‘রবীন্দ্রনাথ নয়, গান্ধীকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দিয়েছিলেন একজন সাংবাদিক’
‘মহাত্মা
গান্ধী’ নামেই তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তার আসল নাম মোহনদাস করমচাঁদ
গান্ধী হলেও এ নামটি ‘মহাত্মা গান্ধী’ নামের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে। এমনকি
‘মহাত্মা’ বললেও প্রথমে তার কথাই বুঝে থাকেন ভারতীয়রা। ভারতীয় ইতিহাস থেকে
জানা যায়, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গান্ধীজিকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দেন ১৯১৫
সালে। এত দিন পর্যন্ত এই তথ্য নিয়ে কারও মনেই কোনো ধরনের প্রশ্ন ছিল না।
তবে এবারে এ তথ্যটিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে গুজরাটের সরকার। তাদের দাবি- রবি
ঠাকুর নয়, গান্ধীজিকে ‘মহাত্মা’ উপাধি দিয়েছিলেন গুজরাটেরই তৎকালীন এক
অখ্যাত সাংবাদিক। এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। খবরে বলা হয়, গান্ধীকে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মহাত্মা’ উপাধিতে ভূষিত করার প্রচলিত ঐতিহাসিক তথ্যটি
ভুল দাবি করেছে গুজরাট সরকার। রাজকোটের জেলা পঞ্চায়েত শিক্ষণ সমিতি এই
বিষয়ে প্রখ্যাত গান্ধীবাদী গবেষক নারায়ণ দেশাইয়ের গবেষণাকর্মকে প্রমাণ
হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সৌরাষ্ট্রের জেতপুরের এক নাম না
জানা সাংবাদিক এক চিঠিতে প্রথম গান্ধীকে এই উপাধি দেন। ওই সময়ে গান্ধী
দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছিলেন। গুজরাট হাইকোর্টে জেলা পঞ্চায়েতের পক্ষ
থেকে এ বিষয়ে একটি হলফনামাও দাখিল করা হয়েছে। এতেও ওই সাংবাদিকের নাম জানা
যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বিতর্কের শুরু অবশ্য একটি নিয়োগ পরীক্ষাকে
কেন্দ্র করে। রাজকোটসহ আশপাশের আরও কয়েকটি জেলার রাজস্ব বিভাগের একটি নিয়োগ
পরীক্ষায় ‘গান্ধীকে ‘মহাত্মা’ উপাধি কে দেন?’ প্রশ্নটি আসে। এমসিকিউ
পদ্ধতির এই প্রশ্নের সম্ভাব্য চারটি উত্তরের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম
ছিল শুরুতেই। শেষের সম্ভাব্য উত্তরে ছিল এক অজ্ঞাত সাংবাদিক। এই প্রশ্নের
উত্তরে শুরুতে রবীন্দ্রনাথকেই সঠিক উত্তর হিসেবে গণ্য করা হয়। পরে তা বদলে
দিয়ে অজ্ঞাত সাংবাদিকের অপশনটিকে সঠিক বলে ঘোষণা করা হয়। কেন এমনটি করা
হয়েছে, তা জানতে চেয়েই গুজরাটের হাইকোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করেন ওই
পরীক্ষায় অংশ নেয়া এক চাকরিপ্রার্থী। সন্ধ্যা মারু নামের ওই শিক্ষার্থী
পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এমন আরও কয়েকটি বিতর্কের কথাও উল্লেখ করেন। পিটিশনের
পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক জে বি পারদিওয়ালা ক্ষুব্ধ হন এবং জেলা পঞ্চায়েতের
আইনজীবী এইচ এস মুনশ’র কাছে জানতে চান তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে কী লিখতেন।
মুনশ জানান, তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে রবীন্দ্রনাথের নামটিই লিখতেন। কারণ,
তিনি ছোটবেলা থেকেই এই উত্তর জেনে এসেছেন বলে জানান বিচারককে। এরপর বিচারক
পারদিওয়ালা নিয়োগকারী সংস্থার কাছে জানতে চান, স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা না
দিয়েই কেন এই উত্তর বদলে দেয়া হয়েছে। প্রশ্নোত্তরে কোনো ধরনের অস্পষ্টতা না
রেখে পরীক্ষা গ্রহণের জন্যও নির্দেশনা দেন তিনি। আগামীকাল (বুধবার) এই
রিটের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
No comments