রপ্তানি আয়ে খরা কাটেনি
গত মার্চ মাসে ৩১০ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে এই প্রবৃদ্ধিও সামগ্রিক রপ্তানি চিত্রের দৈন্যদশা ঘোচাতে পারেনি। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। আট মাস শেষে এটি ছিল ৩ দশমিক ২২ শতাংশ। তবে অর্থবছরের শুরুর দিকে দেশের পণ্য রপ্তানি আয় মোটামুটি সন্তোষজনক ছিল। গত নভেম্বর থেকে প্রবৃদ্ধি কমতে থাকে।
চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চে ২ হাজার ৫৯৪ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ২ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলারের চেয়ে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ কম। রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান গতকাল বুধবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। মোট পণ্য রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে। তবে কয়েক মাস ধরে পোশাক রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি না থাকায় সামগ্রিক রপ্তানি আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ২ হাজার ৯২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ২ হাজার ৪৪ কোটি ডলারের চেয়ে ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের নয় মাসে ২ হাজার ৯২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির মধ্যে নিট পোশাক থেকে ১ হাজার ১৪ এবং ওভেন পোশাক থেকে ১ হাজার ৭৮ কোটি ডলার এসেছে। এর মধ্যে নিট পোশাকে ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং ওভেনে শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত কয়েক মাসে একাধিক পোশাকমালিক প্রথম আলোকে বলেন, বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়া, প্রত্যাশা অনুযায়ী চীনের ব্যবসা না আসা, ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী, ডলারের বিপরীতে ইউরো দুর্বল এবং কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ব্যর্থ হয়ে অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে পোশাক রপ্তানি কমেছে। জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পোশাক রপ্তানি বাড়াতে হলে সরকারকে বিশেষ সহায়তা দিয়ে এ খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘সক্ষমতা বাড়াতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে আমরা ৫ শতাংশ নগদ সহায়তা, উৎসে কর শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ এবং পোশাক খাতকে মূসকমুক্ত রাখার সুবিধা চাইব।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধাগুলো পেলে আমরা বিদেশি ক্রেতাদের পোশাক তৈরিতে কম দাম অফার করতে পারব। তাতে ক্রয়াদেশ বাড়বে।’ ইপিবির তথ্যানুযায়ী,
পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯২ কোটি ২৯ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় চামড়া ও চামড়াজাত খাত থেকে এসেছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং আলোচ্য সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে ৭৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় এসেছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে হোম টেক্সটাইলে ৫৮ কোটি, প্রকৌশল পণ্যে ৫৪ কোটি, কৃষিজাত পণ্যে ৪০ কোটি ৯০ লাখ, হিমায়িত খাদ্যে ৩৮ কোটি, প্লাস্টিক পণ্যে ৯ কোটি এবং আসবাবে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে। গত অর্থবছর ৩ হাজার ৪২৫ কোটি ৭১ লাখ ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছিল। চলতি অর্থবছর ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আগামী তিন মাসে গড়ে ৩৬৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে হবে। তবে চলতি অর্থবছরের কোনো মাসেই এই পরিমাণ রপ্তানি আয় সম্ভব হয়নি।
No comments