শ্রীলংকাকে বৌদ্ধ ধর্মরাষ্ট্রে পরিণত করার অলীক স্বপ্ন দেখছে বিবিএস
ক্যান্ডিতে গত
৭ জুলাই বোদু বালা সেনা (বিবিএস) আয়োজিত সমাবেশ কি ভিক্ষুদের প্রত্যাশা
মতো শ্রীলংকাকে একটি বৌদ্ধ ধর্মরাষ্ট্রে পরিণত করবে? গত কয়েক দিন ধরে
দ্বীপরাষ্ট্রটিতে এটাই আলোচনার প্রধান বিষয়।
বিবিএস শ্রীলংকাকে এমন এক বৌদ্ধ ধর্মরাষ্ট্র বানাতে চায় যখানে ভিক্ষুরাই নিজেদের ইচ্ছে মতো ইসলামিক সংস্কৃতিকে গড়ে দিতে পারবেন।
শ্রীলংকার কি এ ধরনের পুরোহিততন্ত্রের প্রয়োজন আছে? নাকি তা দেশের সাধারণ বৌদ্ধরা তা চায়? সাধারণ মুসলমানদের আচরণে যে ওহাবিবাদ ও সালাফিবাদের প্রভাব দেখা যাচ্ছে সেই সমস্যার সমাধান কি করতে পারবে এই পুরোহিততন্ত্র? ওই প্রভাবের ফল ২১ এপ্রিলের ইস্টার হামলা, যাতে শত শত মানুষ নিহত হয়।
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্তমান ধারণার কারণে পার্লামেন্ট কি রাজনীতকদের বদলে ভিক্ষুদের দখলে চলে যাবে? ইস্টার সানডেতে আইএস-স্টাইলের সন্ত্রাসীরা দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চেয়েছিলো। বৌদ্ধভিক্ষুদের বর্তমান প্রচেষ্টা কি শ্রীলংকাকে ‘আদিম বৌদ্ধ রাষ্ট্রে’ পরিণত করে আইএস-স্টাইলের চরমপন্থার মূলোৎপাটন করতে পারবে?
দুই সপ্তাহ পর বিশ্লেষকরা বলছেন যে সমবেত হওয়া ১০,০০০-এর বেশি ভিক্ষুর প্রত্যাশা পূরণ হবে না এবং আদিম বৌদ্ধ রাষ্ট্র বা বৌদ্ধ পুরোহিততন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বানও বেশিরভাগ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ জনগণকে অবিভূত করতে পারেনি।
যদিও বিবিএসের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু নানাসারা থেরো ওহাবিপন্থী ও সুফিপন্থী মুসলিমদের মধ্যে সীমারেখা টেনেছেন। তিনি ওহাবিজম তাড়াতে চান। কিন্তু বিবিএস আসলেই শ্রীলংকায় শান্তি ও সংহতি চায়, নাকি দেশটির একটি বৌদ্ধ সাম্প্রদায়িক পরিচিতি চায় তা নিয়ে গুরুতর সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৭ জুলাই বিবিএসের সমাবেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি হলো তারা একটি ‘সিনহলা সরকার’ চায়। যার মানে হলো তারা এই রাষ্ট্রে কোন তামিল, হিন্দু বা মুসলিম দেখতে চায় না। আরো মজার বিষয় হলো ২১ আগস্ট খৃস্টান সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হলেও ওই হামলাকে এখন বৌদ্ধদের উপর হামলা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত খৃস্টান এবং সাধরণভাবে খৃস্টান সমাজকেই ভুলে যাওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতে শ্রীলংকার কয়েকটি জেলা ভিক্ষুরা দখল করে নেবে কিনা, আর সেসব জায়গায় বসবাসরত সংখ্যালঘুদের বিবিএসের সম্মেলনের সময়ের মতো আতংকের মধ্যে থাকতে হবে কিনা সেসব প্রশ্নও উঠে এসেছে। বিবিএস দাবি করে তারা চেয়েছিলো যে মুসলমানরাও সমাবেশে যোগ দিক কারণ সব মুসলমান ওহাবিপন্থী নয় এবং তারা শুধু ওহাবীদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু ২০১৪, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মুসলিমদের টার্গেট করে যে দাঙ্গা বাঁধানো হয়েছে সেখানে ওহাবী ও সুফির মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। মুসলিমদের ব্যবসা বা সুন্দর বাড়ি দেখলেই সেগুলোর উপর হামলা করা হয়েছে।
বর্বর ইস্টার হামলার পর গুটি কয়েক জনের জন্য গোটা মুসলিম সমাজকে অন্যায়ভাবে দায়ি করা হয়। একজন সুফি নেতা বলেন যে তিনি যেহেতু দরজায় দাড়াতে পারছেন না এবং হামলাকারী বিশৃঙ্খল জনতাকে সুফি ও অ-সুফিদের মধ্যে পার্থক্য বুঝাতে পারছেনা তাই তিনি সপরিবারে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু দেশ ছেড়ে গেলেই কি সমাধান হবে? এ অবস্থায় কারা দেশ ছাড়বে? আইএস-স্টাইলের সন্ত্রাসের প্রতি সহানুভুতিশীলরা দেশ ছেড়ে যাবে না। আমার মতো যারা শান্তির মূল্য দেয়, যারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা না করে শান্তি মনে ব্যবসা করতে চায়, তারা যাবে।
গত চল্লিশ বছর ধরে দেশে ওহাবি ধরনের চরমপন্থী চিন্তাধারার যে বিস্তার ঘটেছে তার প্রতি নিবিড় মনযোগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে এলটিটিই’র সঙ্গে গৃহযুদ্ধ অবসানের পর গত দশ বছরে যেসব সিনহলা চরমপন্থী সংগঠনের বিস্তার ঘটেছে সেগুলোর উপরও নজর দিতে হবে।
২০১২ সালের দিকে বোদু বালা সেনা (বিবিএস), মহাসন বালাকায়া, রাভানা বালাকায়া এবং সিনহ লি মুভমেন্টের মতো চরমপন্থী অনেক সংগঠন আবির্ভূত হয়।
‘সিনহলিরা শ্রীলংকার মালিক’ বলে নানাসারা থেরে দাবি করার পরপরই এ কথা বলার জন্য তিনি তামিলদের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু তার এই সান্তনামূলক কথার পরও অনেক বিশ্লেষক বলছে যে বিবিএস ও অন্যরা যে ধরনের কট্টর বক্তব্য দিচ্ছে তা দেশের জন্য এক বিপজ্জনক প্রবণতার সূচনা হতে পারে।
প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমা পেয়ে নানাসারা থেরো জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার দুই মাসও হয়নি। আদালত অবমাননার দায়ে তার ছয় বছরের জেল হয়েছিলো। মুক্তি পাওয়ার পর তার সমাবেশ শুরু হয়েছে মাত্র।
বিবিএসের ক্যান্ডি সমাবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা শ্রীলংকার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে পারে অথবা এটা হতে পারে বৌদ্ধধর্ম ও শ্রীলংকা রক্ষার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নেয়া এক অহংভাবপূর্ণ ভিক্ষুর নিছক গালভরা বুলি আওড়ানোর জায়গা ছাড়া আর কিছু নয়।
যেটাই হোক না কেন, শ্রীলংকার ভবিষ্যতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সিনহলা বৌদ্ধ জনগণ, যারা সংখ্যাগুরু ও শান্তিকামী। ২১ এপ্রিল হামলার পর মে মাসে যে দাঙ্গা দেখা গিয়েছে তা যে আসলে পূর্ব পরিকল্পিত ছিলো এবং বৌদ্ধ জনগণের কোন স্বতস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া ছিলো না সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।
বিবিএস শ্রীলংকাকে এমন এক বৌদ্ধ ধর্মরাষ্ট্র বানাতে চায় যখানে ভিক্ষুরাই নিজেদের ইচ্ছে মতো ইসলামিক সংস্কৃতিকে গড়ে দিতে পারবেন।
শ্রীলংকার কি এ ধরনের পুরোহিততন্ত্রের প্রয়োজন আছে? নাকি তা দেশের সাধারণ বৌদ্ধরা তা চায়? সাধারণ মুসলমানদের আচরণে যে ওহাবিবাদ ও সালাফিবাদের প্রভাব দেখা যাচ্ছে সেই সমস্যার সমাধান কি করতে পারবে এই পুরোহিততন্ত্র? ওই প্রভাবের ফল ২১ এপ্রিলের ইস্টার হামলা, যাতে শত শত মানুষ নিহত হয়।
বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্তমান ধারণার কারণে পার্লামেন্ট কি রাজনীতকদের বদলে ভিক্ষুদের দখলে চলে যাবে? ইস্টার সানডেতে আইএস-স্টাইলের সন্ত্রাসীরা দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চেয়েছিলো। বৌদ্ধভিক্ষুদের বর্তমান প্রচেষ্টা কি শ্রীলংকাকে ‘আদিম বৌদ্ধ রাষ্ট্রে’ পরিণত করে আইএস-স্টাইলের চরমপন্থার মূলোৎপাটন করতে পারবে?
দুই সপ্তাহ পর বিশ্লেষকরা বলছেন যে সমবেত হওয়া ১০,০০০-এর বেশি ভিক্ষুর প্রত্যাশা পূরণ হবে না এবং আদিম বৌদ্ধ রাষ্ট্র বা বৌদ্ধ পুরোহিততন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বানও বেশিরভাগ ভিক্ষু ও বৌদ্ধ জনগণকে অবিভূত করতে পারেনি।
যদিও বিবিএসের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু নানাসারা থেরো ওহাবিপন্থী ও সুফিপন্থী মুসলিমদের মধ্যে সীমারেখা টেনেছেন। তিনি ওহাবিজম তাড়াতে চান। কিন্তু বিবিএস আসলেই শ্রীলংকায় শান্তি ও সংহতি চায়, নাকি দেশটির একটি বৌদ্ধ সাম্প্রদায়িক পরিচিতি চায় তা নিয়ে গুরুতর সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৭ জুলাই বিবিএসের সমাবেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি হলো তারা একটি ‘সিনহলা সরকার’ চায়। যার মানে হলো তারা এই রাষ্ট্রে কোন তামিল, হিন্দু বা মুসলিম দেখতে চায় না। আরো মজার বিষয় হলো ২১ আগস্ট খৃস্টান সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা হলেও ওই হামলাকে এখন বৌদ্ধদের উপর হামলা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত খৃস্টান এবং সাধরণভাবে খৃস্টান সমাজকেই ভুলে যাওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতে শ্রীলংকার কয়েকটি জেলা ভিক্ষুরা দখল করে নেবে কিনা, আর সেসব জায়গায় বসবাসরত সংখ্যালঘুদের বিবিএসের সম্মেলনের সময়ের মতো আতংকের মধ্যে থাকতে হবে কিনা সেসব প্রশ্নও উঠে এসেছে। বিবিএস দাবি করে তারা চেয়েছিলো যে মুসলমানরাও সমাবেশে যোগ দিক কারণ সব মুসলমান ওহাবিপন্থী নয় এবং তারা শুধু ওহাবীদের বিরুদ্ধে।
কিন্তু ২০১৪, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মুসলিমদের টার্গেট করে যে দাঙ্গা বাঁধানো হয়েছে সেখানে ওহাবী ও সুফির মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। মুসলিমদের ব্যবসা বা সুন্দর বাড়ি দেখলেই সেগুলোর উপর হামলা করা হয়েছে।
বর্বর ইস্টার হামলার পর গুটি কয়েক জনের জন্য গোটা মুসলিম সমাজকে অন্যায়ভাবে দায়ি করা হয়। একজন সুফি নেতা বলেন যে তিনি যেহেতু দরজায় দাড়াতে পারছেন না এবং হামলাকারী বিশৃঙ্খল জনতাকে সুফি ও অ-সুফিদের মধ্যে পার্থক্য বুঝাতে পারছেনা তাই তিনি সপরিবারে দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু দেশ ছেড়ে গেলেই কি সমাধান হবে? এ অবস্থায় কারা দেশ ছাড়বে? আইএস-স্টাইলের সন্ত্রাসের প্রতি সহানুভুতিশীলরা দেশ ছেড়ে যাবে না। আমার মতো যারা শান্তির মূল্য দেয়, যারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা না করে শান্তি মনে ব্যবসা করতে চায়, তারা যাবে।
গত চল্লিশ বছর ধরে দেশে ওহাবি ধরনের চরমপন্থী চিন্তাধারার যে বিস্তার ঘটেছে তার প্রতি নিবিড় মনযোগ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে এলটিটিই’র সঙ্গে গৃহযুদ্ধ অবসানের পর গত দশ বছরে যেসব সিনহলা চরমপন্থী সংগঠনের বিস্তার ঘটেছে সেগুলোর উপরও নজর দিতে হবে।
২০১২ সালের দিকে বোদু বালা সেনা (বিবিএস), মহাসন বালাকায়া, রাভানা বালাকায়া এবং সিনহ লি মুভমেন্টের মতো চরমপন্থী অনেক সংগঠন আবির্ভূত হয়।
‘সিনহলিরা শ্রীলংকার মালিক’ বলে নানাসারা থেরে দাবি করার পরপরই এ কথা বলার জন্য তিনি তামিলদের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু তার এই সান্তনামূলক কথার পরও অনেক বিশ্লেষক বলছে যে বিবিএস ও অন্যরা যে ধরনের কট্টর বক্তব্য দিচ্ছে তা দেশের জন্য এক বিপজ্জনক প্রবণতার সূচনা হতে পারে।
প্রেসিডেন্টের বিশেষ ক্ষমা পেয়ে নানাসারা থেরো জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার দুই মাসও হয়নি। আদালত অবমাননার দায়ে তার ছয় বছরের জেল হয়েছিলো। মুক্তি পাওয়ার পর তার সমাবেশ শুরু হয়েছে মাত্র।
বিবিএসের ক্যান্ডি সমাবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা শ্রীলংকার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করতে পারে অথবা এটা হতে পারে বৌদ্ধধর্ম ও শ্রীলংকা রক্ষার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজের কাঁধে তুলে নেয়া এক অহংভাবপূর্ণ ভিক্ষুর নিছক গালভরা বুলি আওড়ানোর জায়গা ছাড়া আর কিছু নয়।
যেটাই হোক না কেন, শ্রীলংকার ভবিষ্যতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সিনহলা বৌদ্ধ জনগণ, যারা সংখ্যাগুরু ও শান্তিকামী। ২১ এপ্রিল হামলার পর মে মাসে যে দাঙ্গা দেখা গিয়েছে তা যে আসলে পূর্ব পরিকল্পিত ছিলো এবং বৌদ্ধ জনগণের কোন স্বতস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া ছিলো না সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।
No comments