সৌন্দর্য ফোয়ারা এখন ডাস্টবিন!
ভেতরে ময়লা-আবর্জনা ও শুকনো পাতার স্তূপে মশা-মাছি ভনভন করছে। ঝুপড়ি করে রাতে সেখানে ঘুমাচ্ছেন নেশাগ্রস্ত মানুষ। আবার এখানেই মলত্যাগ করছেন তারা। আর বাইরের চারদিকে সিটি কর্পোরেশনের খোলা ডাস্টবিন। সীমানা প্রাচীরের রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে বসানো ছিন্নমূল ব্যবসায়ীদের দোকান, অবাঞ্ছিত ব্যানার, ফেস্টুন এবং সারিবদ্ধভাবে থামিয়ে রাখা হয়েছে শতাধিক লোহার ঠেলাগাড়ি। অথচ এটি সরকার প্রতিষ্ঠিত একটি সৌন্দর্য ফোয়ারা। এমন বেহাল চিত্র রাজধানীর বংশালের পুরাতন চৌরাস্তায় অবস্থিত বংশাল ফোয়ারাটির। এর দক্ষিণে নয়াবাজার ফেঞ্চ রোড, পশ্চিমে নাজিরাবাজার এবং উত্তর-পূর্বে রয়েছে কাজী আলাউদ্দিন রোড। স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের অযত্ন আর অবহেলায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে সরকারি এ স্থাপনাটি। তারা জানান, অসহনীয় যানজট ও কোলাহল থেকে পথচারীদের দৃষ্টিকে সাময়িকের জন্য হলেও রোমাঞ্চকর আবহে নিয়ে যেতে ১৯৯৮ সালে এটি নির্মাণ করেন ঢাকার তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ। শুরুতে ফোয়ারাটিতে ছিল পানির ঝরনা এবং বাহারি আলোকসজ্জা। এতে আলোকিত হয়েছিল পুরো এলাকা। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ২০ বছর হতে চললেও এতে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি। বরং প্রতিষ্ঠাকালীন ঝরনা ও আলোকসজ্জা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি সীমানা প্রাচীরের রেলিংগুলোতে জং ধরেছে। কিন্তু বিগত দিনে নির্বাচিত কোনো জনপ্রতিনিধি এর উন্নয়নে কোনো উদ্যোগও গ্রহণ করেননি। আবার তদারকিও করেননি। এতে সৌন্দর্যবর্ধনের পরিবর্তে জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি।
কারণ এর ভেতরের পচা-আবর্জনা যেমন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, তেমনি বাইরে প্রাচীরঘেঁষা অবৈধ ছিন্নমূল দোকানে ফুটপাত দখল, দক্ষিণে ফেঞ্চ রোডের খোলা ডাস্টবিন এবং সারিবদ্ধ ঠেলাগাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে পথচারীদের মধ্যে নাভিশ্বাস চলে এসেছে। বিশেষ করে ফোয়ারা সংলগ্ন বংশাল রুকন মসজিদের মুসল্লিরা এক্ষেত্রে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। অন্যদিকে সিএনজিচালিত অটোরিকসাসহ ছোট ছোট যানবাহনগুলো প্রায় সময় যানজটে আটকে থাকে। সব মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দনের পরিবর্তে এখন জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এ ফোয়ারাটি। স্থানীয় ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী বলেন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ যে উদ্দেশ্যে এটি নির্মাণ করেছেন, তদারকির অভাবে সেটি এখন ধ্বংসের পথে। এ জন্য হয় নতুন করে সংস্কার করতে হবে, না হয় তা একেবারেই ভেঙে ফেলা উচিত। রুকন মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি আলী হোসেন বলেন, ফোয়ারার ভেতরের ময়লা দুর্গন্ধ মসজিদের ভেতরে আসায় মুসল্লিদের কষ্ট হচ্ছে। তাই এটি নিয়ে এখনই ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী মো. আবু সাঈদের সঙ্গে। ফোয়ারাটির বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আর্থিক প্রণোদনাসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও এর উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন এটি নতুন করে সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন বলে তিনি যুগান্তরকে জানান।
No comments