শেখ হাসিনার সফরকে ‘যথেষ্ট গুরুত্ব’ ভারতের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। কাল শুক্রবার চার দিনের এই সফর শুরু হচ্ছে। ভারতের কূটনীতিকেরা আশা করছেন, দুই নিকট প্রতিবেশীর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের ঘনিষ্ঠতাকে ভবিষ্যতে আরও নিবিড় করার ক্ষেত্রে এই সফর ভূমিকা রাখবে। ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দুই দেশের বন্ধুত্বকে নতুন মাত্রা দিতে নয়াদিল্লি সেই পদক্ষেপগুলোই নেবে, যেখানে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশও লাভবান হবে। শেখ হাসিনার সফর নিয়ে গতকাল বুধবার ভারতের রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এমন মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সাত বছর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে গুরুত্ব দিয়ে একে সম্পর্কের নতুন মাত্রা হিসেবে আখ্যায়িত করলেও তিস্তা নিয়ে নাটকীয় কিছু হওয়ার কথা শোনা যায়নি ভারতীয় কূটনীতিকদের মুখ থেকে। যদিও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শনিবার শেখ হাসিনার সম্মানে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেওয়ার খবরে সফরের আগ মুহূর্তে তিস্তা নিয়ে গণমাধ্যমে নতুন করে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তিস্তা চুক্তি সই নিয়ে হঠাৎ করে প্রত্যাশা না বাড়িয়ে বাস্তবতা মেনে নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন এখানকার কূটনীতিক মহল। ভারতের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ায় রাজ্যকে নিয়ে সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে। তাই অভিন্ন নদীটির চুক্তি সইয়ে সময় লাগবে। আর দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্ক শুধু তিস্তাকে নিয়ে নয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গোপাল বাগলে বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে ‘যথেষ্ট গুরুত্ব’ দিচ্ছে ভারত। তাঁর প্রত্যাশা, দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বটা আরও শক্তিশালী করার পথ তৈরি করে দেবে শেখ হাসিনার সফর। তাই সফরটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গোপালের সহকর্মী ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ-মিয়ানমার ডেস্ক) শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন বলেন, এই মুহূর্তে সম্পর্কটা সবচেয়ে ভালো পর্যায়ে আছে। সফরটি সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা দিল্লি সফররত বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপে এসব মন্তব্য করেন। শেখ হাসিনার সফর উপলক্ষে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকর্মীদের একটি প্রতিনিধিদল এখন দিল্লিতে রয়েছে।
প্রতিনিধিদলটি বিকেলে ভারতের রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর সঙ্গে তাঁর দপ্তরে দেখা করে। এ সময় সুরেশ প্রভু বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে নিশ্চয়ই যথেষ্ট আগ্রহ আছে? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাঁকে বলা হয়, এই সফর নিয়ে বাংলাদেশে প্রত্যাশা আছে। এরপর তিনি বলেন, প্রত্যাশা তো তখনই থাকে, যখন আগ্রহ থাকে। ভারতের রেলমন্ত্রী বলেন, ‘দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক এখন যেখানটায় আছে, অতীতে কখনো তেমনটা ছিল না। বাংলাদেশের জন্য আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব তার সবটাই করব। যা বাংলাদেশ চায় তার চেয়ে বেশি করতে পারলে খুশি হব। আমরা এমন কিছু করতে চাই না, যার সুফল বাংলাদেশ পাবে না।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত মঙ্গলবার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হচ্ছে। এ নিয়ে জানতে চাইলে শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন বলেন, সংখ্যাটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যের কাছাকাছি হলেও সবকিছু চূড়ান্ত হয়নি। দু-একটিতে কিছু পরিবর্তন হতে পারে। এ ছাড়া ভারতে চুক্তি কিংবা সমঝোতা স্মারক যেটাই হোক না কেন, সইয়ের আগে তাতে মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিতে হয়। দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলোতে যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় কী হতে যাচ্ছে, অর্থাৎ চুক্তি না সমঝোতা, তা এখনো চূড়ান্ত নয়। দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে এ মুহূর্তে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা আছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার রূপরেখা সই হলে তা একটি কাঠামো তৈরি করে দেবে, যাতে দুই দেশের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কাজ করতে সুবিধা হয়। দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলোতে কথা বলে জানা গেছে, এবার বেশ কিছু ইতিবাচক ও আধুনিক ক্ষেত্র যেমন সাইবার নিরাপত্তা, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ নতুন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসবে। দুই প্রধানমন্ত্রী প্রায় দুই বছর আগের সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করবেন। নতুন কোন কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করবেন। এ বিষয়গুলো সম্পর্কের ভবিষ্যৎ পথরেখার ইঙ্গিত দিচ্ছে। দুই দেশের সম্পর্ক সমন্বিত ও সামগ্রিক প্রেক্ষাপট থেকে বিচার করা উচিত। কারণ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কে আস্থা বেড়েছে, পরিপক্বতা এসেছে। তাই এই পরিবেশটাকে কাজে লাগিয়ে এখানে দুই পক্ষের লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে।
No comments