অমরনাথ যাত্রায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে কাশ্মিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা by উমর মনজুর শাহ
অমরনাথ যাত্রা |
রাজকীয়
পর্বতমালা ও রজত ঝর্ণাধারার মাঝে অস্থায়ী তাবুতে বেশ কয়েক রাত ও দিন
কাটিয়েছেন ইউনুস ইকবাল। গত ১৫ দিন ধরে তার বাড়ি যাওয়া হয়নি। কারণ তিনি
হিন্দু তীর্থযাত্রীদের কাছে পবিত্র গণ্য কাশ্মিরের একটি গুহায় লোকজনকে নিয়ে
যাওয়ার কাজ করছেন। ভগবান শিবের প্রতীক ওই গুহা।
এই হিন্দু তীর্থস্থানটি অমরনাথ নামে পরিচিত। সেখানে যাওয়ার পথে অবস্থিত বুলতালের বাসিন্দা ইউনুস বহু বছর ধরে তীর্থযাত্রীদের গাইড হিসেবে কাজ করছেন।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে এই তীর্থযাত্রা তার জীবিকা আয়ের একমাত্র উপায়। কবে যাত্রা শুরু হবে সেই আশায় প্রতিবছর দিন গুনে সে।
লাখ লাখ হিন্দু তীর্থযাত্রীকে গন্তব্যে নিয়ে যেতে হাজার হাজার স্থানীয় কাশ্মিরি মুসলিম, যাদের বেশিরভাগ যুবক ও তরুণ মুটে, সহিস ও গাইডের কাজ করে। তারা বিভ্রান্তিকর পার্বত্য পথে তীর্থযাত্রীদের নিয়ে যায় তুষারে মোড়া পার্বত্য গুহাটি একনজর দর্শনের জন্য।
নয়-ফুট-উঁচু পুংজননেন্দ্রিয় আকৃতির একটি বরফপিণ্ডকে ভগবান শিবের প্রতীক বলে মনে করা হয়। হিন্দু ধর্মের সবচে শক্তিধর তিন ভগবানের একজন হলো শিব। জঙ্গি হামলা ঠেকাতে জম্মু-কাম্মির সরকারের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে আয়োজিত অমরনাথ যাত্রা হিন্দু-মুসলিম মিলনের প্রতীকও বটে।
শিবের জয়োধ্বনী ও আচারিক ঘন্টা ধ্বনির মধ্যে মুসলিম সহিস ও মুটেরা পূজারিদের অমরনাথ গুহায় নিয়ে যায়।
বুলতাল বেজ ক্যাম্প থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এই গুহার অবস্থান। পুরো পথ পাথুরে এবং নানা বাধায় পূর্ণ। পাহাড়ের এত উঁচুতে অক্সিজেনও কম এবং প্রায়ই আবহাওয়ার রূপ বদলে যায় – এই রোদ এই বৃষ্টি। সাগর সমতল থেকে স্থানটির উচ্চতা ১৪,৫০০ ফিট।
ইশতিয়াক আহমেদ নাম এক সহিস বলেন, এই যাত্রাই তার জীবিকার উৎস। পাশাপাশি তীর্থযাত্রীদের সেবা করে এক ধরনের তৃপ্তিও অনুভব করেন তিনি।
সাউথ এশিয়ান মনিটরকে আহমেদ বলেন, টাকা রোজগারের অনেক উপায় আছে কিন্তু আমি পূজারিদের সেবা করি এবং তাদেরকে প্রবোধ লাভে সাহায্য করি।
তিনি আরো বলেন, এই তীর্থযাত্রার মধ্যে রাজনীতি টেনে আনা সরকারের ঠিক হবে না। শত শত বছর ধরে যেভাবে চলে আসছে সেভাবেই একে চলতে দেয়া উচিত।
এই তীর্থযাত্রা শুরু হয় ১৭৭০ সালের দিকে, যখন একজন রাখাল ওই গুহার বরফের অদ্ভুদ ধরনের আকারটি লক্ষ্য করেন। এরপর এক হিন্দু পুরোহিত ওই গুহা পরিদর্শন করে একে ভগবান শিবের পৌরাণিক গুহা হিসেবে ঘোষণা দেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত মাত্র কয়েক হাজার মানুষ এই তীর্থযাত্রায় যেতো। তাদের বেশিরভাগ ছিলেন সন্ন্যাসী ও আশপাশের এলাকার।
১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি তীর্থযাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তবে ওই অঞ্চলে সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলে আবারো সংখ্যা কমে যায়। কিন্তু ২০১০ সালে তীর্থযাত্রী সংখ্যা আবার বেড়ে ছয় লাখে পৌছে এবং ঐতিহ্যগতভাবে এই যাত্রাকাল দুই-তিন সপ্তাহ হলেও তা বেড়ে প্রথমে ছয় সপ্তাহ ও আট সপ্তাহ দাঁড়ায়।
গত ১ জুলাই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)’র নেতৃত্বাধিন ভারতের কেন্দ্রিয় সরকার জম্মু-কাশ্মির জাতীয় মহাসড়কে সাধারণ যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে। ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযোগের একমাত্র পথ এটি। রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে রেলচলাচলও বন্ধ করে দেয় সরকার। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। আগস্টে তীর্থযাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক বাঙ্কার তৈরি করা হয়, যেগুলোর বিরোধিতা করা স্থানীয় জনগণের জন্য রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিজের কাজের সমর্থনে সরকার চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতি হামলার কথা উল্লেখ করে। ওই হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় সেনা নিহত হয়। স্থানীয় এক হামলাকারী বিস্ফোরকভর্তি ভ্যান নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর গাড়িবহরে ঢুকে পড়ে। জাতীয় হাইওয়ে ধরে ওই বহর অগ্রসর হচ্ছিল।
২০১৭ সালের ১০ জুলাই, দক্ষিণ কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলায় অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের একটি বাসকে টার্গেট করে জঙ্গিরা। এতে সাত জন নিহত ও ১৯ জন আহত হয়। সেটা ছিলো ২০০০ সালের পর সবচেয়ে বড় একই ধরনের হামলা। ২০০০ সালে এক গ্রেনেড হামলায় ২১ তীর্থযাত্রী নিহত হয়।
কাশ্মিরে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ জন তীর্থযাত্রী নিহত হয়েছে।
কিন্তু নতুন নির্দেশ স্থানীয়দের ক্ষুব্ধ করেছে। একে উদ্ভট ও অবাস্তব হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।
তীর্থযাত্রীদের সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করা কাশ্মিরি মুসলামান আব্দুল মজিদ শেখ বলেন, ব্যাপক নিরাপত্তার আয়োজন তীর্থযাত্রীদের মধ্যেও আতংক তৈরি করেছে।
শেখ বলেন, ‘খোদার দোহাই, এটা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। একে নিরাপত্তার আয়োজনে পরিণত করো না। এর মাধ্যমে শত শত বছর ধরে মুসলিম ও হিন্দুরা বিশ্বের সামনে ধর্মীয় সংহতি ও সহিষ্ণুতার উদাহরণ পেশ করে আসছে। স্থানীয় মুসলমানদেরকে নিদারুণ কষ্ঠের মধ্যে ঠেলে না দিয়ে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের যাতে সুবিধা হয় সেই ব্যবস্থা করা উচিত ছিলো তাদের।’
এই হিন্দু তীর্থস্থানটি অমরনাথ নামে পরিচিত। সেখানে যাওয়ার পথে অবস্থিত বুলতালের বাসিন্দা ইউনুস বহু বছর ধরে তীর্থযাত্রীদের গাইড হিসেবে কাজ করছেন।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে এই তীর্থযাত্রা তার জীবিকা আয়ের একমাত্র উপায়। কবে যাত্রা শুরু হবে সেই আশায় প্রতিবছর দিন গুনে সে।
লাখ লাখ হিন্দু তীর্থযাত্রীকে গন্তব্যে নিয়ে যেতে হাজার হাজার স্থানীয় কাশ্মিরি মুসলিম, যাদের বেশিরভাগ যুবক ও তরুণ মুটে, সহিস ও গাইডের কাজ করে। তারা বিভ্রান্তিকর পার্বত্য পথে তীর্থযাত্রীদের নিয়ে যায় তুষারে মোড়া পার্বত্য গুহাটি একনজর দর্শনের জন্য।
নয়-ফুট-উঁচু পুংজননেন্দ্রিয় আকৃতির একটি বরফপিণ্ডকে ভগবান শিবের প্রতীক বলে মনে করা হয়। হিন্দু ধর্মের সবচে শক্তিধর তিন ভগবানের একজন হলো শিব। জঙ্গি হামলা ঠেকাতে জম্মু-কাম্মির সরকারের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে আয়োজিত অমরনাথ যাত্রা হিন্দু-মুসলিম মিলনের প্রতীকও বটে।
শিবের জয়োধ্বনী ও আচারিক ঘন্টা ধ্বনির মধ্যে মুসলিম সহিস ও মুটেরা পূজারিদের অমরনাথ গুহায় নিয়ে যায়।
বুলতাল বেজ ক্যাম্প থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এই গুহার অবস্থান। পুরো পথ পাথুরে এবং নানা বাধায় পূর্ণ। পাহাড়ের এত উঁচুতে অক্সিজেনও কম এবং প্রায়ই আবহাওয়ার রূপ বদলে যায় – এই রোদ এই বৃষ্টি। সাগর সমতল থেকে স্থানটির উচ্চতা ১৪,৫০০ ফিট।
ইশতিয়াক আহমেদ নাম এক সহিস বলেন, এই যাত্রাই তার জীবিকার উৎস। পাশাপাশি তীর্থযাত্রীদের সেবা করে এক ধরনের তৃপ্তিও অনুভব করেন তিনি।
সাউথ এশিয়ান মনিটরকে আহমেদ বলেন, টাকা রোজগারের অনেক উপায় আছে কিন্তু আমি পূজারিদের সেবা করি এবং তাদেরকে প্রবোধ লাভে সাহায্য করি।
তিনি আরো বলেন, এই তীর্থযাত্রার মধ্যে রাজনীতি টেনে আনা সরকারের ঠিক হবে না। শত শত বছর ধরে যেভাবে চলে আসছে সেভাবেই একে চলতে দেয়া উচিত।
এই তীর্থযাত্রা শুরু হয় ১৭৭০ সালের দিকে, যখন একজন রাখাল ওই গুহার বরফের অদ্ভুদ ধরনের আকারটি লক্ষ্য করেন। এরপর এক হিন্দু পুরোহিত ওই গুহা পরিদর্শন করে একে ভগবান শিবের পৌরাণিক গুহা হিসেবে ঘোষণা দেন। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত মাত্র কয়েক হাজার মানুষ এই তীর্থযাত্রায় যেতো। তাদের বেশিরভাগ ছিলেন সন্ন্যাসী ও আশপাশের এলাকার।
১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি তীর্থযাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। তবে ওই অঞ্চলে সশস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলে আবারো সংখ্যা কমে যায়। কিন্তু ২০১০ সালে তীর্থযাত্রী সংখ্যা আবার বেড়ে ছয় লাখে পৌছে এবং ঐতিহ্যগতভাবে এই যাত্রাকাল দুই-তিন সপ্তাহ হলেও তা বেড়ে প্রথমে ছয় সপ্তাহ ও আট সপ্তাহ দাঁড়ায়।
গত ১ জুলাই ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)’র নেতৃত্বাধিন ভারতের কেন্দ্রিয় সরকার জম্মু-কাশ্মির জাতীয় মহাসড়কে সাধারণ যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে। ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযোগের একমাত্র পথ এটি। রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মধ্যে রেলচলাচলও বন্ধ করে দেয় সরকার। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। আগস্টে তীর্থযাত্রা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।
এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শতাধিক বাঙ্কার তৈরি করা হয়, যেগুলোর বিরোধিতা করা স্থানীয় জনগণের জন্য রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিজের কাজের সমর্থনে সরকার চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতি হামলার কথা উল্লেখ করে। ওই হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় সেনা নিহত হয়। স্থানীয় এক হামলাকারী বিস্ফোরকভর্তি ভ্যান নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর গাড়িবহরে ঢুকে পড়ে। জাতীয় হাইওয়ে ধরে ওই বহর অগ্রসর হচ্ছিল।
২০১৭ সালের ১০ জুলাই, দক্ষিণ কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলায় অমরনাথ তীর্থযাত্রীদের একটি বাসকে টার্গেট করে জঙ্গিরা। এতে সাত জন নিহত ও ১৯ জন আহত হয়। সেটা ছিলো ২০০০ সালের পর সবচেয়ে বড় একই ধরনের হামলা। ২০০০ সালে এক গ্রেনেড হামলায় ২১ তীর্থযাত্রী নিহত হয়।
কাশ্মিরে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি হামলায় এ পর্যন্ত ৪৪ জন তীর্থযাত্রী নিহত হয়েছে।
কিন্তু নতুন নির্দেশ স্থানীয়দের ক্ষুব্ধ করেছে। একে উদ্ভট ও অবাস্তব হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।
তীর্থযাত্রীদের সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করা কাশ্মিরি মুসলামান আব্দুল মজিদ শেখ বলেন, ব্যাপক নিরাপত্তার আয়োজন তীর্থযাত্রীদের মধ্যেও আতংক তৈরি করেছে।
শেখ বলেন, ‘খোদার দোহাই, এটা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। একে নিরাপত্তার আয়োজনে পরিণত করো না। এর মাধ্যমে শত শত বছর ধরে মুসলিম ও হিন্দুরা বিশ্বের সামনে ধর্মীয় সংহতি ও সহিষ্ণুতার উদাহরণ পেশ করে আসছে। স্থানীয় মুসলমানদেরকে নিদারুণ কষ্ঠের মধ্যে ঠেলে না দিয়ে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের যাতে সুবিধা হয় সেই ব্যবস্থা করা উচিত ছিলো তাদের।’
No comments