কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ ছেড়ে তৃণমূলে বিএনপির ৩০ নেতা
বিএনপির
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রের
গুরুত্বপূর্ণ পদ ছেড়ে দিয়ে জেলায় ছুটছেন নেতারা। তৃণমূলে নিজেদের প্রভাব ও
আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে
জানা গেছে। তবে ‘বড় পদের এসব নেতা’র কেন্দ্র ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার
সিদ্ধান্তকে ভালোভাবে নেয়নি দলটির হাইকমান্ড। এ তালিকায় আছেন যুগ্ম মহাসচিব
খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু, উপদেষ্টা আবুল
খায়ের ভুঁইয়া, শাহজাদা মিয়াসহ অন্তত ৩০ নেতা। গঠনতন্ত্রে এক নেতার এক পদ
কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় দলটির হাইকমান্ড। কিন্তু পদ ছাড়তে
বারবার টালবাহানা শুরু করেন নেতারা। সর্বশেষ ৫ এপ্রিল এক পদ রেখে বাকি পদ
ছেড়ে দিতে ১৯ নেতাকে চিঠি দেয়া হয়। এর মধ্যে বুধবার কয়েকজন বাদে সবাই
নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন দলের হাইকমান্ডকে। দলের চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের এ নিয়ে কথাও হয়েছে। একাদিক পদে
থাকা নেতাদের এক পদে রেখে অন্যটি শূন্য করার নীতিগত সিদ্ধান্তও রয়েছে বলে
জানা গেছে। কেন্দ্রের সর্বশেষ আলটিমেটামের পর বুধবার পর্যন্ত বেশ কয়েকজন
নেতা একাধিক পদ ছেড়ে দিয়ে চিঠির জবাব দেন। বুধবার দু-একজন বাদে এসব নেতার
প্রায় সবাই কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ পদত্যাগ করে
দলের মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন। কেউ কেউ মুখে নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
আবার কেউ কেউ বিএনপির চেয়ারপারসনের ওপর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। গুটিকয়েক নেতা
নিজের কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বলেন, ‘একাধিক পদে কয়েকজন নেতা ছিলেন। তাদের চিঠি দেয়া হয়েছিল। তবে কেউ
স্বেচ্ছায় একাধিক পদ না ছাড়লে তাদের এক পদ নির্ধারণ করে দেয়া হবে।’ এ
প্রসঙ্গে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘একাধিক
পদে থাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের চিঠি পাঠানো হয়েছিল। বুধবার ছিল শেষদিন। আমরা
চিঠির উত্তর পেয়েছি। তবে কতজনের পেয়েছি, তা এখনই বলা যাবে না।’ কেন্দ্রীয়
কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন
চৌধুরী বুধবার কেন্দ্রে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
তিনি পটুয়াখালী জেলার
সভাপতিও। তিনি চিঠিতে ওই জেলার সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
একই অবস্থা যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ারের। তিনিও বরিশাল মহানগরের
সামগ্রিক বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বিএনপির চেয়ারপারসনকে চিঠি দিয়েছেন। একই
সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্বও দিয়েছেন বিএনপির প্রধানকে। উভয় চিঠিতেই
কোনো পদ ছাড়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি। খায়রুল কবির খোকন রাতে জানান, আগামী
জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তিনি দুই পদে থাকার বিষয়টি হাইকমান্ডকে
জানিয়েছেন। কেন্দ্রের পদ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের
ভুঁইয়া বলেন, ‘দলের গঠনতন্ত্রকে সম্মান জানিয়ে এক পদে থাকার সিদ্ধান্ত
নিয়েছি। তাই চিঠি দিয়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পদ থেকে জেলার পদে থাকার জন্য
মহাসচিবকে জানিয়ে দিয়েছি।’ জানা যায়, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও জেলা
বা মহানগরের ৬১ নেতা একাধিক পদধারী ছিলেন। একাধিক পদ ছাড়তে সংশ্লিষ্ট
নেতাদের দুই দফা সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে শুরুতেই দলের মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘মহাসচিব’ পদ রেখে একাধিক পদ ছেড়ে দেন। একইভাবে
দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানও এক পদ রেখে বাকি পদ ছেড়ে দেন। বুধবার
পর্যন্ত দু-একজন বাদে সবাই নিজেদের মতামত কেন্দ্রকে জানিয়েছেন। তৃণমূলে
নিজেদের বলয় রক্ষায় দলের স্বার্থের বাইরে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ ছেড়ে জেলার
পদ আঁকড়ে ধরছেন।
No comments