যুদ্ধ যে কোনো মুহূর্তে
যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া যে কোনো মুহূর্তে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। কোরিয়া উপদ্বীপ অভিমুখী মার্কিন বিমানবাহী রণতরী এবং পিয়ংইয়ংয়ের ষষ্ঠ পরমাণু বোমা পরীক্ষার প্রস্তুতিকে ঘিরে যুদ্ধের এ উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে ‘যে কোনো সময় যুদ্ধ বাধতে পারে’ বলে সতর্ক করেছে চীন। ‘যুদ্ধ বাধলে কোনো পক্ষই জয়ী হতে পারবে না’ এমন সতর্কতা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই উত্তর কোরিয়া নিয়ে উত্তেজনার অবসান চেয়েছে বেইজিং। কোরীয় অঞ্চলে আরেকটি পরমাণু পরীক্ষার প্রস্তুতির জের ধরে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ওয়াশিংটন। অন্যদিকে পিয়ংইয়ং বলেছে, মার্কিন ভূখণ্ডে বোমা হামলা চালাতে তার দেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। খবর বিবিসি ও সিএনএনের। উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল-সাংয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার দেশটিতে ‘সূর্যের দিন’ (দ্য ডে অব সান) উদযাপন করা হয়। এ সময় বিশাল প্যারেড অনুষ্ঠান করে এবং সামরিক অস্ত্র প্রদর্শনী করে দেশটির সক্ষমতা জানান দেয় কর্তৃপক্ষ। সিএনএন জানায়, ওই প্রদর্শনীতে সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ দুটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও (আইসিবিএম) দেখানো হয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ৫৫০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম।
সর্বাধুনিক অস্ত্রসম্ভার প্রদর্শনের এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে পরমাণু বোমার হামলার হুমকি দেন দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী নেতা চোই রিয়ঙ-হাই। তিনি বলেন, ‘যে কোনো আগাম আক্রমণের সমুচিত জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। এমনকি পরমাণু হামলা হলে নিজস্ব ধারায় পাল্টা আঘাতের প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।’ চোই রিয়ং-হাই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সামরিক বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সময় কিম জং উন উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি কোনো বক্তব্য রাখেননি। উত্তর কোরিয়ার পারমাণু ও আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম- এমন যুদ্ধাস্ত্র বহনকারী রকেট তৈরির উচ্চাকাক্সক্ষা রয়েছে উত্তর কোরিয়ার। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা ঠেকাতে বদ্ধপরিকর। উত্তর কোরিয়া ইতিমধ্যে পাঁচটি পারমাণু পরীক্ষা চালিয়েছে। ২০১৬ সালে দুটি পরীক্ষা চালানো হয়। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে তিনটি জাপানের কাছাকাছি জলসীমায় পড়েছে। কিম ইল-সাংয়ের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে উত্তর কোরিয়া শিগগিরই ষষ্ঠ পরমাণু পরীক্ষা চালাতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জবাবও যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে দেবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের রণপ্রস্তুতির কারণে পরমাণু পরীক্ষা চালানোর ঝুঁকি নেয়নি পিয়ংইয়ং। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়ার সমস্যা ধৈর্যচ্যুতি ঘটেছে। এখন দেখছি কী করা যায়। এর আগে গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেন, চীন সাহায্য করুক আর না করুক যুক্তরাষ্ট্র একাই উত্তর কোরিয়া সমস্যার সমাধান করতে পারে। অন্যদিকে মার্কিন রণতরীর কোরিয়া উপদ্বীপে যাওয়ার ব্যাপারে পিয়ংইয়ং অভিযোগ করে বলেছে, এ পদক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়া উপদ্বীপকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে। কোনো হামলার আভাস পাওয়ামাত্র যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা জবাব দেয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে উত্তর কোরিয়া। এদিকে চীন তার দোরগোড়ায় এমন সামরিক উত্তেজনা নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তায় পড়েছে? যুদ্ধ বাধলে উত্তর কোরিয়া ভেঙে পড়বে,
দেশটির শাসন ক্ষমতারও পরিবর্তন ঘটবে। সংকট সৃষ্টি হবে চীন সীমান্তে। তাই উত্তেজনা কমাতে চীন শান্তিপূর্ণ সমাধান চাইছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, যুদ্ধ শুরু হলে কোনো পক্ষই জয়ী হবে না। তিনি বলেন, ‘একদিকে যুক্তরাষ্ট্র আর অন্যদিকে উত্তর কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। আর যে কোনো মুহূর্তে সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কায় আছে আরেকপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত।’ চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা সব পক্ষকেই একে অপরকে কথা কিংবা কাজের মাধ্যমে কোনো উস্কানি দেয়া কিংবা হুমকি দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।’ এদিকে অসমর্থিত খবরে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য যুদ্ধের আশংকায় উত্তর কোরিয়া সীমান্তে প্রায় দেড় লাখ সেনা মোতায়েন করেছে চীন। তবে চীন সরকার এ দাবি নাকচ করে দিয়েছে। সম্প্রতি সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানেও আইএস জঙ্গিদের ওপর অপারমাণবিক সবচেয়ে বড় বোমা বিস্ফোরণ এরই মধ্যে ঘটিয়েছে। উত্তর কোরিয়াকে থামানো না গেলে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পরমাণু অস্ত্র হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করে ফেলতে পারে বলে উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটন। উত্তর কোরিয়ার হুমকিতে রণপ্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জাপান সরকারও। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা শনিবার বলেছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাপানি সেনারা প্রস্তুত। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র, সাইবার ও স্পেশাল অপারেশন (বিশেষ অভিযান) চালাতে পারে। তবে বিপদ হচ্ছে, এ ধরনের হামলার জবাবে উত্তর কোরিয়া তার প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথমেই আঘাত হানার চেষ্টা করবে। উত্তর কোরিয়া কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
No comments