প্রতিবন্ধীদের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করুন
প্রতিবন্ধী ও অটিজমে আক্রান্তদের সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসতে কার্যকর নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা এদের বহুমুখী প্রতিভাকে স্বীকৃতি প্রদানে সংকল্পবদ্ধ হই। যাদের এই অসামঞ্জস্যতার কোনো চিকিৎসা নেই তাদের মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের সুযোগ করে দিই। যাতে করে তারা সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে পারে।’ বুধবার সকালে ভুটানের থিম্পুতে অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক ৩ দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বিশেষ অতিথি হিসেবে এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন উদ্বোধন করে আমি সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি।
পাশাপাশি অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডারস (এএসডি) ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারস (এনডিডিএস) নিরাময়ে অনেক প্রখ্যাত চিকিৎসাবিদ, গবেষক ও নীতিনির্ধারকের উপস্থিতি দেখে আমি আরও অনুপ্রাণিত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ব্যাধিগ্রস্তরা যেখানেই থাকুক না কেন, তারা সবার ভালোবাসা ও সম্মানের মাঝে বাস করার অধিকার রাখে। ১৯৪৪ সালে এটি বিকাশগত ব্যাধি (ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারস) হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও আজ পর্যন্ত এএসডি বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।’ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ভুটানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এবং সূচনা ফাউন্ডেশন (পুরনো নাম গ্লোবাল অটিজম), অ্যাবিলিটি ভুটান সোসাইটি (এবিএস) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কার্যালয়ের কারিগরি সহযোগিতায় রয়্যাল ব্যাঙ্কুয়েট হলে এ সম্মেলন শুরু হয়েছে। এবারের সম্মেলনের থিম হচ্ছে- ‘এএসডি ও অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্টাল সমস্যায় ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের জন্য কার্যকর ও টেকসই বহুমুখী কর্মসূচি’। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তেসারিং তোবগে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং ও ভুটানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী লিয়নপো তানদিন ওয়াংচুক সম্মেলনে বক্তৃতা করেন। ভুটানের রানী জেটসান পেমা এবং সূচনা ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশের অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার সম্পর্কিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, ঝুঁকির মুখে থাকা নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়া সব দেশের জন্যই প্রয়োজনীয়। সরকারগুলোর উচিত এ জন্য নীতি এবং কর্মসূচি প্রণয়ন করা। তিনি বলেন, ‘তারা (অটিজমে আক্রান্তরা) দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার সুযোগের দাবিদার। এটা আমাদেরই কর্তব্য- তাদের শিক্ষা থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সামাজিক ও মেডিকেল সাহায্য দেয়া।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন,
‘বর্তমান বিশ্বে অটিজম এবং অন্যান্য নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার নিয়মতান্ত্রিক কাঠামো ছাড়া সার্ভিস ডেলিভারি মডেল কখনও কার্যকর হতে পারে না। অর্থনৈতিকভাবে পর্যাপ্ত এবং অদূর ভবিষ্যতের জন্য ও টেকসই-মজবুত হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে ডাটার স্বল্পতা, সাংস্কৃতিকভাবে সচেতন, প্রমাণভিত্তিক ইন্টারভেনশন কর্মসূচি এবং বিদ্যমান থাকা কর্মসূচি এবং সেবার বিষয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ উল্লেখযোগ্য। শেখ হাসিনা বলেন, বিগত ৫০ বছরের সমীক্ষার ভিত্তিতে এএসডিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া গুরুতর প্রতিবন্ধিতা হিসেবে অভিহিত করা যায়, যা আমাদেরকে এএসডি সম্পর্কিত মূল বিষয়ে দৃষ্টি দিতে তাড়া দেয়। প্রথমত. এএসডি ও এনডিডিএস আক্রান্ত শিশুদের শনাক্ত করে তাদের জন্য যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের উপযোগী বিশেষায়িত শিক্ষা পদ্ধতি চালুর জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয়ত. টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) মূলমন্ত্র হচ্ছে- কেউ পিছনে থাকবে না, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এর ৩, ৪, ৮, ১১ ও ১৭ লক্ষ্যমাত্রার অন্তর্ভুক্ত। আমরা সবাই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশ ও সবার কল্যাণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই প্রেক্ষাপটেই জাতিসংঘের সদস্যরা সমস্যাটিকে টেকসই উন্নয়নের একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেন, তৃতীয়ত. এএসডি ও এনডিডি জাতীয় অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলে। কারণ এএসডি আক্রান্তদের ৮০ শতাংশই কর্মহীন অবস্থায় থাকে। এসডিজির ৮.৫ লক্ষ্যমাত্রার আলোকে তাদের জন্য উপযোগী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
বাংলাদেশ চ্যান্সেরির ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উন্মোচন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার ভুটানের হেজোতে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেছেন। ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী দাসো তেসারিং তোবগের উপস্থিতিতে একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এই নামফলক উন্মোচন করেন। এর আগে হেজোতে বাংলাদেশের অ্যাম্বাসি প্রতিষ্ঠার জন্য জায়গা বরাদ্দে দু’দেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো দামচো দর্জি নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরে, ভুটানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিষ্ণু রায় চৌধুরী এবং ভুটানের ল্যান্ড কমিশন সচিব পেমা চেওয়াং অ্যাম্বাসির জন্য জায়গা বরাদ্দের চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সায়মা ওয়াজেদ উপস্থাপক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে এটি ছিল এক বিরল দৃষ্টান্ত। বুধবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তারই কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত অটিজম ও নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার (এনডিডি) সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের এক আলোচনা সভায় এ বিরল ঘটনাটি ঘটে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানসিক অসামঞ্জস্যতা নিয়ে জন্মলাভ করা শিশুদের কল্যাণের উপায় খুঁজে বের করতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নীতির আওতায় সবার পদক্ষেপ প্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমরা ২০৩০-এর এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে রয়েছি সেহেতু সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের প্রয়াসকে আরও জোরদার করা প্রয়োজন, বিশেষ করে যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে তাদের জন্য।’
No comments