন্ধুহীন। কমিশনার পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর তার বন্ধু সার্কেল আরো ছোট হয়ে এসেছে।
একটি সূত্রের দাবি, সাঈদ সিঙ্গাপুরে এলে বরাবরই থাকতেন অরচার্ডে। সম্রাটের সিঙ্গাপুরে থাকা স্ত্রী এক সময় ওই এলাকায় থাকতেন, সম্রাট সেখানে সময় কাটাতেন। পরবর্তীতে সম্রাট-সাঈদরা নিজেদের মতো ক্যাসিনোতে যেতেন। কিন্তু এই কিছুদিন ধরে ফেরার পার্ক এলাকায় আছেন তার ছেলের চিকিৎসার জন্য।
ফেরার পার্কের ২২০ বেডের নবপ্রতিষ্ঠিত অত্যাধুনিক হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসার ফলোআপের জন্য তিনি হাসপাতালের কাছাকাছি ওই অ্যাপার্টমেন্টটা নিয়েছেন। তবে এটা কেনা না ভাড়া তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সিটি স্কয়ার কন্ডোতে হাজারের উপরে ফ্ল্যাট। ওই এলাকায় ৬-৭ জন বাংলাদেশি থাকেন জানিয়ে এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসা করে কোনোভাবে চলা যায়। কারণ দেশেও পয়সা পাঠাতে হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো এখান থেকে শ্রম দিয়ে আমরা কষ্ট করে অর্থ দেশে পাঠাই, আর সম্রাট-সাঈদদের মতো প্রভাবশালীরা বিদেশে নিয়ে এসে সেটি উড়ায় ক্যাসিনোতে, লটারিতে। দেশের টাকা বিদেশে পাচারের পথ রুদ্ধ হলে একজন লোকেরও সিঙ্গাপুর তথা বিদেশে কাজ করতে হবে না বলে মনে করেন সাঈদের পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই ব্যবসায়ী।
সিটি স্কয়ারের পাশেই একটি রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিতেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। ক’দিন আগ পর্যন্ত তাদের ৩টি টেবিল রিজার্ভ থাকতো। সাঈদও ঘরের কাছের ওই রেস্টুরেন্টে যেতেন। সেখানে ঢাকা থেকে বিশেষ কেউ এলে তার পদধূলি দেয়ার আয়োজন হতো। কিন্তু এই ক’দিনে রহস্যজনক কারণে পুরনো সেই চিত্র বদলে গেছে। বাঙালিদের বদলে এখন ইন্ডিয়ানসহ অন্যরা সেখানে আড্ডা দিচ্ছেন- এমনটা দেখা যায় গত শনিবার রাতে। ম্যানেজার অবশ্য ভিন্ন কথা বলছেন। তার মতে কাস্টমারই লক্ষ্মী, সে যেই হোক। পাশেই ইন্ডিয়ান অন্য এক রেস্টুরেন্টে কাজ করেন ঢাকায় এক সময় রাজনীতি করা পলাশ। বিরোধী মতের তিনি। তার ভাষ্য এমন- রাতে মাঝে মধ্যে সাঈদ মোস্তাফা সেন্টারের ৪ নম্বর গেটের কাছে দাঁড়ান। চুপচাপই থাকেন। নিজের মতো সময় কাটান তিনি।
সিঙ্গাপুরে পলাতক যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কমিশনার মুমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হলেও তিনি বোর্ড সভায় নিয়মিত যেতেন না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া জুয়া-ক্যাসিনোর নেশায় সিঙ্গাপুরে পড়ে থাকতেন মাসের পর মাস। অবশ্য এ জন্য তাকে ওই পদ থেকে সদ্য অপসারণ করা হয়েছে। সাঈদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ পুরনো। ঢাকার ক্যাসিনো বাণিজ্যের হোতাদের অন্যতম তিনি। ফকিরাপুলে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবটি চালাতেন তিনি। সাঈদের ক্লাবে নিয়মিত ক্যাসিনো, জুয়া, মাদকের আসর বসতো।
সেপ্টেম্বরে র্যাবের অভিযান আঁচ করতে পেরে পালিয়ে সিঙ্গাপুরে চলে আসেন তিনি। সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে নানা কারবারের সঙ্গে যুক্ত তিনি। এটা তার পুরনো কানেকশন। ক্যাসিনো তো আছেই। আগে মাসে দু’তিনবারও তিনি সিঙ্গাপুরে আসতেন। এখন টানা সময় ধরে থাকছেন। ব্যতিক্রম খুব একটা নয়। ফকিরাপুল ও আরামবাগের মতো এখানেও তাকে বাংলাদেশিরা ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ নামেই চেনেন।
সাঈদের উত্থান মূলত মতিঝিলে। বঙ্গভবন কলোনিতে বেড়ে ওঠা সাঈদ ২০১৫ সালে ওই এলাকার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ওই সময়েই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালু করেন। কাঁচা টাকা। এই ক্লাব পরিচালনায় তার পার্টনার ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্য নেতারাও ভাগ পেতেন। এ ছাড়া আরো চারটি ক্লাবের ক্যাসিনোর ব্যবসা ছিল সাঈদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সাঈদ তার ঘনিষ্ঠ মহলে যেটা বলার চেষ্টা করেন তা হলো- ফকিরাপুল ও আরামবাগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি এবং ক্যাসিনো ব্যবসার যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ওঠেছে তার সবটুকু তার বেলায় প্রযোজ্য নয়। সাঈদ এ-ও বলেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব নাকি এককভাবে পরিচালনা করতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার এবং তার সহযোগী স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক নেতারা। তিনি কিছু টাকা পেতেন মাত্র!
সাঈদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: ফকিরাপুল, আরামবাগ এলাকা নিয়ে ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের প্রতিটি গলির মাথায় লোহার গেট লাগিয়েছেন কাউন্সিলর সাঈদ। শান্তিনগরসহ পাশের ওয়ার্ডগুলোতেও এমনটা করা হয়েছে। পাহারা দেয়ার জন্য নিরাপত্তাকর্মীও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সাঈদ বাড়তি যেটা করেছেন তা হলো পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। বিনিময়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে এলাকার বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসওয়ারি চাঁদা তুলছেন। তার এলাকায় দোকান বা প্রতিষ্ঠানের আয়তন অনুযায়ী চাঁদা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। চাঁদা না দিলে হুমকি-ধমকি ও ব্যবসা পরিচালনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতেন লোক দিয়ে।
প্রভাব খাটিয়ে কমলাপুর স্টেডিয়াম ও গোপীবাগ বালুর মাঠে দুটি কোরবানির পশুর হাট বসাতেন। মতিঝিল ও আশেপাশের এলাকার ফুটপাথে চাঁদাবাজি করাতেন। এলাকার উন্নয়নকাজ তদারকির নামে চাঁদার জন্য ঠিকাদারকে জিম্মি করে ফেলতেন। এ নিয়ে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায়ও পিছপা হতেন না তিনি। বোর্ড সভায় উত্তেজনা ছড়ানোর দায়েও অভিযুক্ত সাঈদ। উল্লেখ্য, অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
No comments