২৪ ঘণ্টায় ৪৭৩ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে: বিপজ্জনক পরিস্থিতি, ঠাঁই নেই হাসপাতালে
ক্রমেই
ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। ধারণ করছে ভয়াবহ আকার। হাসপাতালে
বাড়ছে রোগী। জ্বর হলেই ডেঙ্গু আতঙ্ক নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন রোগীরা।
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ঠাঁই মিলছে না অনেক রোগীর। সরকারি হিসাবে
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৪৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরও বেশি।
পরিস্থিতি মহামারী আকার ধারণ করেছে বলে মনে করছেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এল ই ফাতমী।
তিনি মানবজমিনকে বলেন, রোগীরা আগের চেয়ে মারাত্মক চেহারা নিয়ে আসছেন। মধ্য জুনে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর প্রথম হলি ফ্যামিলিতে এই রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালু করেছিলেন অধ্যাপক ফাতমী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক শিশু বিভাগের প্রধান ডা. এল ই ফাতমী বলেন, এবার শুধু সংখ্যায়ই বেশি না। এবার প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমারজিক ফিভারে আক্রান্ত। আগে ছিল ক্লাসিকাল ডেঙ্গু রোগী। এদের পঞ্চাশ ভাগই শক সিন্ড্রোম। শক সিন্ড্রোম অর্থ হচ্ছে পালর্স (নাড়ির গতি) পাওয়া যায় না। এবার ডেঙ্গুর প্যাটার্নটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদের সবার প্ল্যাটিলেট কমে যাচ্ছে, সবাই শকে চলে যাচ্ছে।
আগে সামান্য ডেঙ্গু হয়েই ভালো হয়ে যেত। এবার সবারই রক্ত লাগছে। পেটে ও ফুসফুসে পানি চলে আসে। এই পরিস্থিতিতে জ্বর হলে গাফিলতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি জানান, তাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে যে রোগী আসছে তার ৮০ শতাংশই শিশু। এদিকে, ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. একেএম মোজাহার হোসেন বলেন, ডেঙ্গু রোগীতে সয়লাব।
কোন ওয়ার্ড বা কেবিন ফাঁকা নেই। সিট নাই। বাধ্য হয়ে করিডরে আলাদা সিট বসিয়ে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সিট না পেয়ে অনেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে যাচ্ছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাদের হাসপাতালে আসা ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু। হাসপাতালটিতে এ বছর ৬৪১ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬৬ জন। গতকালও ১৬ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বাকি ৫৭৫ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হাসপাতালের মূল ওয়ার্ডে বা কেবিনে সিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের করিডরে কোন রকম আলাদা সিটে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন নাহিদা সাবিরিন। বয়স ২৬ বছর। রোগীর স্বামী তারেক মাহমুদ বলেন, তার স্ত্রীর প্রচণ্ড জ্বর। ১০৩ পর্যন্ত ওঠেছে। ব্যাপক পাতলা পায়খানা হয়েছে। শরীর প্রচণ্ড ব্যথা। চার দিন আগে তার স্ত্রীর জ্বর আসে। তার পর থেকেই তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ছিলেন। উপায় না পেয়ে গতকাল সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হন। রোগীর এই অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, মশা নিধন হচ্ছে না। সেদিকে নজর নেই। ফলে সর্বত্র এখন ডেঙ্গু জ্বর আতঙ্ক। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে বর্ণনা করেছে। গত ২০শে জুলাই বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি এডউইন স্যালভাদর বনানীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের বাসায় গিয়ে বৈঠকের পর বলেন, ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। দুটি নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক কত মানুষ এ মুহূর্তে ডেঙ্গুতে ভুগছে, কত জন চিকিৎসা নিতে আসছে। সংখ্যা দুটি কিন্তু বাড়ছে। এটা উদ্বেগজনক।
দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ডেঙ্গু জ্বর প্রসঙ্গে বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে গেছে। আগে যেমন তীব্র জ্বরের সঙ্গে গায়ে রেশ ওঠা, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যেত, এবার সে সব লক্ষণ ছাড়াও অনেক রোগীই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে জ্বর হলে ঘরে বসে চিকিৎসা না নিয়ে যত দ্রত সম্ভব দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিংবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পরিসংখ্যান মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। চলতি মাসের ২৩শে জুলাই পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নারী-পুরুষ ও শিশু রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬৩৭ জন। এ বছর আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭৬৬ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে এপ্রিলে দু’জন, জুনে দু’জন ও জুলাই মাসে একজন মারা যান। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র বলছে মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত চারগুণ হবে। দু’জন চিকিৎসকও মারা গেছেন। বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা তিন থেকে চার লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
জ্বর না কমা বা অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকা, বমি হওয়া, পেটে তীব্র ব্যথা, রক্তক্ষরণ, মাথা ধরা, চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়া বা কম হওয়া, খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়া, নিদ্রাহীনতা ও আচরণের আকস্মিক পরিবর্তন ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ। অন্তঃসত্ত্বা, বৃদ্ধ, শিশু, সদ্যোজাত এবং ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, লিভার ও কিডনির রোগীরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসায় বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
পরিস্থিতি মহামারী আকার ধারণ করেছে বলে মনে করছেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এল ই ফাতমী।
তিনি মানবজমিনকে বলেন, রোগীরা আগের চেয়ে মারাত্মক চেহারা নিয়ে আসছেন। মধ্য জুনে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর প্রথম হলি ফ্যামিলিতে এই রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালু করেছিলেন অধ্যাপক ফাতমী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক শিশু বিভাগের প্রধান ডা. এল ই ফাতমী বলেন, এবার শুধু সংখ্যায়ই বেশি না। এবার প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমারজিক ফিভারে আক্রান্ত। আগে ছিল ক্লাসিকাল ডেঙ্গু রোগী। এদের পঞ্চাশ ভাগই শক সিন্ড্রোম। শক সিন্ড্রোম অর্থ হচ্ছে পালর্স (নাড়ির গতি) পাওয়া যায় না। এবার ডেঙ্গুর প্যাটার্নটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদের সবার প্ল্যাটিলেট কমে যাচ্ছে, সবাই শকে চলে যাচ্ছে।
আগে সামান্য ডেঙ্গু হয়েই ভালো হয়ে যেত। এবার সবারই রক্ত লাগছে। পেটে ও ফুসফুসে পানি চলে আসে। এই পরিস্থিতিতে জ্বর হলে গাফিলতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ। তিনি জানান, তাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে যে রোগী আসছে তার ৮০ শতাংশই শিশু। এদিকে, ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. একেএম মোজাহার হোসেন বলেন, ডেঙ্গু রোগীতে সয়লাব।
কোন ওয়ার্ড বা কেবিন ফাঁকা নেই। সিট নাই। বাধ্য হয়ে করিডরে আলাদা সিট বসিয়ে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সিট না পেয়ে অনেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে যাচ্ছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। তাদের হাসপাতালে আসা ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশই শিশু। হাসপাতালটিতে এ বছর ৬৪১ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬৬ জন। গতকালও ১৬ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বাকি ৫৭৫ জন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হাসপাতালের মূল ওয়ার্ডে বা কেবিনে সিট না পেয়ে বাধ্য হয়ে হাসপাতালের করিডরে কোন রকম আলাদা সিটে বসে চিকিৎসা নিচ্ছেন নাহিদা সাবিরিন। বয়স ২৬ বছর। রোগীর স্বামী তারেক মাহমুদ বলেন, তার স্ত্রীর প্রচণ্ড জ্বর। ১০৩ পর্যন্ত ওঠেছে। ব্যাপক পাতলা পায়খানা হয়েছে। শরীর প্রচণ্ড ব্যথা। চার দিন আগে তার স্ত্রীর জ্বর আসে। তার পর থেকেই তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ছিলেন। উপায় না পেয়ে গতকাল সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হন। রোগীর এই অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, মশা নিধন হচ্ছে না। সেদিকে নজর নেই। ফলে সর্বত্র এখন ডেঙ্গু জ্বর আতঙ্ক। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে বর্ণনা করেছে। গত ২০শে জুলাই বাংলাদেশে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি এডউইন স্যালভাদর বনানীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের বাসায় গিয়ে বৈঠকের পর বলেন, ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। দুটি নম্বর গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক কত মানুষ এ মুহূর্তে ডেঙ্গুতে ভুগছে, কত জন চিকিৎসা নিতে আসছে। সংখ্যা দুটি কিন্তু বাড়ছে। এটা উদ্বেগজনক।
দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ডেঙ্গু জ্বর প্রসঙ্গে বলেন, এ বছর ডেঙ্গুর ধরন পাল্টে গেছে। আগে যেমন তীব্র জ্বরের সঙ্গে গায়ে রেশ ওঠা, ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যেত, এবার সে সব লক্ষণ ছাড়াও অনেক রোগীই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে জ্বর হলে ঘরে বসে চিকিৎসা না নিয়ে যত দ্রত সম্ভব দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিংবা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পরিসংখ্যান মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। চলতি মাসের ২৩শে জুলাই পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নারী-পুরুষ ও শিশু রোগীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬৩৭ জন। এ বছর আক্রান্ত হয়েছে ৭ হাজার ৭৬৬ জন। এ বছর ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে এপ্রিলে দু’জন, জুনে দু’জন ও জুলাই মাসে একজন মারা যান। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র বলছে মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত চারগুণ হবে। দু’জন চিকিৎসকও মারা গেছেন। বেসরকারি হিসাবে আক্রান্তের সংখ্যা তিন থেকে চার লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
জ্বর না কমা বা অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকা, বমি হওয়া, পেটে তীব্র ব্যথা, রক্তক্ষরণ, মাথা ধরা, চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া, ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়া বা কম হওয়া, খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়া, নিদ্রাহীনতা ও আচরণের আকস্মিক পরিবর্তন ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ। অন্তঃসত্ত্বা, বৃদ্ধ, শিশু, সদ্যোজাত এবং ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, লিভার ও কিডনির রোগীরা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তাদের চিকিৎসায় বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
No comments