শুরুতেই জমে উঠেছে ডিসিসি কর্নার
সময় তখন বিকাল ৫টা। কথা হচ্ছিল যমুনা ফিউচার পার্কে আসা রামপুরার বাসিন্দা মিসেস লায়লা মোশাররফের সঙ্গে। প্রতিবেদককে জানালেন, পহেলা বৈশাখে ভিড় থাকায় তিনি বাচ্চাদের নিয়ে বের হতে পারেননি। তাই পরদিন শনিবার এসেছিলেন যমুনা ফিউচার পার্কের কার্নিভালে ঘুরতে। এসে জানতে পারেন আগুনে পুড়ে যাওয়া গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের নতুন ঠিকানা যমুনা ফিউচার পার্ক। অতঃপর ঘুরে দেখার ইচ্ছে। তাই সন্তানদের নিয়ে গুলশান ডিসিসি কর্নারের আয়োজন দেখতে ফিউচার পার্কের দ্বিতীয় তলায় এসেছেন অনেকটা আগ্রহ ভরে। ঘুরে দেখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রীও কিনছেন। এখানে কেনাকাটাসহ সার্বিক বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে লায়লা মোশাররফ যুগান্তরকে বলেন, গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটের আধুনিক সংস্করণ যমুনা ফিউচার পার্কে। আগের চেয়ে আরও বড় পরিসরে এখানে ব্যবসায়ীরা বসেছেন। খোলামেলা স্থান বেশি থাকায় হাঁটাচলা করতে সুবিধা হয়েছে। তাছাড়া গাড়ি পার্কিংয়ের ঝামেলাও নেই। ডিএনসিসি মার্কেট গুলশান-১-এ থাকার সময় গরমকালে কেনাকাটা করাই দায় হয়ে যেত। কিন্তু এখানে এসির সুবিধা থাকায় কেনাকাটা করে আলাদা আনন্দ পেয়েছি। ভেবেছিলাম সুবিধা যখন এত বেড়েছে, তখন দামও বেশি রাখবে। কিন্তু না, আগের দামেই পণ্য কিনেছি। এককথায়, যমুনা ফিউচার পার্কে ডিসিসি কর্নারে মনোরম পরিবেশে কেনাকাটা করে আমি মুগ্ধ ও আনন্দিত। আমার কাছে এটি বাড়তি পাওনা। শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্কে আগত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন দ্বিতীয়তলার ডিসিসি কর্নারে। যাদের অনেকেই গুলশান মার্কেটের নিয়মিত ক্রেতা। আবার অনেকে শপিংমলে এসে ডিসিসি কর্নারে ঘুরেছেন। এখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন টয়লেট্রিজ, কসমেটিক্স, বাচ্চাদের খেলনা, চকলেট, খাবারসামগ্রী, ফরমালিনমুক্ত ফল- সবই পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতারা দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনছেন। বিশাল পরিসরে নতুনরূপের ডিসিসি কর্নারে তারা এক রকম পিকনিক মুডে কেনাকাটা করেছেন বলে জানান বেশ ক’জন ক্রেতা। জানা গেছে, গুলশান-১-এর ডিএনসিসির মার্কেটের আয়তন ছিল প্রায় ১২ হাজার বর্গফুট। আর যমুনা ফিউচার পার্কের ডিসিসি কর্নারের আয়তন ৩০ হাজার বর্গফুটের বেশি। খোলা জায়গা বেশি থাকায় ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাচলা করছেন। আর শপিংমল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় ক্লান্তিহীনভাবে কেনাকাটার সুযোগ পাচ্ছেন। গাড়ি পার্কিংয়েরও ঝামেলা ভোগ করতে হচ্ছে না। স্পর্শ ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী তৌহিদ আজিজ খান বলেন, গুলশান-১-এর মার্কেটে কাঁচাবাজারসহ ২৫০টি দোকান ছিল। কাঁচাবাজার বাদ দিয়ে প্রায় ১৫০টি দোকান ছিল। যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ১১০টি দোকানই যমুনা ফিউচার পার্কের নতুন ঠিকানায় এসেছে। আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী এখানে আসার জন্য যোগাযোগ করছেন। তিনি জানান, ভবিষ্যতে যমুনা ফিউচার পার্ককেই ব্যবসার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে চান ব্যবসায়ীরা। এটিকে নতুন ব্রান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
এর অংশ হিসেবে সারা ঢাকা শহরে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। প্যারামাউন্ট সুপার শপের স্বত্বাধিকারী জামান মোহাম্মদ মনির বলেন, ফরমালিনমুক্ত ফল বিদেশ থেকে আমদানি করে এখান থেকে পাঁচ তারকা হোটেলগুলোয় সরবরাহ করি। ক্রেতাদের জন্য সর্বোচ্চ মানের পণ্য নিয়েই যমুনা ফিউচার পার্কে ব্যবসা শুরু করেছি। কিন্তু দাম রাখছি আগের মতো। একই কথা বললেন বুশরা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শেখ মো. লোকমান। তিনি বলেন, ক্রেতাদের জন্য বিদেশ থেকে উন্নতমানের চকলেট আমদানি করে থাকি। যমুনা ফিউচার পার্কের দোকানে যত পদের চকলেট পাওয়া যাবে, তা বাংলাদেশের অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। এসব চকলেটের দাম অন্য সুপার শপের চেয়েও কম রাখা হচ্ছে। এমআর ট্রেডিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নতমানের খাদ্যসামগ্রী, টয়লেট্রিজ ও কসমেটিক্স আমদানি করা হয়। এসব পণ্য শতভাগ আন্তর্জাতিকমানের। গুলশান-১-এর ডিএনসিসি মার্কেটের ক্রেতাদের যমুনা ফিউচার পার্কের ডিসিসি কর্নারে ঘুরতে আসার আহ্বান জানান তিনি। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার প্রধান অতিথি হিসেবে যমুনা ফিউচার পার্কের ডিসিসি কর্নারের উদ্বোধন করেন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েন। এমন সময় তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যমুনা গ্রুপ। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের এশিয়ার বৃহত্তম মার্কেটে ১১০টি দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ব্যবসায়ীদের ভাড়া এবং অন্য আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। আমি মনে করি, যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং এ গ্রুপ সব সময়ই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াবে।’
No comments