সব দৃষ্টি তিস্তা ও প্রতিরক্ষায়
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে কাল দিল্লি যাচ্ছেন। কয়েক দফা
পেছানোর পর প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বিভিন্ন ইস্যুতে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা
স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার কথা রয়েছে; তবে সবার দৃষ্টি তিস্তার পানি বণ্টনে
অগ্রগতি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার দিকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ
আলী তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিকে খুব একটা গুরুত্ব দিতে না চাইলেও রাজনৈতিক
মহল ও নাগরিক সমাজ এই ইস্যুর অগ্রগতির ওপরেই প্রধানমন্ত্রীর সফরের
সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন করতে চাইছে। অন্য দিকে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশের সাথে
প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রূপরেখা নিয়ে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন
তারা। এ দিকে, অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
সাথে দেখা করতে সম্মত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে আমন্ত্রণ
জানিয়ে প্রণব মুখার্জির পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লিতে একজন প্রতিনিধি
পাঠাতে চেয়েছিলেন মমতা। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সরাসরি টেলিফোন করে নৈশভোজে
উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানালে মমতা তা প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি। মমতা
ব্যানার্জি কেবল রাষ্ট্রপতির নৈশভোজই নয়, দিল্লিতে দুই দেশের
প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতায়ও অংশ নেবেন।
শনিবার দিল্লিতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশ ও ভারতের
প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে ৩৩টি
চুক্তি ও এমওইউ সই হবে। এরপর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই প্রধানমন্ত্রী
খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রীবাহী বাস ও রেল চলাচল, বিরল-রাধিকাপুর রুটে
মালবাহী রেল চলাচল এবং ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে
অতিরিক্ত ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া
তারা যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর হিন্দি
সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করবেন। এসব আনুষ্ঠানিকতায় মমতাও অংশ নেবেন। আর রাতে
রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনার সম্মানে সে দেশের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির
দেয়া নৈশভোজে উপস্থিত থাকবেন মমতা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আশা
করছেন, বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির উপস্থিতিতে হাসিনা-মমতার বৈঠকে
দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যু সুরাহার একটি পথ বের
হবে।
পররাষ্ট্রসচিব দিল্লিতে :
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই, গঙ্গা ব্যারাজ
নির্মাণে ভারতের সহযোগিতা এবং অভিন্ন নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি
ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের অগ্রাধিকারে রয়েছে। এসব নিয়ে ভারতের ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার জন্য পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক প্রধানমন্ত্রীর
সফরের দুই দিন আগেই গতকাল দিল্লি পৌঁছেছেন। দিল্লিতে তিনি ভারতের ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করবেন। উদ্দেশ্য, প্রধানমন্ত্রীর সফর থেকে যতটা
সম্ভব ইতিবাচক ফল বের করে নিয়ে আসা। ২০১৫ সালের জুনে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা
সফরকে ভারতের জন্য অন্যতম সফল সফর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই সফরকালে ভারত
যা চেয়েছে, বলতে গেলে তার সবই পেয়েছে। এবার শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকেও একই
রকম সফল দেখতে চায় বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু বাংলাদেশের দীর্ঘ দিনের চাওয়া
অনুযায়ী তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। পররাষ্ট্রসচিব
গত ডিসেম্বরে দিল্লি সফর করেও এ ব্যাপারে ভারতের কাছ থেকে নিশ্চয়তা আদায়
করতে পারেননি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অনড় অবস্থানের
কারণে ইস্যুটি ছয় বছরে ধরে ঝুলে রয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই
হওয়ার কথা ছিল। এ জন্য ১৫ বছর মেয়াদের চুক্তির একটি খসড়াও চূড়ান্ত করা
হয়েছিল। কিন্তু মমতার আপত্তির কারণে শেষ মুহূর্তে ভারত এই চুক্তি সইয়ে
অপারগতা প্রকাশ করে। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশও চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর
ব্যবহারে ভারতকে সম্মতিপত্র দেয়া থেকে বিরত ছিল। পরবর্তী সময়ে নরেন্দ্র
মোদি ঢাকা সফরকালে মমতাকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এ সময়ও তিস্তার
পানি বণ্টনে চুক্তি সইয়ে মমতার কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি আদায়
সম্ভব হয়নি। স্থানীয় রাজনীতিতে ইস্যুটির স্পর্শকাতরতা বিবেচনায়
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের পর মমতার অবস্থান পরিবর্তন হবে বলে আশা
করা হয়েছিল। কিস্তু এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী হলেও তিস্তা নিয়ে অবস্থান পাল্টাননি মমতা। তিস্তা নিয়ে
পশ্চিমবঙ্গের রুদ্র কমিশনের প্রতিবেদন স্রেফ হিমঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি মমতা বলেছেন, তিস্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তার সাথে কোনো যোগাযোগ
করেনি। এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ রক্ষা করে
বাংলাদেশের জন্য যতটুকু করা সম্ভব তা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি : আগামীকাল শুক্রবার ভারতীয় বিমানবাহিনীর পালাম বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাবেন ভারতের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে উঠবেন। দিল্লি সফরকালে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনেই অবস্থান করবেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। বিকেলে শেখ হাসিনা দিল্লির চানক্যপুরিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন পরিদর্শন করবেন। সেখানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। রাতে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ হাইকমিশনের দেয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন। পরদিন সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়া হবে। এরপর শেখ হাসিনা রাজঘাটে গান্ধী সমাধিসৌধে শ্রদ্ধানিবেদন করবেন। তারপর হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী ও কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করবেন। রাজিব গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধী তার মায়ের সাথে এ সময় উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী আজমির শরিফে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির মাজার জিয়ারত করবেন। দিল্লিতে তিনি দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সম্মেলনেও বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি : আগামীকাল শুক্রবার ভারতীয় বিমানবাহিনীর পালাম বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাবেন ভারতের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে উঠবেন। দিল্লি সফরকালে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনেই অবস্থান করবেন। রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। বিকেলে শেখ হাসিনা দিল্লির চানক্যপুরিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন পরিদর্শন করবেন। সেখানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। রাতে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ হাইকমিশনের দেয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন। পরদিন সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেয়া হবে। এরপর শেখ হাসিনা রাজঘাটে গান্ধী সমাধিসৌধে শ্রদ্ধানিবেদন করবেন। তারপর হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। ভারতের উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী ও কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করবেন। রাজিব গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধী তার মায়ের সাথে এ সময় উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী আজমির শরিফে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির মাজার জিয়ারত করবেন। দিল্লিতে তিনি দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সম্মেলনেও বক্তব্য রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
No comments