সুদে টাকা নিয়ে চলছে ওদের চিকিৎসা by মরিয়ম চম্পা
সকাল
সাড়ে ১১টা। হাসপাতালের বাইরে রোগীর স্বজনদের জটলা। এখানে আসা রোগীদের
বেশিরভাগই ডেঙ্গু আক্রান্ত। তাই স্বজনদের মুখে মুখে একই আলোচনা। ধানমন্ডির
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের চিত্র এটি। হাসপাতালের ৬ তলায়
পুরুষ ওয়ার্ডে প্রবেশ করতেই দেখা ১৭ বছর বয়সী এক তরুণের মাথায় হাত বুলিয়ে
দিচ্ছেন মাঝ বয়সী এক নারী। যখনই কোনো নার্স আসেন তার কাছে উদ্বিগ্ন হয়ে
ছুটে যান। জানতে চান ছেলে কবে নাগাদ সুস্থ হবে।
নিয়ে যেতে পারবেন বাসায়। এই তরুণের নাম আশিক। সেবাদাতা নারী তার মা। তারা থাকেন রায়েরবাজার পাবনা হাউজগলি। তিনদিন আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় সে। সোমবার রাতে প্রচন্ড জ্বর আসলে মা সিকলি বেগম রাত দুইটায় বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে আসেন। বর্তমানে তার শরীরের অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা ভালো। সিকলি বেগম বলেন, ছেলেটা গত বছর রায়েরবাজারের আলিফ আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছে। পড়ালেখার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সংকটের কারণে ছেলেকে আর কলেজে ভর্তি করতে পারিনি। এখন সে একটি স্কুল বাসে হেলপারের কাজ করে।
তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। ছেলের বাবা আমাদের রেখে অন্যত্র বিয়ে করেন। এরপর থেকে ছেলে-মেয়ের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ নেই। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মেজ ছেলে গাড়িতে কাজ করে। কোমড়ের হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়াতে এখন আর নিয়মিত বাসাবাড়ির কাজ করতে পারিনা। তাই ছেলেদের রোজগারের ওপর নির্ভর করতে হয়। তিনি বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রথমে আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার করেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা সুদে নিয়েছি। তাকে মাসে হাজারে ১শ টাকা সুদ দিতে হবে। বোনকে পাঠিয়েছি সুদের ওপর আরো টাকা আনতে। তিনি বলেন, হাসপাতালে দৈনিক বেড ভাড়া দিতে হয় আড়াই’শ টাকা। ওষুধ ও অন্যান্য খরচতো আছেই। ছেলের চিকিৎসায় ইতোমধ্যে অনেক টাকা ধার করেছি। ছেলের বেড ভাড়াটা যদি ফ্রি করতে পারতাম তাহলে কিছুটা হলেও আমার ওপর চাপ কমতো। ডাক্তাররা বলেছেন, তার পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো সময় লাগবে।
আশিকের বেডের ঠিক অপর পাশে ক্যানোলা হাতে অচেতন হয়ে শুয়ে আছে শান্ত। স্যালাইনের স্ট্যান্ডে সারি সারি স্যালাইনের খালি প্যাকেট। একটি স্যালাইন শেষ হতেই নতুন করে আবার স্যালাইন দিচ্ছেন নার্স। তার চারপাশে ঘিরে আছে স্বজনরা। কাছে যেতেই দেখা গেল বাবা মো. কবির হোসেন একটি ব্যাগ থেকে ১০ থেকে ১২টি সিদ্ধ হাসের ডিম বের করে ছেলের মাথার কাছে রাখছেন। শান্ত আধো ঘুমে আধো চেতনে কখনো চোখ খুলে তাকান। আবার ঘুমিয়ে পড়েন। তার দু চোখেই জমাট বাধা রক্ত।
শান্ত’র বয়স ১৮ বছর। দারিদ্রতার কষাঘাতে চতুর্থ শ্রেণির পর আর পড়ালেখা করতে পারেনি। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড়। বাবা গ্রামের বাড়িতে একটি চায়ের দোকানে কাজ করেন। শান্ত আর তার ছোট ভাই রাজধানীর একটি জুতা তৈরির ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। সম্পত্তি বলতে বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। সুমনের বাবা কবির হোসেন বলেন, ১০ দিন ধরে ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। নিজের যতুটুক সাধ্য ছিল সেটা দিয়ে চিকিৎসা খরচ চালিয়েছি। এখন বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে চিকিৎসা খরচ করাতে হচ্ছে। ছেলেকে বাঁচাতে এ ছাড়া তো আর কোনো উপায় দেখছি না। অসুখের খবর শুনে সুদে টাকা নিয়ে ঢাকা এসেছি। এখন আবার নতুন করে ধানের ওপর সুদে টাকা নিয়েছি। বাড়িতে ওর মা খেয়ে না খেয়ে আছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ আমরা। কাজ করতে পারলে তিনবেলা খেতে পাই। না থাকলে না খেয়ে থাকি। পরিবারে আয় রোজগারের মানুষ বলতে বাপ ছেলে দুজন।
নিয়ে যেতে পারবেন বাসায়। এই তরুণের নাম আশিক। সেবাদাতা নারী তার মা। তারা থাকেন রায়েরবাজার পাবনা হাউজগলি। তিনদিন আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় সে। সোমবার রাতে প্রচন্ড জ্বর আসলে মা সিকলি বেগম রাত দুইটায় বাংলাদেশ মেডিকেলে নিয়ে আসেন। বর্তমানে তার শরীরের অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা ভালো। সিকলি বেগম বলেন, ছেলেটা গত বছর রায়েরবাজারের আলিফ আইডিয়াল স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেছে। পড়ালেখার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক সংকটের কারণে ছেলেকে আর কলেজে ভর্তি করতে পারিনি। এখন সে একটি স্কুল বাসে হেলপারের কাজ করে।
তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়। ছেলের বাবা আমাদের রেখে অন্যত্র বিয়ে করেন। এরপর থেকে ছেলে-মেয়ের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ নেই। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মেজ ছেলে গাড়িতে কাজ করে। কোমড়ের হাড় ক্ষয় হয়ে যাওয়াতে এখন আর নিয়মিত বাসাবাড়ির কাজ করতে পারিনা। তাই ছেলেদের রোজগারের ওপর নির্ভর করতে হয়। তিনি বলেন, ছেলের চিকিৎসার জন্য প্রথমে আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার করেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা সুদে নিয়েছি। তাকে মাসে হাজারে ১শ টাকা সুদ দিতে হবে। বোনকে পাঠিয়েছি সুদের ওপর আরো টাকা আনতে। তিনি বলেন, হাসপাতালে দৈনিক বেড ভাড়া দিতে হয় আড়াই’শ টাকা। ওষুধ ও অন্যান্য খরচতো আছেই। ছেলের চিকিৎসায় ইতোমধ্যে অনেক টাকা ধার করেছি। ছেলের বেড ভাড়াটা যদি ফ্রি করতে পারতাম তাহলে কিছুটা হলেও আমার ওপর চাপ কমতো। ডাক্তাররা বলেছেন, তার পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো সময় লাগবে।
আশিকের বেডের ঠিক অপর পাশে ক্যানোলা হাতে অচেতন হয়ে শুয়ে আছে শান্ত। স্যালাইনের স্ট্যান্ডে সারি সারি স্যালাইনের খালি প্যাকেট। একটি স্যালাইন শেষ হতেই নতুন করে আবার স্যালাইন দিচ্ছেন নার্স। তার চারপাশে ঘিরে আছে স্বজনরা। কাছে যেতেই দেখা গেল বাবা মো. কবির হোসেন একটি ব্যাগ থেকে ১০ থেকে ১২টি সিদ্ধ হাসের ডিম বের করে ছেলের মাথার কাছে রাখছেন। শান্ত আধো ঘুমে আধো চেতনে কখনো চোখ খুলে তাকান। আবার ঘুমিয়ে পড়েন। তার দু চোখেই জমাট বাধা রক্ত।
শান্ত’র বয়স ১৮ বছর। দারিদ্রতার কষাঘাতে চতুর্থ শ্রেণির পর আর পড়ালেখা করতে পারেনি। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড়। বাবা গ্রামের বাড়িতে একটি চায়ের দোকানে কাজ করেন। শান্ত আর তার ছোট ভাই রাজধানীর একটি জুতা তৈরির ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। সম্পত্তি বলতে বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই। সুমনের বাবা কবির হোসেন বলেন, ১০ দিন ধরে ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। নিজের যতুটুক সাধ্য ছিল সেটা দিয়ে চিকিৎসা খরচ চালিয়েছি। এখন বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে চিকিৎসা খরচ করাতে হচ্ছে। ছেলেকে বাঁচাতে এ ছাড়া তো আর কোনো উপায় দেখছি না। অসুখের খবর শুনে সুদে টাকা নিয়ে ঢাকা এসেছি। এখন আবার নতুন করে ধানের ওপর সুদে টাকা নিয়েছি। বাড়িতে ওর মা খেয়ে না খেয়ে আছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ আমরা। কাজ করতে পারলে তিনবেলা খেতে পাই। না থাকলে না খেয়ে থাকি। পরিবারে আয় রোজগারের মানুষ বলতে বাপ ছেলে দুজন।
No comments