আদভানিসহ বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিচার হবে
ভারতের অযোধ্যায় ষোড়শ শতকের বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা এল কে আদভানি ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতিসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। আদালতের এ আদেশ বিজেপির সাবেক প্রধান লাল কৃষ্ণ আদভানি এবং তার সহকর্মীদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে তৎকালীন বিজেপি নেতৃত্বের উস্কানিমূলক বক্তব্যের কারণে হিন্দুরা ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল। খবর বিবিসি ও এনডিটিভির। বুধবার দেয়া রায়ে বিচারকরা এ মামলার বিচার দুই বছরের মধ্যে শেষ করতে প্রতিদিন শুনানির আদেশ দিয়েছেন। ৮৯ বছর বয়সী আদভানি ও বিজেপির অপর জ্যেষ্ঠ নেতা মুরলি মনোহর জোশির বিরুদ্ধে উত্তেজক বক্তব্য দিয়ে লাখ লাখ উগ্র স্বেচ্ছাসেবক বা করসেবককে মসজিদটি ভাঙার উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ১৯৯২ সালে ভারতের উগ্র করসেবকরা বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। উত্তরপ্রদেশের রায় বেরেলির আদালতে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে মসজিদ ধ্বংসে ষড়যন্ত্র করার মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। অপরদিকে লখনৌর আদালতে করা মসজিদ ধ্বংসের অপর একটি মামলারও মুখোমুখি হচ্ছেন বিজেপি নেতারা। মসজিদ ধ্বংস করার ঘটনায় প্রায় ২০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ দুটি মামলার শুনানি একসঙ্গে শেষ করে দুই বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি যেসব বিচারক এ মামলার সঙ্গে জড়িত, মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই তাদের বদলি করা যাবে না বলে নির্দেশ সুপ্রিমকোর্টের। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) জানিয়েছে, যেদিন মসজিদটি ধ্বংস করা হয় ওই দিন নিকটবর্তী একটি স্থানে একটি মঞ্চে বিজেপি নেতারা বক্তৃতা দিচ্ছিলেন- এমন প্রমাণ তাদের কাছে আছে। মসজিদ ধ্বংস করার প্রাণঘাতী পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ওই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে সিবিআই। সংস্থাটি জানিয়েছে, মসজিদ ধ্বংসের আগের দিন রাতে আদভানি ও বিজেপির অন্য নেতারা বৈঠক করে মসজিদটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তাই মসজিদ ভাঙার বিষয়টি তাৎক্ষণিক কোনো ঘটনা ছিল না, এটি পূর্বপরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটানো হয়েছিল। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারতজুড়ে ছড়িয়ে পড়া দাঙ্গায় প্রায় দুই হাজার মানুষ নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিল অসহায় মুসলিম। হিন্দুরা দাবি করে বাবরি মসজিদ যে জায়গাটিতে অবস্থিত সেখানে হিন্দুদের অন্যতম দেবতা রামের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু ১৯১৬ সালের দিকে সে এলাকায় মুসলিম ‘আগ্রাসনের’ পরে হিন্দু মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণ করা হয় বলে হিন্দুরা দাবি করে। এ জায়গাটিতে মসজিদ থাকবে নাকি মন্দির থাকবে সে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। সম্প্রতি ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এ সংক্রান্ত মামলায় কোনো রায় না দিয়ে উভয় সম্প্রদায়কে পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে দুইপক্ষ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ শোনার পরই বিজেপির মুখপাত্র জিভিএনএল রাও বলেন, আদভানি, জোশি, উমা ভারতিদের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ ভালো করে খতিয়ে না দেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব নয়।
No comments