মোহাম্মদপুরের সুলতানের পতন: বেরিয়ে আসছে আরো অপকর্ম by মোহাম্মদ ওমর ফারুক
মোহাম্মদপুরের
সুলতান বলে খ্যাত কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিবের সম্রাজ্য এখন পতনের
পথে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অবৈধ জমি দখলের অভিযোগে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার
হওয়ার পর এলাকায় স্বস্তির বাতাস বইছে। আনন্দ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী।
গ্রেপ্তারের পর তার আরো নানা অপকর্মের তথ্য বেরিয়ে আসছে একে একে। বসুন্ধরা
আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৩৩ নম্বর
ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজীবের দুই বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫ কোটি টাকার চেকসহ
অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে । শনিবার রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত
রাজধানীর বসুন্ধরা ও মোহাম্মদপুরের অবস্থিত তার দুই বাসায় এই অভিযান চালানো
হয়। র্যাব সূত্র জানায়, রাজীবের মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে ৫ কোটি টাকার
বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই জব্দ করা হয়েছে। একইসঙ্গে জমিজমার বিভিন্ন
কাগজপত্রও জব্দ করা হয়েছে।
একই সময় আলামত ধ্বংস এবং কাজে অসহযোগিতার কারণে রাজীবের সহযোগী (পিও) সাদেককে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
র্যাব জানায়, শনিবার রাত সোয়া ১টার দিকে কাউন্সিলর রাজীবকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে তার নিজ বাসায় অভিযান শুরু করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভোর চারটার দিকে বাসায় মোটামুটি অভিযান শেষ করে রাজীবকে নিয়ে তার অফিসে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে র্যাব-২ ছাড়াও র্যাব-১ এবং র্যাব সদর দপ্তরের একাধিক টিম কাজ করছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে রাজীবকে গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, ৭ বোতল বিদেশি মদ, একটি পাসপোর্ট ও ৩৩ হাজার নগদ টাকা জব্দ করা হয়। মোহাম্মদপুরের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবও গত দুই সপ্তাহ ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।
র্যাব সদর দপ্তর ও র্যাব-২ এর একটি যৌথ দল তাকে নজরদারি করে। এই ঘটনার পর তারেকুজ্জামানকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের সিদ্ধান্তের আলোকে অসামাজিক ও সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল তাকে বহিষ্কার করা হয়। গ্রেপ্তারের খবরে গতকাল মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় চলে আনন্দ মিছিল। এর আগে গত ১৪ই আক্টোবর‘ মোহাম্মপুরের সুলতান ’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় মানবজমিনে। এর পর থেকে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
২০১৫ সালে কাউন্সিলর হওয়ার পরপরই সম্পূর্ণ বদলে যায় রাজীবের জীবন। চালচলনে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। কোথাও গেলে সঙ্গে থাকতো গাড়ি আর মোটরবাইকের বহর। রাস্তা বন্ধ করে চলতো এসব গাড়ি। রোদে গেলে আশেপাশের কেউ ধরে রাখে ছাতা। সঙ্গে ক্যাডার বাহিনী থাকতো সব সময়। মাত্র চার বছরে মালিক বনে গেছেন অঢেল সম্পত্তি, গাড়ি আর বাড়ির। কাউন্সিলর নিজের এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন রাজত্ব। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ আর মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত করেছেন তার সাম্রাজ্য । মোহাম্মদপুরের বসিলা, ওয়াশপুর, কাটাসুর, গ্রাফিক্স আর্টস ও শারীরিক শিক্ষা কলেজ, মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এবং বাঁশবাড়ী এলাকায় তৈরি করেছেন একক আধিপত্য। ২০১৫ সালের কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী । বিভিন্ন কারসাজি করে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে হারান। অভিযোগ রয়েছে এরপর থেকেই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করছেন না তিনি।
কাউন্সিলর হওয়ার পর মোহাম্মদপুর এলাকায় নিজেই গড়ে তুলেছেন দখদারিত্ব, হয়ে ওঠেন ভূমিদস্যুদের গডফাদার। দখল করেন সাধারণ মানুষের জমি। বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড, ফুটপাতই তার চাঁদা তোলার মূল উৎস। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাহ আলম, জীবন, ইয়াবা ব্যবসায়ী সিএনজি কামাল, অভি ফারুক, আশিকুর রহমান রনির মাধ্যমে প্রতিমাসে শুধু স্ট্যান্ড থেকেই তুলেন প্রায় দুই কোটি টাকা। কোথা থেকে কে, কত টাকা করে চাঁদা তুলে কাউন্সিলরকে দেন- এমন একটি তালিকা এসেছে আমাদের হাতে। এতে দেখা যায়, মোহাম্মপুর থেকে সিকশনের ১৬০ টি সিএনজি থেকে ১৫০টাকা করে প্রতিদিন সিএনজি কামাল চাঁদা তুলেন ২৪ হাজার টাকা। যা প্রতি মাসে এসে দাড়ায় ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর থেকে ঢাকা উদ্যানে চালিত অটো বাইক থেকে চাঁদা তুলেন কমিশনারের বড় ভাই রাসেল। যা প্রতি মাসে অর্থলক্ষ টাকার মতো চাঁদা তুলে সে। মোহাম্মপুর থেকে বছিলা রোডে অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদা তুলেন কমিশনারের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভি ফারুক।এখানে প্রায় তিন’শটি আটো রিকশা থেকে ২০ টাকা করে প্রতিদিন এবং মাসিক ২০০ টাকা করে চাঁদা তুলে সে। যা মাসিক চাঁদার হার এসে দাড়ায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। শিকসন থেকে গাবতলীর ১২০টি লেগুনা থেকে ১৫০ টাকা করে প্রতিদিন চাঁদা তুলে ১৮ হাজার টাকা। যার প্রতি মাসে দাঁড়ায় ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এদিকে মোহাম্মদপুর থেকে আটিবাজারের ১শ’টি সিএনজি থেকে ৪০ টাকা করে প্রতি দিন ৪ হাজার টাকা করে তুলেন লাইনম্যান সাইদ এবং আলমীগর । তাদের নেতৃত্ব দেন সাইদুল। প্রতি মাসে যেখানে ওঠে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর টু সলমাসি থেকে জাহাঙ্গীর এবং আসলাম ৩৫টি সিএনজি থেকে ৪০ টাকা করে প্রতিদিন তুলেন ১৪০০ টাকা। প্রতি মাসে ওঠে ৪২হাজার টাকা। মোহাম্মপুর টু দুদু মার্কেট দিলু আর সুমন ৩০টি থেকে তুলেন ৪০টাকা করে ১২০০ টাকা। মাসে ৩৬হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর থেকে দোহার বনদুরা সবুজ এবং নাসির ৭০টি সিএনজি থেকে তুলেন ৪০টাকা করে । যা মাসে এসে দাঁড়ায় ৮৪ হাজার টাকা। এই টাকাটি নেন আপন নামে একজন। একই রোডে কাইলা সুমন নামে একজন ৬০টি সিএনজি থেকে ৪০ টাকা করে তুলেন ২৪০০টাকা। মাসে তুলেন ৭২০০ হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর টু রহিতপুর দুলাল ও সুমন নামে দুই লাইনম্যান ৪০টি সিএনজি থেকে ৪০ টাকা করে তুলেন মাসে ৪৮ হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর টু বছিলা, আল আমিন ও অভি ফারুক মিলে ৩৫টি সিএনজি থেকে তুলেন ৪০ টাকা করে ১৪০০ টাকা। এই টাকা তুলে শাহ আলমকে দেয়। যা মাসে ৪২ হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর টু কোনাখোলা সুমন আর দুলাল তুলেন ৪০ টি সিএনজি থেকে ১৬০০ টাকা। এই টাকা পান সাইদুল । মাসে এসে দাড়ায় ৪৮০০ হাজার। মোহাম্মদপুর থেকে কদমতলি থেকে মারুফ ও সুমন তুলে ৭০টি সিএনজি থেকে ২৮০০ টাকা। যা মাসে এসে দাড়ায় ৮৪ হাজার টাকা। ফুটপাত ছাড়া এই হিসেব দাঁড়ায় প্রায় দুই কোটি টাকা। মোহাম্মদপুর এলাকার ফুটপাথগুলো থেকে আরো প্রায় কোটি টাকা চাঁদা আসে তার পকেটে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাদাঁবাজির বাইরে নানান অপকর্ম করতো তার লোকজন। কোরবান আলী নামে একজন রাজিবের খুব ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ছিলো। কোরবানী আলী বাসবাড়ি বস্তিতে ছিলো তার রাজত্ব। অবৈধ বিদ্যুতের লাইন, পানির লাইন, বাসা বাণিজ্যসহ সবই করতো সে। এখান থেকে প্রতিমাসে তার কাছে চলে যেতো মাশোয়ারা। আমজাদ হোসেন নামে আরেক ব্যাক্তি শিয়া মসজিদ এলাকায় দখদারিত্ব নিয়ন্ত্রণ করতো। মানুষকে হয়রানী করাই ছিলো তার কাজ। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতো হালিম ও মমিন নামে দুইজন।
বসিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে গর্ভানিং বডির সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছর খানেক আগে বিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানের ব্যানারে তার নাম না লেখাতে ক্ষেপে যান রাজিব। পরে অনুষ্ঠান স্থলেই তার লোকজন আনোয়ার হোসেনকে মারধর করেন। পরে তিনি এই বিদ্যালয়টির গর্ভানিং বডির সভাপতি পদটি ভাগিয়ে নেন।
এদিকে মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ে একটি দু’তলা ভবন দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া মোহাম্মদীয়া হাউজিং কাঁচাবাজারে একটি সাত তলা ভবন অবৈধভাবে তার লোকজন দখল করে রেখেছে। তাছাড়া মোহাম্মদীয়া হাউজিং কাঁচাবাজারের নির্বাচিত সভাপতি আবুল হোসেনকে দীর্ঘদিন ধরে বাজারে প্রবেশ করতে দেয় না কাউন্সিলরের লোকজন।
একই সময় আলামত ধ্বংস এবং কাজে অসহযোগিতার কারণে রাজীবের সহযোগী (পিও) সাদেককে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
র্যাব জানায়, শনিবার রাত সোয়া ১টার দিকে কাউন্সিলর রাজীবকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে তার নিজ বাসায় অভিযান শুরু করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভোর চারটার দিকে বাসায় মোটামুটি অভিযান শেষ করে রাজীবকে নিয়ে তার অফিসে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে র্যাব-২ ছাড়াও র্যাব-১ এবং র্যাব সদর দপ্তরের একাধিক টিম কাজ করছে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে রাজীবকে গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগজিন, ৭ বোতল বিদেশি মদ, একটি পাসপোর্ট ও ৩৩ হাজার নগদ টাকা জব্দ করা হয়। মোহাম্মদপুরের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবও গত দুই সপ্তাহ ধরে আত্মগোপনে ছিলেন।
র্যাব সদর দপ্তর ও র্যাব-২ এর একটি যৌথ দল তাকে নজরদারি করে। এই ঘটনার পর তারেকুজ্জামানকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিস্কার করা হয়। যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদের সিদ্ধান্তের আলোকে অসামাজিক ও সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল তাকে বহিষ্কার করা হয়। গ্রেপ্তারের খবরে গতকাল মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় চলে আনন্দ মিছিল। এর আগে গত ১৪ই আক্টোবর‘ মোহাম্মপুরের সুলতান ’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় মানবজমিনে। এর পর থেকে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
২০১৫ সালে কাউন্সিলর হওয়ার পরপরই সম্পূর্ণ বদলে যায় রাজীবের জীবন। চালচলনে আসে ব্যাপক পরিবর্তন। কোথাও গেলে সঙ্গে থাকতো গাড়ি আর মোটরবাইকের বহর। রাস্তা বন্ধ করে চলতো এসব গাড়ি। রোদে গেলে আশেপাশের কেউ ধরে রাখে ছাতা। সঙ্গে ক্যাডার বাহিনী থাকতো সব সময়। মাত্র চার বছরে মালিক বনে গেছেন অঢেল সম্পত্তি, গাড়ি আর বাড়ির। কাউন্সিলর নিজের এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন রাজত্ব। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ আর মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত করেছেন তার সাম্রাজ্য । মোহাম্মদপুরের বসিলা, ওয়াশপুর, কাটাসুর, গ্রাফিক্স আর্টস ও শারীরিক শিক্ষা কলেজ, মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এবং বাঁশবাড়ী এলাকায় তৈরি করেছেন একক আধিপত্য। ২০১৫ সালের কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী । বিভিন্ন কারসাজি করে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে হারান। অভিযোগ রয়েছে এরপর থেকেই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করছেন না তিনি।
কাউন্সিলর হওয়ার পর মোহাম্মদপুর এলাকায় নিজেই গড়ে তুলেছেন দখদারিত্ব, হয়ে ওঠেন ভূমিদস্যুদের গডফাদার। দখল করেন সাধারণ মানুষের জমি। বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড, ফুটপাতই তার চাঁদা তোলার মূল উৎস। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাহ আলম, জীবন, ইয়াবা ব্যবসায়ী সিএনজি কামাল, অভি ফারুক, আশিকুর রহমান রনির মাধ্যমে প্রতিমাসে শুধু স্ট্যান্ড থেকেই তুলেন প্রায় দুই কোটি টাকা। কোথা থেকে কে, কত টাকা করে চাঁদা তুলে কাউন্সিলরকে দেন- এমন একটি তালিকা এসেছে আমাদের হাতে। এতে দেখা যায়, মোহাম্মপুর থেকে সিকশনের ১৬০ টি সিএনজি থেকে ১৫০টাকা করে প্রতিদিন সিএনজি কামাল চাঁদা তুলেন ২৪ হাজার টাকা। যা প্রতি মাসে এসে দাড়ায় ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর থেকে ঢাকা উদ্যানে চালিত অটো বাইক থেকে চাঁদা তুলেন কমিশনারের বড় ভাই রাসেল। যা প্রতি মাসে অর্থলক্ষ টাকার মতো চাঁদা তুলে সে। মোহাম্মপুর থেকে বছিলা রোডে অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদা তুলেন কমিশনারের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভি ফারুক।এখানে প্রায় তিন’শটি আটো রিকশা থেকে ২০ টাকা করে প্রতিদিন এবং মাসিক ২০০ টাকা করে চাঁদা তুলে সে। যা মাসিক চাঁদার হার এসে দাড়ায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। শিকসন থেকে গাবতলীর ১২০টি লেগুনা থেকে ১৫০ টাকা করে প্রতিদিন চাঁদা তুলে ১৮ হাজার টাকা। যার প্রতি মাসে দাঁড়ায় ৫ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা। এদিকে মোহাম্মদপুর থেকে আটিবাজারের ১শ’টি সিএনজি থেকে ৪০ টাকা করে প্রতি দিন ৪ হাজার টাকা করে তুলেন লাইনম্যান সাইদ এবং আলমীগর । তাদের নেতৃত্ব দেন সাইদুল। প্রতি মাসে যেখানে ওঠে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর টু সলমাসি থেকে জাহাঙ্গীর এবং আসলাম ৩৫টি সিএনজি থেকে ৪০ টাকা করে প্রতিদিন তুলেন ১৪০০ টাকা। প্রতি মাসে ওঠে ৪২হাজার টাকা। মোহাম্মপুর টু দুদু মার্কেট দিলু আর সুমন ৩০টি থেকে তুলেন ৪০টাকা করে ১২০০ টাকা। মাসে ৩৬হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর থেকে দোহার বনদুরা সবুজ এবং নাসির ৭০টি সিএনজি থেকে তুলেন ৪০টাকা করে । যা মাসে এসে দাঁড়ায় ৮৪ হাজার টাকা। এই টাকাটি নেন আপন নামে একজন। একই রোডে কাইলা সুমন নামে একজন ৬০টি সিএনজি থেকে ৪০ টাকা করে তুলেন ২৪০০টাকা। মাসে তুলেন ৭২০০ হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর টু রহিতপুর দুলাল ও সুমন নামে দুই লাইনম্যান ৪০টি সিএনজি থেকে ৪০ টাকা করে তুলেন মাসে ৪৮ হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর টু বছিলা, আল আমিন ও অভি ফারুক মিলে ৩৫টি সিএনজি থেকে তুলেন ৪০ টাকা করে ১৪০০ টাকা। এই টাকা তুলে শাহ আলমকে দেয়। যা মাসে ৪২ হাজার টাকা। মোহাম্মদপুর টু কোনাখোলা সুমন আর দুলাল তুলেন ৪০ টি সিএনজি থেকে ১৬০০ টাকা। এই টাকা পান সাইদুল । মাসে এসে দাড়ায় ৪৮০০ হাজার। মোহাম্মদপুর থেকে কদমতলি থেকে মারুফ ও সুমন তুলে ৭০টি সিএনজি থেকে ২৮০০ টাকা। যা মাসে এসে দাড়ায় ৮৪ হাজার টাকা। ফুটপাত ছাড়া এই হিসেব দাঁড়ায় প্রায় দুই কোটি টাকা। মোহাম্মদপুর এলাকার ফুটপাথগুলো থেকে আরো প্রায় কোটি টাকা চাঁদা আসে তার পকেটে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাদাঁবাজির বাইরে নানান অপকর্ম করতো তার লোকজন। কোরবান আলী নামে একজন রাজিবের খুব ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত ছিলো। কোরবানী আলী বাসবাড়ি বস্তিতে ছিলো তার রাজত্ব। অবৈধ বিদ্যুতের লাইন, পানির লাইন, বাসা বাণিজ্যসহ সবই করতো সে। এখান থেকে প্রতিমাসে তার কাছে চলে যেতো মাশোয়ারা। আমজাদ হোসেন নামে আরেক ব্যাক্তি শিয়া মসজিদ এলাকায় দখদারিত্ব নিয়ন্ত্রণ করতো। মানুষকে হয়রানী করাই ছিলো তার কাজ। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতো হালিম ও মমিন নামে দুইজন।
বসিলা উচ্চ বিদ্যালয়ে গর্ভানিং বডির সভাপতি আনোয়ার হোসেনকে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছর খানেক আগে বিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানের ব্যানারে তার নাম না লেখাতে ক্ষেপে যান রাজিব। পরে অনুষ্ঠান স্থলেই তার লোকজন আনোয়ার হোসেনকে মারধর করেন। পরে তিনি এই বিদ্যালয়টির গর্ভানিং বডির সভাপতি পদটি ভাগিয়ে নেন।
এদিকে মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ে একটি দু’তলা ভবন দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া মোহাম্মদীয়া হাউজিং কাঁচাবাজারে একটি সাত তলা ভবন অবৈধভাবে তার লোকজন দখল করে রেখেছে। তাছাড়া মোহাম্মদীয়া হাউজিং কাঁচাবাজারের নির্বাচিত সভাপতি আবুল হোসেনকে দীর্ঘদিন ধরে বাজারে প্রবেশ করতে দেয় না কাউন্সিলরের লোকজন।
No comments