হারল সরকার জিতল দুই মন্ত্রী
দুই মন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট ‘প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর’ পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কারসাজির কাছে হেরে পিছু হটল সরকার। যাত্রীদের চরম ভোগান্তির পর রাজধানীতে ফের বেআইনি সিটিং সার্ভিস চলাচলের অনুমতি দিল বিআরটিএ। আজ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত বাস-মিনিবাসে এ সার্ভিস চালু থাকবে। এসব গাড়ি চলাচলের সুবিধার্থে আগামী ১৫ দিন সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। সিটিং সার্ভিস চালু হলেও ভাড়ার বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়ায় আগের মতো আদায় হতে পারে। টানা ৪ দিন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যাত্রীদের জিম্মি রেখে দাবি আদায় করে নিলেন ক্ষমতার বলয়ের মধ্যে বেড়ে উঠা পরিবহন নেতারা। বিশ্লেষকদের মতে, জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করতে না পেরে সরকার এ ইস্যুতে হেরে গেল। অন্যদিকে পরিবহন নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা দুই মন্ত্রী কার্যত বিজয়ী হয়েছেন। বিআরটিএ জানিয়েছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সিটিং সার্ভিসকে আইনগত বৈধতা দেয়া এবং এ ধরনের পরিবহনের জন্য ভাড়ার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সংস্থাটির এমন সিদ্ধান্তের ফলে সিটিং সার্ভিসে আগের মতোই অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার বৈধতা আদায় করে নিলেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এতে লাভবান হলেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সদস্যরা। এর আগেও বিভিন্ন দাবি আদায়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালন করে দাবি আদায় করে নিয়েছিল। এমন কি মালিক ও শ্রমিকরা গাবতলীতে ম্যাজিস্ট্রেট আটকে সাজা প্রত্যাহারেও বাধ্য করেছিল। এবার রাস্তায় গাড়ি না নামিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সিটিং সার্ভিসের বৈধতা আদায় করে নিল। এবারও ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়েই কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জনগণকে দুর্বিষহ কষ্ট দেয়া হয়েছে।
এ খাতের নেতারা অসীম ক্ষমতাধর হয়ে উঠছেন। তাদের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নেয়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে আগামী ১৫ দিন সিটিং সার্ভিস চালু থাকার ঘোষণা দেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান। তিনি বলেন, সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে চলমান মোবাইল কোর্টের অভিযান ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হল। ভাড়া আদায়ের বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করব না। গাড়িতে সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া নিতে হবে। তবে গাড়িতে বাম্পার, অ্যাঙ্গেলসহ অন্যান্য অনিয়মের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট চলবে। মালিক ও শ্রমিকদের চাপের মুখে এমন নতি স্বীকার কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না, এটি নতি স্বীকারের বিষয় নয়। সিটিং সার্ভিসের বৈধতার প্রশ্নে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, মালিকদের অনুরোধে সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছিলাম। কিন্তু গাড়ি কম চলায় শিশু ও নারীদের সমস্যা হচ্ছিল। সবার প্রথম উদ্দেশ্য জনগণকে সেবা দেয়া। গত ৪ দিন যেসব গাড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে সে সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। এর আগে বিআরটিএ’র এলেনবাড়ীর কার্যালয়ে মালিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বেশিরভাগ মালিক সংগঠনের নেতা অংশ নেন। এর বাইরে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) প্রতিষ্ঠাতা অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন ও সিনিয়র সাংবাদিক নাইমুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই সিটিং সার্ভিস চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়। অনেকেই মনে করছেন, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান আইনের লোক হয়ে সিটিং সার্ভিস চালু রাখার মতো বেআইনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৈঠক শেষে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলাম। এখন বিআরটিএ চেয়ারম্যান জানালেন, অভিযান স্থগিত রাখবেন এবং সিটিং সার্ভিসের ব্যাপারে আরটিসির বৈঠকে প্রস্তাব পাঠানোর পরামর্শ দেন। আমরা আরটিসির বৈঠকে সিটিং সার্ভিসের অনুমতির জন্য প্রস্তাব পাঠাব। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা বলেন, পরিবহন নেতার বক্তব্যেই এর প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আইন এবং ভাড়ার বিষয়টি সুরাহা ছাড়াই অনুমোতি দেয়ায় সিটিং সার্ভিসের নামে আগের মতো বাড়তি ভাড়া আদায়ের আরও সুযোগ তৈরি হল। এর ফলে আজিমপুর থেকে গাজীপুর রুটের ভিআইপি ২৭-এ সর্বনিন্ম ভাড়া ৫০ টাকা, মিরপুর থেকে উত্তরা রুটের গাড়িগুলোয় সর্বনিন্ম ৩০ টাকা এবং অন্য গাড়িগুলোর নির্ধারিত ভাড়া নেয়ার সুযোগ তৈরি করে দিল। তারা বলেন, আইন অনুযায়ী, গাড়ি চালানো বন্ধ রেখে যাত্রী ভোগান্তি সৃষ্টি করলে ওই গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করার কথা বিআরটিএ’র। সংস্থাটি এ ধরনের ঘোষণাও দিয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ দিনে গাড়ি না চালিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃর্ষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, উল্টো পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম শিথিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রবিহীন চালকের হাতে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করে যাত্রীদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিল সরকার। বিআরটিএ’র বৈঠকে ইলিয়াস কাঞ্চন সিটিং সার্ভিস চালুর বিষয়ে ঘোর বিরোধিতা করেন। তিনি সিটিং সার্ভিসকে বৈধতা দেয়ার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেন। তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করা হয়েছে। এভাবে বিভিন্ন সময়ে কথায় কথায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় পরিবহন কর্মীরা। যদিও নাইমুল ইসলাম খান জনস্বার্থে সিটিং সার্ভিস চালুর বিষয়ে মত দেন। এ প্রসঙ্গে ক্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সরকার যখন সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় তখনই উদ্বেগ জানিয়েছিলাম এটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। আমাদের সে উদ্বেগই সত্যি হল। আসলে বিআরটিএ সরকারি সংস্থা, নাকি বাস মালিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সংস্থা? তারা যেভাবে মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে তাতে করে বিআরটিএ’কে সরকারি সংস্থা বলা যায় না। এ সংস্থা থাকারও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। বিআরটিএ কর্মকর্তাসহ তাদের সবার বেতনসহ সব সুবিধা বাস মালিক থেকে নেয়া উচিত। পরিবহন সেক্টরের কাছে সবাই জিম্মি। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। এটা আশাও করা যায় না। এদিকে বুধবার সকালেই এক অনুষ্ঠানে সিটিং সার্ভিস ফের চালুর ইঙ্গিত দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর সবাই যদি মনে করেন যে, সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত ‘জনস্বার্থে’ পুনর্বিবেচনা করা দরকার বা আরও সংযোজন-সংশোধন করা প্রয়োজন, তাহলে সবাই মিলেই তা ঠিক করা হবে। তিনি বলেন, আমরা যে কর্তৃপক্ষ আছি, আমাদের সবার লক্ষ্য সেবা দেয়া। তিনি বলেন, জনস্বার্থের নামে আমরা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না, যে কারণে জনগণ ভোগান্তির কবলে পড়ে। জানা গেছে, মঙ্গলবার থেকেই সিটিং সার্ভিস চালু এবং মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম সীমিত করা না হলে পরিবহন খাতের কৃত্রিম সংকট আরও প্রকট করে তোলার হুমকি দেয়া হয়েছিল। পরিবহন মালিক শ্রমিকদের পক্ষ থেকে প্রচ্ছন্ন এহুমকি দেয়া হয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন বিআরটিএ’র একাধিক কর্মকর্তা। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে প্রচণ্ড চাপও সৃষ্টি করা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ও বিবেচনায় নিয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, পরিবহন সেক্টর পুরোটাই এখন সরকারদলীয় নেতাদের দখলে। এ কারণে ‘সিটিং সার্ভিসের’ নামে গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধের সরকারি উদ্যোগ মানতে পারেনি প্রভাবশালী নেতারা। তারা প্রকাশ্যে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার কথা বললেও ভেতরে ভেতরে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে জনভোগান্তি বাড়িয়ে স্বার্থ হাসিলের পাঁয়তারা শুরু করেন। চার দিনের মাথায় শেষ পর্যন্ত তারা সফল হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ১৫ দিনের জন্য সিটিং সার্ভিস চালু হলেও এটি আর বন্ধ হবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রসঙ্গত, পরিবহন সেক্টরের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙা ও আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার এনায়েতউল্লাহ এবং শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন নিয়ন্ত্রণ করছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। এছাড়া বেশ কিছু পরিবহন কোম্পানিও বর্তমানে সরকারদলীয় নেতাদের মালিকানায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন সেক্টরের মালিকদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠছে। তারা না মানছেন আইনকানুন, না মানছেন সরকারের নিষেধাজ্ঞা। মোটরযান আইনে না থাকলেও বছরের পর বছর তারা ‘সিটিং সার্ভিস’ ও ‘গেটলক’ নাম দিয়ে স্বল্প দূরত্বে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করে আসছেন। এ নিয়ে যাত্রী হয়রানি চরমে উঠায় গত ৪ এপ্রিল ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতউল্লাহ সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন- ১৫ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে আর সিটিং সার্ভিস কিংবা গেটলক চলবে না। সে অনুযায়ী ১৬ এপ্রিল থেকে এ দুটি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়।
শুরু হয় লোকাল সার্ভিস। গত চার দিন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিটিং ও গেটলক সার্ভিস বন্ধ হলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হয়নি। আগে যেভাবে বিআরটিএ’র ভাড়ার তালিকাকে অগ্রাহ্য করে মালিকরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভাড়া আদায় করত, সেভাবেই যাত্রী ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মালিকরা অঘোষিত ধর্মঘট করে। ফলে রাস্তায় ৩০-৪০ ভাগ বাস-মিনিবাস চলাচল করে। এতে যাত্রীরা বিশেষ করে শিশু, রোগী এবং মহিলা যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে মানুষ বাস-মিনিবাসে উঠতে পারেননি। বাসে যাত্রীতে ঠাসা থাকলেও তাদের কাছ থেকে সিটিং সার্ভিসের ভাড়াই আদায় করা হয়। দেখা গেছে, পরিবহন মালিকদের নৈরাজ্য বন্ধে বিআরটিএ প্রতিদিন পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন কোম্পানিকে জরিমানা, বাস আটক ও চালকদের কারাদণ্ড দিলেও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরেনি। বরং ভ্রাম্যমাণ আদালতকে ফাঁকি দিতে বহু মালিক তাদের বাসের চলাচল বন্ধ করে দেন। এসব বাস বিভিন্ন সড়কের পাশে এবং ফাঁকা মাঠে স্থায়ীভাবে দাঁড় করিয়ে রাখে। পরিবহন নেতাদের ঘোষণার পরও এ সেক্টরে শৃঙ্খলা না আসায় নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পরিবহন নেতাদের ডাকলে তারা সহজে আসতে চান না। তারা তো সামান্য মানুষ না; তাদের অনেকেই প্রভাবশালী।
No comments