আক্রান্তের চেয়ে আতঙ্কই বেশি মানুষের by সাঈদ শিপন
একটি
ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিংয়ে কাজ করেন মো. মাসুম। পেশাগত দায়িত্ব পালনে
রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটতে হয় তাকে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের মধ্যে
তার দিনের অধিকাংশ সময় কেটে যায়। রোগ আর রোগী দুটিই তার কাছে সাধারণ বিষয়।
মারাত্মক রোগে আক্রান্ত রোগী দেখেও কখনো ভয় পাননি পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে
ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিংয়ে কাজ করা এই যুবক।
সম্প্রতিক অনেকটা ‘মহামারি’ আকারে দেখা দেয়া ডেঙ্গু তাকেও কাঁপিয়ে দিয়েছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের আর্তনাদ ও রোগীর চাপ দেখে নিজেও সারাক্ষণ আতঙ্কে ভুগছেন। সন্তানের চিন্তায় কয়েক দিন ধরে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। অজানা আতঙ্কে এক রাতেই ঘুম ভেঙে যাচ্ছে কয়েকবার।
শুধু মাসুম নয়, রাজধানীতে বসবাস করা অধিকাংশই এখন আতঙ্কের এমন গ্রাসের মুখে পড়েছেন। বাসাবাড়ি, অফিস, স্কুল, ফুটপাত, চায়ের দোকান- সবখানেই ডেঙ্গু নিয়ে অজানা আতঙ্ক। ফলে বন্ধুদের আড্ডাসহ যেকোনো আলোচনায়ই এখন স্থান করে নিচ্ছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গুর আতঙ্কে প্রতিদিন হাজার হাজার সুস্থ মানুষও ছুটছে হাসপাতালে।
আতঙ্কের বিষয়ে মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ডিউটি করছি। প্রতিদিন কত মারাত্মক রোগী দেখি, কখনো ভয় পাইনি। কিন্তু এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখে খুব ভয়ে আছি। বিশেষ করে শিশুদের কষ্ট দেখার মতো না। আমারও দুই বছরের একটি সন্তান আছে। ওকে নিয়েই সারাক্ষণ চিন্তায় থাকি। ওর চিন্তায় রাতে আতঙ্কে কয়েকবার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমের ঘোরে বারবার বাবুর গায়ে হাত দিয়ে দেখি।’
তিনি বলেন, ‘আমি আমাকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। কিন্তু আমার কিছু হলে বাসার অন্যদের কে দেখবে? আল্লাহ না করুক, বাবুর যদি ডেঙ্গু হয়, এত কষ্ট ও কি করে সহ্য করবে! সারাক্ষণ আতঙ্কে এমন আরও কত চিন্তা মাথায় আসে। সব কথা বলে বোঝানো যাবে না। এ যে কি আতঙ্ক তা বলে বোঝানো মুশকিল। এমন আতঙ্কের মধ্যে আমি কখনো পড়িনি।’
ডেঙ্গু আতঙ্কে শুক্রবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় একসঙ্গে সাত বন্ধু ছুটে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেঙ্গু সেলে। বহির্বিভাগ থেকে টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখিয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করান।
হাসপাতালে আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে হৃদয় নামের এদের একজন বলেন, ‘ভাই, ডেঙ্গু এখন খুবই মারাত্মক। কখন কাকে ধরে কিছু বলা যায় না। হঠাৎ করেই শরীর গরম, জ্বর জ্বর বোধ করছি। তাই হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার দেখিয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছি। এতে কিছুটা হলেও আতঙ্ক কমবে। পরীক্ষা না করালে সারাক্ষণ ডেঙ্গু আতঙ্কে থাকব। তাতে দেখা যাবে শরীরে অন্য অসুখ বাসা বেঁধেছে।’
বিএসএমএমইউতে টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করা একজন বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যে কি আতঙ্ক তা এখানে কিছুক্ষণ থাকলেই বুঝতে পারবেন। সুস্থ মানুষও ডেঙ্গুর ভয়ে দৌড়ে হাসপাতালে আসছে। প্রতিদিন যত মানুষ ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে আসছে এর ১ শতাংশও বাস্তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নয়।’
বিএসএমএমইউতে ডেঙ্গু সেলে দায়িত্বপালন করা এক চিকিৎসক বলেন, ‘এবার ডেঙ্গুর ধরন একদম আলাদা। জ্বর না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। তবে এটাও সত্য ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক একটু বেশিই। অনেকে ডেঙ্গুর আতঙ্কে আমাদের কাছে ছুটে আসছে। দেখে আমরা ধারণা করছি ডেঙ্গু হয়নি, তারপরও আমরা ডেঙ্গুর পরীক্ষা দিচ্ছি। এতে যিনি আমাদের কাছে আসছেন তিনি যেমন আতঙ্কমুক্ত হচ্ছেন, তেমনি আমরাও ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারছি।’
ওই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘ডেঙ্গুতে এবার আক্রান্তের সংখ্যাটা অনেক বেশি, এই কথাটা কিন্তু ঠিক। আমার কাছে মনে হচ্ছে যত না মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তার থেকে আতঙ্কের মাত্রা অনেক বেশি। আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু হলেও যে তা মারাত্মক হবে তা নয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে বাসাবাড়িতে থেকেই স্বাভাবিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। মানুষ একটা কারণে আতঙ্কিত হয় না। এর পেছনে নানা কারণ থাকে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। অন্য অসুখের ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হওয়া যায়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারাই যাচ্ছে। এ মারা যাওয়া তো আতঙ্কের কারণ।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবাটা অতটা ভালো নয়। একজন রোগী হাসপাতালে গেলে রিল্যাক্সে থাকে, সব দায়-দায়িত্ব নার্স, চিকিৎসকরা নেন। কিন্তু আমাদের এখানে পদে পদে সমস্যা। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা ঠিকমতো হবে কি না, পরীক্ষা ঠিকমতো হবে কি না, ওষুধে ভেজাল আছে কি না, চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে পারবে কি না সবই ভাবতে থাকে। দেখা যায়, অকারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল করে বসে আছে। এমন অনেকগুলো কারণে এ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।’
মানুষ এ রকম আতঙ্কের মধ্যে থাকলে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানান এ মনোবিজ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘দিনের পর দিন একজন আতঙ্কের মধ্যে থাকলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আতঙ্কের কারণে আপনার বডি সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করবে না। ব্লাড প্রেশারের সমস্যা দেখা দেবে। আতঙ্কে থাকলে ঠিকমতো খেতে পারবে না। ঠিকমতো নিজের সেবা-শুশ্রূষা করতে পারবে না। যারা দুর্বলচিত্তের তাদের মধ্যে কোন রোগ তৈরি হয় তারও কোনো ঠিক নেই।’
সম্প্রতিক অনেকটা ‘মহামারি’ আকারে দেখা দেয়া ডেঙ্গু তাকেও কাঁপিয়ে দিয়েছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের আর্তনাদ ও রোগীর চাপ দেখে নিজেও সারাক্ষণ আতঙ্কে ভুগছেন। সন্তানের চিন্তায় কয়েক দিন ধরে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না। অজানা আতঙ্কে এক রাতেই ঘুম ভেঙে যাচ্ছে কয়েকবার।
শুধু মাসুম নয়, রাজধানীতে বসবাস করা অধিকাংশই এখন আতঙ্কের এমন গ্রাসের মুখে পড়েছেন। বাসাবাড়ি, অফিস, স্কুল, ফুটপাত, চায়ের দোকান- সবখানেই ডেঙ্গু নিয়ে অজানা আতঙ্ক। ফলে বন্ধুদের আড্ডাসহ যেকোনো আলোচনায়ই এখন স্থান করে নিচ্ছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গুর আতঙ্কে প্রতিদিন হাজার হাজার সুস্থ মানুষও ছুটছে হাসপাতালে।
আতঙ্কের বিষয়ে মাসুম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে হাসপাতালে ডিউটি করছি। প্রতিদিন কত মারাত্মক রোগী দেখি, কখনো ভয় পাইনি। কিন্তু এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখে খুব ভয়ে আছি। বিশেষ করে শিশুদের কষ্ট দেখার মতো না। আমারও দুই বছরের একটি সন্তান আছে। ওকে নিয়েই সারাক্ষণ চিন্তায় থাকি। ওর চিন্তায় রাতে আতঙ্কে কয়েকবার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমের ঘোরে বারবার বাবুর গায়ে হাত দিয়ে দেখি।’
তিনি বলেন, ‘আমি আমাকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি না। কিন্তু আমার কিছু হলে বাসার অন্যদের কে দেখবে? আল্লাহ না করুক, বাবুর যদি ডেঙ্গু হয়, এত কষ্ট ও কি করে সহ্য করবে! সারাক্ষণ আতঙ্কে এমন আরও কত চিন্তা মাথায় আসে। সব কথা বলে বোঝানো যাবে না। এ যে কি আতঙ্ক তা বলে বোঝানো মুশকিল। এমন আতঙ্কের মধ্যে আমি কখনো পড়িনি।’
ডেঙ্গু আতঙ্কে শুক্রবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় একসঙ্গে সাত বন্ধু ছুটে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডেঙ্গু সেলে। বহির্বিভাগ থেকে টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখিয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করান।
হাসপাতালে আসার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে হৃদয় নামের এদের একজন বলেন, ‘ভাই, ডেঙ্গু এখন খুবই মারাত্মক। কখন কাকে ধরে কিছু বলা যায় না। হঠাৎ করেই শরীর গরম, জ্বর জ্বর বোধ করছি। তাই হাসপাতালে এসেছি। ডাক্তার দেখিয়ে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছি। এতে কিছুটা হলেও আতঙ্ক কমবে। পরীক্ষা না করালে সারাক্ষণ ডেঙ্গু আতঙ্কে থাকব। তাতে দেখা যাবে শরীরে অন্য অসুখ বাসা বেঁধেছে।’
বিএসএমএমইউতে টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করা একজন বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যে কি আতঙ্ক তা এখানে কিছুক্ষণ থাকলেই বুঝতে পারবেন। সুস্থ মানুষও ডেঙ্গুর ভয়ে দৌড়ে হাসপাতালে আসছে। প্রতিদিন যত মানুষ ডেঙ্গুর পরীক্ষা করাতে আসছে এর ১ শতাংশও বাস্তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নয়।’
বিএসএমএমইউতে ডেঙ্গু সেলে দায়িত্বপালন করা এক চিকিৎসক বলেন, ‘এবার ডেঙ্গুর ধরন একদম আলাদা। জ্বর না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। তবে এটাও সত্য ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক একটু বেশিই। অনেকে ডেঙ্গুর আতঙ্কে আমাদের কাছে ছুটে আসছে। দেখে আমরা ধারণা করছি ডেঙ্গু হয়নি, তারপরও আমরা ডেঙ্গুর পরীক্ষা দিচ্ছি। এতে যিনি আমাদের কাছে আসছেন তিনি যেমন আতঙ্কমুক্ত হচ্ছেন, তেমনি আমরাও ঝুঁকিমুক্ত থাকতে পারছি।’
ওই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘ডেঙ্গুতে এবার আক্রান্তের সংখ্যাটা অনেক বেশি, এই কথাটা কিন্তু ঠিক। আমার কাছে মনে হচ্ছে যত না মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে তার থেকে আতঙ্কের মাত্রা অনেক বেশি। আতঙ্কিত না হয়ে মানুষকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু হলেও যে তা মারাত্মক হবে তা নয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে বাসাবাড়িতে থেকেই স্বাভাবিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়া সম্ভব। তবে কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত।’
এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। মানুষ একটা কারণে আতঙ্কিত হয় না। এর পেছনে নানা কারণ থাকে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। অন্য অসুখের ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হওয়া যায়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারাই যাচ্ছে। এ মারা যাওয়া তো আতঙ্কের কারণ।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে স্বাস্থ্যসেবাটা অতটা ভালো নয়। একজন রোগী হাসপাতালে গেলে রিল্যাক্সে থাকে, সব দায়-দায়িত্ব নার্স, চিকিৎসকরা নেন। কিন্তু আমাদের এখানে পদে পদে সমস্যা। হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা ঠিকমতো হবে কি না, পরীক্ষা ঠিকমতো হবে কি না, ওষুধে ভেজাল আছে কি না, চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে পারবে কি না সবই ভাবতে থাকে। দেখা যায়, অকারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল করে বসে আছে। এমন অনেকগুলো কারণে এ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।’
মানুষ এ রকম আতঙ্কের মধ্যে থাকলে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানান এ মনোবিজ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘দিনের পর দিন একজন আতঙ্কের মধ্যে থাকলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আতঙ্কের কারণে আপনার বডি সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করবে না। ব্লাড প্রেশারের সমস্যা দেখা দেবে। আতঙ্কে থাকলে ঠিকমতো খেতে পারবে না। ঠিকমতো নিজের সেবা-শুশ্রূষা করতে পারবে না। যারা দুর্বলচিত্তের তাদের মধ্যে কোন রোগ তৈরি হয় তারও কোনো ঠিক নেই।’
No comments