সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি ৪৮ মাসেও
৪৮
ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও ঘাতকদের গ্রেপ্তার করা হবে
বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা
খাতুন। ৪৮ মাস পেরিয়ে গেছে, তবু সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের
রহস্য উন্মোচিত হয়নি। অনেকটা থমকে আছে এ মামলার তদন্ত। থানা পুলিশ থেকে
ডিবি হয়ে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে র্যাব। একাধিকবার বদল করা হয়েছে
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আলামত পাঠিয়ে ডিএনএ
পরীক্ষা করানো হয়েছে। মামলার তদন্ত সংস্থার কাছে সেই পরীক্ষার প্রতিবেদনও
এসেছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাবের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্ত চলছে। সব ধরনের পন্থা অবলম্বন করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, সব হত্যাকাণ্ডরই যে দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটন হয়ে যায় তা নয়, স্পর্শকাতর মামলাগুলোতে সময় লাগে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড একটি স্পর্শকাতর মামলা। এ কারণে এর রহস্য উদ্ঘাটনে একটু সময় বেশি লাগছে। ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ভোরে পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। চার দিনের মাথায় মামলাটি হস্তান্তর করা হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির কাছে। তদন্তের ৬২ দিনের মাথায় উচ্চাদালতে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল মামলাটি র্যাবে হস্তান্তর করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ৭৬ দিনের মাথায় ওই বছরের ২৬শে এপ্রিল পুনঃময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হয় সাগর-রুনির লাশ। লাশের ভিসেরা আলামতসহ আরও কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
শুধুই আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি: ঘটনার দিন থেকেই শুধুই আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন দিয়েছিলেন ৪৮ ঘণ্টার প্রতিশ্রুতি। এর মধ্যেই খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এ সময় শেষ হওয়ার আগেই তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, ‘তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে’। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে ৪৮ মাসে গিয়ে ঠেকেছে, তবুও প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতির কোনো দেখা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিনের মাথায় ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলামও হত্যাকাণ্ডের ‘মোটিভ’ নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে মন্তব্য করেন। সে সময় তদন্ত সংস্থা ডিবি ‘গ্রিল কাটা’ চোরদের দিকে ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে ডিবি তা এড়িয়ে যায়। এ ছাড়া র্যাবের কাছে তদন্ত হস্তান্তরের পর ২০১২ সালের ৯ই অক্টোবর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে পাঁচজন রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণকে মহাখালীর বক্ষব্যাধী হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ওই বছর আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার করে ডিবি ও র্যাব। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো ছাড়াও সাগর-রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীর ও বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পালকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কিন্তু দফায় দফায় তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা র্যাব। পরে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাগর-রুনির বাসার পলাতক দারোয়ান এনামুল হক ওরফে হুমায়ূনকে ধরতে পারলে হত্যাকাণ্ডের রহস্যজট খুলে যাবে। এজন্য এনামুলকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি এনামুলকে গ্রেপ্তার করা হলেও খুলেনি রহস্যজট। এর আগে ২০১২ সালের ১২ই জুন ও ১৭ জুলাই দুই দফায় সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে। আলামতের তালিকায় ছিল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, সাগরের মোজা, একটি কম্বল, সাগরের পরনের প্যান্ট, সাগরের হাত-পা যে কাপড় দিয়ে বাঁধা হয়েছিল সেই কাপড় ও রুনির পরনের টি-শার্ট। প্রথম দফায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এসব আলামত থেকে দুজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়। পরে এ দুই ব্যক্তির প্রোফাইলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত নিহত সাংবাদিক দম্পতির পারিবারিক বন্ধু তানভীর, দুই নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও এনামুল ওরফে হুমায়ূন কবীর এবং পাঁচ ডাকাত রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণের চুল ও লালা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। সে সময় বলা হয়েছিল, এ আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলে তদন্তে নতুন মোড় নেবে। রহস্য উদ্ঘাটনে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করবে। গত বছর সেই পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও হাতে পেয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা। কিন্তু সেই ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে কারও ডিএএনএর সঙ্গে ম্যাচ করেনি। ফলে অধরাই থেকে গেছে খুনিরা।
গ্রেপ্তারকৃত ৮ জনের ৩ জন জামিনে: সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। এর মধ্যে তিনজন জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে। বাকি ৫ জন এখনও কারাগারে। কিন্তু তারাই কি প্রকৃত খুনি কি না তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি র্যাব কর্মকর্তারা। তদন্ত সূত্র জানায়, গত বছরের ২৮শে মে উচ্চ আদালত থেকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে নিহত সাংবাদিক দম্পতির পারিবারিক বন্ধু তানভীর ও দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল। এর এক মাস পর ৬ই জুন জামিন পান মিন্টু। এদিকে আদালতের নির্দেশে এখনও প্রায় প্রতি মাসেই একবার করে তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দিয়ে যাচ্ছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সর্বশেষ তিনি গত ১৮ই জানুয়ারি আদালতে তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেন। পরবর্তী তারিখ রয়েছে ২৮শে ফেব্রুয়ারি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিটি প্রতিবেদনের ভাষা প্রায় একই। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে জোর প্রচেষ্টা চলছে। প্রযুক্তিগতভাবে ও ম্যানুয়ালি পন্থা অবলম্বন করে আলোচিত এ মামলার তদন্তকাজ চলছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে কয়েকবার। সর্বশেষ র্যাবের কাছে মামলা হস্তান্তরের পর তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন। বর্তমানে র্যাবের এএসপি মহিউদ্দিন আহমেদ মামলাটি তদন্ত করছেন।
হতাশ পরিবার: চার বছরেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা না হওয়ায় পুরোপুরি হতাশ হয়ে গেছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। তারা এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন, খুনিদের শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তারের আর কোনো সম্ভাবনাই দেখছেন না। সবকিছু ছেড়ে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তার হাতে। মামলার বাদী ও নিহত মেহেরুন রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, চার বছরেও যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি, তা আর কোনো দিন হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু একটাই দুঃখ, এতবড় একটি ঘটনা ঘটিয়েও খুনিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তাদের শনাক্তই করতে পারলো না পুলিশ-র্যাব।
মামলার তদন্ত সংস্থা র্যাবের পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্ত চলছে। সব ধরনের পন্থা অবলম্বন করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, সব হত্যাকাণ্ডরই যে দ্রুত রহস্য উদ্ঘাটন হয়ে যায় তা নয়, স্পর্শকাতর মামলাগুলোতে সময় লাগে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড একটি স্পর্শকাতর মামলা। এ কারণে এর রহস্য উদ্ঘাটনে একটু সময় বেশি লাগছে। ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি ভোরে পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। চার দিনের মাথায় মামলাটি হস্তান্তর করা হয় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির কাছে। তদন্তের ৬২ দিনের মাথায় উচ্চাদালতে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল মামলাটি র্যাবে হস্তান্তর করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ৭৬ দিনের মাথায় ওই বছরের ২৬শে এপ্রিল পুনঃময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হয় সাগর-রুনির লাশ। লাশের ভিসেরা আলামতসহ আরও কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
শুধুই আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি: ঘটনার দিন থেকেই শুধুই আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছ থেকে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন দিয়েছিলেন ৪৮ ঘণ্টার প্রতিশ্রুতি। এর মধ্যেই খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এ সময় শেষ হওয়ার আগেই তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, ‘তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে’। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে ৪৮ মাসে গিয়ে ঠেকেছে, তবুও প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতির কোনো দেখা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিনের মাথায় ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলামও হত্যাকাণ্ডের ‘মোটিভ’ নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে মন্তব্য করেন। সে সময় তদন্ত সংস্থা ডিবি ‘গ্রিল কাটা’ চোরদের দিকে ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে ডিবি তা এড়িয়ে যায়। এ ছাড়া র্যাবের কাছে তদন্ত হস্তান্তরের পর ২০১২ সালের ৯ই অক্টোবর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে পাঁচজন রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণকে মহাখালীর বক্ষব্যাধী হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ওই বছর আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার করে ডিবি ও র্যাব। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো ছাড়াও সাগর-রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীর ও বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পালকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কিন্তু দফায় দফায় তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাদের কাছ থেকে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা র্যাব। পরে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, সাগর-রুনির বাসার পলাতক দারোয়ান এনামুল হক ওরফে হুমায়ূনকে ধরতে পারলে হত্যাকাণ্ডের রহস্যজট খুলে যাবে। এজন্য এনামুলকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২০১৩ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি এনামুলকে গ্রেপ্তার করা হলেও খুলেনি রহস্যজট। এর আগে ২০১২ সালের ১২ই জুন ও ১৭ জুলাই দুই দফায় সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে। আলামতের তালিকায় ছিল হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি, ছুরির বাঁট, সাগরের মোজা, একটি কম্বল, সাগরের পরনের প্যান্ট, সাগরের হাত-পা যে কাপড় দিয়ে বাঁধা হয়েছিল সেই কাপড় ও রুনির পরনের টি-শার্ট। প্রথম দফায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এসব আলামত থেকে দুজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া যায়। পরে এ দুই ব্যক্তির প্রোফাইলের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত নিহত সাংবাদিক দম্পতির পারিবারিক বন্ধু তানভীর, দুই নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও এনামুল ওরফে হুমায়ূন কবীর এবং পাঁচ ডাকাত রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণের চুল ও লালা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। সে সময় বলা হয়েছিল, এ আলামত পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেলে তদন্তে নতুন মোড় নেবে। রহস্য উদ্ঘাটনে সহায়ক ভূমিকা হিসেবে কাজ করবে। গত বছর সেই পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও হাতে পেয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা। কিন্তু সেই ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে কারও ডিএএনএর সঙ্গে ম্যাচ করেনি। ফলে অধরাই থেকে গেছে খুনিরা।
গ্রেপ্তারকৃত ৮ জনের ৩ জন জামিনে: সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। এর মধ্যে তিনজন জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে। বাকি ৫ জন এখনও কারাগারে। কিন্তু তারাই কি প্রকৃত খুনি কি না তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি র্যাব কর্মকর্তারা। তদন্ত সূত্র জানায়, গত বছরের ২৮শে মে উচ্চ আদালত থেকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসে নিহত সাংবাদিক দম্পতির পারিবারিক বন্ধু তানভীর ও দারোয়ান পলাশ রুদ্র পাল। এর এক মাস পর ৬ই জুন জামিন পান মিন্টু। এদিকে আদালতের নির্দেশে এখনও প্রায় প্রতি মাসেই একবার করে তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দিয়ে যাচ্ছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। সর্বশেষ তিনি গত ১৮ই জানুয়ারি আদালতে তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেন। পরবর্তী তারিখ রয়েছে ২৮শে ফেব্রুয়ারি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিটি প্রতিবেদনের ভাষা প্রায় একই। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে জোর প্রচেষ্টা চলছে। প্রযুক্তিগতভাবে ও ম্যানুয়ালি পন্থা অবলম্বন করে আলোচিত এ মামলার তদন্তকাজ চলছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে কয়েকবার। সর্বশেষ র্যাবের কাছে মামলা হস্তান্তরের পর তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন। বর্তমানে র্যাবের এএসপি মহিউদ্দিন আহমেদ মামলাটি তদন্ত করছেন।
হতাশ পরিবার: চার বছরেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কোনো কূলকিনারা না হওয়ায় পুরোপুরি হতাশ হয়ে গেছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। তারা এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন, খুনিদের শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তারের আর কোনো সম্ভাবনাই দেখছেন না। সবকিছু ছেড়ে দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তার হাতে। মামলার বাদী ও নিহত মেহেরুন রুনির ছোট ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, চার বছরেও যে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি, তা আর কোনো দিন হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু একটাই দুঃখ, এতবড় একটি ঘটনা ঘটিয়েও খুনিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তাদের শনাক্তই করতে পারলো না পুলিশ-র্যাব।
No comments