আসছে ৩ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকার বাজেট
২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ওই হিসাবে নতুন বাজেটে ঘাটতি থাকবে ১ লাখ ৮ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এদিকে চলতি বাজেটের আকার হচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬ কোটি টাকা। এ হিসেবে নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৫০ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বাজেটের এ হিসাব অর্থমন্ত্রীর নীতিগত সম্মতিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের আগামী বৈঠকে এ হিসাব পর্যালোচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছর সরকারের আয় বাড়ানোর জন্যে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ নেয়া হবে। বিশেষ করে ১ জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে বহু আলোচিত ও বিতর্কিত নতুন ভ্যাট আইন। সরকার আশা করছে এ আইন কার্যকর হলে রাজস্ব আদায় অনেক বেড়ে যাবে। এর ফলে বাজেটের অর্থায়ন নির্ভরতা কমবে। এজন্য আগামী বছর যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে তা চলতি বছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬১ হাজার ৫১০ কোটি টাকা বেশি। এর অর্থ হচ্ছে জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়বে। যদিও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে আয় ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ২০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি কয়েকটি প্রাক-বাজেট বৈঠকে বলেছেন, বর্তমান সরকার আর দুটি বাজেট ঘোষণা দিতে পারবে। ফলে আগামী বাজেট হবে মেগা প্রকল্প গ্রহণের শেষ বাজেট। পরবর্তী বাজেটে নির্বাচনের বছর থাকবে। তিনি বলেন, নতুন কোনো চমক না থাকলে আকারের দিক থেকে বাজেট বড় হবে। সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি বাজেটের তুলনায় বাড়ছে ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে রাজস্ব বাড়ছে ৩৯ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এ বছর এনবিআরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যেখানে মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। যদিও ব্যাপক ঘাটতির মুখে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে করা হয়েছে। এ হিসাবে আগামী বছর টাকার অঙ্কে রাজস্ব আহরণ বাড়ছে ৫৬ হাজার ২০ কোটি টাকা।
পহেলা জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরের ফলে কর ও ভ্যাট আদায়ের পরিমাণ বাড়বে বলে মনে করছে সরকার। এছাড়া নতুন অর্থবছরের বাজেটে সম্ভাব্য অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১১ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার হবে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে সংশোধিত এডিপির আকার হচ্ছে ১ লাখ ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। এ বছর মোট বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। তবে নতুন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ আর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। জানা গেছে, আগামী বাজেটে নতুন করে বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে। বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের বিশৃঙ্খলা রোধে বাজেটে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের প্রস্তাব থাকতে পারে। এছাড়া বিনিয়োগ নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন। বিনিয়োগ বাড়াতে বাজেটে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৯ সালে শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ সবাইকে গ্যাস দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে সরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিউশন ফি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নিজেই। আগামী বাজেটে এমপিদের থোক বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ বাড়ানো হবে। সর্বোচ্চ করদাতাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিআইপি পর্যাদা দেয়ার ঘোষণা থাকছে বাজেটে।
No comments