আঠারো পেরিয়ে সুমাইয়া শিমু
টিভি নাটকের প্রাণোচ্ছল এক অভিনেত্রীর নাম সুমাইয়া শিমু। অভিনয়ের আঠারো বছর পার করছেন এ তারকা। সাবলীল অভিনয়ের সঙ্গে হরিণীয় চাহনী আর ভুবনভোলানো হাসির আভায় ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই দর্শক হৃদয়ে আসন পেতেছেন। দীর্ঘ দেড় যুগ পর এখনও জনপ্রিয়তায় এতটুকুও ভাটা পড়েনি। চরিত্র অনুযায়ী নিজেকে উপস্থাপনার অনন্য গুণে সব সময়ের চাহিদাসম্পন্ন অভিনেত্রী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন নিজেকে। আহামরি কোনো কাজে দেখা যায় না তাকে। এ ধরনের কাজ পছন্দও নয় তার। তাই সমসাময়িক অন্যদের মতো একসঙ্গে খুব বেশি কাজ কখনই করেন না সুমাইয়া শিমু। বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক থাকায় এ ধরনের চরিত্রই খুঁজতে থাকেন তিনি। পেলে অভিনয় করেন। অন্যথায় নিজের মতো করে সময় কাটান। সময়ের সঙ্গে মেপে মেপে পা ফেলায় অভ্যস্ত তিনি। জীবনদর্শন হিসেবে কোনো কিছু করার আগে আশপাশ ও পরিস্থিতির দিকে খেয়াল রাখাটাই মেনে চলেন। এ প্রসঙ্গে শিমু বলেন, ‘আমি আসলে আশপাশের মানুষের কথা খুব ভাবি। পরিবার আমার একটা বড় শক্তি। তারা কী ভাবছেন, আমার কোনো আচরণে তারা কষ্ট পেলেন কিনা, সেটা বুঝেই কাজ করি। এ কারণেই হয়তো কোনো প্রকার আপত্তি ছাড়াই এতদিন ধরে শোবিজে কাজ করে আসছি।’ খণ্ড নাটক এবং ধারাবাহিক নাটকের নিয়মিত অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমু। পাশাপাশি গুটিকয়েক চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। মডেলিং দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এ মাধ্যমে নিয়মিত হননি। মাঝে মধ্যে বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেন। নাটকে অভিনয়ের সঙ্গে পুরোদমে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনাও। পিএইচডি করছেন মিডিয়া বিষয়ে। সমসাময়িক অনেকের থেকে সুমাইয়া শিমু অনেক কম কাজ করেছেন, কিন্তু দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন বেশি। বিশেষ করে তুহিন অবন্তের ‘মনোবাসিতাল’ ও সাইদুর রহমান রাসেলের ‘মধুরা’ নাটকে অভিনয় করে দারুণ সাড়া পেয়েছেন তিনি। কবি নজরুলের গল্প অবলম্বনে কাওনাইন সৌরভের নাটক ‘অভিমানিনী’তে ‘শ্যামা’ চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান অনেক বেশি। অন্যদিকে ‘স্বপ্নচূড়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় সুমাইয়া শিমুর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। এ ছাড়া ‘ললিতা’ নাটকেও তিনি বেশ প্রশংসা কুড়ান। এ উদাহরণগুলো তার জন্য যৎসামান্যই। পড়াশোনার প্রতি বিশেষ মনোযোগী এ মেয়েটির শোবিজে যাত্রা আজ থেকে আঠারো বছর আগে। তার অভিনীত প্রথম নাটকের নাম ছিল ‘এখানে আতর পাওয়া যায়’।
অরণ্য আনোয়ার পরিচালিত এ নাটকের শুটিং ১৯৯৮ সালে হলেও এটি প্রচার হয় ১৯৯৯ সালে। নিজের প্রথম ক্যামেরা সামনে দাঁড়ানো বা প্রথম নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে শিমু বলেন, "তখন আমি খুব বেশি নার্ভাস ছিলাম। বয়সও অনেক কম ছিল। সব মিলিয়ে একটু ভয় কাজ করেছিল। কিছুদিন আগে ইউটিউবে নাটকটি আমি দেখেছি। মজার ব্যাপার হল, অভিনয়ের আগে আমি তো ভীষণ নার্ভাস ছিলাম, অথচ ক্যামেরায় আমার নার্ভাসনেস একদম ধরা পড়েনি। অনেক দিন পর ইউটিউবে নিজের নাটক দেখে ভালো লেগেছে। নাটকটি প্রসঙ্গে ডলি জহুর আন্টি অনেক দিন পর আমাকে একটা কথা বলেছিলেন, ‘শিমু, তুমি যখন নাটকে শট দিচ্ছিলে, তখন আমরা সবাই বলেছিলাম, মেয়েটা তো পুতুলের মতো হয়ে আছে।’ আসলে আমাকে তারা পুতুল বলেছিলেন, কারণ আমি শট শেষ হয়ে যাওয়ার পরও দাঁড়িয়ে সংলাপ বলতেই থাকতাম"- হাসতে হাসতে এভাবেই প্রথম কাজের স্মৃতিচারণ করলেন এ তারকা। জানালেন দীর্ঘ আঠারো বছর শোবিজে পথচলার অনুভূতিও। আজকের তার অবস্থান বেশ বড় অর্জন হিসেবেই দেখেন এ তারকা। তার ভাষায়, ‘আজ মিডিয়াতে আমার যে অবস্থান তৈরি হয়েছে; মিডিয়ায় এমন দিন আমার জীবনে আসবে তা কিন্তু কখনই ভাবিনি। একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করতাম। সেখান থেকেই মূলত একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করা। এরপর একে একে নাটকে অভিনয়। সেই যে শুরু, শেষ কবে হবে জানা নেই।’ সুমাইয়া শিমুর সমসাময়িক অনেকেই হারিয়ে গেছেন। তিনি এখনও জনপ্রিয়তা নিয়ে দাপুটে হয়ে ছুটছেন আগামীর পথে। চলার পথেয় অভিনয়কে চর্চার বিষয় মনে করেন এ তারকা। তাই এখনও বিষয়টিকে চর্চার মধ্যেই রেখেছেন। নিজের অভিনয় নিয়ে কখনও পুরোপুরি তৃপ্ত হতে পারেনি এ তারকা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি অভিনয় আসলে চর্চার বিষয়। এখনও চর্চার মধ্যেই আছি। নিজের অভিনয় নিয়ে পুরোপুরি তৃপ্ত হতে পারিনি কখনও। প্রতিটি কাজের পরই মনে হয়েছে, ইশ! কাজটি আরও ভালো করা যেত, বা আরও ভালো করা উচিত ছিল। ইদানীং ভিন্নধারার কাজকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। কারণ আমার মনে হয় এখন আর আমার স্ক্রিনে গতানুগতিক কাজ নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হওয়ার কিছু নেই।’
No comments