ওরা যাবে কোথায়? by মারুফ কিবরিয়া
খোলা
আকাশের নিচে বসা জাফর। পেশায় রিকশাচালক। ঘর নেই। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
তিনদিন ধরে এভাবেই কাটছে। কখনো রিকশায় আবার কখনো বা ভ্যানগাড়িতে শুয়ে বসে
কাটছে তার সময়। আর সঙ্গে ভর করেছে একরাশ চিন্তা। আকস্মিক আগুনে পুড়ে যায়
মাথাগোঁজার শেষ ঠাঁইটুকু।
এই শহরে আর কোথাও থাকার জায়গা নেই জাফরের। বেশি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন স্ত্রী সন্তানের কথা ভেবে। তাদের নিয়ে কোথায় উঠবেন। আগুনে যে ঘর পুড়ে গেছে তার পুনর্বাসন হবে কি? এই প্রশ্ন শুধু সম্প্রতি মিরপুরের চলন্তিকায় অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানো জাফরের নয়। পুরো বস্তিবাসীর। মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, কাউন্সিলরা আসছেন যাচ্ছেন। পুনর্বসানের আশ্বাসও দিচ্ছেন। তাতেও পাচ্ছেন না ভরসা। কারণ এদেশে বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের পর পুনর্বাসনের দৃষ্টান্ত খুব একটা সুখকর নয়। তাইতো কারো আশ্বাসে মন ভরছে না বস্তির বান্দিাদের। শুক্রবার সন্ধ্যায় হঠাৎ আগুনে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় মিরপুর ৭ নং সেকশনের এলাকার ওই বস্তি। পুড়ে ছাই হয়ে যায় অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষদের ঠিকানা। যেখানে দিনশেষে পরিশ্রান্ত দেহের ঠাঁই হয় তাদের। কিন্তু গত চারদিন ধরেই তারা নেই আপন ঠিকানায়। কেউ আশপাশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে আছেন, কেউ আত্মীয়ের বাসায়। আর যারা কোথাও স্থান পাননি তাদের ঠাঁই হয়েছে বস্তির চার পাশের সড়কে। খোলা আকাশের নিচেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। স্থানীয় এমপি, কাউন্সিলর ও বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের তত্ত্বাবধানে খাবার পেলেও পাচ্ছেন না থাকার ব্যবস্থা। এমনকি গত চারদিনে গোসল ছাড়াও রয়েছেন কেউ কেউ। ঢাকা উত্তরের সিটি করপোরেশন বলছে, আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় পুরো বস্তি। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
ঝিলপাড় বস্তির বাসিন্দা রিকশাচালক জাফর বললেন, আগুনে তো আমার কিচ্ছু নাই। সব পুইড়া শ্যাষ। বউ বাচ্চা নিয়া কই যামু? গত তিনদিন ধইরা এই রাস্তায় সময় কাটতাছে। রাইতে থাকার কোনো ঠিক নাই। নিজের রিকশা আছে। সেইটার উপর ঘুমাই। কারো খালি ভ্যান পাইলে ওইখানেও ঘুমাই। এমনে কইরা কয়দিন? আমার যে ঘর পুইড়া গেল সেইটা আবার পামু তো? হ্যারা তো আইসা বইলা গেছে। আমাগোরে এইখানেই ঘর তুইলা দিবো। কিন্তু এতদিন কই থাকমু। এই তিন দিন ধইরা গোসল করার জায়গাও পাইতাছি না। খালি খাবার পাইতাছি। কাপড় চোপড় সব পুইড়া গেছে। এক কাপড়ে আর কত থাকমু? বস্তির আরেক বাসিন্দা নূরজাহান বেগম। চারপাশ থেকে আগুন ধেয়ে আসছিল তার ঘরের কাছে। এমন সময় কোনোমতে জানে বেঁচে ফিরেন নুরজাহান। তিনিও চলন্তিকা মোড়ে গৃহহারা অবস্থায় রয়েছেন। খোলা আকাশের নিচেই দিন পার করছেন নূরজাহান। তিনি বলেন, আমাগো তো কিছুই আর নাই। সব শেষ হইয়া গেল। একটা ছোট্ট বস্তা হাতে নিয়া বাইর হইছি। এইডার মধ্যে খালি কয়ডা পান সুপারি আছিলো।
চলন্তিকা মোড়ে একটি ছোট ব্যাগ হাতে বসেছিলেন দুলাল নামের এক ষাটর্ধো বৃদ্ধ। খানিক সময় পর পর বিলাপ করছেন। শুক্রবার রাতের সেই ভয়াবহ দৃশ্য চোখের সামনে এখনো ভাসছে তার। দুলাল বলেন, বয়স্ক মানুষ আমি। বউ পোলারা সবাই গ্যারামের বাড়িতে। আমি রাজমিস্ত্রির কাম করি। ঈদের পর পর একটা কাম ছিল তাই চইলা আইছি। ঘরে একাই ছিলাম। আগুন আগুন শুইনা ঘরতে বাইরে আইছি। সব শেষ হইয়া গেল। কই থাকুম এহন? আমাগো ঘর কেডা ঠিক কইরা দিবো?
বস্তিতে বাস করা মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি লেখাপড়া করি। থাকার জায়গা বলতে এই বস্তিরই একটি ছোট্ট রুম। এখানেই আমার জন্ম। বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। আগুনের সময় বাইরে ছিলাম। এখন তো আমাদের থাকার জায়গা নেই। রাস্তাতেই কাটাচ্ছি। বাসার মহিলারা স্কুলে আশ্রয়ে আছে। কিন্তু আজ তিনদিন হলো আমার কোনো গোসল নেই। এক কাপড়ে আছি। কিভাবে যে বেঁচে আছি সেটা শুধু আমিই বলতে পারবো। নাহার আক্তার নামের এক পোশাক শ্রমিক বলেন, বাপ মা লইয়া দুইটা রুম ভাড়ায় থাকি এইখানে। দুইটাই পুইড়া শেষ হইয়া গেল। গত দুইদিন ধইরা খাবার আসতেছে। কিন্তু থাকার জায়গা নাই। পাশের আরেকটা খালার বাসায় একদিন আছিলাম। বাপ মা লইয়া কাইল রাতে রাস্তায় কাটাইছি। খালার বাসায় তো বেশি জায়গা নাই। কত কষ্ট করতাছি কেউ দেখতেছে না। এহন আমাগো থাকার জায়গা ঠিক হইবো কবে তাও জানি না।
মিরপুরের বিভিন্ন বাসায় কাজ করেন নুরীন আক্তার। দুই ছেলে নিয়ে গত ৫ বছর ধরে ঝিলপাড় বস্তিতে বসবাস করেন তিনি। আগুনে মাথা গোঁজার জায়গাটুকু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে নুরীনের। বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতনে বিলি করা ত্রাণের খাবার ভাগ্যে জুটলেও খোলা আকাশের নিচেই কাটছে তার। নুরীন বলেন, দুইটা ছেলে আমার। ওগো মুখে খাওন তুলনের লাইগা মাইনশের বাসা বাড়িতে কাম করি। থাকি ছোট্ট ঘর ভাড়া কইরা। তিন হাজার টাকা ভাড়া দিতাম। ঢাকা শহরে এর থেকে আর কমে তো বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না। আর আমার রোজগারও নাই। এখন দুইটা ছেলেরে নিয়া যামু কই। রাস্তায় তো আছি এই তিন দিন। আর কয়দিন থাকোন লাগবো কে জানে।
বস্তিতে আগুন লাগার খবর জানেন না সাদ্দাম হোসেন নামের এক রিকশাচালক। ঈদের সময় ময়মনসিংহে বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ফিরে দেখেন তার ঘরটি পুড়ে গেছে। তিনি জানান, মোল্লা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। কিছুই জানতেন আগুন লাগার বিষয়ে। রোববার ঢাকায় এসে দেখেন তার ঘরটি পুড়ে গেছে। দুদিন ধরে বাইরে বাইরেই থাকছেন সাদ্দাম।
বস্তিবাসীদের একাংশ সাময়িকভাবে ঠাঁই পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতন, মিরপুর বাংলা স্কুলসহ আশপাশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ঢাকা উত্তরের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাইউল খান জানান, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াদের নিয়মিত খাবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মিরপুরের চারটি স্পটে ঘটনার দিন থেকে নিয়মিত খাবার দেয়া হচ্ছে। এদিকে, পল্লবী থানা যুবলীগের সভাপতি মো. তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পি জানান, প্রধানমন্ত্রী, এমপি এমনকি আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের তত্ত্বাবধায়নে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে সব ধরণের দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। কেউ যেন খাবারের কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল করা হচ্ছে। এর আগে গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঝিলপাড় বস্তি পরিদর্শন করেন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এসময় তিনি বস্তিবাসীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, এই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যতদিন পর্যন্ত আপনাদের সাহায্য দরকার আমরা করবো, আমাদের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা আপনাদের পাশে থাকবেন। অবশ্য মন্ত্রীর বিদায়ের ক্ষণিক সময় পরই বস্তিবাসীরা প্রধান সড়কে এসে বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা মিনিট পাঁচেকের মতো সড়কে অবস্থান নেন। ব্যানার ফেস্টুন হাতে নিয়ে বস্তিবাসিন্দারা ক্ষোভের কথা জানান।
এই শহরে আর কোথাও থাকার জায়গা নেই জাফরের। বেশি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন স্ত্রী সন্তানের কথা ভেবে। তাদের নিয়ে কোথায় উঠবেন। আগুনে যে ঘর পুড়ে গেছে তার পুনর্বাসন হবে কি? এই প্রশ্ন শুধু সম্প্রতি মিরপুরের চলন্তিকায় অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানো জাফরের নয়। পুরো বস্তিবাসীর। মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, কাউন্সিলরা আসছেন যাচ্ছেন। পুনর্বসানের আশ্বাসও দিচ্ছেন। তাতেও পাচ্ছেন না ভরসা। কারণ এদেশে বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের পর পুনর্বাসনের দৃষ্টান্ত খুব একটা সুখকর নয়। তাইতো কারো আশ্বাসে মন ভরছে না বস্তির বান্দিাদের। শুক্রবার সন্ধ্যায় হঠাৎ আগুনে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় মিরপুর ৭ নং সেকশনের এলাকার ওই বস্তি। পুড়ে ছাই হয়ে যায় অসংখ্য নিম্ন আয়ের মানুষদের ঠিকানা। যেখানে দিনশেষে পরিশ্রান্ত দেহের ঠাঁই হয় তাদের। কিন্তু গত চারদিন ধরেই তারা নেই আপন ঠিকানায়। কেউ আশপাশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে আছেন, কেউ আত্মীয়ের বাসায়। আর যারা কোথাও স্থান পাননি তাদের ঠাঁই হয়েছে বস্তির চার পাশের সড়কে। খোলা আকাশের নিচেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। স্থানীয় এমপি, কাউন্সিলর ও বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠনের তত্ত্বাবধানে খাবার পেলেও পাচ্ছেন না থাকার ব্যবস্থা। এমনকি গত চারদিনে গোসল ছাড়াও রয়েছেন কেউ কেউ। ঢাকা উত্তরের সিটি করপোরেশন বলছে, আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় পুরো বস্তি। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
ঝিলপাড় বস্তির বাসিন্দা রিকশাচালক জাফর বললেন, আগুনে তো আমার কিচ্ছু নাই। সব পুইড়া শ্যাষ। বউ বাচ্চা নিয়া কই যামু? গত তিনদিন ধইরা এই রাস্তায় সময় কাটতাছে। রাইতে থাকার কোনো ঠিক নাই। নিজের রিকশা আছে। সেইটার উপর ঘুমাই। কারো খালি ভ্যান পাইলে ওইখানেও ঘুমাই। এমনে কইরা কয়দিন? আমার যে ঘর পুইড়া গেল সেইটা আবার পামু তো? হ্যারা তো আইসা বইলা গেছে। আমাগোরে এইখানেই ঘর তুইলা দিবো। কিন্তু এতদিন কই থাকমু। এই তিন দিন ধইরা গোসল করার জায়গাও পাইতাছি না। খালি খাবার পাইতাছি। কাপড় চোপড় সব পুইড়া গেছে। এক কাপড়ে আর কত থাকমু? বস্তির আরেক বাসিন্দা নূরজাহান বেগম। চারপাশ থেকে আগুন ধেয়ে আসছিল তার ঘরের কাছে। এমন সময় কোনোমতে জানে বেঁচে ফিরেন নুরজাহান। তিনিও চলন্তিকা মোড়ে গৃহহারা অবস্থায় রয়েছেন। খোলা আকাশের নিচেই দিন পার করছেন নূরজাহান। তিনি বলেন, আমাগো তো কিছুই আর নাই। সব শেষ হইয়া গেল। একটা ছোট্ট বস্তা হাতে নিয়া বাইর হইছি। এইডার মধ্যে খালি কয়ডা পান সুপারি আছিলো।
চলন্তিকা মোড়ে একটি ছোট ব্যাগ হাতে বসেছিলেন দুলাল নামের এক ষাটর্ধো বৃদ্ধ। খানিক সময় পর পর বিলাপ করছেন। শুক্রবার রাতের সেই ভয়াবহ দৃশ্য চোখের সামনে এখনো ভাসছে তার। দুলাল বলেন, বয়স্ক মানুষ আমি। বউ পোলারা সবাই গ্যারামের বাড়িতে। আমি রাজমিস্ত্রির কাম করি। ঈদের পর পর একটা কাম ছিল তাই চইলা আইছি। ঘরে একাই ছিলাম। আগুন আগুন শুইনা ঘরতে বাইরে আইছি। সব শেষ হইয়া গেল। কই থাকুম এহন? আমাগো ঘর কেডা ঠিক কইরা দিবো?
বস্তিতে বাস করা মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি লেখাপড়া করি। থাকার জায়গা বলতে এই বস্তিরই একটি ছোট্ট রুম। এখানেই আমার জন্ম। বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। আগুনের সময় বাইরে ছিলাম। এখন তো আমাদের থাকার জায়গা নেই। রাস্তাতেই কাটাচ্ছি। বাসার মহিলারা স্কুলে আশ্রয়ে আছে। কিন্তু আজ তিনদিন হলো আমার কোনো গোসল নেই। এক কাপড়ে আছি। কিভাবে যে বেঁচে আছি সেটা শুধু আমিই বলতে পারবো। নাহার আক্তার নামের এক পোশাক শ্রমিক বলেন, বাপ মা লইয়া দুইটা রুম ভাড়ায় থাকি এইখানে। দুইটাই পুইড়া শেষ হইয়া গেল। গত দুইদিন ধইরা খাবার আসতেছে। কিন্তু থাকার জায়গা নাই। পাশের আরেকটা খালার বাসায় একদিন আছিলাম। বাপ মা লইয়া কাইল রাতে রাস্তায় কাটাইছি। খালার বাসায় তো বেশি জায়গা নাই। কত কষ্ট করতাছি কেউ দেখতেছে না। এহন আমাগো থাকার জায়গা ঠিক হইবো কবে তাও জানি না।
মিরপুরের বিভিন্ন বাসায় কাজ করেন নুরীন আক্তার। দুই ছেলে নিয়ে গত ৫ বছর ধরে ঝিলপাড় বস্তিতে বসবাস করেন তিনি। আগুনে মাথা গোঁজার জায়গাটুকু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে নুরীনের। বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতনে বিলি করা ত্রাণের খাবার ভাগ্যে জুটলেও খোলা আকাশের নিচেই কাটছে তার। নুরীন বলেন, দুইটা ছেলে আমার। ওগো মুখে খাওন তুলনের লাইগা মাইনশের বাসা বাড়িতে কাম করি। থাকি ছোট্ট ঘর ভাড়া কইরা। তিন হাজার টাকা ভাড়া দিতাম। ঢাকা শহরে এর থেকে আর কমে তো বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না। আর আমার রোজগারও নাই। এখন দুইটা ছেলেরে নিয়া যামু কই। রাস্তায় তো আছি এই তিন দিন। আর কয়দিন থাকোন লাগবো কে জানে।
বস্তিতে আগুন লাগার খবর জানেন না সাদ্দাম হোসেন নামের এক রিকশাচালক। ঈদের সময় ময়মনসিংহে বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ফিরে দেখেন তার ঘরটি পুড়ে গেছে। তিনি জানান, মোল্লা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। কিছুই জানতেন আগুন লাগার বিষয়ে। রোববার ঢাকায় এসে দেখেন তার ঘরটি পুড়ে গেছে। দুদিন ধরে বাইরে বাইরেই থাকছেন সাদ্দাম।
বস্তিবাসীদের একাংশ সাময়িকভাবে ঠাঁই পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু বিদ্যানিকেতন, মিরপুর বাংলা স্কুলসহ আশপাশের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ঢাকা উত্তরের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাইউল খান জানান, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াদের নিয়মিত খাবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মিরপুরের চারটি স্পটে ঘটনার দিন থেকে নিয়মিত খাবার দেয়া হচ্ছে। এদিকে, পল্লবী থানা যুবলীগের সভাপতি মো. তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পি জানান, প্রধানমন্ত্রী, এমপি এমনকি আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের তত্ত্বাবধায়নে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে সব ধরণের দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে। কেউ যেন খাবারের কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল করা হচ্ছে। এর আগে গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঝিলপাড় বস্তি পরিদর্শন করেন। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এসময় তিনি বস্তিবাসীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, এই ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যতদিন পর্যন্ত আপনাদের সাহায্য দরকার আমরা করবো, আমাদের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লা আপনাদের পাশে থাকবেন। অবশ্য মন্ত্রীর বিদায়ের ক্ষণিক সময় পরই বস্তিবাসীরা প্রধান সড়কে এসে বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা মিনিট পাঁচেকের মতো সড়কে অবস্থান নেন। ব্যানার ফেস্টুন হাতে নিয়ে বস্তিবাসিন্দারা ক্ষোভের কথা জানান।
No comments