মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা ও কিছু প্রশ্ন by কাজল ঘোষ
সবশেষ
খবর অনুযায়ী ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে
৬৪টি। আর টাকার হিসাবে কত হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে তা আর না-ই বললাম। শোনা
যাচ্ছে, আরও অনেক সচেতন সরকার সমর্থক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কোর্ট
বারান্দায়। দলের আস্থাভাজন বলে পরিচিতি পাবার এর চেয়ে সহজ রাস্তা আর কী হতে
পারে? সুতরাং এই সুযোগ কেউই মিস করতে চান না। প্রশ্ন জাগে, পঁচিশ বছরের
সম্পাদনা জীবনে ডেইলি স্টার সম্পাদক কি এমন ভুল করলেন? আর এই ভুল স্বীকারের
পরপরই সরকার সমর্থকরা কেউ মানহানি আর কেউ রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা টুকে
দিচ্ছেন? তবে যেভাবে মামলা দেয়ার হিড়িক চলছে তাতে এদেশে আর কেউ কখনও ভুল
স্বীকারের সৎ সাহস ভুল করেও দেখাবেন না। এটি সম্ভবত আমাদের চালাক
রাজনীতিকরা জানেন। না হলে স্বাধীনতার ৪৫ বছরে কোনো ভুলের জন্য রাজনীতিকদের
দায় স্বীকার করতে দেখা যায়নি। তাত্ত্বিকভাবে দেখলে, সাংবাদিকতায় ভুল হওয়া
দোষের কিছু নয়। যদি সেই দোষের দায় নিয়ে সংশোধনের চেষ্টা হয়ে থাকে তবে তা
পেশার সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে। কিন্তু যদি তা হয় চাপের কাছে বাধ্য হয়ে। ওয়ান
ইলেভেনে যা ঘটেছিল এ দেশে। আজ যারা ক্ষমতায় আছেন আর যারা বাইরে আছেন এ
দেশের সচেতন নাগরিক মাত্রেই কী ঘটেছিল সেদিন তা অজানা নয়? তাহলে মাহফুজ
আনাম সাংবাদিকতার সেই কালো অধ্যায়ের জন্য ভুল স্বীকার করায় বড় অপরাধ করে
ফেললেন? আর সেই সরকারের ফসল হিসেবে ক্ষমতায় এলেন তাদের কোনো ভুল নেই।
সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ? এদেশের আমজনতা কি সত্যিই সব ভুলে গিয়েছে?
নার্সিজম বলে পৌরাণিক একটি মিথ প্রচলিত আছে। এতে নার্সিসাস নিজের সৌন্দর্যে
এতোই মুগ্ধ যে সবসময় সে আয়নায় কেবল নিজের চেহারাই দেখে থাকে। ধীরে ধীরে
বদ্ধমূল ধারণা হয় নার্সিসাসের যে তিনিই হচ্ছেন বিশ্বের সেরা সৌন্দর্যের
অধিকারী। তার সমকক্ষ কেউ নেই। ক্ষমতাসীনদেরও এখনও সেই অবস্থা। নিজেদের সবাই
নার্সিসাস ভাবছেন। না হলে ওয়ান ইলেভেনে সুবিধাভোগী, মাইনাস ফরমুলার সঙ্গে
যুক্তরাই বর্তমানে ক্ষমতার কেন্দ্রে অথচ তাদের ক্ষেত্রে বিচারের পরিবর্তে
উলটোটাই ঘটছে। ক্ষমতার আয়নায় এরা সকলেই নিজেদের সাফসুতরো ভাবছেন। পুরনো
কাসুন্দি ঘাঁটলে দুর্গন্ধ বেরুতে শুরু করবে। লম্বা কথাই না গিয়ে শুধু কিছু
প্রশ্ন যারা আজ মাহফুজ আনামের বিচার চাইছেন, পদত্যাগ চাইছেন, মামলা করছেন
বিনয়ের সঙ্গে তাদের কাছে জানতে চাই-
শুরু থেকেই বর্তমানের সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে ওয়ান ইলেভেন তাদের আন্দোলনের ফসল। বিএনপির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে এটা আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র। আর দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে ক্ষমতায় এসেছে আওয়মী লীগ। তাছাড়া ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগতো ওয়ান ইলেভেনের একজন হোতাকেও কাঠগড়ায় নেয়নি। তাহলে সরল সমীকরণ কী বলে সে সময়ের অন্তর্বর্তী সরকার ছিল একটি অঙ্কের হিসাব।
যারা সেদিন টিএফআই সেলে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তারাই এখন মন্ত্রিসভায় আছেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী পদও অলংকৃত করছেন। অনেকেই সরকারের ক্ষমতা আরোহণের পরপরই ওয়ান ইলেভেনের হোতাদের বিচারও চেয়েছেন। কিন্তু অদৃশ্য কোনো এক রহস্যজনক কারণে সবাই বেলুনের মতো চুপসে গেছেন- এটা ভেবে দেখার মতো।
যারা আজ প্রকাশ্যে বড় বড় কথা বলছেন, ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সমালোচনা করছেন সরকারের সেই বেশিরভাগ নেতারা সেদিন কোথায় ছিলেন জরুরি জমানায়? হিসাব মিলালে দেখা যাবে সে সময় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছিল গণতন্ত্রের পক্ষে।
টিএফআই সেলে যে সকল নেতা সেদিন জবানবন্দি দিয়েছেন সেসকল দলিল ইন্টারনেট আর ইউটিউবে পাওয়া যায়। মাইনাস ফর্মুলা আর সংস্কারের নামে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধাচারণ করতে যে সকল নেতারা চেয়েছেন তাদের মন্ত্রিত্ব দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়েছে। সংস্থা বিশেষের বক্তব্য যারা পাঠিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা না নিয়ে এখন উলটোই করা হচ্ছে।
ওয়ান ইলেভেনের পরপর যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত তাদের দায়মুক্তি ফিরে ফিরে আলোচনায় আছে। প্রকাশ্যে ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। কার্যত তা করাও হয়েছে। সে সময়ের জড়িতদের একজনকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। অথচ সেদিনের সে ভুলের দায় স্বীকারের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে শুধু একজন সম্পাদককে।
জরুরি জামানায় সংস্কার চেয়ে নানারকমের দৌড়ঝাঁপ করেছেন বড় দুদলের নেতারা। আর এর পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন খোদ শীর্ষ নেতৃত্বও। বন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন দুই শীর্ষ নেত্রী। সে সময়ের বক্তব্য-বিবৃতি পরীক্ষা করে দেখলেই সকলের সত্যিকার চেহারা বেরিয়ে আসবে।
পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় দৈনিকসমূহেও ভুল হয়ে থাকে। তা সংশোধনেরও সুযোগ থাকে। তাছাড়া দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের সময় আমেরিকা-বৃটেনসহ অনেক দেশেই রাজনৈতিক দলকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়া হয়। হিসেব অনুযায়ী যে দল সমর্থন দিয়েছে যদি তারা হেরে যায় তাহলেতো পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল বা বন্ধ করে দেয়ার কথা কিন্তু সে নজির কোথাও নেই।
মূল বিষয় হচ্ছে, আমাদের সকল ক্ষেত্রে সহিষ্ণুতার বড্ড অভাব। না হলে জরুরি জমানায় গণমাধ্যম কর্মীদেরই সবচেয়ে বেশি চাপ সইতে হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য সরব ভূমিকা নিয়েছে গণমাধ্যমই। সে সময় প্রকাশিত অসংখ্য সম্পাদকীয় আর প্রচারিত টকশোর আলোচনা মিলিয়ে দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে। কিন্তু যারা দুর্বল গণতন্ত্রের জামানায় গণমাধ্যমকে চাপে ফেলতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন তারা একবার নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করুন? সঠিক দায়িত্ব পালন না করায় একজন সম্পাদক সত্য স্বীকার করে দৃঢ়চিত্তের পরিচয় দিয়েছেন। আর যারা সেদিন প্রকাশ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তারা কিছু না শুনে বা কিছু না দেখার ভান করে উটপাখির মতো মাটির নিচে মাথা লুকিয়েছেন। জরুরি জমানায় গণমাধ্যমের কোথায় কোথায় ভুল ছিল তা নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা হতে পারে। কিন্তু গণমাধ্যমের ওপর নানারকমের চাপ প্রয়োগ করে আখেরে ক্ষতি হবে দেশটারই। যদি পেছনে ফিরতে হয়, তবে ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতার বাইরে থাকা অনেককেই ক্ষমা চাইতে হবে, বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
শুরু থেকেই বর্তমানের সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হয়েছে ওয়ান ইলেভেন তাদের আন্দোলনের ফসল। বিএনপির পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে এটা আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র। আর দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে ক্ষমতায় এসেছে আওয়মী লীগ। তাছাড়া ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগতো ওয়ান ইলেভেনের একজন হোতাকেও কাঠগড়ায় নেয়নি। তাহলে সরল সমীকরণ কী বলে সে সময়ের অন্তর্বর্তী সরকার ছিল একটি অঙ্কের হিসাব।
যারা সেদিন টিএফআই সেলে জবানবন্দি দিয়েছিলেন তারাই এখন মন্ত্রিসভায় আছেন। সরকারের নীতিনির্ধারণী পদও অলংকৃত করছেন। অনেকেই সরকারের ক্ষমতা আরোহণের পরপরই ওয়ান ইলেভেনের হোতাদের বিচারও চেয়েছেন। কিন্তু অদৃশ্য কোনো এক রহস্যজনক কারণে সবাই বেলুনের মতো চুপসে গেছেন- এটা ভেবে দেখার মতো।
যারা আজ প্রকাশ্যে বড় বড় কথা বলছেন, ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সমালোচনা করছেন সরকারের সেই বেশিরভাগ নেতারা সেদিন কোথায় ছিলেন জরুরি জমানায়? হিসাব মিলালে দেখা যাবে সে সময় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছিল গণতন্ত্রের পক্ষে।
টিএফআই সেলে যে সকল নেতা সেদিন জবানবন্দি দিয়েছেন সেসকল দলিল ইন্টারনেট আর ইউটিউবে পাওয়া যায়। মাইনাস ফর্মুলা আর সংস্কারের নামে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধাচারণ করতে যে সকল নেতারা চেয়েছেন তাদের মন্ত্রিত্ব দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়েছে। সংস্থা বিশেষের বক্তব্য যারা পাঠিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত বা ব্যবস্থা না নিয়ে এখন উলটোই করা হচ্ছে।
ওয়ান ইলেভেনের পরপর যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত তাদের দায়মুক্তি ফিরে ফিরে আলোচনায় আছে। প্রকাশ্যে ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। কার্যত তা করাও হয়েছে। সে সময়ের জড়িতদের একজনকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। অথচ সেদিনের সে ভুলের দায় স্বীকারের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে শুধু একজন সম্পাদককে।
জরুরি জামানায় সংস্কার চেয়ে নানারকমের দৌড়ঝাঁপ করেছেন বড় দুদলের নেতারা। আর এর পক্ষে অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন খোদ শীর্ষ নেতৃত্বও। বন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন দুই শীর্ষ নেত্রী। সে সময়ের বক্তব্য-বিবৃতি পরীক্ষা করে দেখলেই সকলের সত্যিকার চেহারা বেরিয়ে আসবে।
পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় দৈনিকসমূহেও ভুল হয়ে থাকে। তা সংশোধনেরও সুযোগ থাকে। তাছাড়া দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের সময় আমেরিকা-বৃটেনসহ অনেক দেশেই রাজনৈতিক দলকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়া হয়। হিসেব অনুযায়ী যে দল সমর্থন দিয়েছে যদি তারা হেরে যায় তাহলেতো পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল বা বন্ধ করে দেয়ার কথা কিন্তু সে নজির কোথাও নেই।
মূল বিষয় হচ্ছে, আমাদের সকল ক্ষেত্রে সহিষ্ণুতার বড্ড অভাব। না হলে জরুরি জমানায় গণমাধ্যম কর্মীদেরই সবচেয়ে বেশি চাপ সইতে হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য সরব ভূমিকা নিয়েছে গণমাধ্যমই। সে সময় প্রকাশিত অসংখ্য সম্পাদকীয় আর প্রচারিত টকশোর আলোচনা মিলিয়ে দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে। কিন্তু যারা দুর্বল গণতন্ত্রের জামানায় গণমাধ্যমকে চাপে ফেলতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন তারা একবার নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করুন? সঠিক দায়িত্ব পালন না করায় একজন সম্পাদক সত্য স্বীকার করে দৃঢ়চিত্তের পরিচয় দিয়েছেন। আর যারা সেদিন প্রকাশ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন তারা কিছু না শুনে বা কিছু না দেখার ভান করে উটপাখির মতো মাটির নিচে মাথা লুকিয়েছেন। জরুরি জমানায় গণমাধ্যমের কোথায় কোথায় ভুল ছিল তা নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা হতে পারে। কিন্তু গণমাধ্যমের ওপর নানারকমের চাপ প্রয়োগ করে আখেরে ক্ষতি হবে দেশটারই। যদি পেছনে ফিরতে হয়, তবে ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতার বাইরে থাকা অনেককেই ক্ষমা চাইতে হবে, বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
No comments