গাজীপুরে নীরব হয়রানি, সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা by কাফি কামাল
সিটি
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নীরব হয়রানি বাড়ছে গাজীপুরে। ভোটের মাঠের
দৃশ্যমান পরিবেশ শান্তিপূর্ণ হলেও আতঙ্ক বাড়ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। ধানের
শীষের সমর্থনে গণসংযোগের সময় কয়েকদিন ধরে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে
নানাভাবে। কখনও গণসংযোগস্থলে আগেই অবস্থান নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন
দলের নেতাকর্মীরা। কখনও বাধা দেয়া হচ্ছে প্রচারণায় হ্যান্ড মাইকের
ব্যবহারে। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা প্রচারণা চালানোর সময় আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর পরিচয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে এত লোকসমাগম কেন? দুয়েকজনকে ডেকে নিয়ে
কেবল ভোটের মাঠ নয়, আপাতত গাজীপুর থেকে দূরে থাকতে বলা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর পরিচয়ে। অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে ফোনে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে।
বুধবার দলের দুই কেন্দ্রীয় নেতা প্রচারণা চালানোর সময় তাদের সরাসরি বাধা
দিয়েছে ডিবি পুলিশ। কয়েকদিন ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় গিয়ে
খোঁজ-খবর নিচ্ছে পুলিশ। এছাড়া গাজীপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশ মোতায়েন
থাকছে সার্বক্ষণিক।
এদিকে বুধবার রাতে খুলনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার ও একটি গুঞ্জনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে গাজীপুরে। বৃহস্পতিবার দিনভর দুইটি গুঞ্জন ছিল এ সিটির সবখানে। প্রথমত, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যাদের মামলা রয়েছে তারা প্রচারণা চালালে গ্রেপ্তার করা হবে। দ্বিতীয়ত, বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে অভিযান চালাবে পুলিশ। এই দুই গুঞ্জনে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গাজীপুরে। বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কসহ একাধিক বিএনপি নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। বুধবার ও বৃহস্পতিবার গাজীপুর সদর, কাশিমপুর, বোর্ড বাজার, বাসন, চেরাগ আলী ও টঙ্গীর নানা বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপকালে তারা এ শঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দপাড়ার বাসিন্দা রবিউল ইসলামের মুখে কেবলই প্রশ্ন- ভোট কি সুষ্ঠু হবে? কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারব? প্রার্থীরা কি ভোটারদের ভোটবাক্স রক্ষা করতে পারবেন? ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোগড়ার ব্যবসায়ী আবদুল সালাম বলেন, বিএনপি প্রচারণার মাঠে তো সক্রিয়, কিন্তু ভোটের দিন কি কেন্দ্রে যেতে পারবে? কোনাবাড়ী এলাকার ভ্যানচালক ইজ্জত আলী বলেন, বিএনপি’র প্রার্থীকে ভোট দিয়ে কি হবে? জিতলে কি মেয়রগিরি করবে না জেলে যাবে? ভোগড়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক আলেয়া খাতুন বলেন, বিএনপি নেতারা কয়েকবার ভোট চাইছে। কিন্তু ভোট দিতে পারবো কিনা তা তো জানি না। ছয়দানার বাসিন্দা রফিক উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বয়সে তরুণ হলে কি হবে, খুবই প্রভাবশালী। লড়াই হবে সমানে সমানে।
টঙ্গীর ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মনির হোসেন বলেন, ১৫ই মে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারলে নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে দেবে। ভোটাররা কার পক্ষে এ নীরব বিপ্লব ঘটাবে- এমন প্রশ্ন করলে তিনি মুচকি হাসি দেন। পরক্ষণেই বলেন, যারা গতবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়রকে কারাগারে পাঠিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। গণসংযোগ করতে গিয়ে ভোটারদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার বিষয়টি ব্যাপক হারে উঠে আসার কথা জানিয়েছেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, ক্রীড়া সম্পাদক ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক সহ বিএনপি’র বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন- গাজীপুরে মানুষের মধ্যে একটিই প্রশ্ন- নির্বাচন কি সুষ্ঠু হবে? গাজীপুর সিটির ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী। তিনি বলেন, প্রকাশ্য পরিস্থিতি এখনও শান্তিপূর্ণ। কিন্তু গোপনে দলের সক্রিয় কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হচ্ছে। আমাদের প্রার্থীর পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। ঢালী বলেন, গাজীপুরে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তার চেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বড় প্রশ্ন- নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ফলাফল আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মেনে নেবেন কিনা। কারণ নির্বাচনে পরাজিত হলে তার প্রভাব কমবে, যা তার অস্তিত্বের ভিত নড়িয়ে দিতে পারে।
ওদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী হাসান সরকারের জনসভায় রোববার অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নগরীর নোয়াগাঁও এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে পথসভা চলাকালে একজন সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ নিয়ে হাজির হন বিএনপি’র ওই পথসভায়। পথসভায় বক্তব্য চলাকালে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট তা থামিয়ে নেতৃবৃন্দকে জানান, প্রার্থীর গাড়িতে ধানের শীষ প্রতীকের স্টিকার লাগানো থাকায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় বিএনপি’র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলনকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। পরে আলোচনার ভিত্তিতে জরিমানার অর্থ নির্ধারণ হয় ৫ হাজারে। এর আগে জেলা জামায়াতের আমীরসহ ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপিসহ বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের প্রতি পুলিশের চাপ সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনায় গাজীপুরের এসপি হারুনুর রশীদের প্রত্যাহার দাবি করেছে বিএনপি। গাজীপুরের পুলিশ এখন ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম- এমন অভিযোগ করে রোববার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিং থেকে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি নেতাকর্মীদের নীরব হয়রানিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর মিডিয়া সমন্বয়ক ডা. মাজহারুল আলম জানান, কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্থানীয় নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে এসব হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। তার উপর বুধবার রাতে খুলনা সিটি করপোরেশনে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পর গাজীপুরের সবখানে একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে- বৃহস্পতিবার রাতে এখানে বিএনপি নেতাদের বাসাবাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ। ফলে গাজীপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এখনও সাহসিকতার সঙ্গে নেতাকর্মীরা প্রচারণার মাঠে সক্রিয় আছেন। গাজীপুর জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক অবস্থান করে সিটি করপোরেশনের উত্তরাংশে দলীয় প্রার্থীর গণসংযোগ সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ। অন্যদিকে টঙ্গী বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান করে সিটি করপোরেশনের দক্ষিণাংশে প্রার্থীর গণসংযোগ সমন্বয় করছেন আরেকজন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল। নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি ও আতঙ্কের ব্যাপারে আবদুস সালাম আজাদ বলেন, গাজীপুরে দৃশ্যত নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ।
তবে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নানা ধরনের অভিযোগ আসছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে পুলিশি অভিযানের। কিন্তু যত প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতিই আসুক, নির্বাচনের মাঠ ছাড়বে না বিএনপি নেতাকর্মীরা। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন জানান, নীরব চাপ তৈরি ও হয়রানি করা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। প্রশাসনের তরফেই এ চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু কোথাও ডকুমেন্ট রাখছে না। কোন জায়গায় হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করতে বাধা দেয়া হচ্ছে, কোথাও প্রচারণায় বেশি লোকের সমাগম কেন জানতে চাওয়া হচ্ছে। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী তাদের বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করা হচ্ছে। নির্বাচনের পর দেখে নেয়ার হুমকি আসছে। সবমিলিয়ে যতভাবে পেনিক সৃষ্টি করা যায়, নীরবে তাই করা হচ্ছে। মিলন বলেন, গাজীপুরে ধানের শীষের প্রচারণায় সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত এবং ব্যাপক সাড়া নৌকার প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। তাই তারা এখন ভোটের প্রচারণায় ঢিল দিয়েছে, ভোট ছাড়া অন্য কিছু করা যায় কিনা সে পরিকল্পনাই করছে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, বুধবার গাজীপুরের ২৯ নং ওয়ার্ডে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার সময় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক ও যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ারকে বাধা দেয় ডিবি পুলিশ। বুধবার কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর এলাকায় বিএনপি নেতাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে পুলিশ। রিজভী বলেন, বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসক দলীয় ক্যাডারদের হুমকি-ধমকি প্রদর্শন, প্রচার মাইক ভাঙচুর চেষ্টা ও প্রচার কাজে নিয়োজিত ইজিবাইক আটকে রাখা, মহিলা কর্মীদের ওপর হামলা এবং ঢাকা থেকে আগত বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের পথসভাকে বাধা দেয়া হচ্ছে। পথসভার জন্য নির্ধারিত স্থান দখলে নিয়ে মহড়া দিচ্ছে যুবলীগ কর্মীরা। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, বিএনপি এখন চূড়ান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার আতঙ্কের মধ্যেও দলের নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ সাহসিকতার সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে থাকবেন।
এদিকে বুধবার রাতে খুলনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার ও একটি গুঞ্জনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে গাজীপুরে। বৃহস্পতিবার দিনভর দুইটি গুঞ্জন ছিল এ সিটির সবখানে। প্রথমত, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যাদের মামলা রয়েছে তারা প্রচারণা চালালে গ্রেপ্তার করা হবে। দ্বিতীয়ত, বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে অভিযান চালাবে পুলিশ। এই দুই গুঞ্জনে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গাজীপুরে। বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কসহ একাধিক বিএনপি নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। বুধবার ও বৃহস্পতিবার গাজীপুর সদর, কাশিমপুর, বোর্ড বাজার, বাসন, চেরাগ আলী ও টঙ্গীর নানা বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপকালে তারা এ শঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন। ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দপাড়ার বাসিন্দা রবিউল ইসলামের মুখে কেবলই প্রশ্ন- ভোট কি সুষ্ঠু হবে? কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারব? প্রার্থীরা কি ভোটারদের ভোটবাক্স রক্ষা করতে পারবেন? ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোগড়ার ব্যবসায়ী আবদুল সালাম বলেন, বিএনপি প্রচারণার মাঠে তো সক্রিয়, কিন্তু ভোটের দিন কি কেন্দ্রে যেতে পারবে? কোনাবাড়ী এলাকার ভ্যানচালক ইজ্জত আলী বলেন, বিএনপি’র প্রার্থীকে ভোট দিয়ে কি হবে? জিতলে কি মেয়রগিরি করবে না জেলে যাবে? ভোগড়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক আলেয়া খাতুন বলেন, বিএনপি নেতারা কয়েকবার ভোট চাইছে। কিন্তু ভোট দিতে পারবো কিনা তা তো জানি না। ছয়দানার বাসিন্দা রফিক উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বয়সে তরুণ হলে কি হবে, খুবই প্রভাবশালী। লড়াই হবে সমানে সমানে।
টঙ্গীর ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মনির হোসেন বলেন, ১৫ই মে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারলে নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে দেবে। ভোটাররা কার পক্ষে এ নীরব বিপ্লব ঘটাবে- এমন প্রশ্ন করলে তিনি মুচকি হাসি দেন। পরক্ষণেই বলেন, যারা গতবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়রকে কারাগারে পাঠিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। গণসংযোগ করতে গিয়ে ভোটারদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার বিষয়টি ব্যাপক হারে উঠে আসার কথা জানিয়েছেন বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, ক্রীড়া সম্পাদক ও জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক সহ বিএনপি’র বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন- গাজীপুরে মানুষের মধ্যে একটিই প্রশ্ন- নির্বাচন কি সুষ্ঠু হবে? গাজীপুর সিটির ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী। তিনি বলেন, প্রকাশ্য পরিস্থিতি এখনও শান্তিপূর্ণ। কিন্তু গোপনে দলের সক্রিয় কর্মীদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হচ্ছে। আমাদের প্রার্থীর পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। ঢালী বলেন, গাজীপুরে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা তার চেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বড় প্রশ্ন- নির্বাচন সুষ্ঠু হলে ফলাফল আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মেনে নেবেন কিনা। কারণ নির্বাচনে পরাজিত হলে তার প্রভাব কমবে, যা তার অস্তিত্বের ভিত নড়িয়ে দিতে পারে।
ওদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী হাসান সরকারের জনসভায় রোববার অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নগরীর নোয়াগাঁও এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে পথসভা চলাকালে একজন সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ নিয়ে হাজির হন বিএনপি’র ওই পথসভায়। পথসভায় বক্তব্য চলাকালে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট তা থামিয়ে নেতৃবৃন্দকে জানান, প্রার্থীর গাড়িতে ধানের শীষ প্রতীকের স্টিকার লাগানো থাকায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় বিএনপি’র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলনকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। পরে আলোচনার ভিত্তিতে জরিমানার অর্থ নির্ধারণ হয় ৫ হাজারে। এর আগে জেলা জামায়াতের আমীরসহ ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপিসহ বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের প্রতি পুলিশের চাপ সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনায় গাজীপুরের এসপি হারুনুর রশীদের প্রত্যাহার দাবি করেছে বিএনপি। গাজীপুরের পুলিশ এখন ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম- এমন অভিযোগ করে রোববার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিং থেকে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি নেতাকর্মীদের নীরব হয়রানিসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীর মিডিয়া সমন্বয়ক ডা. মাজহারুল আলম জানান, কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে স্থানীয় নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে এসব হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। তার উপর বুধবার রাতে খুলনা সিটি করপোরেশনে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পর গাজীপুরের সবখানে একটি বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে- বৃহস্পতিবার রাতে এখানে বিএনপি নেতাদের বাসাবাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ। ফলে গাজীপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এখনও সাহসিকতার সঙ্গে নেতাকর্মীরা প্রচারণার মাঠে সক্রিয় আছেন। গাজীপুর জেলা বিএনপি’র কার্যালয়ে সার্বক্ষণিক অবস্থান করে সিটি করপোরেশনের উত্তরাংশে দলীয় প্রার্থীর গণসংযোগ সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ। অন্যদিকে টঙ্গী বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থান করে সিটি করপোরেশনের দক্ষিণাংশে প্রার্থীর গণসংযোগ সমন্বয় করছেন আরেকজন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল। নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের হুমকি-ধমকি ও আতঙ্কের ব্যাপারে আবদুস সালাম আজাদ বলেন, গাজীপুরে দৃশ্যত নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ।
তবে কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নানা ধরনের অভিযোগ আসছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে পুলিশি অভিযানের। কিন্তু যত প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতিই আসুক, নির্বাচনের মাঠ ছাড়বে না বিএনপি নেতাকর্মীরা। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন জানান, নীরব চাপ তৈরি ও হয়রানি করা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। প্রশাসনের তরফেই এ চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু কোথাও ডকুমেন্ট রাখছে না। কোন জায়গায় হ্যান্ড মাইক ব্যবহার করতে বাধা দেয়া হচ্ছে, কোথাও প্রচারণায় বেশি লোকের সমাগম কেন জানতে চাওয়া হচ্ছে। দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী তাদের বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন করা হচ্ছে। নির্বাচনের পর দেখে নেয়ার হুমকি আসছে। সবমিলিয়ে যতভাবে পেনিক সৃষ্টি করা যায়, নীরবে তাই করা হচ্ছে। মিলন বলেন, গাজীপুরে ধানের শীষের প্রচারণায় সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত এবং ব্যাপক সাড়া নৌকার প্রার্থীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের মনোবল ভেঙে দিয়েছে। তাই তারা এখন ভোটের প্রচারণায় ঢিল দিয়েছে, ভোট ছাড়া অন্য কিছু করা যায় কিনা সে পরিকল্পনাই করছে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, বুধবার গাজীপুরের ২৯ নং ওয়ার্ডে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার সময় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক ও যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ারকে বাধা দেয় ডিবি পুলিশ। বুধবার কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর এলাকায় বিএনপি নেতাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে পুলিশ। রিজভী বলেন, বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে শাসক দলীয় ক্যাডারদের হুমকি-ধমকি প্রদর্শন, প্রচার মাইক ভাঙচুর চেষ্টা ও প্রচার কাজে নিয়োজিত ইজিবাইক আটকে রাখা, মহিলা কর্মীদের ওপর হামলা এবং ঢাকা থেকে আগত বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের পথসভাকে বাধা দেয়া হচ্ছে। পথসভার জন্য নির্ধারিত স্থান দখলে নিয়ে মহড়া দিচ্ছে যুবলীগ কর্মীরা। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, বিএনপি এখন চূড়ান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার আতঙ্কের মধ্যেও দলের নেতাকর্মীরা সর্বোচ্চ সাহসিকতার সঙ্গে নির্বাচনী লড়াইয়ে মাঠে থাকবেন।
No comments