বিএনপিতে তরুণ নেতৃত্ব
অপেক্ষাকৃত তরুণেরা এসেছেন ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটিতে। রাজধানীতে বারবার আন্দোলনে ‘ব্যর্থতার গ্লানি’ মুছে ফেলতেই দুই ভাগে বিভক্ত করে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই তরুণ নেতৃত্বের ওপরই আগামী দিনে আশা রাখতে চায় বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নতুন কমিটিতে পরীতি সৈনিকদের স্থান দেয়া হয়েছে। কমিটির অধিকাংশ েেত্রই তরুণেরা অগ্রাধিকার পেয়েছে। সব দিক থেকে ভালো হয়েছে ঘোষিত কমিটি। দুই বছর আট মাস পর নতুন কমিটি ঘোষণায় মহানগরের রাজনীতিতে চাঞ্চল্য এসেছে। তবে দলের অভ্যন্তরে কমিটি নিয়ে নানা সমালোচনাও আছে। কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়ায় কারো কারো মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। কমিটিতে জ্যেষ্ঠতার ব্যত্যয় হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর ও দক্ষিণের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দক্ষিণে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সভাপতি এবং কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭০ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি এবং উত্তরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এম এ কাইয়ুমকে সভাপতি এবং পল্লবী এলাকার সাবেক কমিশনার আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা করে গেছে, দুই অংশেই অপেক্ষাকৃত তরুণেরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছেন। দীর্ঘ দিন ধরে মহানগরের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকা। সেই জায়গায় হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ও এম এ কাইয়ুম দু’জনই বিএনপির তরুণদের প্রতিনিধি। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যেমন তরুণেরা প্রাধান্য পেয়েছে, মহানগরীর বেলায়ও সেটি ঘটেছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে মহানগরে অপেক্ষাকৃত তরুণদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দুই ভাগে বিভক্ত কমিটির সভাপতি, প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে তরুণদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। দেিণর ১৯টি যুগ্ম সম্পাদক পদের তালিকায় কাউন্সিলর মকবুল ইসলাম টিপুর স্থান ১০ নম্বরে। তার ওপরে ৯ জনই মহানগরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার কনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। দেিণর সহসভাপতি পদের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের একই অভিযোগ। নবী উল্লাহ নবীর ওপরে ইউনুস মৃধা, সাজ্জাদ জহিরের ওপরে ফরিদ উদ্দিন, নাসিমা আখতার কল্পনা, আবু মোতালেব, আরিফুর রহমান আরিফের ওপরে তানভীর আদেল খান বাবু, মোশাররফ হোসেন খোকনের ওপরে ইশরাত মির্জা ও নিতাই চন্দ্র ঘোষের নাম তালিকায় স্থান পেয়েছে। উত্তরের কমিটিতেও একই অভিযোগ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুম স্পর্শকাতর একটি মামলার কারণে দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। উত্তরে তার বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী থাকলেও তার অনুপস্থিতি দলকে কিছুটা বিপাকে ফেলতে পারে। তাদের অভিযোগ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসানও অনেক সময় দেশের বাইরে থাকেন। উত্তরে ঘোষিত ৬৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের প্রথম দু’টি পদ ফাঁকা রাখা হয়েছে। জানা গেছে, এ দু’টি পদ পাবেন তেজগাঁওয়ের নেতা আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার ও বাড্ডার নেতা এ জি এম শামসুল ইসলাম।
মহানগর দক্ষিণের কমিটি অপেক্ষাকৃত ভালো হয়েছে বলে অনেকের মন্তব্য। তবে দক্ষিণের দুই নেতা নবী উল্লাহ নবী ও ইউনুস মৃধা প্রাপ্ত পদ নিয়ে খুশি নন বলে জানা গেছে। এরা দু’জনই নিজেকে সাধারণ সম্পাদক পদে দেখতে চেয়েছিলেন, পেয়েছেন সহসভাপতির পদ। নবী উল্লাহ নবী মহানগরের রাজনীতিতে আর থাকবেন কি না, তা নিয়েও তার ঘনিষ্ঠজনেরা গতকাল বুধবার দিনভর আলোচনা করেছেন। ঘোষিত কমিটিতে কে খোকাপন্থী আর কে আব্বাসপন্থী, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। পদ পাওয়া অধিকাংশ নেতাকে খোকাপন্থী বলছেন অনেকে। তবে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, কে খোকা আর কে আব্বাসের লোক সেটা বড় কোনো বিষয় নয়। দলকে শক্তিশালী করতে যাদের রাখা প্রয়োজন, তাদেরই কমিটিতে রাখা হয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণের দুই কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতা বাদ পড়েছেন। তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জায়গা পাবেন বলে জানা গেছে। দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল নয়া দিগন্তকে বলেছেন, কমিটির ৫০ বা ৬০ ভাগ ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সক্রিয় নেতারা জায়গা পাবেন। কারো কারো অভিযোগ, দুই কমিটিতে অনেক অপরিচিত নেতা রাখা হয়েছে, যাদের বিগত আন্দোলনে দেখা যায়নি কিংবা নেতাকর্মীদের সাথেও তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। শুধু তদবিরনির্ভর রাজনীতির কারণে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেয়া হয়েছে তাদের। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ঢাকা মহানগরের এই কমিটি হয়েছে। ভালো কমিটি হয়েছে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে এই কমিটি আগামী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবে বলে তার বিশ্বাস।
No comments