ডেঙ্গুতে মা না ফেরার দেশে, মেয়ে হাসপাতালে: রোগী বাড়ছেই
ঢাকার
বাইরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছেই। জেলা-উপজেলায় ডেঙ্গু রোগীর বিস্তার লাভ করেছে।
গ্রামে-গঞ্জেও ডেঙ্গুর ছোবল থেকে অনেকে রক্ষা পায়নি। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায়
সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৬৪৯ জন। এ হিসাবে
ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছে ৬৮ জনের উপরে। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে
ভর্তি হন ৯৬৯ জন। ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলা সদরে ভর্তি হয়েছেন ৬৮০ জন
রোগী। রাজধানীর বাইরে ৬৪ জেলা থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে
ভর্তি হয়েছেন ৪ হাজার ৯০৫ জন।
আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১৯০ জন। ১লা আগস্ট এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৬৪ জন। ঢাকার বাইর চিকিৎসাধীন আছেন ২ হাজার ৩৮১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৫২৪ জন। সারা দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৯১৯জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এই তথ্য জানিয়েছে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ৩রা আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৮ জন। যদিও বেসরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবের কয়েকগুণ। মৃত্যুর সংখ্যাও অর্ধশতাধিক ছাড়িয়েছে। রোগী বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল। রাজধানী থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়ালেও এখন ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। অন্তত ৩০টি জেলায় স্থানীয়ভাবে এডিশ মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বত্র এখন ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা চলছে। ফলে আতঙ্ক শুধু ঢাকাতেই নয়, সব জায়গায় ছড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ৬৪টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন দ্বিগুণ হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সরকারি হিসাবে ১৮ জন মৃতের খবর দিলেও এই সংখ্যা অর্ধশতাধিক হবে বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র বলছে। অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ হাজার ৪৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬ হাজার ৮৫৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, আগস্ট মাসে তিন দিনে ৫ হাজার ৮৪ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত জুলাই মাসেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১৫ হাজার ৬৪৮ জন। গড়ে প্রতিদিন ৫০৪ জনের উপরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। জুন মাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক হাজার ৮৬৩ জন। আর মে মাসে এই সংখ্যা ছিল ১৯৩ জন। রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হিসাবে ঢাকা জেলা থেকে ৩৪৯ জন, গাজীপুর থেকে ১৮৩ জন, মুন্সীগঞ্জ ৩৮জন, কিশোরগঞ্জ ১৮৩ জন, নারায়ণগঞ্জ ৬৯ জন, গোপালগঞ্জ ৩৪ জন, মাদারীপুর ৫২ জন, মানিকগঞ্জ ১২১ জন, নরসিংদী ৬৩ জন, রাজবাড়ী থেকে ৬৩ জন, শরীয়তপুর ৩৭ জন, টাঙ্গাইল ১২০ জন, ফরিদপুর ১১ জন, ময়মনসিংহ ৩৩৯ জন, জামালপুর ৭৫ জন, শেরপুর ২৫ জন, নেত্রকোনায় ১৪ জন, চট্টগ্রাম থেকে ৩১৭ জন, ফেনীতে ১৪২ জন, কুমিল্লা ৯৬ জন, চাঁদপুর থেকে ১৫৮ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫০ জন, নোয়াখালীতে ৯৯ জন, কক্সবাজার ৩৮ জন, লক্ষ্মীপুর ৬১ জন, খাগড়াছড়ি ২০ জন, রাঙ্গামাটিতে ৭ জন, বান্দরবন একজন, খুলনায় ২৩৪ জন, কুষ্টিয়া থেকে ১১২ জন, মাগুরা ২৮ জন, নড়াইল ১৯ জন, যশোর ১৪৮ জন, ঝিনাইদহ থেকে ৫০ জন, বাগেরহাট ১০জন, সাতক্ষীরা ৩৯ জন, চুয়াডাঙ্গা থেকে ২১ জন, মেহেরপুর ৮ জন, রাজশাহী থেকে ১২৪ জন, বগুড়া ২০১ জন, পাবনা ৬১ জন, সিরাজগঞ্জ ১১৪ জন, নওগাঁয় ২৬ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩২ জন, নাটোর ১০ জন, জয়পুরহাট ৯ জন, রংপুর ১৫০ জন, লালমনিরহাট ৮ জন, কুড়িগ্রাম ২৩ জন, গাইবান্ধায় ১৮ জন, নীলফামারী ১৯ জন, দিনাজপুরে ৬০ জন, পঞ্চগড় ৩ জন, ঠাকুরগাঁও ১৮ জন, বরিশাল থেকে ২৪১ জন, পটুয়াখালী ৪৫ জন, ভোলা ২৭ জন, পিরোজপুর ২০ জন, ঝালকাঠি ৯ জন, বরগুনা ৪৩ জন, সিলেট থেকে ১৫১ জন, সুনামগঞ্জ ১১ জন, হবিগঞ্জ ১৮ জন, মৌলভীবাজার ৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৩রা আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে এপ্রিলে দু’জন, জুনে তিন ও জুলাই মাসে ১৩ জন মারা যান। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র বলছে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতাধিক।
বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৯৩ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৯৮জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৪২ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩৬৯জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২২৬ জন, বারডেম হাসপাতালে ৭২ জন, বিএসএমএমইউতে ১৪৩ জন, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগ ২০১ জন, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ৩১৯ জন, বিজিবি হাসপাতালে ৩৩ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৩৪ জন, কুর্মিটোলায় ৩৫৮ জন, রাজধানীর ধানমন্ডি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭৬ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ৯৬ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ৫৫ জন, কমফোর্ট নার্সিংয়ে ১৫ জন, শমরিতায় ৪৯ জন, ল্যাব এইডে ১৭ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১১৪ জন, হাই কেয়ার হাসপাতালে ৪৬ জন, হেলথ এন্ড হোপে ৩১ জন, গ্রীনলাইফে ৯৩ জন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কাকরাইলে ১০৬ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৮০ জন, খিদমা হাসপাতালে ৩২ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ৬৪ জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে ১০৫ জন, এ্যাপোলো হাসপাতালে ৪২ জন, আদ-দ্বীন হাসপাতালে ১২৭ জন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ৫২ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৮৮ জন, বিআরবি হাসপাতালে ২৮ জন, আজগর আলীতে ৬৮ জন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৪৩ জন, উত্তরা আধুনিকে ৮৬ জন, আনোয়ার খান মর্ডানে ২১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
মাদারীপুরে ডেঙ্গুতে মায়ের মৃত্যু, মেয়ে হাসপাতালে
একই সঙ্গে মা ও মেয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মা নাদিরা বেগম (৪০) শনিবার ভোরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। এই নিয়ে মাদারীপুর জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৪ জন। এ ছাড়া এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৮ রোগী ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে ২০ জন রোগী আক্রান্ত হয়েছেন মাদারীপুর থেকে। বাকিরা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হন। এখনো সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন ১৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট এলাকার রুবেল হোসেনের মেয়ে শারমিন আক্তার (২২), বুধবার রাতে ঢাকার ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে মারা যান শিবচরের সলু বেপারীকান্দি এলাকার বাবু খানের ছেলে ফারুক খান (২২) ও তার আগের দিন মঙ্গলবার কালকিনি পৌরসভার ঠেঙ্গামারা গ্রামের বারেক বেপারীর ছেলে জুলহাস বেপারী (৪৫) ঢাকায় মারা গেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে গৃহবধু নাদিরা বেগমকে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় ৩০শে জুলাই। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে তাকে মাদারীপুর নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যায়। তিনি কালকিনি উপজেলার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের আলমগীর মোড়লের স্ত্রী।
এব্যাপারে মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন এসএম খলিলুজ্জামান জানান, ২০ জন জেলার বিভিন্ন এলাকায় থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের চিকিৎসকদের ডেঙ্গুর ব্যাপারে আলাদা মনিটরিং করতে বলা হয়েছে।
বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু
বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত তাওহীদ নামের ১৮ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলার ২ নং গৌড়িচন্না ইউনিয়নের মধ্য লাকুরতলা গ্রামের জোম্মাদ্দার বাড়ির সৌদি প্রবাসী মো. ইসহাক জোমাদ্দারের পুত্র তাওহীদ ৩ দিন আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়।
সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ২ আগস্ট তাকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ওই দিনই তার মৃত্যু হয়। শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে তাকে তার নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। আতংকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও এলাকাবাসী পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছেন। শিশুটির চাচা ইব্রাহিম জোম্মাদ্দার জানান, তার ভগ্নিপতিও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শিশুটির মা রিতা আক্তার বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত আমার ভাই রাজিব হোসেনকে দেখতে তাওহীদকে নিয়ে বরগুনা পৌর শহরের কলেজ রোড এলাকায় যাই। সেখান থেকে ফেরার পরই তাওহীদের জ্বর আসে। এরপর তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা বলেন তার ডেঙ্গু হয়েছে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, আমাদের এখানে শিশুটিকে আনা হয়েছিল। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বরিশাল পাঠাই। এ ঘটনায় বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাওহীদের বাড়িতে যান সহকারী কমিশনার ভূমি রুবাইয়া তাসনিম।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহিন খান জানান, বরগুনায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৩৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাওহীদ নামের এক শিশু মারা গেছে। ২২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিদের মধ্যে ১৩ জন বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ও একজন আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ১৯০ জন। ১লা আগস্ট এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪৬৪ জন। ঢাকার বাইর চিকিৎসাধীন আছেন ২ হাজার ৩৮১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৫২৪ জন। সারা দেশে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২২ হাজার ৯১৯জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এই তথ্য জানিয়েছে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ৩রা আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৮ জন। যদিও বেসরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবের কয়েকগুণ। মৃত্যুর সংখ্যাও অর্ধশতাধিক ছাড়িয়েছে। রোগী বাড়ায় হিমশিম খাচ্ছে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল। রাজধানী থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছড়ালেও এখন ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। অন্তত ৩০টি জেলায় স্থানীয়ভাবে এডিশ মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে। সর্বত্র এখন ডেঙ্গু নিয়ে আলোচনা চলছে। ফলে আতঙ্ক শুধু ঢাকাতেই নয়, সব জায়গায় ছড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, ইতিমধ্যে ৬৪টি জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন দ্বিগুণ হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। সরকারি হিসাবে ১৮ জন মৃতের খবর দিলেও এই সংখ্যা অর্ধশতাধিক হবে বলে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র বলছে। অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ হাজার ৪৩ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬ হাজার ৮৫৮ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান মতে, আগস্ট মাসে তিন দিনে ৫ হাজার ৮৪ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত জুলাই মাসেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১৫ হাজার ৬৪৮ জন। গড়ে প্রতিদিন ৫০৪ জনের উপরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। জুন মাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এক হাজার ৮৬৩ জন। আর মে মাসে এই সংখ্যা ছিল ১৯৩ জন। রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হিসাবে ঢাকা জেলা থেকে ৩৪৯ জন, গাজীপুর থেকে ১৮৩ জন, মুন্সীগঞ্জ ৩৮জন, কিশোরগঞ্জ ১৮৩ জন, নারায়ণগঞ্জ ৬৯ জন, গোপালগঞ্জ ৩৪ জন, মাদারীপুর ৫২ জন, মানিকগঞ্জ ১২১ জন, নরসিংদী ৬৩ জন, রাজবাড়ী থেকে ৬৩ জন, শরীয়তপুর ৩৭ জন, টাঙ্গাইল ১২০ জন, ফরিদপুর ১১ জন, ময়মনসিংহ ৩৩৯ জন, জামালপুর ৭৫ জন, শেরপুর ২৫ জন, নেত্রকোনায় ১৪ জন, চট্টগ্রাম থেকে ৩১৭ জন, ফেনীতে ১৪২ জন, কুমিল্লা ৯৬ জন, চাঁদপুর থেকে ১৫৮ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫০ জন, নোয়াখালীতে ৯৯ জন, কক্সবাজার ৩৮ জন, লক্ষ্মীপুর ৬১ জন, খাগড়াছড়ি ২০ জন, রাঙ্গামাটিতে ৭ জন, বান্দরবন একজন, খুলনায় ২৩৪ জন, কুষ্টিয়া থেকে ১১২ জন, মাগুরা ২৮ জন, নড়াইল ১৯ জন, যশোর ১৪৮ জন, ঝিনাইদহ থেকে ৫০ জন, বাগেরহাট ১০জন, সাতক্ষীরা ৩৯ জন, চুয়াডাঙ্গা থেকে ২১ জন, মেহেরপুর ৮ জন, রাজশাহী থেকে ১২৪ জন, বগুড়া ২০১ জন, পাবনা ৬১ জন, সিরাজগঞ্জ ১১৪ জন, নওগাঁয় ২৬ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩২ জন, নাটোর ১০ জন, জয়পুরহাট ৯ জন, রংপুর ১৫০ জন, লালমনিরহাট ৮ জন, কুড়িগ্রাম ২৩ জন, গাইবান্ধায় ১৮ জন, নীলফামারী ১৯ জন, দিনাজপুরে ৬০ জন, পঞ্চগড় ৩ জন, ঠাকুরগাঁও ১৮ জন, বরিশাল থেকে ২৪১ জন, পটুয়াখালী ৪৫ জন, ভোলা ২৭ জন, পিরোজপুর ২০ জন, ঝালকাঠি ৯ জন, বরগুনা ৪৩ জন, সিলেট থেকে ১৫১ জন, সুনামগঞ্জ ১১ জন, হবিগঞ্জ ১৮ জন, মৌলভীবাজার ৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৩রা আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১৮ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে এপ্রিলে দু’জন, জুনে তিন ও জুলাই মাসে ১৩ জন মারা যান। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র বলছে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতাধিক।
বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৯৩ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৯৮জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১৪২ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩৬৯জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২২৬ জন, বারডেম হাসপাতালে ৭২ জন, বিএসএমএমইউতে ১৪৩ জন, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগ ২০১ জন, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ৩১৯ জন, বিজিবি হাসপাতালে ৩৩ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৩৪ জন, কুর্মিটোলায় ৩৫৮ জন, রাজধানীর ধানমন্ডি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭৬ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ৯৬ জন, স্কয়ার হাসপাতালে ৫৫ জন, কমফোর্ট নার্সিংয়ে ১৫ জন, শমরিতায় ৪৯ জন, ল্যাব এইডে ১৭ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১১৪ জন, হাই কেয়ার হাসপাতালে ৪৬ জন, হেলথ এন্ড হোপে ৩১ জন, গ্রীনলাইফে ৯৩ জন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কাকরাইলে ১০৬ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৮০ জন, খিদমা হাসপাতালে ৩২ জন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ ৬৪ জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে ১০৫ জন, এ্যাপোলো হাসপাতালে ৪২ জন, আদ-দ্বীন হাসপাতালে ১২৭ জন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ৫২ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬০ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৮৮ জন, বিআরবি হাসপাতালে ২৮ জন, আজগর আলীতে ৬৮ জন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ৪৩ জন, উত্তরা আধুনিকে ৮৬ জন, আনোয়ার খান মর্ডানে ২১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
মাদারীপুরে ডেঙ্গুতে মায়ের মৃত্যু, মেয়ে হাসপাতালে
একই সঙ্গে মা ও মেয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মা নাদিরা বেগম (৪০) শনিবার ভোরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। এই নিয়ে মাদারীপুর জেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৪ জন। এ ছাড়া এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মাদারীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪৮ রোগী ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে ২০ জন রোগী আক্রান্ত হয়েছেন মাদারীপুর থেকে। বাকিরা ঢাকা থেকে আক্রান্ত হন। এখনো সরকারি হাসপাতালগুলোতে ভর্তি আছেন ১৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। মাদারীপুর স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট এলাকার রুবেল হোসেনের মেয়ে শারমিন আক্তার (২২), বুধবার রাতে ঢাকার ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে মারা যান শিবচরের সলু বেপারীকান্দি এলাকার বাবু খানের ছেলে ফারুক খান (২২) ও তার আগের দিন মঙ্গলবার কালকিনি পৌরসভার ঠেঙ্গামারা গ্রামের বারেক বেপারীর ছেলে জুলহাস বেপারী (৪৫) ঢাকায় মারা গেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে গৃহবধু নাদিরা বেগমকে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় ৩০শে জুলাই। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাদারীপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে তাকে মাদারীপুর নিয়ে যাওয়ার পথে তিনি মারা যায়। তিনি কালকিনি উপজেলার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের আলমগীর মোড়লের স্ত্রী।
এব্যাপারে মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন এসএম খলিলুজ্জামান জানান, ২০ জন জেলার বিভিন্ন এলাকায় থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের চিকিৎসকদের ডেঙ্গুর ব্যাপারে আলাদা মনিটরিং করতে বলা হয়েছে।
বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু
বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্ত তাওহীদ নামের ১৮ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলার ২ নং গৌড়িচন্না ইউনিয়নের মধ্য লাকুরতলা গ্রামের জোম্মাদ্দার বাড়ির সৌদি প্রবাসী মো. ইসহাক জোমাদ্দারের পুত্র তাওহীদ ৩ দিন আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়।
সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ২ আগস্ট তাকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ওই দিনই তার মৃত্যু হয়। শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে তাকে তার নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। আতংকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও এলাকাবাসী পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছেন। শিশুটির চাচা ইব্রাহিম জোম্মাদ্দার জানান, তার ভগ্নিপতিও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শিশুটির মা রিতা আক্তার বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত আমার ভাই রাজিব হোসেনকে দেখতে তাওহীদকে নিয়ে বরগুনা পৌর শহরের কলেজ রোড এলাকায় যাই। সেখান থেকে ফেরার পরই তাওহীদের জ্বর আসে। এরপর তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকরা বলেন তার ডেঙ্গু হয়েছে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, আমাদের এখানে শিশুটিকে আনা হয়েছিল। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বরিশাল পাঠাই। এ ঘটনায় বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাওহীদের বাড়িতে যান সহকারী কমিশনার ভূমি রুবাইয়া তাসনিম।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহিন খান জানান, বরগুনায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৩৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাওহীদ নামের এক শিশু মারা গেছে। ২২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিদের মধ্যে ১৩ জন বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল ও একজন আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
No comments