তেরেসার শেষ সুযোগ
চরম
এক নাটকীয়তা বৃটিশ রাজনীতিতে। ব্রেক্সিট ইস্যুতে নিজ দলের ভেতরে বিদ্রোহের
মুখে পড়েছেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। অন্যদিকে সরকারের হাতছাড়া হয়ে গেছে
পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ। এমন অবস্থায় বিস্ময়কর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তার উত্থাপিত ব্রেক্সিট চুক্তিকে সমর্থন দিয়ে
পার্লামেন্ট পাস করলে নির্ধারিত সময়ের আগে পদত্যাগ করবেন তিনি। তবে কবে
নাগাদ পদত্যাগ করবেন সে বিষয়ে কিছু বলেন নি।
বেশ কিছুদিন ধরেই তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছিল নিজের দল কনজারভেটিভের বিদ্রোহী ও বিরোধী লেবার দলের পক্ষ থেকে। বলা হচ্ছিল, তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থন দেবেন তারা।
এমন অবস্থায় বুধবার রাতে ব্রেক্সিটের বিকল্প আটটি প্রস্তাবের ওপর পার্লামেন্টে বিতর্কের পর ভোট হয়। কিন্তু কোনো প্রস্তাবের পক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পড়ে নি। ফলে ব্রেক্সিট ইস্যুতে তালগোল পাকিয়ে গেছে বৃটিশ রাজনীতি। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে উভয় সংকটে পড়েছেন বলে রিপোর্ট করেছে অনলাইন স্কাই নিউজ।
বিবিসি লিখেছে, বুধবার পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট ইস্যুতে এমপিরা যে আটটি বিকল্প প্রস্তাব এনেছিলেন, তার কোনোটিই নিম্ন-কক্ষের ভোটে স্পষ্ট সমর্থন আদায় করতে পারেনি। এর আগে কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। সেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনকে বের করে আনতে তিনি যে চুক্তি করেছেন তাতে পার্লামেন্ট যদি সমর্থন দেয়ার নিশ্চয়তা দেয় তাহলে নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাবেন। তার এ ঘোষণায় কনজারভেটিভ দলের যেসব সদস্য তার বিরোধিতা করেছিলেন এর আগে, তারা নমনীয় হয়েছেন। ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা তেরেসা মে’কে সমর্থন দিতে পারেন। তবে ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। তারা বলেছে, তেরেসা মে ব্রেক্সিট ইস্যুতে যে চুক্তি করেছেন অব্যাহতভাবে তার বিরোধিতা করে যাবে তারা।
ব্রেক্সিট ইস্যুতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে তেরেসা মে’র ওপর। তার এই চুক্তির বিকল্প হিসেবে এমপিরা বেশকিছু প্রস্তাব উত্থাপন করেন হাউস অব কমন্সে। সেখান থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ইউনিয়ন করে থাকা এবং যেকোনো চুক্তির বিষয়ে গণভোট সহ বাছাই করা আটটি প্রস্তাব কমন্সে অনুমোদন করেন স্পিকার বারকাউ। এ নিয়ে বিতর্ক হয়। তারপর ভোট হয়। এ ভোটে কোনো একটি প্রস্তাবও পাস হয় নি। ধারণা করা হয়েছিল, কীভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করতে হবে সে বিষয়ে একটি ঐকমত্য সৃষ্টি হবে এর মধ্যকার কোনো একটি প্রস্তাব থেকে। তাতে পার্লামেন্টে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান ঘটবে। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে।
এ অবস্থায় ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন বারক্লে বলেছেন, ওই ভোটের ফল মন্ত্রীদের দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্তিশালী করেছে। বোঝা গেছে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিই শ্রেষ্ঠ।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি কাস্টমস ইউনিয়নের প্রস্তাব, চুক্তি অনুমোদনের জন্য গণভোটের আহ্বান, নো-ডিল ব্রেক্সিটের প্রস্তাব থেকে শুরু করে ইইউ’র সঙ্গে শুল্ক কাঠামো রক্ষা করে ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রস্তাব সবই বাতিল হয়ে গেছে বুধবারের ভোটে। এ কারণে বৃটেনের একদিনের নাটকীয় পরিস্থিতির অবসান হয়েছে। বুধবারের এই ভোটে ব্রেক্সিট ইস্যুতে পার্লামেন্টের এতদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করলেও কোনো নির্দিষ্ট অবস্থানে পৌঁছাতে না পারার ব্যাপারটিকে সমালোচকরা ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ব্রেক্সিট গণভোটের রায় অনুযায়ী এ বছরের ২৯শে মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ব্রেক্সিট পরবর্তীকালে ইইউ’র সঙ্গে বৃটেনের সম্পর্ক কেমন হবে তেমন কিছু শর্ত নির্দিষ্ট করে একটি খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপির সমর্থন আদায় করতে পারেনি। ভয়াবহ ভোটের ব্যবধানে তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এরপর ১২ই মার্চ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এমপিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে এমন একটি চুক্তি পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেন। কিন্তু সেটাও পরাজিত হয়। এতে বড় রকমের অবমাননার শিকার হন তেরেসা মে।
এখন তিনি তৃতীয়বারের মতো ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টে উত্থাপন করতে চাইছেন। তবে তার আগে তিনি যথেষ্ট সংখ্যক এমপির সমর্থন নিশ্চিত করতে চান। এবার তিনি নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ায় কনজারভেটিভ পার্টির অনেক এমপি তার চুক্তির প্রতি সমর্থন দিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেলেও ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা এই চুক্তির বিরোধিতা করে যাবে।
তেরেসা মে নিজ দলের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমাদের দেশ এবং আমাদের দলের জন্য যা সঠিক তা করার উদ্দেশ্যে আমি আমার দায়িত্ব আগে থেকেই ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, তিনি জানেন যে কনজারভেটিভ দলের এমপিরা তাকে আর ব্রেক্সিটের পরবর্তী আলোচনার নেতৃত্বে দেখতে চান না এবং তিনিও সেই পথেই দাঁড়াবেন না বলে জানান। তবে তিনি কমিটির সভায় তার পদত্যাগের কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করেন নি।
যে আটটি বিকল্প প্রস্তাবে এমপিরা ভোট দিয়েছেন
ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বিকল্পগুলো নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছিলেন বৃটিশ আইন প্রণেতারা। এর আগে পার্লামেন্টে ১৬টি বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও স্পিকার আটটি প্রস্তাব বেছে নেন। বিতর্কের পর আইন প্রণেতাদের প্রত্যেকের সামনে আটটি বিকল্প প্রস্তাব সংক্রান্ত কাগজ তুলে দেয়া হয়। এরমধ্যে যে প্রস্তাবগুলোতে তাদের সম্মতি থাকবে, সেগুলোকে তারা ‘হ্যাঁ’ হিসেবে, আর যেগুলোতে তাদের আপত্তি থাকবে সেগুলোকে ‘না’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এই ভোটে মন্ত্রিপরিষদ বাদে কনজারভেটিভ দলের সব সদস্য ভোট দেয়ার অধিকার ভোগ করেছেন। অর্থাৎ তাদেরকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হয় নি। নিচে প্রস্তাবগুলো ও তার পক্ষে-বিপক্ষে কি পরিমাণ ভোট পড়েছে তা তুলে ধরা হলো-
কাস্টমস ইউনিয়ন- পক্ষে: ২৬৪, বিপক্ষে: ২৭২ ভোট।
নিশ্চিত গণভোট (কনফার্মেটরি রেফারেন্ডাম)- পক্ষে: ২৬৮, বিপক্ষে: ২৯৫ ভোট।
১২ই এপ্রিল চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন- পক্ষে: ১৬০, বিপক্ষে: ৪০০ ভোট।
একক বাজার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব- পক্ষে: ১৮৮, বিপক্ষে: ২৮৩ ভোট।
ইএফটিএ এবং ইইএ সদস্যপদ- পক্ষে: ৬৫, বিপক্ষে: ৩৭৭ ভোট।
চুক্তিহীনতা এড়াতে ৫০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা- পক্ষে: ১৮৪, বিপক্ষে: ২৯৩ ভোট।
লেবার পার্টির প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট পরিকল্পনা- পক্ষে: ২৩৭, বিপক্ষে: ৩০৭ ভোট।
মল্টহাউজ প্ল্যান বি- পক্ষে: ১৩৯, বিপক্ষে: ৪২২ ভোট।
এতে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পাওয়া প্রস্তাবটি হলো ক্রস পার্টি প্ল্যান, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন রক্ষণশীল দলের সাবেক চ্যান্সেলর কেন ক্লার্ক। যেখানে ব্রেক্সিটের পরও বৃটেনের সঙ্গে ইইউ-এর শুল্কমুক্ত বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে বলে বলা হয়েছে। এই চুক্তিতে সমর্থন দিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির ৫ জন মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড, স্টিফেন হ্যামন্ড, মার্গট জেমস, অ্যান মিলটন ও রোরি স্টিওয়ার্ট। ব্রেক্সিট সম্পন্ন হওয়ার পর কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্বের লড়াই হতে পারে বলে জানা গেছে। সেটা কবে নাগাদ হবে তা নির্ভর করবে রক্ষণশীল দলের ওপর। দলীয় সদস্যদের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন।
ক্ষমতাসীন দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি আইন-প্রণেতাদের বিরোধিতার কারণে বৃটিশ পার্লামেন্টে দুই দফায় প্রত্যাখ্যাত হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিট চুক্তি। এই চুক্তি নিয়ে নিজ দল রক্ষণশীল দলের সংসদ সদস্যদেরও বিরোধিতার মুখে পড়েন তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রী এবার তার চুক্তির পক্ষে নিজ দলের এমপিদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ ব্যাপারে তিনশ’ জনেরও বেশি কনজারভেটিভ দলের এমপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি এই কক্ষের প্রত্যেককে চুক্তিটির প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য বলছি, যাতে আমরা আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পূর্ণ করতে পারি, যেন বৃটিশ জনগণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা একটি মসৃণ ও সুষ্ঠু উপায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে পারি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ২৯শে মার্চের পরিবর্তে ১২ই এপ্রিল যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। তেরেসা মে’র চুক্তি অনুমোদন পেলে ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা ২২শে মে পর্যন্ত বাড়াতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে কোনো বিকল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলে ১২ই এপ্রিলেই কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট সম্পন্ন করতে হবে।
বেশ কিছুদিন ধরেই তার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছিল নিজের দল কনজারভেটিভের বিদ্রোহী ও বিরোধী লেবার দলের পক্ষ থেকে। বলা হচ্ছিল, তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলে ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থন দেবেন তারা।
এমন অবস্থায় বুধবার রাতে ব্রেক্সিটের বিকল্প আটটি প্রস্তাবের ওপর পার্লামেন্টে বিতর্কের পর ভোট হয়। কিন্তু কোনো প্রস্তাবের পক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পড়ে নি। ফলে ব্রেক্সিট ইস্যুতে তালগোল পাকিয়ে গেছে বৃটিশ রাজনীতি। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে উভয় সংকটে পড়েছেন বলে রিপোর্ট করেছে অনলাইন স্কাই নিউজ।
বিবিসি লিখেছে, বুধবার পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট ইস্যুতে এমপিরা যে আটটি বিকল্প প্রস্তাব এনেছিলেন, তার কোনোটিই নিম্ন-কক্ষের ভোটে স্পষ্ট সমর্থন আদায় করতে পারেনি। এর আগে কনজারভেটিভ পার্টির এমপিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। সেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনকে বের করে আনতে তিনি যে চুক্তি করেছেন তাতে পার্লামেন্ট যদি সমর্থন দেয়ার নিশ্চয়তা দেয় তাহলে নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাবেন। তার এ ঘোষণায় কনজারভেটিভ দলের যেসব সদস্য তার বিরোধিতা করেছিলেন এর আগে, তারা নমনীয় হয়েছেন। ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা তেরেসা মে’কে সমর্থন দিতে পারেন। তবে ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি তাদের সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। তারা বলেছে, তেরেসা মে ব্রেক্সিট ইস্যুতে যে চুক্তি করেছেন অব্যাহতভাবে তার বিরোধিতা করে যাবে তারা।
ব্রেক্সিট ইস্যুতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে তেরেসা মে’র ওপর। তার এই চুক্তির বিকল্প হিসেবে এমপিরা বেশকিছু প্রস্তাব উত্থাপন করেন হাউস অব কমন্সে। সেখান থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ইউনিয়ন করে থাকা এবং যেকোনো চুক্তির বিষয়ে গণভোট সহ বাছাই করা আটটি প্রস্তাব কমন্সে অনুমোদন করেন স্পিকার বারকাউ। এ নিয়ে বিতর্ক হয়। তারপর ভোট হয়। এ ভোটে কোনো একটি প্রস্তাবও পাস হয় নি। ধারণা করা হয়েছিল, কীভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করতে হবে সে বিষয়ে একটি ঐকমত্য সৃষ্টি হবে এর মধ্যকার কোনো একটি প্রস্তাব থেকে। তাতে পার্লামেন্টে সৃষ্ট অচলাবস্থার অবসান ঘটবে। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে।
এ অবস্থায় ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন বারক্লে বলেছেন, ওই ভোটের ফল মন্ত্রীদের দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্তিশালী করেছে। বোঝা গেছে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিই শ্রেষ্ঠ।
বিবিসি’র প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি কাস্টমস ইউনিয়নের প্রস্তাব, চুক্তি অনুমোদনের জন্য গণভোটের আহ্বান, নো-ডিল ব্রেক্সিটের প্রস্তাব থেকে শুরু করে ইইউ’র সঙ্গে শুল্ক কাঠামো রক্ষা করে ব্রেক্সিট চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রস্তাব সবই বাতিল হয়ে গেছে বুধবারের ভোটে। এ কারণে বৃটেনের একদিনের নাটকীয় পরিস্থিতির অবসান হয়েছে। বুধবারের এই ভোটে ব্রেক্সিট ইস্যুতে পার্লামেন্টের এতদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করলেও কোনো নির্দিষ্ট অবস্থানে পৌঁছাতে না পারার ব্যাপারটিকে সমালোচকরা ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ব্রেক্সিট গণভোটের রায় অনুযায়ী এ বছরের ২৯শে মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বেরিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ব্রেক্সিট পরবর্তীকালে ইইউ’র সঙ্গে বৃটেনের সম্পর্ক কেমন হবে তেমন কিছু শর্ত নির্দিষ্ট করে একটি খসড়া চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে তা সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপির সমর্থন আদায় করতে পারেনি। ভয়াবহ ভোটের ব্যবধানে তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এরপর ১২ই মার্চ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এমপিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে এমন একটি চুক্তি পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেন। কিন্তু সেটাও পরাজিত হয়। এতে বড় রকমের অবমাননার শিকার হন তেরেসা মে।
এখন তিনি তৃতীয়বারের মতো ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টে উত্থাপন করতে চাইছেন। তবে তার আগে তিনি যথেষ্ট সংখ্যক এমপির সমর্থন নিশ্চিত করতে চান। এবার তিনি নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ায় কনজারভেটিভ পার্টির অনেক এমপি তার চুক্তির প্রতি সমর্থন দিতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেলেও ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা এই চুক্তির বিরোধিতা করে যাবে।
তেরেসা মে নিজ দলের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমাদের দেশ এবং আমাদের দলের জন্য যা সঠিক তা করার উদ্দেশ্যে আমি আমার দায়িত্ব আগে থেকেই ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, তিনি জানেন যে কনজারভেটিভ দলের এমপিরা তাকে আর ব্রেক্সিটের পরবর্তী আলোচনার নেতৃত্বে দেখতে চান না এবং তিনিও সেই পথেই দাঁড়াবেন না বলে জানান। তবে তিনি কমিটির সভায় তার পদত্যাগের কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করেন নি।
যে আটটি বিকল্প প্রস্তাবে এমপিরা ভোট দিয়েছেন
ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের সম্ভাব্য বিকল্পগুলো নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছিলেন বৃটিশ আইন প্রণেতারা। এর আগে পার্লামেন্টে ১৬টি বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করা হলেও স্পিকার আটটি প্রস্তাব বেছে নেন। বিতর্কের পর আইন প্রণেতাদের প্রত্যেকের সামনে আটটি বিকল্প প্রস্তাব সংক্রান্ত কাগজ তুলে দেয়া হয়। এরমধ্যে যে প্রস্তাবগুলোতে তাদের সম্মতি থাকবে, সেগুলোকে তারা ‘হ্যাঁ’ হিসেবে, আর যেগুলোতে তাদের আপত্তি থাকবে সেগুলোকে ‘না’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এই ভোটে মন্ত্রিপরিষদ বাদে কনজারভেটিভ দলের সব সদস্য ভোট দেয়ার অধিকার ভোগ করেছেন। অর্থাৎ তাদেরকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হয় নি। নিচে প্রস্তাবগুলো ও তার পক্ষে-বিপক্ষে কি পরিমাণ ভোট পড়েছে তা তুলে ধরা হলো-
কাস্টমস ইউনিয়ন- পক্ষে: ২৬৪, বিপক্ষে: ২৭২ ভোট।
নিশ্চিত গণভোট (কনফার্মেটরি রেফারেন্ডাম)- পক্ষে: ২৬৮, বিপক্ষে: ২৯৫ ভোট।
১২ই এপ্রিল চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন- পক্ষে: ১৬০, বিপক্ষে: ৪০০ ভোট।
একক বাজার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব- পক্ষে: ১৮৮, বিপক্ষে: ২৮৩ ভোট।
ইএফটিএ এবং ইইএ সদস্যপদ- পক্ষে: ৬৫, বিপক্ষে: ৩৭৭ ভোট।
চুক্তিহীনতা এড়াতে ৫০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা- পক্ষে: ১৮৪, বিপক্ষে: ২৯৩ ভোট।
লেবার পার্টির প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট পরিকল্পনা- পক্ষে: ২৩৭, বিপক্ষে: ৩০৭ ভোট।
মল্টহাউজ প্ল্যান বি- পক্ষে: ১৩৯, বিপক্ষে: ৪২২ ভোট।
এতে সবচেয়ে বেশি সমর্থন পাওয়া প্রস্তাবটি হলো ক্রস পার্টি প্ল্যান, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন রক্ষণশীল দলের সাবেক চ্যান্সেলর কেন ক্লার্ক। যেখানে ব্রেক্সিটের পরও বৃটেনের সঙ্গে ইইউ-এর শুল্কমুক্ত বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে বলে বলা হয়েছে। এই চুক্তিতে সমর্থন দিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির ৫ জন মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড, স্টিফেন হ্যামন্ড, মার্গট জেমস, অ্যান মিলটন ও রোরি স্টিওয়ার্ট। ব্রেক্সিট সম্পন্ন হওয়ার পর কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্বের লড়াই হতে পারে বলে জানা গেছে। সেটা কবে নাগাদ হবে তা নির্ভর করবে রক্ষণশীল দলের ওপর। দলীয় সদস্যদের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন।
ক্ষমতাসীন দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি আইন-প্রণেতাদের বিরোধিতার কারণে বৃটিশ পার্লামেন্টে দুই দফায় প্রত্যাখ্যাত হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর ব্রেক্সিট চুক্তি। এই চুক্তি নিয়ে নিজ দল রক্ষণশীল দলের সংসদ সদস্যদেরও বিরোধিতার মুখে পড়েন তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রী এবার তার চুক্তির পক্ষে নিজ দলের এমপিদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ ব্যাপারে তিনশ’ জনেরও বেশি কনজারভেটিভ দলের এমপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমি এই কক্ষের প্রত্যেককে চুক্তিটির প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য বলছি, যাতে আমরা আমাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পূর্ণ করতে পারি, যেন বৃটিশ জনগণের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা একটি মসৃণ ও সুষ্ঠু উপায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে পারি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ২৯শে মার্চের পরিবর্তে ১২ই এপ্রিল যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। তেরেসা মে’র চুক্তি অনুমোদন পেলে ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা ২২শে মে পর্যন্ত বাড়াতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে কোনো বিকল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলে ১২ই এপ্রিলেই কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট সম্পন্ন করতে হবে।
No comments