রাশিয়ার সাথে করা পরমাণু চুক্তি থেকে সরে গেলো যুক্তরাষ্ট্র
রাশিয়ার সাথে করা একটি পরমাণু চুক্তি
থেকে সরে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র যা আবারো অস্ত্র
প্রতিযোগিতার আশঙ্কা তৈরি করছে।
'দি ইন্টার মিডিয়েট রেঞ্জ
নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি' বা আইএনএফ ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষর করেছিলেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যান ও সোভিয়েত নেতা মিখাইল
গর্বাচভ।
এতে ৫০০ থেকে ৫৫০০ কিলোমিটার মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।
এ
বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন ধরনের ক্রুজ
মিসাইল মোতায়েনের মাধ্যমে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তোলে। যদিও সে অভিযোগ
প্রত্যাখ্যান করে রাশিয়া।
আমেরিকানরা বলছে রাশিয়া বেশ কিছু নাইন
এম-৭২৯ মিসাইল (যেগুলো নেটোতে এসএসসি-৮ নামে পরিচিত) মোতায়েন করেছে এবং এর
প্রমাণ তাদের কাছে আছে।
এরপর নেটোও একই অভিযোগ তোলে।
রাশিয়ার নাইনএম৭২৯ মিসাইল নিয়েই উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা |
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক বিবৃতিতে চুক্তিটির মৃত্যুর জন্য রাশিয়াকেই দায়ী করেছেন।
তিনি
বলেছেন, নেটোর পূর্ণ সমর্থন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত হয়েছে যে রাশিয়া
চুক্তি ভঙ্গ করেছে এবং চুক্তির বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি বিবৃতিতে আইএনএফ চুক্তির আনুষ্ঠানিক মৃত্যু ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছেন।
প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়াকে ২রা অগাস্ট পর্যন্ত সময়
বেঁধে দিয়ে চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা করেছিলেন।
পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের নিজস্ব বাধ্যবাধকতা স্থগিত করার ঘোষণা করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন, পরমাণু যুদ্ধের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধা সরে গেলো।
"এটি
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের হুমকিকে কমায়নি, বরং বাড়িয়েছে," মন্তব্য
করে আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে একটি পথ খুঁজতে সমঝোতায় পৌঁছাতে সব
পক্ষকে আহবান জানান।
যদিও রাশিয়ান সামরিক বিশ্লেষক পাভেল ফেলগেনহর
বলেছেন, "চুক্তিটি শেষ হয়ে গেছে, এখন আমরা নতুন নতুন অস্ত্রের উন্নয়ন ও
মোতায়েন দেখবো"।
১৯৮৭ সালে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন মিখাইল গর্বাচেভ ও রোনাল্ড রিগ্যান |
গত মাসে নেটোর মহাসচিব জেনারেল জেনস স্টোলটেনবার্গ
বিবিসিকে বলেন, রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র, যেগুলো পরমাণু সক্ষম, মোবাইল ও
চিহ্নিত করা কঠিন ও কয়েক মিনিটের মধ্যে ইউরোপের যে কোনো শহরে যেতে পারে-
ওই চুক্তির পরিষ্কার লঙ্ঘন ছিলো।
তিনি বলেন, "এটা মারাত্মক। আইএনএফ
চুক্তি অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে কয়েক দশক করে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের একটি ভিত্তি
ছিলো এবং এখন আমরা তার মৃত্যু দেখলাম।"
তিনি বলেন, ভূমি-ভিত্তিক পরমাণু ক্ষেপনাস্ত্রের কোনো পরিকল্পনা ইউরোপের নেই।
কি ছিলো ওই চুক্তিতে?
•যুক্তরাষ্ট্র
ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৮৭ সালে চুক্তিটি করেছিলো যাতে স্বল্প ও দূরপাল্লার
সব পরমাণু ও অপারমানবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো।
•১৯৭৯
সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের এসএস-২০ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলো
যুক্তরাষ্ট্র এবং জবাবে ইউরোপে তারা ক্রুজ মিসাইল মোতায়েন করে।
•১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৭০০ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করা হয়।
•দু'দেশ একে অন্যের স্থাপনা পর্যবেক্ষণ করতে পারতো।
সমস্যা কোথায় ছিলো ?
দা'হাজার সাত সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দেন যে ওই চুক্তি আর রাশিয়ার স্বার্থ সংরক্ষণ করছেনা।
চুক্তি ভঙ্গ করে ক্ষেপনাস্ত্র তৈরির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া |
এর আগে ২০০২ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ অ্যান্টি ব্যালিস্টিক মিসাইল চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ান।
দু'হাজার চৌদ্দতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আইএনএফ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন।
তবে ইউরোপিয়ান নেতারা চাপ দিলেও তিনি চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পক্ষপাতী ছিলেননা।
সর্বশেষ গত বছর চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগকে সমর্থন করে।
রাশিয়া অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ও ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াতে যুক্তরাষ্ট্র পটভূমি তৈরি করছে।
ওয়াশিংটন
ও মস্কোর বিরুদ্ধে সম্পর্কের অবনতির মধ্যেই তুরস্ক গত মাসে রাশিয়ার
এস-৪০০ অ্যান্টি এয়ারক্রাফট ডিফেন্স সিস্টেমের প্রথম চালান গ্রহণ করে, যার
তীব্র বিরোধিতা করেছিলো যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে সতর্ক
করে বলেছিলো যে তুরস্ক একই সাথে এস-৪০০ অ্যান্টি এয়ারক্রাফট ডিফেন্স
সিস্টেম ও যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ ফাইটার বিমান পেতে পারেনা।
তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো সহযোগী কিন্তু তুরস্ক রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছে।
চুক্তির আওতায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো ৫৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মাত্রার ক্ষেপনাস্ত্র |
No comments