নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ৫ ঘণ্টা মঞ্জুর প্রচারণা বন্ধ: গণসংযোগে হামলা by রাশিদুল ইসলাম
নির্বাচনী
প্রচারে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি
সময় প্রচারণা বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন খুলনা সিটি নির্বাচনে বিএনপির
প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। পরে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে
ফের প্রচারে নামার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, যেকোনো
পরিস্থিতিতে নির্বাচনের মাঠ ছাড়বে না ২০ দলের নেতাকর্মীরা। তিনি অভিযোগ
করেছেন প্রচারণা বাধাগ্রস্ত করতে নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার করে আতঙ্ক তৈরি
করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে বলেও
অভিযোগ করেন তিনি। যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা
হয়েছে। এদিকে সন্ধ্যায় নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় নজরুল ইসলাম মঞ্জুর
কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ৫ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
আগের দিন রাতে নির্বাচনী প্রচারণা সংশ্লিষ্ট অন্তত ১৯ নেতাকর্মীকে
গ্রেপ্তারের অভিযোগ করে বিএনপি। এর প্রতিবাদে সকাল নয়টায় সংবাদ সম্মেলন করে
প্রচারণা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বেলা দুইটার পর তিনি আবার প্রচারণায়
নামেন।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা জেনেছি প্রধান নির্বাচন কমিশনার আগামী ৬ই মে খুলনায় আসবেন এবং বৈঠক করবেন। নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, দলীয় প্রশাসনকে বদলি এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি না দিলে আমরা প্রয়োজনবোধে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বৈঠক বয়কট করতে বাধ্য হবো। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় নগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে ২০দলীয় জোটের নির্বাচনী কমিটির প্রেস ব্রিফিংয়ে ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এসব কথা বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মঞ্জু বলেন, গত ২৪শে এপ্রিল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণার শুরু থেকে শাসক দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাবে বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসকদলীয় ক্যাডারদের হুমকি-ধামকি প্রদর্শন, পাঁচটি প্রচার মাইক ভাঙচুরের চেষ্টা ও প্রচার কাজে নিয়োজিত ইজিবাইক আটকে রাখা, মহিলা কর্মীদের ওপর হামলা, প্রার্থী এবং ঢাকা থেকে আগত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পথ সভাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। পথসভার জন্য নির্ধারিত স্থান যুবলীগ কর্মীরা দখলে নিয়ে মহড়া দিয়েছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থীর গণসংযোগে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে একাধিকবার।
তিনি বলেন, সরকারি দলের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তালুকদার আব্দুল খালেক নির্বাচনী আচরণবিধিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক-প্রকৌশলী-শিক্ষকদের সঙ্গে প্রকাশ্যে সভা করেছেন। তাদেরকে ভূরিভোজে আপ্যায়িত করেছেন এবং নৌকার পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ভোট গ্রহণের কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন যে সব শিক্ষকরা, তাদেরকেও বাধ্য করা হয়েছে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত আপত্তি দেয়ার পরও তাদের এই তৎপরতা বন্ধ হয়নি।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ধানের শীষের পক্ষে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে কাজ করা কর্মীদের ওপর চলছে গোয়েন্দা নজরদারি। বিভিন্ন মাধ্যমে নানা পন্থায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে কথা ছড়ানো হয়েছে যে, ৫ই মে’র পরে বিএনপির কোনো কর্মীকে আর প্রচারণা কাজে নামতে দেয়া হবে না। এরপর গত বুধবার দিবাগত রাত ৮টার পর থেকে মহানগরীর ছয় থানা এলাকায় গণগ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ। রাত সোয়া ২টার দিকে গ্রেপ্তার হন খুলনা মহানগর বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ। রাত দেড়টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানা পুুলিশ গ্রেপ্তার করে খুলনা মহানগর যুবদলের সভাপতি মাহবুব হাসান পিয়ারুকে। এর আগে ৩০শে এপ্রিল দিনদুপুরে ডিবি পুলিশ নগরীর ব্যস্ততম গল্লামারী এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায় বাগেরহাট জেলা যুবদল সভাপতি মেহবুবুল হক কিশোরকে। কিশোর ওই দিন খুলনায় এসে নগরীর রূপসা স্ট্যান্ড রোড এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে এলাকায় ফিরছিলেন। সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ওয়াহিদুজ্জামান ও ফয়সালকে।
এছাড়া বুধবার দিবাগত রাতভর সকল থানায় অভিযান চালানো হয়েছে। দৌলতপুর থানার ৬ নং ওয়ার্ড থেকে বিএনপি নেতা আজিজুল খন্দকার ও তার ছেলে আরিফ খন্দকার, তিন নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মিঠু, যুবদল নেতা ফারুক হোসেনসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
খালিশপুর থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সান্টু ও ১৩ নং ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভুট্টোকে গ্রেপ্তার করার পর তার হাইকোর্ট থেকে নেয়া জামিনের কাগজপত্র নিয়ে থানায় যাওয়া শুকুর ও সুমন নামের দুইজনকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। খুলনা সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২১ নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি আবু তালেব ও বিএনপি কর্মী গাউসকে। এছাড়া, ৩১ নং ওয়ার্ড বিএনপি কর্মী নাসিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১৮ নং ওয়ার্ড যুবদল কর্মী আপনকে।
এছাড়া খুলনা জেলার রূপসা থানার আইচগাতিতে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলালের ভাই জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোস্তফা-উল বারী লাভলু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা তুহিন, বিএনপি কর্মী আব্দুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমকে। এরপর তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।
এছাড়া বুধবার দিবাগত রাতে নগরী জুড়ে পুলিশ ও ডিবির অভিযান, নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, কর্মীকে বাড়ি না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্য নারী ও শিশুদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার এবং ধানের শীষের পক্ষে কাজ করলে খুব খারাপ পরিণতি হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
তিনি বলেন, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ হেলাল এমপি এবং মাহবুবুল আলম হানিফ দুইবার খুলনায় এসে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যা স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পরিবর্তে বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠ থেকে বিতাড়িত করার জন্য সর্বাত্মক তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী ওই দুই ব্যক্তির নির্দেশনাতেই পুলিশ প্রশাসন নগরী জুড়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা এবং অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিএনপি খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত আট দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় সমগ্র শহর জুড়ে ধানের শীষের পক্ষে জনতার জোয়ার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকা মানুষ আসন্ন নির্বাচনে তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রস্থল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বিএনপির প্রতি ভরসা রাখতে চায়। আওয়ামী লীগ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে ভয়ে ভীত হয়ে ষড়যন্ত্রের পথে পা বাড়ায়। তারা পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয়।
এ পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি অবিলম্বে পুুলিশ প্রশাসনের অভিযানের নামে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি অভিযান ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতাকর্মীকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। শাসকদলীয় প্রার্থীর প্রতিনিয়ত করে চলা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন যদি এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয় তবে খুলনা বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে। আগামী ৬ই মে প্রধান নির্বাচন কমিশনার খুলনায় আসবেন। তার আগেই এসব দাবি মেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে খুলনা বিএনপি সরকার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দাবি আদায়ের জন্য কালো পতাকা প্রদর্শন করবে। মনে রাখতে হবে, বিএনপি জনগণের দল এবং জনগণের স্বার্থেই আমাদের রাজনীতি। হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে আমরা খুলনা সিট করপোরেশন নির্বাচনের মাঠ কখনোই ছাড়বো না।
এ সময় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মশিউর রহমান, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দলের সভাপতি সাঈদ আহমেদ, এনপিপির সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিজেপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, এনডিপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন ইসা, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, এম গোলাম মোস্তফা, সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহ আলম, সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজাসহ স্থানীয় ও জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান আওয়ামী লীগের : নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত করার অভিযোগকে মিথ্যাচার বলে অভিযোগ করেছে খুলনা আওয়ামী লীগ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় নগরীর শহীদ হাদিস পার্কের সামনে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম কামাল এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের গণজোয়ার দেখে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মঞ্জু। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে কেসিসিতে বিএনপি সমর্থিত একাধিক কাউন্সিলর তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে নজরুল ইসলাম মঞ্জু নিশ্চিত পরাজয় জেনে ধারাবাহিকভাবে অভিযোগ ও মিথ্যাচার করছে। মহানগর ও জেলা বিএনপির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের নামে মামলা রয়েছে। তাই তাদেরকে প্রশাসন গ্রেপ্তার করেছে। নির্বাচনে পুলিশ প্রশাসনের কোনো কাজে আওয়ামী লীগ হস্তক্ষেপ করছে না। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনার রশিদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক, কেন্দ্রীয় উপ- কমিটির সদস্য অসিত বরণ বিশ্বাস, ঝালকাঠি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান হোসেন খান, গুটদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা সরোয়ার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা, আহত ৫
এদিকে ২০দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর গণসংযোগ চলাকালে হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুন্সি নাজমুল আলম নাজুর নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনে দেয়া অভিযোগে জানা গেছে। এতে মহানগর ছাত্রদল নেতা আল আমিন তালুকদার ও বিএনপি নেতা আব্দুস সামাদসহ ৫/৬ জন আহত হয়েছে। আহতদেরকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে নগরীর খালিশপুর থানাধীন ১৫ নং ওয়ার্ডের আলমনগর মোড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ওই এলাকায় দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ও খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে আলমনগর মোড় এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুন্সি নাজমুল আলম নাজুর নেতৃত্বে নৌকা প্রতীকের একটি মিছিল নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। এতে বিএনপি, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ৫/৬জন নেতাকর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাশেদুল ইসলামকে ঘটনাটি জানান। তিনি ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। আমাদের আগেই পুলিশ যাওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মুন্সি নাজমুল আলম নাজুর নেতৃত্বে আমাদের প্রার্থী গণসংযোগ বহরে অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমাদের ছাত্রদল নেতা আল আমিনসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। তিনি এ হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী বলেন, বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।
নজরুল ইসলাম মঞ্জু প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আমরা জেনেছি প্রধান নির্বাচন কমিশনার আগামী ৬ই মে খুলনায় আসবেন এবং বৈঠক করবেন। নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, দলীয় প্রশাসনকে বদলি এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি না দিলে আমরা প্রয়োজনবোধে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বৈঠক বয়কট করতে বাধ্য হবো। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় নগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে ২০দলীয় জোটের নির্বাচনী কমিটির প্রেস ব্রিফিংয়ে ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এসব কথা বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে মঞ্জু বলেন, গত ২৪শে এপ্রিল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিক প্রচারণার শুরু থেকে শাসক দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ভাবে বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসকদলীয় ক্যাডারদের হুমকি-ধামকি প্রদর্শন, পাঁচটি প্রচার মাইক ভাঙচুরের চেষ্টা ও প্রচার কাজে নিয়োজিত ইজিবাইক আটকে রাখা, মহিলা কর্মীদের ওপর হামলা, প্রার্থী এবং ঢাকা থেকে আগত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পথ সভাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। পথসভার জন্য নির্ধারিত স্থান যুবলীগ কর্মীরা দখলে নিয়ে মহড়া দিয়েছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থীর গণসংযোগে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে একাধিকবার।
তিনি বলেন, সরকারি দলের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী তালুকদার আব্দুল খালেক নির্বাচনী আচরণবিধিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক-প্রকৌশলী-শিক্ষকদের সঙ্গে প্রকাশ্যে সভা করেছেন। তাদেরকে ভূরিভোজে আপ্যায়িত করেছেন এবং নৌকার পক্ষে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ভোট গ্রহণের কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন যে সব শিক্ষকরা, তাদেরকেও বাধ্য করা হয়েছে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত আপত্তি দেয়ার পরও তাদের এই তৎপরতা বন্ধ হয়নি।
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ধানের শীষের পক্ষে নগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে কাজ করা কর্মীদের ওপর চলছে গোয়েন্দা নজরদারি। বিভিন্ন মাধ্যমে নানা পন্থায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে কথা ছড়ানো হয়েছে যে, ৫ই মে’র পরে বিএনপির কোনো কর্মীকে আর প্রচারণা কাজে নামতে দেয়া হবে না। এরপর গত বুধবার দিবাগত রাত ৮টার পর থেকে মহানগরীর ছয় থানা এলাকায় গণগ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ। রাত সোয়া ২টার দিকে গ্রেপ্তার হন খুলনা মহানগর বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদ। রাত দেড়টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানা পুুলিশ গ্রেপ্তার করে খুলনা মহানগর যুবদলের সভাপতি মাহবুব হাসান পিয়ারুকে। এর আগে ৩০শে এপ্রিল দিনদুপুরে ডিবি পুলিশ নগরীর ব্যস্ততম গল্লামারী এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায় বাগেরহাট জেলা যুবদল সভাপতি মেহবুবুল হক কিশোরকে। কিশোর ওই দিন খুলনায় এসে নগরীর রূপসা স্ট্যান্ড রোড এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে এলাকায় ফিরছিলেন। সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ওয়াহিদুজ্জামান ও ফয়সালকে।
এছাড়া বুধবার দিবাগত রাতভর সকল থানায় অভিযান চালানো হয়েছে। দৌলতপুর থানার ৬ নং ওয়ার্ড থেকে বিএনপি নেতা আজিজুল খন্দকার ও তার ছেলে আরিফ খন্দকার, তিন নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রকিবুল ইসলাম মিঠু, যুবদল নেতা ফারুক হোসেনসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
খালিশপুর থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সান্টু ও ১৩ নং ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশ। ৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ভুট্টোকে গ্রেপ্তার করার পর তার হাইকোর্ট থেকে নেয়া জামিনের কাগজপত্র নিয়ে থানায় যাওয়া শুকুর ও সুমন নামের দুইজনকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। খুলনা সদর থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ২১ নং ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি আবু তালেব ও বিএনপি কর্মী গাউসকে। এছাড়া, ৩১ নং ওয়ার্ড বিএনপি কর্মী নাসিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে ১৮ নং ওয়ার্ড যুবদল কর্মী আপনকে।
এছাড়া খুলনা জেলার রূপসা থানার আইচগাতিতে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলালের ভাই জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোস্তফা-উল বারী লাভলু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা তুহিন, বিএনপি কর্মী আব্দুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমকে। এরপর তাদেরকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।
এছাড়া বুধবার দিবাগত রাতে নগরী জুড়ে পুলিশ ও ডিবির অভিযান, নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, কর্মীকে বাড়ি না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্য নারী ও শিশুদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার এবং ধানের শীষের পক্ষে কাজ করলে খুব খারাপ পরিণতি হবে বলে হুমকি দেয়া হয়।
তিনি বলেন, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই শেখ হেলাল এমপি এবং মাহবুবুল আলম হানিফ দুইবার খুলনায় এসে প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যা স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রভাব ফেলেছে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির পরিবর্তে বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠ থেকে বিতাড়িত করার জন্য সর্বাত্মক তৎপরতায় লিপ্ত হয়েছে। সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী ওই দুই ব্যক্তির নির্দেশনাতেই পুলিশ প্রশাসন নগরী জুড়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা এবং অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিএনপি খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত আট দিনের নির্বাচনী প্রচারণায় সমগ্র শহর জুড়ে ধানের শীষের পক্ষে জনতার জোয়ার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকা মানুষ আসন্ন নির্বাচনে তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের কেন্দ্রস্থল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন বিএনপির প্রতি ভরসা রাখতে চায়। আওয়ামী লীগ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে ভয়ে ভীত হয়ে ষড়যন্ত্রের পথে পা বাড়ায়। তারা পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয়।
এ পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি অবিলম্বে পুুলিশ প্রশাসনের অভিযানের নামে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি অভিযান ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতাকর্মীকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। শাসকদলীয় প্রার্থীর প্রতিনিয়ত করে চলা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন যদি এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেয় তবে খুলনা বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে। আগামী ৬ই মে প্রধান নির্বাচন কমিশনার খুলনায় আসবেন। তার আগেই এসব দাবি মেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে খুলনা বিএনপি সরকার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দাবি আদায়ের জন্য কালো পতাকা প্রদর্শন করবে। মনে রাখতে হবে, বিএনপি জনগণের দল এবং জনগণের স্বার্থেই আমাদের রাজনীতি। হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে আমরা খুলনা সিট করপোরেশন নির্বাচনের মাঠ কখনোই ছাড়বো না।
এ সময় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মশিউর রহমান, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাম্যবাদী দলের সভাপতি সাঈদ আহমেদ, এনপিপির সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিজেপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, এনডিপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন ইসা, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন, এম গোলাম মোস্তফা, সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহ আলম, সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজাসহ স্থানীয় ও জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান আওয়ামী লীগের : নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত করার অভিযোগকে মিথ্যাচার বলে অভিযোগ করেছে খুলনা আওয়ামী লীগ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় নগরীর শহীদ হাদিস পার্কের সামনে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম কামাল এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের গণজোয়ার দেখে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মঞ্জু। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে কেসিসিতে বিএনপি সমর্থিত একাধিক কাউন্সিলর তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। যে কারণে নজরুল ইসলাম মঞ্জু নিশ্চিত পরাজয় জেনে ধারাবাহিকভাবে অভিযোগ ও মিথ্যাচার করছে। মহানগর ও জেলা বিএনপির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের নামে মামলা রয়েছে। তাই তাদেরকে প্রশাসন গ্রেপ্তার করেছে। নির্বাচনে পুলিশ প্রশাসনের কোনো কাজে আওয়ামী লীগ হস্তক্ষেপ করছে না। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনার রশিদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক, কেন্দ্রীয় উপ- কমিটির সদস্য অসিত বরণ বিশ্বাস, ঝালকাঠি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান হোসেন খান, গুটদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফা সরোয়ার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির মেয়র প্রার্থীর গণসংযোগে হামলা, আহত ৫
এদিকে ২০দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর গণসংযোগ চলাকালে হামলার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুন্সি নাজমুল আলম নাজুর নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনে দেয়া অভিযোগে জানা গেছে। এতে মহানগর ছাত্রদল নেতা আল আমিন তালুকদার ও বিএনপি নেতা আব্দুস সামাদসহ ৫/৬ জন আহত হয়েছে। আহতদেরকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে নগরীর খালিশপুর থানাধীন ১৫ নং ওয়ার্ডের আলমনগর মোড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ওই এলাকায় দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট ও খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নেতৃত্বে আলমনগর মোড় এলাকায় গণসংযোগ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মুন্সি নাজমুল আলম নাজুর নেতৃত্বে নৌকা প্রতীকের একটি মিছিল নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। এতে বিএনপি, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ৫/৬জন নেতাকর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট মো. রাশেদুল ইসলামকে ঘটনাটি জানান। তিনি ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। আমাদের আগেই পুলিশ যাওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মুন্সি নাজমুল আলম নাজুর নেতৃত্বে আমাদের প্রার্থী গণসংযোগ বহরে অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমাদের ছাত্রদল নেতা আল আমিনসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। তিনি এ হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
রিটার্নিং অফিসার মো. ইউনুচ আলী বলেন, বিএনপির প্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।
No comments