‘আমাদের ঈদ কাটে আকাশে, দেশে দেশে’ by শামিউল আলম
আমরা
যারা ফ্লাইটে কাজ করি, আমাদের ঘুমের আর বিশ্রামের কোনও রাতদিন নেই। অন্য
পেশাজীবীদের মতো আমাদের কোনও রুটিন নেই। ধরাবাঁধা অফিস নেই আমাদের। আজ এই
দেশ তো কাল ওই দেশ। বলা যায় আধুনিক যুগের যাযাবর!
ঈদের দিনেও আমাদের দায়িত্ব সামলাতে হয়। এ কারণে ইচ্ছে থাকলেও ইচ্ছে থাকে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উদযাপন করার সুযোগ মেলে কম। কাজের খাতিরে গত নয়টি ঈদের মতো এবারও আমার ঈদুল আজহা কেটেছে দেশের বাইরে। এবার ঈদ করেছি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে। গত ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ছিলাম কাতারের রাজধানী দোহায়। ঈদ উপলক্ষে দেশে আসা প্রবাসীদের নিয়ে ফ্লাইট ঢাকায় নামে ৮ আগস্ট সকালে। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর। এরপর রাজ্যর ক্লান্তি নিয়ে ঘুম। পরের দিনের ডিউটি রোস্টার দেখতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। দেখলাম ৯ আগস্ট বিকালে আবুধাবিতে আমার ফ্লাইট। খুশি লাগলো। কারণ সেদিন গেলে দেশে ফিরবো ঈদের আগের দিন (১১ আগস্ট)। ঈদ পাবো দেশে!
ঈদে কী করবো সেই পরিকল্পনা করে ফেললাম। কিন্তু এয়ারক্রাফট রওনা দেওয়ার আগে খবর এলো, আমাদের ক্রু সদস্যদের মধ্যে একদল চলে আসবে ঈদের আগের দিন। আর অন্যরা থেকে যাবে। তারা ফিরতে পারবে ঈদের দিন (১২ আগস্ট)। আমার নাম ছিল পরের টিমে, তাই সব পরিকল্পনা সেখানেই মাটি! অগত্যা নিজেকে মানিয়ে আরেকদল যাত্রী নিয়ে রওনা দিই আবুধাবিতে, যারা ঈদের আগে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। ৪ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট পরে গন্তব্যে পৌঁছাই আমরা। তখন স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টা। পরদিন (১০ আগস্ট) পবিত্র হজ। সেদিন দুপুরে ঘুম থেকে উঠে ভাবছিলাম কী করবো। আগামীকাল আবুধাবিতে ঈদ।
আবুধাবিতে প্রবাসীরা বেশি। নানান দেশের নানান মানুষ। ঈদ উপলক্ষে কোনও বাড়তি আয়োজন নেই। মহাসড়কের মাঝে ঈদ লেখা আলোকসজ্জা। কিন্তু শহরে আলাদাভাবে কোনও কিছু চোখে পড়লো না। সব প্রতিদিনের মতো। ঈদ উপলক্ষে আবুধাবিতে সরকারি বন্ধ পাঁচদিন। কিন্ত কাজ-কর্ম থেমে নেই। দোকান-পাট খোলা, যে যার মতো ব্যস্ত। ঈদ এ দেশে বাড়তি কোনও আনন্দ যোগ করে না বুঝলাম। আবুধাবির মানুষ বেশিরভাগই ছুটিতে ইউরোপ কিংবা ভারতে বেড়ায়। তার আগে কোরবানির জন্য ব্যাংক কিংবা ক্যাটেল মার্কেটে টাকা দিয়ে যায় তারা।
আবুধাবিতে পশু কোরবানি দেওয়ার নির্দিষ্ট জায়গা আছে। এর বাইরে গেলে সিটি করপোরেশন জরিমানা করে। নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি দেওয়ার পর সেই মাংস বিভিন্ন দরিদ্র মুসলিম দেশে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। বাংলাদেশে আসা উট-দুম্বার মাংসগুলো সেখানকারই। এই হলো মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঈদ। কোনও বাড়তি আয়োজন, উচ্ছ্বাস, উদযাপন ছাড়াই স্বাভাবিক একটি দিনের মতো।
বন্ধুর গাড়িতে চড়ে ১০ আগস্ট বিকালে দুবাইয়ের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ি। সে শারজাহ প্রবাসী। আমার এক সহকর্মীও ছিল। আবুধাবি থেকে দুবাই দেড় ঘণ্টা লাগলো। সেদিন রাতে দুবাই ক্যাটেল মার্কেট থেকে কোরবানির জন্য একটি ছাগল কেনা হলো। এটি দুবাইয়ের একমাত্র পশু বিক্রয়কেন্দ্র। অত্যন্ত গোছানো পশুর হাট। এখানে পশু কেনাবেচার জন্য ক্রেতাকে কোনও হাসিল দিতে হয় না। মার্কেট থাকে সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে। তারা বিভিন্ন অংশে পশু রাখার জন্য জায়গা রেখে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেয়। ব্যবসায়ীরা সারাবছর সেখানে পশু কেনাবেচা করে। ক্রেতার কাছ থেকে পশুর দাম ছাড়া এক টাকাও নেয় না কেউ। সব জায়গায় বড় বড় ফ্যান, লাইট ও পশুকে পানি খাওয়ানোর সুব্যবস্থা আছে। দূর-দূরান্তে পশু পরিবহনের জন্য আলাদা পিকআপ স্ট্যান্ড, ক্রেতাদের জন্য গাড়ি পার্কিংসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় ক্যাটেল মার্কেটে।
আমাদের কেনা ছাগল নিয়ে চলে আসি আমিরাতের আরেক শহর শারজাহতে। তবে ঈদের দিন (১১ আগস্ট) ভোরে ফজর শেষে ঈদের নামাজ পড়তে যাই দুবাইয়ে। ব্যাপারটা এমন থাকি– ঢাকায়, নামাজ পড়ি নারায়ণগঞ্জে। জামাত ছিল সকাল ৬টা ৭ মিনিটে। নামাজ ঠিক সময়মতোই শুরু হয়। আমি যে বাসায় ছিলাম সেটি শারজাহর সীমান্তে। ভবনের এক দরজা দুবাইয়ে, আরেক দরজার পাশের রাস্তা শারজাহতে।
নামাজ পড়ে ছাগল কোরবানির পর বিরিয়ানি রান্না হয়। খেয়েদেয়ে আবুধাবির উদ্দেশে বের হই আমরা। ঘণ্টায় কখনও ১২০ মাইল, কখনও আবার ১৬০ মাইল গতিতে চলেছে গাড়ি। আবুধাবি এসে শেখ যায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে যাই। এটি মক্কা-মদিনার পরে ইসলামি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এখানে ২৪ ঘণ্টা কোরআন তেলওয়াত হয়। মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্য এর দুয়ার উন্মুক্ত থাকে। বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা মসজিদটি দেখতে আসেন।
শেখ যায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে এশার নামাজ পড়ে আমরা হোটেলে ফিরি। তখন দেশে ফেরার ফ্লাইটের বাকি আরও পাঁচ ঘণ্টা। স্যুটকেস গুছিয়ে ঘুম দিই। এরপর ফ্লাইটের জন্য বেরিয়ে পড়ি। বিমানে উঠে দেখি সব আসন পূর্ণ। আজ (১২ আগস্ট) বাংলাদেশে ঈদ। প্রবাসীদের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। সবাই আনন্দে আত্নহারা। সবার হাতেই পরিবারের জন্য কেনা উপহার। তাদের নিয়ে ফ্লাইট ছাড়ে স্থানীয় সময় ভোর পৌনে ৫টায়। চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় পৌঁছাই দুপুর দেড়টায়। সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় যেতে যেতে বিকাল সাড়ে ৩টা।
সবাই আমার অপেক্ষায়। পরিবার-পরিজনকে হয়তো অন্য পেশাজীবীদের মতো অত সময় দিতে পারি না, তবে সহকর্মীরাও আমার আরেকটি পরিবার। গত পাঁচ বছরের ১০টি ঈদ তাদের সঙ্গে মাঝ আকাশে ও ভিনদেশের মাটিতে কেটেছে। সব আনন্দ, উপলক্ষ্য কিংবা সুখে-দুঃখে তারা পরিবারের মতোই আমার পাশে থাকে, যাদের ওপর নিশ্চিন্তে ভরসা করতে পারি। তাই সহকর্মীরাও আমার আপনজন, এয়ারক্রাফট আমার ঘর। তাদের নিয়েই আমার জীবন। ঈদে সাধারণত একসঙ্গে নৈশভোজ করে, ছবি দেখে ও দলবেঁধে ঘুরে আমাদের দিন কাটে। মন খারাপের কোনও অবকাশ নেই।
জীবনটা মন্দ নয়! ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট কাতার, ৯ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট আবুধাবি, আর এখন লন্ডনে। আমার কিছু ত্যাগ ও কর্ম অন্য কারও জন্য খুশির উপলক্ষ্য। এটাই প্রাপ্তি। দেশে ফেরার পরদিন (১৩ আগস্ট) সারাদিনই বাসায় ছিলাম, পরিবারের সঙ্গে। ১৪ আগস্ট সকালে চলে আসি লন্ডন। এই লেখাটা লন্ডনের হোটেলে বসেই সাজানো। এভাবেই চলে যাবে যাযাবর দিন, আসবে নতুন ঈদ। হয়তো নতুন কোনও দেশে, নতুন কোনও বন্ধু আর সহকর্মীর সঙ্গে।
>>>লেখক: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কেবিন ক্রু
ঈদের দিনেও আমাদের দায়িত্ব সামলাতে হয়। এ কারণে ইচ্ছে থাকলেও ইচ্ছে থাকে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উদযাপন করার সুযোগ মেলে কম। কাজের খাতিরে গত নয়টি ঈদের মতো এবারও আমার ঈদুল আজহা কেটেছে দেশের বাইরে। এবার ঈদ করেছি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে। গত ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ছিলাম কাতারের রাজধানী দোহায়। ঈদ উপলক্ষে দেশে আসা প্রবাসীদের নিয়ে ফ্লাইট ঢাকায় নামে ৮ আগস্ট সকালে। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর। এরপর রাজ্যর ক্লান্তি নিয়ে ঘুম। পরের দিনের ডিউটি রোস্টার দেখতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘুম থেকে উঠেছিলাম। দেখলাম ৯ আগস্ট বিকালে আবুধাবিতে আমার ফ্লাইট। খুশি লাগলো। কারণ সেদিন গেলে দেশে ফিরবো ঈদের আগের দিন (১১ আগস্ট)। ঈদ পাবো দেশে!
ঈদে কী করবো সেই পরিকল্পনা করে ফেললাম। কিন্তু এয়ারক্রাফট রওনা দেওয়ার আগে খবর এলো, আমাদের ক্রু সদস্যদের মধ্যে একদল চলে আসবে ঈদের আগের দিন। আর অন্যরা থেকে যাবে। তারা ফিরতে পারবে ঈদের দিন (১২ আগস্ট)। আমার নাম ছিল পরের টিমে, তাই সব পরিকল্পনা সেখানেই মাটি! অগত্যা নিজেকে মানিয়ে আরেকদল যাত্রী নিয়ে রওনা দিই আবুধাবিতে, যারা ঈদের আগে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। ৪ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট পরে গন্তব্যে পৌঁছাই আমরা। তখন স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টা। পরদিন (১০ আগস্ট) পবিত্র হজ। সেদিন দুপুরে ঘুম থেকে উঠে ভাবছিলাম কী করবো। আগামীকাল আবুধাবিতে ঈদ।
আবুধাবিতে প্রবাসীরা বেশি। নানান দেশের নানান মানুষ। ঈদ উপলক্ষে কোনও বাড়তি আয়োজন নেই। মহাসড়কের মাঝে ঈদ লেখা আলোকসজ্জা। কিন্তু শহরে আলাদাভাবে কোনও কিছু চোখে পড়লো না। সব প্রতিদিনের মতো। ঈদ উপলক্ষে আবুধাবিতে সরকারি বন্ধ পাঁচদিন। কিন্ত কাজ-কর্ম থেমে নেই। দোকান-পাট খোলা, যে যার মতো ব্যস্ত। ঈদ এ দেশে বাড়তি কোনও আনন্দ যোগ করে না বুঝলাম। আবুধাবির মানুষ বেশিরভাগই ছুটিতে ইউরোপ কিংবা ভারতে বেড়ায়। তার আগে কোরবানির জন্য ব্যাংক কিংবা ক্যাটেল মার্কেটে টাকা দিয়ে যায় তারা।
আবুধাবিতে পশু কোরবানি দেওয়ার নির্দিষ্ট জায়গা আছে। এর বাইরে গেলে সিটি করপোরেশন জরিমানা করে। নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি দেওয়ার পর সেই মাংস বিভিন্ন দরিদ্র মুসলিম দেশে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। বাংলাদেশে আসা উট-দুম্বার মাংসগুলো সেখানকারই। এই হলো মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের ঈদ। কোনও বাড়তি আয়োজন, উচ্ছ্বাস, উদযাপন ছাড়াই স্বাভাবিক একটি দিনের মতো।
বন্ধুর গাড়িতে চড়ে ১০ আগস্ট বিকালে দুবাইয়ের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ি। সে শারজাহ প্রবাসী। আমার এক সহকর্মীও ছিল। আবুধাবি থেকে দুবাই দেড় ঘণ্টা লাগলো। সেদিন রাতে দুবাই ক্যাটেল মার্কেট থেকে কোরবানির জন্য একটি ছাগল কেনা হলো। এটি দুবাইয়ের একমাত্র পশু বিক্রয়কেন্দ্র। অত্যন্ত গোছানো পশুর হাট। এখানে পশু কেনাবেচার জন্য ক্রেতাকে কোনও হাসিল দিতে হয় না। মার্কেট থাকে সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণে। তারা বিভিন্ন অংশে পশু রাখার জন্য জায়গা রেখে ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দেয়। ব্যবসায়ীরা সারাবছর সেখানে পশু কেনাবেচা করে। ক্রেতার কাছ থেকে পশুর দাম ছাড়া এক টাকাও নেয় না কেউ। সব জায়গায় বড় বড় ফ্যান, লাইট ও পশুকে পানি খাওয়ানোর সুব্যবস্থা আছে। দূর-দূরান্তে পশু পরিবহনের জন্য আলাদা পিকআপ স্ট্যান্ড, ক্রেতাদের জন্য গাড়ি পার্কিংসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় ক্যাটেল মার্কেটে।
আমাদের কেনা ছাগল নিয়ে চলে আসি আমিরাতের আরেক শহর শারজাহতে। তবে ঈদের দিন (১১ আগস্ট) ভোরে ফজর শেষে ঈদের নামাজ পড়তে যাই দুবাইয়ে। ব্যাপারটা এমন থাকি– ঢাকায়, নামাজ পড়ি নারায়ণগঞ্জে। জামাত ছিল সকাল ৬টা ৭ মিনিটে। নামাজ ঠিক সময়মতোই শুরু হয়। আমি যে বাসায় ছিলাম সেটি শারজাহর সীমান্তে। ভবনের এক দরজা দুবাইয়ে, আরেক দরজার পাশের রাস্তা শারজাহতে।
নামাজ পড়ে ছাগল কোরবানির পর বিরিয়ানি রান্না হয়। খেয়েদেয়ে আবুধাবির উদ্দেশে বের হই আমরা। ঘণ্টায় কখনও ১২০ মাইল, কখনও আবার ১৬০ মাইল গতিতে চলেছে গাড়ি। আবুধাবি এসে শেখ যায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে যাই। এটি মক্কা-মদিনার পরে ইসলামি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এখানে ২৪ ঘণ্টা কোরআন তেলওয়াত হয়। মুসলিম-অমুসলিম সবার জন্য এর দুয়ার উন্মুক্ত থাকে। বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা মসজিদটি দেখতে আসেন।
শেখ যায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদে এশার নামাজ পড়ে আমরা হোটেলে ফিরি। তখন দেশে ফেরার ফ্লাইটের বাকি আরও পাঁচ ঘণ্টা। স্যুটকেস গুছিয়ে ঘুম দিই। এরপর ফ্লাইটের জন্য বেরিয়ে পড়ি। বিমানে উঠে দেখি সব আসন পূর্ণ। আজ (১২ আগস্ট) বাংলাদেশে ঈদ। প্রবাসীদের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। সবাই আনন্দে আত্নহারা। সবার হাতেই পরিবারের জন্য কেনা উপহার। তাদের নিয়ে ফ্লাইট ছাড়ে স্থানীয় সময় ভোর পৌনে ৫টায়। চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় পৌঁছাই দুপুর দেড়টায়। সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় যেতে যেতে বিকাল সাড়ে ৩টা।
সবাই আমার অপেক্ষায়। পরিবার-পরিজনকে হয়তো অন্য পেশাজীবীদের মতো অত সময় দিতে পারি না, তবে সহকর্মীরাও আমার আরেকটি পরিবার। গত পাঁচ বছরের ১০টি ঈদ তাদের সঙ্গে মাঝ আকাশে ও ভিনদেশের মাটিতে কেটেছে। সব আনন্দ, উপলক্ষ্য কিংবা সুখে-দুঃখে তারা পরিবারের মতোই আমার পাশে থাকে, যাদের ওপর নিশ্চিন্তে ভরসা করতে পারি। তাই সহকর্মীরাও আমার আপনজন, এয়ারক্রাফট আমার ঘর। তাদের নিয়েই আমার জীবন। ঈদে সাধারণত একসঙ্গে নৈশভোজ করে, ছবি দেখে ও দলবেঁধে ঘুরে আমাদের দিন কাটে। মন খারাপের কোনও অবকাশ নেই।
জীবনটা মন্দ নয়! ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট কাতার, ৯ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট আবুধাবি, আর এখন লন্ডনে। আমার কিছু ত্যাগ ও কর্ম অন্য কারও জন্য খুশির উপলক্ষ্য। এটাই প্রাপ্তি। দেশে ফেরার পরদিন (১৩ আগস্ট) সারাদিনই বাসায় ছিলাম, পরিবারের সঙ্গে। ১৪ আগস্ট সকালে চলে আসি লন্ডন। এই লেখাটা লন্ডনের হোটেলে বসেই সাজানো। এভাবেই চলে যাবে যাযাবর দিন, আসবে নতুন ঈদ। হয়তো নতুন কোনও দেশে, নতুন কোনও বন্ধু আর সহকর্মীর সঙ্গে।
>>>লেখক: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কেবিন ক্রু
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কেবিন ক্রু শামিউল আলম |
No comments