রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে স্থানান্তর নিয়ে অনিশ্চয়তা
প্রত্যাবাসন
স্থগিতের পর এবার রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনাও ভেস্তে
যেতে বসেছে। রোহিঙ্গাদের ‘স্বেচ্ছায়’ যেকোনো স্থানে যেতে আগ্রহী হতে হবে!
এমন আন্তর্জাতিক শর্তই এ পথের জন্য কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মধ্য এপ্রিলে
গাদাগাদি করে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন আশ্রয় ক্যাম্পে বসবাস করা ১০ লাখের
বেশি রোহিঙ্গার মধ্য থেকে ৩০ হাজার পরিবারের প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ভাসানচরের নব প্রতিষ্ঠিত পুনর্বাসন কেন্দ্রে
স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার।
তার আগে মধ্য নভেম্বরে প্রায় ২২০০ রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত পাঠানোর (প্রত্যাবাসন) পরিকল্পনাও আটকে যায় তাদের স্বেচ্ছায় ফিরতে রাজি না হওয়ায়। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একের পর এক সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে, তখন গোটা বিষয়টি ঝুলে যাচ্ছে বলছেন পেশাদাররা। বলাবলি আছে, অনেকেই চায় রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের ক্যাম্পেই থাকুক। এতে দেশি-বিদেশি কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল হয়! মধ্য এপ্রিলে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে গতকাল সংশয় প্রকাশ করেন খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে বুধবার মন্ত্রী মোমেন বলেন, গাদাগাদি করে কক্সবাজারে জেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের সাময়িক সুবিধার জন্যই সরকার একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ক্যাম্প এলাকায় আসন্ন বর্র্ষায় নানা রকম অসুবিধা হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, সেখানে ভূমিধস হতে পারে। মানুষও মারা যেতে পারে। এসব বিবেচনায় সরকার ১ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে এবং ওই লক্ষ্যে সেখানে প্রয়োজনীয় ঘর-বাড়িও তৈরি করেছে। তাদের জন্য ভাসানচর প্রস্তুত জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন বলছে সেখানে গেলে না-কী তাদের অসুবিধা হবে। সবাই যদি মনে করে অসুবিধা হবে, তাহলে আমরা (সরকার) রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠাবো না। এ সময় অপর এক প্রশ্নের জবাবে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। কবে নাগাদ তাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে বা আদৌ এটি করা সম্ভব হবে কি-না? তা নিয়ে আগাগোড়ায় সংশয় প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা চিন্তা করেছিলাম এপ্রিলে পাঠাবো, কিন্তু এখন তারা (জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা) শর্ত দিলে সমস্যা তৈরি হবে। এ অবস্থায় কবে নাগাদ পাঠানো যাবে জানি না!
সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমসহ দেশীয় খবর প্রচারে বিদেশস্থ ৭৮টি মিশনে ব্লু-বক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল (আইপিটিভি ভার্সন) সম্প্রচারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সেখানে কানাডায় থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বিষয়েও জানতে চান সংবাদকর্মীরা। জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটি সরকারের অনেকদিনের প্রচেষ্টা, বর্তমানে তা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তিনি আশা করেন এ প্রক্রিয়ায় সরকার সফল হবে। এ সময় দণ্ডাদেশ নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরত আনার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি আছে কি-না? জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে মন্ত্রী জানান, বিদেশে পালিয়ে থাকা সব দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেই দেশে ফেরাতে চায় সরকার। আর এ কারণেই তারা তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। প্রশ্ন আসে কোনো দেশ যদি কোনো দণ্ডপ্রাপ্তকে ফেরত পাঠাতে রাজি না হয়, সেক্ষেত্রে ওই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো টানাপড়েন হবে কি-না? মন্ত্রী এ নিয়ে সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তবে তিনি এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে ‘সম্পর্কে টানাপড়েন’ এক বিষয়, ‘আইনি প্রক্রিয়া’ ভিন্ন বিষয়।
রোহিঙ্গাদের চাওয়া, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থান: গত ১৫ই নভেম্বর রোহিঙ্গাদের নির্ধারিত দলকে রাখাইনে পাঠানোর মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারাও আদি নিবাসে ফিরতে রাজি হয়নি। তারা কক্সবাজারে থাকাটাই নিরাপদ মনে করে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়শিবির।
আন্তর্জাতিক চাপ ও সরকারের নানা তৎপরতায় তাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা দেয়া হয়েছিল তা থেকে বাছাই করে ৪ হাজার ৬০০ জনকে ফেরত নেয়ার ব্যাপারে সম্মতি দেয় মিয়ানমার। প্রথম ধাপে ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত মতে, প্রতিদিন গড়ে দেড়শ’ জন করে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু প্রত্যাবাসন তালিকায় থাকা রোহিঙ্গা, তাদের স্ব-জাতি অন্য নারী-পুরুষদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। অবশ্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই এর বিরোধিতায় ছিল শরণার্থী বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা এবং সহায়তা সংস্থাগুলো। তাদের আশঙ্কা, মিয়ানমারে ফিরে গেলে আবারও নিরাপত্তা সংকটে পড়বে রোহিঙ্গারা। এদিকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চালুর পাশাপাশি এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনাও এগিয়ে চলে।
প্রত্যাবাসন অনিশ্চয়তার মুখে পড়ায় স্থানান্তর পরিকল্পনায় গতি বাড়ে। সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করেছিলেন, ভাসানচরে বিকল্প পুনর্বাসন কেন্দ্রে যেতে রাজি হবে রোহিঙ্গারা। তারা আশা করেছিলেন, ওই কেন্দ্রকে ঘিরে তাদের কৃষিকাজ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের যে সুযোগ সরকার সৃষ্টি করেছে তাতে হয়তো রোহিঙ্গারা আকৃষ্ট হবে। কিন্তু না, রোহিঙ্গাদের মধ্যে সেটির কোনো আকর্ষণ তৈরি করতে পেরেছে মর্মে এখনও কোনো রিপোর্ট মিলেনি। বরং তারা সেখানেও ফিরতে রাজি না হওয়ায় সংবাদও আসছে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। ফলে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি ঝুলে গেল বলা বাহুল্য হবে না- এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। উল্লেখ্য, গ্লোবাল ট্রেন্ডস ২০১৭, ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুসারে, বিশ্বে যত উদ্বাস্তু আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আশ্রয় পাওয়া দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদশে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বিষয়ে নিয়মিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আপডেট জানান জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনা। দু’-একদিনের মধ্যে তিনি ফের বাংলাদেশ সফরে আসছেন পরিস্থিতি সরজমিন দেখতে। ৩১শে মার্চ তার কক্সবাজার ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
জানুয়ারিতেই ভাসানচরে স্থানান্তর পরিকল্পনা স্থগিত করার অনুরোধ করেছিল জাতিসংঘ: এদিকে ভাসানচর এলাকা পরিদর্শনকারী মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংগি লি তাড়াহুড়ো করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর না করতে ঢাকার প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। জানুয়ারিতে তিনি বলেন, ভাসানচরে সাইক্লোন হলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে সেটা না দেখে এবং দ্বীপটির সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত যাচাই না করে কোন ভাবেই রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানো উচিত হবে না। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিজেদের সরাসরি সেখানে গিয়ে দ্বীপটি দেখার সুযোগ করে দেয়ার কথাও বলেছেন তিনি, যাতে তারা নিজেরা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে সেখানে তারা যেতে চায় কি-না। ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ মনে করে তাড়াহুড়ো করে একটি দ্বীপে রোহিঙ্গাদের পাঠানো হলে মিয়ানমারের কাছে ভুল বার্তা যাবে। মিয়ানমার এমন বার্তাও পেতে পারে যে বাংলাদেশেই রোহিঙ্গাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে, তাদের ফেরত না নিলেও চলবে।
তার আগে মধ্য নভেম্বরে প্রায় ২২০০ রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত পাঠানোর (প্রত্যাবাসন) পরিকল্পনাও আটকে যায় তাদের স্বেচ্ছায় ফিরতে রাজি না হওয়ায়। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে একের পর এক সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে, তখন গোটা বিষয়টি ঝুলে যাচ্ছে বলছেন পেশাদাররা। বলাবলি আছে, অনেকেই চায় রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের ক্যাম্পেই থাকুক। এতে দেশি-বিদেশি কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিল হয়! মধ্য এপ্রিলে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সরকারি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে গতকাল সংশয় প্রকাশ করেন খোদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে বুধবার মন্ত্রী মোমেন বলেন, গাদাগাদি করে কক্সবাজারে জেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের সাময়িক সুবিধার জন্যই সরকার একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ক্যাম্প এলাকায় আসন্ন বর্র্ষায় নানা রকম অসুবিধা হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, সেখানে ভূমিধস হতে পারে। মানুষও মারা যেতে পারে। এসব বিবেচনায় সরকার ১ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে এবং ওই লক্ষ্যে সেখানে প্রয়োজনীয় ঘর-বাড়িও তৈরি করেছে। তাদের জন্য ভাসানচর প্রস্তুত জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন বলছে সেখানে গেলে না-কী তাদের অসুবিধা হবে। সবাই যদি মনে করে অসুবিধা হবে, তাহলে আমরা (সরকার) রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠাবো না। এ সময় অপর এক প্রশ্নের জবাবে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। কবে নাগাদ তাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে বা আদৌ এটি করা সম্ভব হবে কি-না? তা নিয়ে আগাগোড়ায় সংশয় প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা চিন্তা করেছিলাম এপ্রিলে পাঠাবো, কিন্তু এখন তারা (জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা) শর্ত দিলে সমস্যা তৈরি হবে। এ অবস্থায় কবে নাগাদ পাঠানো যাবে জানি না!
সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমসহ দেশীয় খবর প্রচারে বিদেশস্থ ৭৮টি মিশনে ব্লু-বক্সের মাধ্যমে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল (আইপিটিভি ভার্সন) সম্প্রচারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সেখানে কানাডায় থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনি নূর চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বিষয়েও জানতে চান সংবাদকর্মীরা। জবাবে মন্ত্রী বলেন, এটি সরকারের অনেকদিনের প্রচেষ্টা, বর্তমানে তা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তিনি আশা করেন এ প্রক্রিয়ায় সরকার সফল হবে। এ সময় দণ্ডাদেশ নিয়ে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরত আনার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি আছে কি-না? জানতে চান সাংবাদিকরা। জবাবে মন্ত্রী জানান, বিদেশে পালিয়ে থাকা সব দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেই দেশে ফেরাতে চায় সরকার। আর এ কারণেই তারা তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। প্রশ্ন আসে কোনো দেশ যদি কোনো দণ্ডপ্রাপ্তকে ফেরত পাঠাতে রাজি না হয়, সেক্ষেত্রে ওই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো টানাপড়েন হবে কি-না? মন্ত্রী এ নিয়ে সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তবে তিনি এটা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে ‘সম্পর্কে টানাপড়েন’ এক বিষয়, ‘আইনি প্রক্রিয়া’ ভিন্ন বিষয়।
রোহিঙ্গাদের চাওয়া, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থান: গত ১৫ই নভেম্বর রোহিঙ্গাদের নির্ধারিত দলকে রাখাইনে পাঠানোর মাধ্যমে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারাও আদি নিবাসে ফিরতে রাজি হয়নি। তারা কক্সবাজারে থাকাটাই নিরাপদ মনে করে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এখন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩০টি ক্যাম্পে অবস্থান করছে যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়শিবির।
আন্তর্জাতিক চাপ ও সরকারের নানা তৎপরতায় তাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা দেয়া হয়েছিল তা থেকে বাছাই করে ৪ হাজার ৬০০ জনকে ফেরত নেয়ার ব্যাপারে সম্মতি দেয় মিয়ানমার। প্রথম ধাপে ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্ত মতে, প্রতিদিন গড়ে দেড়শ’ জন করে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু প্রত্যাবাসন তালিকায় থাকা রোহিঙ্গা, তাদের স্ব-জাতি অন্য নারী-পুরুষদের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে শেষ পর্যন্ত এটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। অবশ্য প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই এর বিরোধিতায় ছিল শরণার্থী বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা এবং সহায়তা সংস্থাগুলো। তাদের আশঙ্কা, মিয়ানমারে ফিরে গেলে আবারও নিরাপত্তা সংকটে পড়বে রোহিঙ্গারা। এদিকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চালুর পাশাপাশি এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনাও এগিয়ে চলে।
প্রত্যাবাসন অনিশ্চয়তার মুখে পড়ায় স্থানান্তর পরিকল্পনায় গতি বাড়ে। সরকারের নীতি নির্ধারকরা মনে করেছিলেন, ভাসানচরে বিকল্প পুনর্বাসন কেন্দ্রে যেতে রাজি হবে রোহিঙ্গারা। তারা আশা করেছিলেন, ওই কেন্দ্রকে ঘিরে তাদের কৃষিকাজ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের যে সুযোগ সরকার সৃষ্টি করেছে তাতে হয়তো রোহিঙ্গারা আকৃষ্ট হবে। কিন্তু না, রোহিঙ্গাদের মধ্যে সেটির কোনো আকর্ষণ তৈরি করতে পেরেছে মর্মে এখনও কোনো রিপোর্ট মিলেনি। বরং তারা সেখানেও ফিরতে রাজি না হওয়ায় সংবাদও আসছে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে। ফলে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি ঝুলে গেল বলা বাহুল্য হবে না- এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। উল্লেখ্য, গ্লোবাল ট্রেন্ডস ২০১৭, ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুসারে, বিশ্বে যত উদ্বাস্তু আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আশ্রয় পাওয়া দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদশে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের বিষয়ে নিয়মিত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আপডেট জানান জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত ক্রিস্টিন শ্রেনার বার্গেনা। দু’-একদিনের মধ্যে তিনি ফের বাংলাদেশ সফরে আসছেন পরিস্থিতি সরজমিন দেখতে। ৩১শে মার্চ তার কক্সবাজার ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
জানুয়ারিতেই ভাসানচরে স্থানান্তর পরিকল্পনা স্থগিত করার অনুরোধ করেছিল জাতিসংঘ: এদিকে ভাসানচর এলাকা পরিদর্শনকারী মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংগি লি তাড়াহুড়ো করে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর না করতে ঢাকার প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন। জানুয়ারিতে তিনি বলেন, ভাসানচরে সাইক্লোন হলে কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে সেটা না দেখে এবং দ্বীপটির সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত যাচাই না করে কোন ভাবেই রোহিঙ্গাদের সেখানে পাঠানো উচিত হবে না। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিজেদের সরাসরি সেখানে গিয়ে দ্বীপটি দেখার সুযোগ করে দেয়ার কথাও বলেছেন তিনি, যাতে তারা নিজেরা দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে সেখানে তারা যেতে চায় কি-না। ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ মনে করে তাড়াহুড়ো করে একটি দ্বীপে রোহিঙ্গাদের পাঠানো হলে মিয়ানমারের কাছে ভুল বার্তা যাবে। মিয়ানমার এমন বার্তাও পেতে পারে যে বাংলাদেশেই রোহিঙ্গাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে, তাদের ফেরত না নিলেও চলবে।
No comments