যখন শিশুর খুনে আমাদের হাত রঞ্জিত by সোহরাব হাসান
বাবা
বেঁচে আছেন। অথচ তাঁর শিশুপুত্র ঘাতকের হাতে নিহত। মা বেঁচে আছেন। অথচ
তাঁর শিশুপুত্র আততায়ীর জিঘাংসার বলি। এখন এই সন্তানেরা কেবলই ছবি। কেবলই
স্মৃতি। এই সন্তানহারা অসংখ্য বাবা-মাকে আমরা কী সান্ত্বনা দেব?
একের পর এক শিশু খুন হচ্ছে। অপহরণের শিকার হচ্ছে। কাউকে টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলা হচ্ছে। কাউকে জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ হবিগঞ্জে চার শিশুকে হত্যা করে নদীর পাড়ে বালুর নিচে পুঁতে রাখা হয়। কয়েক দিন আগে কেরানীগঞ্জে হত্যা করা হয় এক শিশুকে। তারপর গাজীপুরে মুক্তিপণের টাকার জন্য চার বছরের শিশুকে জীবন দিতে হয়। একের পর এক শিশু হত্যার ঘটনা ঘটছে। অথচ প্রতিকার নেই। সমাজ নির্বিকার। রাষ্ট্রযন্ত্র ভাবলেশহীন।
বাবার সঙ্গে প্রতিবেশীর বিরোধ। পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশীর পরিবারের বিরোধ। সম্পত্তির হিস্যা নিয়ে আত্মীয়ের মধ্যে বিবাদ। শিকার হচ্ছে শিশুপুত্র বা কন্যা। কখনো প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে, কখনো মুক্তিপণের অর্থ আদায় করতে নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। অপহরণ করা হচ্ছে। কখনো মুক্তিপণের অর্থ শোধ করেও বাবা-মা সন্তানকে ফিরে পাচ্ছেন না। তাঁদের জীবিত শিশুপুত্র বা কন্যা ফিরে আসে না। আসে নিথর লাশ। পারিবারিক কলহ, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, ব্যক্তিগত লোভ অথবা স্বার্থ আদায়ের অস্ত্র হিসেবেই শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। কী ভয়ংকর সমাজে আমরা বাস করছি?
এক হিসাবে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সারা দেশে ২৯ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আর গত চার বছরে দেশে ১ হাজার ৮৫ শিশুকে হত্যা করা হয়। ২০১৫ সালে প্রায় ২০০ শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার হয়েছে কয়েক হাজার। যারা এই শিশুদের খুন বা অপহরণ করেছে, তারা তো এই সমাজেরই লোক। আমাদের চারপাশেই তাদের বসবাস। কিন্তু সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কেউ তাদের হত্যাযজ্ঞ থামাতে পারছে না।
গত বছর সিলেটে শিশু রাজন হত্যার ঘটনা চারদিকে হইচই ফেলে দিয়েছিল। আমরা ভাবলাম, সমাজে শুভবোধের জাগরণ ঘটেছে। আর এ রকম নৃশংসতা ঘটবে না। কিন্তু এর কিছুদিন না যেতেই খুলনায় খুন হলো রকিবুল নামে আরেক শিশু। দুই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত লোকজন ধরা পড়ল। বিচার হলো। আসামিরা কঠিন শাস্তি পেল। ভাবলাম, এবার শিশুহত্যা বন্ধ হবে। কিন্তু হত্যা থামল না।
অপরাধীর শাস্তি অপরাধ দমনের একটি উপায় মাত্র। কিন্তু সমাজ থেকে অপরাধকে নির্মূল করতে হলে সমাজে শুভচিন্তা ও বোধ জাগ্রত করতে হয়। দুর্বৃত্তায়ন কঠোর হাতে দমন করতে হয়। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি স্তরে আইনের শাসন জারি করতে হয়। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হয়।
কিন্তু সেই কাজটি যে আমরা করতে পারিনি, শিশুহত্যাই তার প্রমাণ। আমাদের রাজনীতি, আমাদের সমাজনীতি এখন আর একের সঙ্গে অপরকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে না। বিভেদ ও বিদ্বেষের অন্ধকূপে নিক্ষিপ্ত করে। আমরা খাদ্যের অভাব ঘোচাতে পারলেও ন্যায় ও সততার অভাব ঘোচাতে পারিনি। বক্তৃতা বিবৃতিতে আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে চলেছি।
একজন বয়স্ক মানুষের সঙ্গে আরেকজন বয়স্ক মানুষের স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। বৈরিতা ও প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। কিন্তু শিশুরা কেন শত্রু হবে? তাকে কেন নিশানা করা হবে? আর কত মায়ের বুক খালি হলে সমাজপতিদের ঘুম ভাঙবে? আর কত প্রাণ ঝরে গেলে রাষ্ট্রের কুশীলবদের বোধোদয় ঘটবে?
শিশুহত্যা শুধু অপরাধ নয়, নিরাময়-অযোগ্য সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি নিরাময়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করি না। অথচ সব সম্ভবের বাংলাদেশে আমরা সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের রেকর্ড সৃষ্টি করতে দেখি। শত শত শিশুর লাশ ক্ষমতাবানদের বিচলিত করে না। বিক্ষুব্ধ করে সম্পাদকের সত্য ভাষণ।
যখন শিশুর খুনে আমাদের হাত রঞ্জিত, শিশুর রক্তে আমাদের হৃদয় রক্তাক্ত, তখন ক্ষমতাবানদের কি এই বালখিল্য শোভা পায়?
একের পর এক শিশু খুন হচ্ছে। অপহরণের শিকার হচ্ছে। কাউকে টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলা হচ্ছে। কাউকে জীবন্ত মাটিচাপা দেওয়া হচ্ছে। সর্বশেষ হবিগঞ্জে চার শিশুকে হত্যা করে নদীর পাড়ে বালুর নিচে পুঁতে রাখা হয়। কয়েক দিন আগে কেরানীগঞ্জে হত্যা করা হয় এক শিশুকে। তারপর গাজীপুরে মুক্তিপণের টাকার জন্য চার বছরের শিশুকে জীবন দিতে হয়। একের পর এক শিশু হত্যার ঘটনা ঘটছে। অথচ প্রতিকার নেই। সমাজ নির্বিকার। রাষ্ট্রযন্ত্র ভাবলেশহীন।
বাবার সঙ্গে প্রতিবেশীর বিরোধ। পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশীর পরিবারের বিরোধ। সম্পত্তির হিস্যা নিয়ে আত্মীয়ের মধ্যে বিবাদ। শিকার হচ্ছে শিশুপুত্র বা কন্যা। কখনো প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে, কখনো মুক্তিপণের অর্থ আদায় করতে নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। অপহরণ করা হচ্ছে। কখনো মুক্তিপণের অর্থ শোধ করেও বাবা-মা সন্তানকে ফিরে পাচ্ছেন না। তাঁদের জীবিত শিশুপুত্র বা কন্যা ফিরে আসে না। আসে নিথর লাশ। পারিবারিক কলহ, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, ব্যক্তিগত লোভ অথবা স্বার্থ আদায়ের অস্ত্র হিসেবেই শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। কী ভয়ংকর সমাজে আমরা বাস করছি?
এক হিসাবে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সারা দেশে ২৯ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আর গত চার বছরে দেশে ১ হাজার ৮৫ শিশুকে হত্যা করা হয়। ২০১৫ সালে প্রায় ২০০ শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হামলার শিকার হয়েছে কয়েক হাজার। যারা এই শিশুদের খুন বা অপহরণ করেছে, তারা তো এই সমাজেরই লোক। আমাদের চারপাশেই তাদের বসবাস। কিন্তু সমাজ কিংবা রাষ্ট্র কেউ তাদের হত্যাযজ্ঞ থামাতে পারছে না।
গত বছর সিলেটে শিশু রাজন হত্যার ঘটনা চারদিকে হইচই ফেলে দিয়েছিল। আমরা ভাবলাম, সমাজে শুভবোধের জাগরণ ঘটেছে। আর এ রকম নৃশংসতা ঘটবে না। কিন্তু এর কিছুদিন না যেতেই খুলনায় খুন হলো রকিবুল নামে আরেক শিশু। দুই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত লোকজন ধরা পড়ল। বিচার হলো। আসামিরা কঠিন শাস্তি পেল। ভাবলাম, এবার শিশুহত্যা বন্ধ হবে। কিন্তু হত্যা থামল না।
অপরাধীর শাস্তি অপরাধ দমনের একটি উপায় মাত্র। কিন্তু সমাজ থেকে অপরাধকে নির্মূল করতে হলে সমাজে শুভচিন্তা ও বোধ জাগ্রত করতে হয়। দুর্বৃত্তায়ন কঠোর হাতে দমন করতে হয়। রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি স্তরে আইনের শাসন জারি করতে হয়। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হয়।
কিন্তু সেই কাজটি যে আমরা করতে পারিনি, শিশুহত্যাই তার প্রমাণ। আমাদের রাজনীতি, আমাদের সমাজনীতি এখন আর একের সঙ্গে অপরকে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করে না। বিভেদ ও বিদ্বেষের অন্ধকূপে নিক্ষিপ্ত করে। আমরা খাদ্যের অভাব ঘোচাতে পারলেও ন্যায় ও সততার অভাব ঘোচাতে পারিনি। বক্তৃতা বিবৃতিতে আমরা একে অন্যের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে চলেছি।
একজন বয়স্ক মানুষের সঙ্গে আরেকজন বয়স্ক মানুষের স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। বৈরিতা ও প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। কিন্তু শিশুরা কেন শত্রু হবে? তাকে কেন নিশানা করা হবে? আর কত মায়ের বুক খালি হলে সমাজপতিদের ঘুম ভাঙবে? আর কত প্রাণ ঝরে গেলে রাষ্ট্রের কুশীলবদের বোধোদয় ঘটবে?
শিশুহত্যা শুধু অপরাধ নয়, নিরাময়-অযোগ্য সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি নিরাময়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করি না। অথচ সব সম্ভবের বাংলাদেশে আমরা সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের রেকর্ড সৃষ্টি করতে দেখি। শত শত শিশুর লাশ ক্ষমতাবানদের বিচলিত করে না। বিক্ষুব্ধ করে সম্পাদকের সত্য ভাষণ।
যখন শিশুর খুনে আমাদের হাত রঞ্জিত, শিশুর রক্তে আমাদের হৃদয় রক্তাক্ত, তখন ক্ষমতাবানদের কি এই বালখিল্য শোভা পায়?
No comments