দেশে ন্যূনতম আইনি সুরক্ষা নেই

দেশে ন্যূনতম আইনি সুরক্ষা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। তিনি  বলেছেন, একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার জন্য যা যা দরকার তার সবই হচ্ছে। আমরা সবাই সোচ্চার না হলে এটাকে অকার্যকর রাষ্ট্র থেকে ফিরাতে পারব না। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির উদ্যোগে ‘নির্যাতন বিরোধী জাতিসংঘ সনদের বাস্তবায়ন পর্যালোচনা: আমাদের বক্তব্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শাহদীন মালিক বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও জবাবদিহি না থাকাই অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার বড় লক্ষণ। একটি দেশ একদিনে তো অকার্যকর হয় না। এটার স্টেপ লাগে। বিচারহীনতা এর একটি।
দেশে জবাবদিহিতা না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে নির্যাতন করছে। দীর্ঘ সময় আটক করে রাখছে এটা কোন ধরনের আইনের মধ্যে পড়ে আমাদের জানা নেই।
তিনি বলেন, দেশে গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে, এসব বিচারের পরিপন্থী। এগুলো ন্যূনতম আইনি পর্যায়ে পড়ে না। যারা এসব করে মনে করে নির্যাতন করে, খুন করে আটকে রেখে দেশের জন্য ভালো করছি, তারা মোটেও ভালো চিন্তা করছে না। তারা দেশের জন্য ভালো কোনো চিন্তা করছে না। দেশটা আরো ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় দেশের অবস্থা নিঃসন্দেহে ভয়ানক।
জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটিতে দেয়া সরকারের প্রতিবদেনকে তিনি একটি অবাস্তব প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলেন, আইনমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, আমাদের দেশে আইনে সব লেখা আছে তবে আমরা সুরক্ষা পাচ্ছি না। দেশে কিছু হচ্ছে না, বিদেশে যদি কিছু হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, নির্যাতন বন্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই, প্রতিকারেরও কোনো উপায় নেই। তাই পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। আইনে না থাকলেও বাস্তবে গুম হচ্ছে। আবার নির্যাতন বন্ধে অনেক আইন আছে কিন্তু বাস্তবায়ন শূন্য। আলোকচিত্রি ড. শহীদুল আলমের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, তার উপর যে নির্যাতন হয়েছিল আদালতে তিনি নিজেই তা বলেছেন। আইনের আমরা কোনো সুরক্ষা পাচ্ছি না।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তিনি বলেন, সরকারের প্রতিবেদনে অনেক বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে শুধু আইনের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তা যে বাস্তবায়ন হচ্ছে না তা বিশ্লেষণ করা হয়নি। তিনি বলেন, নির্যাতন বিরোধী কমিটির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের হেফাজতের নির্যাতন ও হত্যা, গুম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড, রিমান্ডে নির্যাতন, অঘোষিত আটক, বিচারকদের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার থেকে বঞ্চনা, নির্বাচনী সহিংসতার বিষয়ে শতাধিক প্রশ্ন উপাস্থপন করলেও এসব প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান আইন, বিচার সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর সরাসরি না দিয়ে তিনি বাংলাদেশের সংবিধান, ফৌজদারি আইন ও প্রতিকারের বিধান এসব তুলে ধরেন। আর ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠির ওপর যে নির্যাতন হয় সে সম্পর্কে মন্ত্রী জানান, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির ওপর কোনো ধরনের বৈষম্য করা হয় না এবং এই জনগোষ্ঠীর ওপর হামলার বিষয়ে সরকার অপরাধীদের বিচার করছে।
সারা হোসেন বলেন, সরকারি প্রতিনিধিদল কমিটির বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সংবিধান ও বিদ্যমান আইনের আলোকে নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অমর্যাদাকর আচরণ প্রতিরোধে বিষয়ে উল্লেখ করলেও নির্যাতন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও অন্যান্য সংগঠিত অপরাধের ব্যাপারে কোনো বাস্তব পদক্ষেপ না নেয়ার এবং দু’একটা ঘটনা ছাড়া অপরাধীদের বিচারে সোপর্দ না করার বাস্তবতাকে আড়াল করতে সচেষ্ট ছিল। সুরক্ষা কমিটি মনে করছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরাট অংশ, ক্ষমতাসীনদের বহুলাংশ এবং স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন মহল আইন ও বিচারের ঊর্ধ্বে। অনেক প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না পাওয়ার বিষয়টি জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির সমাপনী পর্যবেক্ষণেও উল্লেখ করা হয়েছে। জেনেভায় অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশে প্রতিনিধি দলে এত বেশি সদস্য কেনো গেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সারাহ হোসেন বলেন, জেনেভায় সরকারি প্রতিনিধি দলের ২৮ জন প্রতিনিধি ছিল। এরমধ্যে মন্ত্রী ছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা অংশগ্রহণ করছেন। তবে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণাল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো সদস্য ছিল না। কি কারণে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল এত লম্বা ছিল তা আমরা জানি না। মানবাধিকার কর্মী শিরিন হকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সমন্বয়কারী সাজ্জাদ হোসেন, মানবাধিকার কর্মী আইনজীবি রেজাউল করিম সিদ্দিকী, নুর খান লিটন প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.